বাংলা দৈনিক ভোরের কাগজ বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। সোমবার রাজধানীর মৌচাকে প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয়ের প্রধান ফটকে এ-সংক্রান্ত নোটিশ টানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
নোটিশে বলা হয়েছে, ‘ভোরের কাগজ কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ শ্রম আইন-২০০৬-এর ১২ ধারা অনুযায়ী মালিকের নিয়ন্ত্রণবহির্ভূত কারণে প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয় বন্ধের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন, যা ২০ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হবে।’
এ বিষয়ে জানতে ফোনে যোগাযোগ করা হলে ভোরের কাগজের বার্তা সম্পাদক ইখতিয়ার উদ্দিন মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে পত্রিকাটির একজন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক বলেন, কয়েক দিন ধরেই অষ্টম ওয়েজ বোর্ড অনুযায়ী বেতন দাবি এবং নিয়োগের তারিখ থেকে সে অনুযায়ী বকেয়া পাওনা পরিশোধের জন্য আন্দোলন করছিলেন ভোরের কাগজের কয়েকজন সংবাদকর্মী। আন্দোলনে সমর্থন জানিয়ে গত রোববার সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের নেতা এবং ভোরের কাগজের সাবেক কিছু কর্মী প্রধান কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করেন। এমন পরিস্থিতিতে পত্রিকাটি হাতছাড়া হওয়ার ভয়ে তা বন্ধ করেছে মালিকপক্ষ।
তবে আন্দোলনকারীদের একজন পত্রিকাটির প্রধান প্রতিবেদক খোন্দকার কাওসার বলেছেন, পূর্ণাঙ্গ অষ্টম ওয়েজ বোর্ড বাস্তবায়ন এবং সমস্ত বকেয়া বেতনসহ নানা দাবিতে তারা কয়েক দিন ধরে আন্দোলন করছেন। এর মধ্যে হঠাৎ করে পত্রিকা বন্ধ করে দিয়েছে মালিকপক্ষ। প্রতিষ্ঠানটি বন্ধের নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা সাংবাদিক-কর্মচারীরা দ্রুত কর্মসূচি ঘোষণা করব।
সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম আবদুল্লাহ পত্রিকাটি বন্ধের বিষয়ে সোমবার ফেসবুকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে বলেন, যে সংবাদমাধ্যম ক্ষমতার ছত্রছায়া ছাড়া বেঁচে থাকতে পারে না, সেটি বন্ধ হওয়াই ভালো। তবে সংবাদকর্মীদের ন্যায্য পাওনা বুঝিয়ে দিতে হবে সর্বশেষ ওয়েজ বোর্ড ও শ্রম আইন অনুযায়ী।
প্রিন্ট এডিশন বন্ধ থাকলেও পত্রিকাটির অনলাইন ও মাল্টিমিডিয়া চালু থাকবে বলে জানা গেছে। গত ১১ ডিসেম্বর অনলাইন নিউজপোর্টাল নিবন্ধনে স্বত্বাধিকারীর নাম পরিবর্তনের জন্য প্রধান তথ্য কর্মকর্তার কাছে আবেদন করেন আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরীর নামে পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক এ কে সরকার। এতে বলা হয়, ভোরের কাগজ ডটকমের নিবন্ধনে স্বত্বাধিকারী হিসেবে সাবেক সম্পাদক শ্যামল দত্তের নাম রয়েছে। কিন্তু পত্রিকাটির স্বত্বাধিকারী হিসেবে সব কাগজপত্রে সাবের হোসেনের নাম রয়েছে। তাই অনলাইনের নিবন্ধনে স্বত্বাধিকারীর নাম পরিবর্তনের আবেদন করা হয়েছে। পত্রিকাটির সম্পাদক শ্যামল দত্তকে গত ১৬ সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তিনি এখনও কারাগারে রয়েছেন।
‘মুক্তপ্রাণের প্রতিধ্বনি’ স্লোগান নিয়ে ১৯৯২ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি যাত্রা শুরু করে ভোরের কাগজ। বলা হয়ে থাকে, একদল তরুণ ও অভিজ্ঞ কর্মীর সমন্বয়ে পত্রিকাটি দেশের দৈনিক সংবাদপত্রের প্রচলিত ধারণা পাল্টে দেয়। এই পত্রিকার মাধ্যমে হাতেখড়ি নেওয়া অনেক সংবাদকর্মী দেশ-বিদেশে গণমাধ্যমের শীর্ষ পর্যায়ে আলো ছড়িয়ে যাচ্ছেন। পত্রিকাটি বন্ধ হওয়ায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেক সাবেক কর্মীকে স্মৃতিচারণ করতে দেখা যায়।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
কারাগারে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার
কেরাণীগঞ্জে অবস্থিত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতর গলায় গামছা পেঁচানো অবস্থায় সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান সুজনের (৪৫) ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার হয়েছে।
রবিবার (১৫ জুন ) দুপুরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার সুরাইয়া আক্তার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
সিনিয়র জেল সুপার সুরাইয়া আক্তার বলেন, “কারাগারের একটি কক্ষে তিনজন বন্দি থাকতেন। তাদের মধ্যে একজন আদালতে হাজিরা দিতে যান। অন্য একজন ঘুমিয়ে ছিলেন। সেই সুযোগে সাইদুর রহমান সুজন নিজে গলায় গামছা পেঁচিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন।”
আরো পড়ুন:
মহাসড়কের পাশ থেকে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার
হবিগঞ্জে বৃদ্ধের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার
তিনি আরো বলেন, “বিষয়টি জানতে পেরে প্রথমে তাকে কারা হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।”
কারাগার সূত্র জানায়, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সময় আগ্নেয়াস্ত্র হাতে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার ঘটনায় আলোচিত ছিলেন সাইদুর রহমান সুজন। তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাস দমন আইন ও আইসিটিসহ অন্তত ১৫টি মামলা রয়েছে।
গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে সাইদুর রহমান সুজন আত্মগোপনে ছিলেন। চলতি বছরের জানুয়ারিতে উত্তরার একটি বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গ্রেপ্তারের পর থেকে তিনি কারাগারে বন্দি ছিলেন।
ঢাকা/শিপন/মাসুদ