শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় ‘২৪ হল পরিণত হয়েছে বহিরাগতদের স্থায়ী বসবাসের অভয়াশ্রম। ক্যান্টিন, ডাইনিং, রিডিং রুমসহ সব স্থানেই বহিরাগতদের অবাধ বিচরণে বিব্রত হলের শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, হলের আবাসিক নিয়ম অমান্য করে অনেকে মাসের পর মাস তাদের স্কুল-কলেজ পড়ুয়া আত্মীয়দের রাখছেন। এতে শুধু ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে না, বরং নতুন ব্যাচের শিক্ষার্থীদের আবাসন ব্যবস্থা নিয়েও শঙ্কা তৈরি হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা আশঙ্কা করছেন, এভাবে চলতে থাকলে আবারো গণরুম চালুর পথ প্রশস্ত হতে পারে।

আরো পড়ুন:

শেকৃবিতে ভেটেরিনারি অনুষদের ওরিয়েন্টেশন অনুষ্ঠিত

শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসন সংকট নিরসনের লক্ষে ২০১৯ সালে নতুন দুই হলের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন উপাচার্য কামালউদ্দিন আহমেদ। পরবর্তীতে ২০২৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১তম ও ২২তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের আবাসিকতা দেওয়ার মাধ্যমে শুরু হয় বিজয় ‘২৪ হলের যাত্রা। দীর্ঘদিন গণরুম সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টি শতভাগ আবাসিক হওয়ার গৌরব অর্জন করে। তবে নতুন এই হলটি এখন হয়ে উঠেছে বহিরাগতদের আখড়া। হলে স্কুল পড়ুয়া ছাত্র থেকে শুরু করে কর্পোরেট অফিসার সবার জন্যই এটি একটি ‘সেফ হোম’। 

আবাসিক শিক্ষার্থী মো.

আব্দুর রহমান বলেন, “হলে অনেকে তাদের স্কুল-কলেজ পড়ুয়া আত্মীয়স্বজনদের এনে মাসের পর মাস রাখছেন। মাঝে মাঝে তাদের সিনিয়র ভেবে সালাম দিয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়।”

তিনি বলেন, “বহিরাগতদের জন্য বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ক্যান্টিন ডাইনিং থেকে শুরু করে রিডিং রুম সব জায়গায় বহিরাগতদের দৌরাত্ম। তাছাড়া কিছুদিনের মধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়ের নবীন ২৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের আগমন হবে। এমতাবস্থায় আবারো গণরুমে চালু হতে পারে।

বিজয় ‘২৪ হলের আবাসিক শিক্ষার্থী রকিবুল ইসলাম মিদুল বলেন, “হলে অতিথি রাখার নিয়ম নেই। মানবতার খাতিরে কেউ যদি রাখেন, সেটা ৫-১০ দিন এর বেশি হওয়া উচিত নয়। কিন্তু অনেকেই আছেন, নিজের ভাই বা এলাকার ভাইকে এনে মাসের পর মাস রাখছে। কেউ কেউ স্কুল কলেজের ছাত্র। তারা হলে থেকে স্কুল, কলেজে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে।”

হলের আবাসিক শিক্ষার্থী সাদেক বলেন, “বহিরাগতরা কেবল হলে থাকছেই না, তাদের দেখা যাচ্ছে রিডিং রুম আর ক্যান্টিন-ডাইনিংয়েও। শিক্ষার্থীদের জন্য নির্মিত হলে বহিরাগতদের এমন অবাধ প্রবেশ ও অবস্থান আমাদের জন্য বড় বঞ্ছনা ও নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করছে। নবীন ২৫ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের আবাসন ব্যবস্থা নিয়েও আমি শঙ্কিত।”

আবাসিক শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, প্রথমে দুই একজন বহিরাগত মাঝে মাঝে হল ক্যান্টিনে খেতে আসলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই সংখ্যা বাড়তে থাকে। এ অবস্থায় ক্যান্টিন কর্তৃপক্ষ নিয়ম করে যে, বহিরাগতদের দুপুর ২টার পর থেকে খাবার সরবরাহ করা হবে। বাস্তবে সেই নিয়মের কোনো প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না।”

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, একজন বহিরাগত ডাইনিংয়ে খাচ্ছে। তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সে জানুয়ারি মাস থেকে হলে মাঝে মাঝে থাকে, তার ফার্মগেটে বাসা আছে এবং সে একজন ছাত্র।

হলের ২৩তম ব্যাচের আবাসিক শিক্ষার্থী মো. আব্দুর রহমান বলেন, “দুপুর ১টায় ক্যান্টিনে গিয়ে দেখি পুরো বসার জায়গা বহিরাগত দিয়ে ভরা। আমরা নিজেরাই বসার জায়গা পাচ্ছি না। ১টা ৩০ মিনিট বাজতেই মুরগি শেষ হয়ে গেছে।”

ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, “এভাবে চলতে থাকলে এটাকে ক্যান্টিন না বলে হোটেল ঘোষণা করে দিলেই ভালো হয়।”

বিজয় ২৪ হলের প্রাধ্যক্ষ ড. মো. জাহিদুর রহমান বলেন, “আমরা বেশ কয়েকবার হলে গিয়ে বহিরাগতদের বের করে দিয়েছি। কিছুদিন আগে রিডিং রুম থেকে একজনকে, তার আগের সপ্তাহে ক্যান্টিন থেকে ৭–৮ জনকে বের করা হয়েছে।”

তিনি বলেন, “আমরা আগেই শিক্ষার্থীদের জানিয়েছি, যেন কেউ গেস্ট না রাখে। এ বিষয়ে নোটিশও দিয়েছি। বৃহস্পতিবারের মধ্যে গেস্ট বের না করলে শিক্ষার্থীদের নিয়ে রুমে-রুমে অভিযান চালানো হবে। তবে আমার ছাত্ররা আমাকে পর্যাপ্ত সহযোগিতা করছে না। অনেক সময় সঠিক তথ্য না দেওয়ায় সমস্যার সমাধান বিলম্বিত হচ্ছে।”

নবীন ২৫ ব্যাচের আবাসন বিষয়ে প্রাধ্যক্ষ বলেন, “বিজয় ২৪ হলে ৫৫–৫৮ জন শিক্ষার্থীর সিট বরাদ্দ হয়েছে। আমরা লটারির মাধ্যমে তাদের রুম নম্বর নির্ধারণ করেছি। অরিয়েন্টেশনের দিন শিক্ষার্থীদের মুঠোফোনে রুম নম্বর জানিয়ে দেওয়া হবে।”

ঢাকা/মামুন/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

দারফুরে ধর্ষণ-মুক্তিপণ-হত্যা: আরএসএফের ভয়াবহ নিপীড়নের বর্ণনা দিলেন পালিয়ে আসা মানুষেরা

সুদানের পশ্চিমাঞ্চলীয় দারফুর শহরে আধাসামরিক বাহিনী র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্স (আরএসএফ)–এর কাছ থেকে পালিয়ে আসা ক্ষুধার্ত এবং নির্যাতিত মানুষেরা বিভিন্ন সংস্থা ও সংবাদমাধ্যমের কাছে তাঁদের ভয়ংকর অভিজ্ঞতাগুলো বর্ণনা করছেন। তবে তাঁরা পালাতে পারলেও হাজার হাজার মানুষ এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।

উত্তর দারফুরের রাজধানী এল-ফাশের শহর ছিল রাজ্যটিতে সুদানি সেনাবাহিনীর সর্বশেষ ঘাঁটি। গত রোববার আরএসএফ বাহিনী এটির দখল নেয়। এরপর থেকে জাতিসংঘ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা স্থানীয় মানুষের পরিণতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। এরই মধ্যে দারফুরে ধর্ষণ, মুক্তিপণ ও গণহত্যাসহ অন্যান্য নির্যাতনের কথা সামনে আসছে।

আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

ইসমাইল বলেন, ‘খার্তুমের বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার সঙ্গে পড়াশোনা করেছেন এমন একজন তরুণ সেখানে ছিলেন। তিনি তাঁদের বললেন, “ওকে হত্যা করো না”। এরপর তাঁরা আমার সঙ্গে থাকা সব তরুণ ও আমার বন্ধুদের হত্যা করেন।’

তাবিলা এলাকায় পালিয়ে আসা অন্য নাগরিকেরাও তাঁদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। তেমনই একজন তাহানি হাসান। তিনি বলেন, ‘হঠাৎ করেই তাঁরা সেখানে হাজির হলেন। কোথা থেকে এলেন জানি না। ভিন্ন ভিন্ন বয়সী তিন তরুণকে দেখা গেল। তাঁরা আকাশে গুলি ছুড়লেন এবং বললেন, ‘থামো, থামো’। তাঁরা আরএসএফের পোশাকে ছিলেন।’

আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। আলখেইর বলেছেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টা করার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত ব্যক্তি হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

তাহানি হাসান বলেন, ‘এই তরুণেরা আমাদের বেধড়ক মারধর করেছেন। আমাদের পোশাক মাটিতে ছুড়ে ফেলেছেন। এমনকি আমি একজন নারী হওয়ার পরও আমাকে তল্লাশি করা হয়েছে। হামলাকারীরা সম্ভবত বয়সে আমার মেয়ের চেয়েও ছোট হবে।’

ফাতিমা আবদুলরহিম তাঁর নাতি–নাতনিদের সঙ্গে তাবিলাতে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, পাঁচ দিন ধরে অনেক কষ্ট করে হেঁটে তাবিলাতে পৌঁছাতে পেরেছেন।

ফাতিমা বলেন, ‘তাঁরা (আরএসএফের সদস্যরা) ছেলেশিশুগুলোকে মারলেন এবং আমাদের সব সম্পদ কেড়ে নিলেন। আমাদের কিছুই রাখা হলো না। আমরা এখানে পৌঁছানোর পর জানতে পারলাম, আমাদের পর যেসব মেয়ে এসেছে, তাদের ধর্ষণ করা হয়েছে। তবে আমাদের মেয়েরা বেঁচে গেছে।’

পালিয়ে আসা তরুণী রাওয়া আবদাল্লা বলেছেন, তাঁর বাবা নিখোঁজ।

গত বুধবার রাতে দেওয়া এক বক্তৃতায় আরএসএফের প্রধান মোহাম্মদ হামদান দাগালো বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য তাঁর যোদ্ধাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটলে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। হামদান ‘হেমেদতি’ নামেও পরিচিত।

২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে সুদানি সেনাদের সঙ্গে আরএসএফ সদস্যদের লড়াই চলছে। গত বৃহস্পতিবার আরএসএফ দাবি করে, নির্যাতনের অভিযোগে বেশ কয়েকজন যোদ্ধাকে আটক করেছে তারা।

তবে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তাবিষয়ক প্রধান টম ফ্লেচার সাধারণ নাগরিকদের ওপর আরএসএফ সদস্যদের নিপীড়নের অভিযোগ তদন্তে বাহিনীটির দেওয়া প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আরএসএফের একজন উচ্চপদস্থ কমান্ডার এই ঘটনাগুলো ‘গণমাধ্যমের অতিরঞ্জন’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তাঁর দাবি, এল–ফাশেরে নিজেদের পরাজয় ও ক্ষয়ক্ষতি আড়াল করতে সেনাবাহিনী এবং তাদের মিত্ররা এমন অপপ্রচার চালাচ্ছে।

জাতিসংঘের তথ্য বলছে, এ সংঘাত চলাকালে আরএসএফ ও সেনাবাহিনী—দুই পক্ষের বিরুদ্ধেই অভিযোগ উঠেছে। সংঘাতে কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। সংঘাতকে কেন্দ্র করে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় তৈরি হয়েছে। বিরাজ করছে ব্যাপক দুর্ভিক্ষের অবস্থা। পাশাপাশি কলেরা ও অন্যান্য প্রাণঘাতী রোগের সংক্রমণ বাড়ছে।

দারফুর থেকে পালিয়ে আসা লোকজন তাবিলা এলাকায় আশ্রয় নিয়েছেন। ২৯ অক্টোবর, ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ব্যালটে মামদানি, অদৃশ্য ‘প্রার্থী’ ট্রাম্প
  • দারফুরে ধর্ষণ-মুক্তিপণ-হত্যা: আরএসএফের ভয়াবহ নিপীড়নের বর্ণনা দিলেন পালিয়ে আসা মানুষেরা
  • ‘সাংস্কৃতিক জাগরণেই মুক্তি’
  • যদি ঠিক পথে থাকো, সময় তোমার পক্ষে কাজ করবে: এফ আর খান
  • বিবাহবিচ্ছেদ ও খোরপোষ নিয়ে ক্ষুদ্ধ মাহি
  • ফতুল্লায় দুই ট্রাকের মাঝে পড়ে যুবকের মৃত্যু
  • ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুই পক্ষের সংঘর্ষে ২০ মামলার আসামি নিহত, গুলিবিদ্ধ ৩
  • নামতে গেলেই চালক বাস টান দিচ্ছিলেন, পরে লাফিয়ে নামেন
  • তানজানিয়ার বিতর্কিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ফের বিজয়ী সামিয়া
  • আমার স্ত্রী খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করছেন না: জেডি ভ্যান্স