মেটার ফ্যাক্টচেকিং বন্ধের উদ্যোগ ‘সত্যিই লজ্জার’: বাইডেন
Published: 11th, January 2025 GMT
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে ফ্যাক্টচেকিং বা তথ্যের সত্যতা যাচাই বন্ধের ঘোষণার তীব্র সমালোচনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তিনি মেটার এ উদ্যোগকে ‘সত্যিই লজ্জাজনক’ বলেছেন।
ফ্যাক্টচেকিং প্রোগ্রামগুলো অতিমাত্রায় সেন্সরশিপের দিকে ঝুঁকে পড়েছে—এমন অভিযোগ তুলে মেটার প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গ গত মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রে ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রাম থেকে তথ্য যাচাইয়ের ব্যবস্থা সরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
জাকারবার্গ বলেন, পালো অল্টো কোম্পানি যুক্তরাষ্ট্রে তৃতীয় পক্ষের তথ্য যাচাই বন্ধ করে দিচ্ছে এবং ‘কমিউনিটি নোটস’ নামে পরিচিত একটি মডেলের অধীন সাধারণ ব্যবহারকারীদের কাছে মিথ্যা তথ্য উন্মোচনের কাজটি হস্তান্তর করেছে।
আরেক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে তথ্য যাচাইয়ে এ মডেল জনপ্রিয়। পালো অল্টো যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বৃহৎ সাইবার সিকিউরিটি কোম্পানি।
জাকারবার্গের ঘোষণাকে অনেকে নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে খুশি করার চেষ্টা বলছেন। ট্রাম্পভক্তরা অনেক দিন ধরেই অভিযোগ করছেন, প্রযুক্তির বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে ফ্যাক্টচেকিংয়ের নামে বাক্স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা হয় এবং ডানপন্থী কনটেন্টের (আধেয়) প্রকাশ আটকে দেওয়া হয়। ২০ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন ট্রাম্প।
গতকাল শুক্রবার হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকেরা বাইডেনকে জাকারবার্গের ঘোষণা নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, এটা খুবই লজ্জাজনক। সত্য বলা গুরুত্বপূর্ণ। তাদের এ পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের সম্পূর্ণ বিপরীত।’
মেটার কনটেন্ট সম্পাদনা নীতিমালায় পরিবর্তন আনার ঘোষণার দিন জাকারবার্গ বলেছিলেন, ফ্যাক্টচেকাররা রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট। এ ছাড়া ফ্যাক্টচেকাররা অতিমাত্রায় ভুল করছেন এবং সেন্সরশিপ আরোপ করছেন। তবে জাকারবার্গের এ অভিযোগকে মিথ্যা বলেছে আন্তর্জাতিক ফ্যাক্টচেকিং নেটওয়ার্ক।
জাকারবার্গের ঘোষণার দুই দিন পর গত বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক ফ্যাক্টচেকিং নেটওয়ার্কের পক্ষ থেকে বলা হয়, বিশ্বের ১০০টির বেশি দেশে মেটার ফ্যাক্টচেকিং কার্যক্রম চালু আছে। এখন যদি মেটা যুক্তরাষ্ট্রের বাইরেও তাদের এ ফ্যাক্টচেকিং কার্যক্রম বন্ধ করে দিতে চায়, তবে এর মারাত্মক প্রভাব পড়বে।
ফ্যাক্টচেকিং নেটওয়ার্ক আরও বলেছে, ‘এসব দেশের মধ্যে কয়েকটি দেশে ভুয়া তথ্য ছড়িয়ে পড়া অত্যন্ত ঝুঁকির। ফলে সেখানে রাজনৈতিক অস্থিরতা, নির্বাচনে হস্তক্ষেপ, উচ্ছৃঙ্খল জনতার সহিংসতা ও গণহত্যার মতো ঘটনা ঘটতে পারে।’
আরও পড়ুনফ্যাক্ট–চেক নিয়ে জাকারবার্গের দাবি মিথ্যা১৭ ঘণ্টা আগে.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সত্য মিথ্যা যাচাই না করে শেয়ার করবেন না, মেসেজটা তৃণমূলে ছড়িয়ে দিন: সিইসি
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেছেন, 'আমাদের একটা অভ্যাস হয়ে গেছে একটা নেতিবাচক সংবাদ দেখলেই যাচাই-বাছাই না করে শেয়ার করে দেওয়া হয়। অত্যন্ত ভিত্তিহীন সংবাদও আমরা শেয়ার করে দেই।'
সিইসি বলেন, 'দয়া করে সত্য মিথ্যা যাচাই না করে শেয়ার করবেন না। এই মেসেজটা তৃণমূলে ছড়িয়ে দিন। তথ্যটা যেন আগে যাচাই করে তারপরে শেয়ার করেন।'
আজ সোমবার রাজধানীর ভাটারায় আনসার গার্ড ব্যাটালিয়নে (এজিবি) এক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে এসব কথা বলেন সিইসি। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় ভুয়া সংবাদের প্রচার ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অপপ্রয়োগ রোধে করণীয় সম্পর্কে তিনি এসব কথা বলেন।
থানা আনসার কোম্পানি/প্লাটুন সদস্যদের আনসার মৌলিক প্রশিক্ষণের (৪র্থ ধাপ) সমাপনী উপলক্ষে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিইসি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কোনো সংবাদ দেখা মাত্রই নাগরিকদের যাচাইবাছাই করতে আহ্বান জানান সিইসি। নিশ্চিত হওয়ার আগে শেয়ার না করতে বলেন তিনি।
জাতীয় নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে আনসার ভিডিপির ভূমিকাকে মূল শক্তি বলে উল্লেখ করেন সিইসি। তিনি বলেন, 'এনারাই অধিক সংখ্যায় নিয়োজিত থাকেন। এবং আমাদের হিসেব করতে গেলে প্রথম এদেরকেই হিসেব করতে হয় যে, কতজন আনসার ভিডিপি সদস্য আমরা মোতায়েন করতে পারব। মূল কাজটা আঞ্জাম (সম্পাদন) দিতে হয় কিন্তু আনসার এবং ভিডিপির সদস্যদের।'
অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবদুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদ। নির্বাচনকালীন জনগণের নিরাপত্তা, ভোট কেন্দ্রের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখা এবং সুষ্ঠুভাবে ভোট গ্রহণে আনসার বাহিনী সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়ে কাজ করছে বলে জানান তিনি। নির্বাচনে দেশজুড়ে প্রায় ৬ লাখ আনসার ও ভিডিপি সদস্য দায়িত্বপালন করবেন বলেন মহাপরিচালক।
অনুষ্ঠানে মহড়ায় ঢাকা মহানগর আনসারের চারটি জোনের অধীন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ৩২০ জন আনসার ও ভিডিপি সদস্য অংশ নেন। আনসার গার্ড ব্যাটালিয়নের সদস্যরা টহল, দায়িত্ব বণ্টন ও জরুরি প্রতিক্রিয়া অনুশীলনে অংশ নেন।
মহড়ায় ভোটকেন্দ্রে নির্বাচনী সরঞ্জামাদি নিরাপদে পৌঁছে দেওয়া, ভোটারদের শৃঙ্খলাবদ্ধভাবে ভোট প্রদানে সহায়তা, জাল ভোট প্রতিরোধ, প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা এবং সেনা, বিজিবি, র্যাব ও পুলিশের সঙ্গে দ্রুত সমন্বয়ের প্রস্তুতি নেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপি সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিভিন্ন জোনের অধিনায়ক এবং প্রশিক্ষণ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।