মানুষ তামিমকে দোষ দিয়ে মজা পায়: মালান
Published: 20th, January 2025 GMT
ইংলিশ বলেই বিরক্তিটা হয়তো চোখে মুখে ফুটিয়ে তুলতে পারেননি। নয় তো খবরের যে শিরোনাম কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যা চলছে, তার বহিঃপ্রকাশ সেরকম হতো না।
‘‘মিডিয়ার স্টোরি করার প্রয়োজন শুধু। যেখানে তামিম রয়েছে সেখানে হেডলাইন করা সহজ হয়ে যায়। মানুষ তাকে দোষ দিয়ে মজা পায়।’’ – চট্টগ্রামে বলেছেন মালান। সঙ্গে যোগও করেছেন, ‘‘আমার সঙ্গে তামিমের কিছুই হয়নি।’’
নানা কারণে বিপিএল জুড়েই তামিম ইকবাল আলোচনায়। মাঠের ইস্যু তো রয়েছেই। মাঠের বাইরের ইস্যুও ঢুকে যাচ্ছে অবলীলায়। গতকাল যেটা হয়েছে সেটা হয়তো কল্পনাতেও আনতে পারেননি।
আরো পড়ুন:
‘দুই ঘণ্টা আগে’ দায়িত্ব পাওয়া তাসকিনের নেতৃত্বে ফিল্ডিংয়ে রাজশাহী
রুদ্ধশ্বাস জয়ে ঢাকার ‘প্রতিশোধের’ হাসি
চিটাগং কিংসের বিপক্ষে ম্যাচে তামিম রান আউট হয়েছিলেন ডেভিড মালানের ভুল ডাকে। সতীর্থকে রান আউট করিয়ে স্যরি বলার ইঙ্গিতও দেন মালান। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তামিম কিছু একটা বলে বিরক্তি নিয়ে মাঠ থেকে বেরিয়ে যান। টিভি ক্যামেরায় দেখা যায়, মালান উত্তেজিত হয়ে কাউকে উদ্দেশ্য করে কিছু একটা বলেই চলেছেন। তাতে অনেকেই ভেবে নিয়েছিলেন, তামিমের কথার জেরেই মালান চটেছেন এবং কথা বলে যাচ্ছিলেন। যেই পরিস্থিতি পরবর্তীতে শান্ত করতে হয় চিটাগং কিংসের পেসার বিনুরা ফার্নান্দোকে।
আংশিক সেই ঘটনা দেখেই প্রথমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শুরু হয় সমালোচনা। তামিম যেহেতু ‘গান পয়েন্টে’ প্রতিদিনই আসছিলেন এবারও লক্ষ্যবস্তুও ছিলেন তিনি। এতোদিন তো শুধু প্রতিপক্ষ দলের খেলোয়াড়, বিসিবির সঙ্গে মনোমালিন্য। এবার নিজ দলের খেলোয়াড়ের বিরুদ্ধে ‘বিদ্রোহ।’
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসব ছড়িয়ে পড়তে দেখে আজ সকালে নিজের ফেসবুক পেইজে একটি পোস্ট করেন তামিম। যেখানে পুরো ঘটনা বিস্তারিত জানান। পরবর্তীতে দুপুরে টিম হোটেলের লবিতে ডেভিড মালানকেও ‘উটকো’ ঘটনা নিয়ে মুখ খুলতে হয়।
মালান বলেছেন, ‘‘আমরা দুজন একটা হতাশাজনক রান আউটে পড়েছিলাম। ওই ঘটনার পর প্রতিপক্ষ দলের একজন খেলোয়াড়ের মনে হয়েছে, এটা তার অধিকার যে আমার দিকে তেড়ে আসবে এবং কমেন্ট করবে। সেটাই হয়েছিল। আমিও তাকে পাল্টা উত্তর দিয়েছি। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা অন্য কেউ এবং গণমাধ্যমে এসেছে আমার ও তামিমের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়েছে। যা একদমই সত্য নয়।’’
প্রতিপক্ষ দলের খেলোয়াড় কে ছিলেন তা নিয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি মালান, ‘‘এটা এখানে বলার কথা নয়। যেটা মাঠে হয়েছে সেটা মাঠেই শেষ। আমরা হাত মিলিয়ে সামনে এগিয়ে গেছি। এটা আমার ও ওই খেলোয়াড়ের মধ্যে।’’
গণমাধ্যমে এরকম কিছু আসায় বিব্রত মালান, ‘‘আমার ও তামিমের মধ্যে একটা শব্দও বিনিময় হয়নি তখন। আমি হাত উঠিয়ে স্যরি বলেছি। তামিম উল্টো ঘুরে চলে এসেছিল। তামিম ও আমাদের মধ্যে কিছুই হয়নি।’’
তামিমের খ্যাতির কারণেই এমনটা হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে মালান বলেছেন, ‘‘হতে পারে। সে বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের বড় তারকাদের একজন। সে দেশের একজন হিরো। আমি মনে করি, তাকে যুক্ত করে কোনো হেডলাইন করা হলে বাড়তি নজর কাড়বে। মিডিয়ার প্রয়োজন শুধু ক্লিক এবং চমকপ্রদ হেডলাইন। যেটা পাঠক পছন্দ করবে। স্ক্যান্ডাল তৈরি করে।’’
তামিম নিজের পোস্টে লেখেন, ‘‘আমার সঙ্গে মালানের কিছুই হয়নি। মালান তো ওভাবে জবাব দিচ্ছিল প্রতিপক্ষের একজনকে! মাঠে দুই ব্যাটসম্যানের ভুল বোঝাবুঝি হতেই পারে। তাৎক্ষণিকভাবে হতাশা প্রকাশ করাও স্বাভাবিক। আমি রান আউট হওয়ার পরই মালান হাতের ইশারায় ‘স্যরি’ বলেছে। আমি সেদিকে তাকিয়ে মাঠের বাইরে চলে যাই। তার সঙ্গে কোনো কথাই হয়নি। কাছেই থাকা প্রতিপক্ষের একজন ফিল্ডার তখন মালানকে একটা কথা বলেছে, যা তার ভালো লাগেনি। মালান সেই ফিল্ডারকেই জবাব দিচ্ছিল, তার দিকেই এগিয়ে যাচ্ছিল। অথচ সেটাকেই অনেকে বানিয়ে ফেলেছে, আমার সঙ্গে নাকি মালানের ঝামেলা হয়েছে!’’
টিভিতে পুরো ঘটনা না দেখানোর কথা জানিয়ে তামিম যোগ করেন, ‘‘এরকম অনেক সময়ই অনেকে টিভিতে দু-একটি দৃশ্য দেখে নানারকম ধারনা করে ফেলেন। গত কয়েক দিনে আমাকে নিয়েও এরকম হয়েছে। কিন্তু কোনো ঘটনা তো হুট করে হয় না। এটার পেছনেও অনেক ঘটনা থাকে। মাঠে এরকম অনেক কিছুই হয়, যা টিভিতে পুরোপুরি ফুটে ওঠে না এবং সেটা উচিতও নয়। কিন্তু টিভিতে দু-একটি দৃশ্য দেখেই চূড়ান্ত ধারণা নেওয়া উচিত নয়। যাদের নিয়ে ঘটনা, যারা মাঠে থাকেন, তারা সবকিছু জানেন। আজকের উদাহরণ দিয়েই আবার বলছি, টিভিতে এক-দুই ঝলক দেখেই সিদ্ধান্তে পৌঁছে যাওয়া উচিত নয়।’’
চট্টগ্রাম/ইয়াসিন/আমিনুল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব প এল ত ম ম ইকব ল ক ছ ই হয় র ন আউট র একজন ই হয়ন
এছাড়াও পড়ুন:
শিক্ষক রায়হান অভিযুক্ত হলেও নাম নেই অস্ত্র ব্যবসায়ীর
সিরাজগঞ্জের শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজের শ্রেণিকক্ষে গত বছরের ৪ মার্চ শিক্ষার্থীকে গুলির একটি মামলায় গত ৩১ জানুয়ারি অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে ডিবি। এতে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীকে গুলি করা কলেজের কমিউনিটি মেডিসিনের প্রাক্তন শিক্ষক ডা. রায়হান শরীফকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। তবে অভিযোগপত্রে নাম নেই যার কাছ থেকে ডা. রায়হান অস্ত্র সংগ্রহ করেছিলেন সেই এস এস আল হোসাইন ওরফে সোহাগের। কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার নওদাপাড়ার সোহাগের বিরুদ্ধে হত্যা, অস্ত্র-বিস্ফোরক ও নাশকতার একাধিক মামলা আছে।
গত বছরের ৪ মার্চ ব্যাগভর্তি অস্ত্র-গুলি নিয়ে ক্লাসে শিক্ষার্থীদের ভয় দেখান শিক্ষক রায়হান। তার দুর্ব্যবহারের প্রতিবাদ করায় তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আরাফাত আমিন তমালকে লক্ষ্য করে শিক্ষক রায়হান গুলি করেন। শিক্ষার্থী তমাল বাম উরুতে গুলিবিদ্ধ হলেও বর্তমানে সুস্থ। ওই ঘটনায় শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ব্যাগভর্তি অবৈধ অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হন শিক্ষক রায়হান। তাঁর ব্যাগে লাইসেন্সবিহীন দুটি বিদেশি পিস্তল, দুটি জাপানি সামুরাই, ১০টি বার্মিজ ছুরি ও ৭৮ রাউন্ড তাজা গুলি পাওয়া যায়। ডা. রায়হানের বিরুদ্ধে সে সময় আহত শিক্ষার্থী তমালের বাবা বগুড়ার আবদুল্লাহ আল আমিন হত্যাচেষ্টা ও ডিবি পুলিশ বিস্ফোরক আইনে মামলা করেন। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার হন রায়হান। যদিও পরবর্তী সময়ে জামিন নিয়ে রায়হান এখন পলাতক। ঘটনার পর থেকে উধাও অস্ত্র ব্যবসায়ী সোহাগও।
পুলিশ সূত্র জানায়, ডা. রায়হান সিরাজগঞ্জ আদালতে স্বীকারোক্তি ও জবানবন্দি দেন। তিনি জানান, সোহাগের কাছ থেকেই সব অস্ত্র কিনেছেন। এরপর অস্ত্র ও বিস্ফোরক আইনে সোহাগ ও রায়হানের বিরুদ্ধে মামলা করেন সিরাজগঞ্জ ডিবি পুলিশের সাবেক এসআই ওয়াদুত আলী। অভিযোগ উঠেছে, অভিযোগপত্র থেকে সোহাগের নাম বাদ দিয়েছেন ডিবির বর্তমান তদন্ত কর্মকর্তা এসআই নাজমুল ইসলাম ও ইউনিট ওসি ইকরামুল হোসাইন। ডিবির তদন্ত ও দাখিলকৃত অভিযোগপত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ও তাঁর বাবা।
সিরাজগঞ্জ ডিবির এসআই নাজমুল হক নতুন তদন্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করলেও তিনি এ বিষয়ে বক্তব্য দিতে রাজি হননি। তাঁর ইউনিটপ্রধান বর্তমান ওসি ইকরামুল হোসাইন আজ ২৯ এপ্রিল প্রধান উপদেষ্টার কাছে থেকে পুলিশ পদক নিতে ঢাকায় রয়েছেন। তিনি ফোনে দাবি করেন, ডা. রায়হান আদালতে ১৬৪ ধারায় বিচারকের সামনে সোহাগের নাম বললেও তাঁর বাবা বা গ্রামের নাম জানাতে পারেননি। মামলার বাদী এজাহারে যে সোহাগের নাম-ঠিকানা উল্লেখ করেন, তিনি এতে জড়িত নন। বিএনপি করার কারণে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে হয়রানি করতেই আগের সরকারের সময় সাবেক এসপি ও ওসি সোহাগকে জড়িয়েছেন। শিক্ষক রায়হান যে সময় অস্ত্রগুলো কিনেছিলেন, তার আগে থেকেই সোহাগ ঢাকা ও ভারতে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। পরবর্তী সময়ে ইমিগ্রেশন ও হাসপাতাল সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
এ বিষয়ে সাবেক এসপি আরিফুল ইসলামের বক্তব্য পাওয়া না গেলেও মামলার বাদী ডিবির সাবেক এসআই ওয়াদুত আলী বলেন, শিক্ষক রায়হানের সঙ্গে মোবাইল ফোনে সোহাগের কথোপকথন ও লেনদেনের বিষয় নিশ্চিত হওয়া যায়। তাই এজাহারে সোহাগের নাম ও মোবাইল নম্বর উল্লেখ করা হয়।
সমকালের অনুসন্ধানেও সাবেক এসআই ওয়াদুত আলীর এজাহার অনুযায়ী সোহাগের ফোন নম্বরের কল ডিটেইল এবং এনআইডি নম্বর সংগ্রহ করা হয়। সেখানে স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা সোহাগেরই তথ্য ও ছবি পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে অজ্ঞাত স্থান থেকে শিক্ষক রায়হান শরীফ গতকাল ফোনে বলেন, ‘আমি মানসিকভাবে বিধ্বস্ত। ডিবির চার্জশিটের বিষয়টি জানি না।’
মামলার সাবেক তদন্ত কর্মকর্তা এসআই ইব্রাহিম হোসেন বলেন, চার্জশিট থেকে সোহাগকে বাদ দেওয়ার বিষয়টি আত্মঘাতী ও তদন্তের নীতিমালার বাইরে।
জানা গেছে, ভেড়ামারার স্বেচ্ছসেবক দলের সদস্য সচিব কথিত অস্ত্র ব্যবসায়ী সোহাগ। গতকাল তিনি ফোনে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে অস্ত্র, খুন ও নাশকতা মামলাগুলো রাজনৈতিক। আমি অস্ত্র ব্যবসায়ী নই। রাজনৈতিক এক নেতার বিরুদ্ধে মামলা করায় আমাকে ফাঁসানো হয়েছে।
রাজশাহী রেঞ্জ ডিআইজি মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, তদন্ত কর্মকর্তা স্বাধীন হলেও পুলিশ সুপার, সার্কেল অফিসার ও সংশ্লিষ্ট ইউনিটের ওসি সুপারভাইজরি অথারিটি। বিষয়টি খতিয়ে দেখব।