পোশাকের চেয়ে মানসিকতা পরিবর্তন জরুরি
Published: 20th, January 2025 GMT
পুলিশ, র্যাব ও আনসারের নতুন পোশাকের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। তিন বাহিনীর ইউনিফর্ম বদল নিয়ে সরকারের যুক্তি– বাহিনীগুলোকে ঢেলে সাজাতে প্রতীকী অর্থে এই পরিবর্তন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বলেছেন, বাহিনীর সদস্যদের মন-মানসিকতা পরিবর্তন করা জরুরি। সে লক্ষ্যে পোশাক পরিবর্তন করা হচ্ছে। শুধু পোশাক নয়; বাহিনীকে জনবান্ধব করতে হলে প্রশিক্ষণেও পরিবর্তন আনতে চায় সরকার। পুলিশের নতুন পোশাক হবে আয়রন বা লোহার রঙের; র্যাবের হবে অলিভ বা জলপাই আর আনসারের পোশাক হবে গোল্ডেন হুইট বা সোনালি গমের রঙের।
বলাবাহুল্য, এই তিনটি বাহিনীর মধ্যে জনতার সবচেয়ে কাছাকাছি থাকে পুলিশ। পুলিশের পোশাক পরিবর্তন নিয়ে দাবি ওঠে মূলত জুলাই-আগস্টে বাহিনীটির বিতর্কিত ভূমিকা নিয়ে। ওই আন্দোলনে দুই হাজারের বেশি ছাত্র-জনতা শহীদ হয়। আহত হয় ২০ হাজারের বেশি মানুষ। ফ্যাসিবাদী আওয়ামী গোষ্ঠীর সঙ্গে ছাত্র-জনতার এই লড়াইয়ে স্বাভাবিকভাবেই সরকারের পক্ষ নিতে হয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন বাহিনী পুলিশকে। ফলে লড়াইয়ে জয়ী ছাত্র-জনতা পুলিশকে পরাজিত শক্তির দোসর হিসেবেই ভাবতে শুরু করে। ফলস্বরূপ ৫ আগস্টের পর প্রায় এক সপ্তাহ কোনো পুলিশ সদস্যকে মাঠে দেখা যায়নি। থানাগুলোয় ঘুঘু চরেছে। কিন্তু এই এক সপ্তাহে জনগণও ভাবতে বাধ্য হয়েছে– একটি পুলিশবিহীন রাষ্ট্র কতটা অনিরাপদ। তা ছাড়া একটি বাহিনীর সব সদস্য তো আর খারাপ হতে পারে না। ফলে জনগণ ফ্যাসিস্ট আমলের চিহ্নিত সুবিধাভোগী অফিসার ছাড়া অন্যদের বিষয়ে সহজ করে ভাবতে থাকে। সরকারের পক্ষ থেকেও পুলিশ বাহিনীকে কাজে ফেরানোর চেষ্টা শুরু করে পুলিশ। তখন বাহিনীর ভেতর থেকেই অনেকে আপত্তি জানায়– ছাত্র-জনতার রক্তে রঞ্জিত পোশাকে কাজ করতে তারা চান না। বিষয়টি সরকার ও জনগণ প্রতীকী পরিবর্তন হিসেবে নিয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের তৎকালীন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.
সেই সময় তিনি বলেন, ‘অনেকের মন ভেঙে গেছে। এই ইউনিফর্ম পরে পুলিশ আর কাজ করতে চাইছে না। খুব দ্রুতই তা পরিবর্তন করা হবে। এসব বিষয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে আলোচনার পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। পুলিশ কমিশন হওয়া উচিত। সেই কমিশনের অধীনে পুলিশ পরিচালিত হবে। তারা কোনো রাজনৈতিক দলের অধীনে থাকবে না। পুলিশকে যেন রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার না করা হয়– সেটা নিশ্চিত করতে হবে।’
অবশেষে সোমবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হলো। নতুন পোশাক নিয়ে ফ্যাশন সচেতন বা সৌন্দর্সপিপাসুদের নানা অভিমত থাকতে পারে। কিন্তু সচেতন নাগরিকের দৃষ্টি অন্যখানে। তারা মনে করে, পোশাকের রং বা ডিজাইন যা-ই হোক, বাহিনীর গুণগত পরিবর্তন যেন নিশ্চিত হয়। বিগত সময়ের বাহিনীগুলোর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের যেন আর পুনরাবৃত্তি না হয়।
রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতায় গেলে পুলিশকে লাঠিয়াল বাহিনী ভাবতে শুরু করে। বিরোধী দলে থাকলে প্রতিপক্ষ ভাবে। এই দুই মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। পুলিশকে রাষ্ট্রের জননিরাপত্তায় কাজ করার সুযোগ দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে জনগণের উচিত সঠিক তথ্য দিয়ে এবং আইনশৃঙ্খলা নীতি মেনে পুলিশকে দায়িত্ব পালন ও তদন্তে সহায়তা করা।
পুলিশে অতিউৎসাহী কিছু সদস্য থাকে। তারা বিভিন্ন সময় আন্দোলন দমাতে কমান্ডের বাইরে গিয়ে অপেশাদার আচরণ করে। এসব সদস্যকে জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। পুলিশ রাষ্ট্রের বাহিনী। তারা কোনো ব্যক্তির শিষ্য বা দলের কর্মী নয়– এটি তাদের মাথায় রেখে পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে। ঔপনিবেশিক খাজনা আদায়ের লাঠিয়াল বাহিনী থেকে আধুনিক কল্যাণ রাষ্ট্রের সেবকের ভূমিকায় পুলিশকে সামনে থেকে কাজ করতে হবে। পুলিশে এখন উচ্চশিক্ষিত ছেলেমেয়ে যোগ দিচ্ছে। এসব তরুণ নিজেরাও পরিবর্তনের সারথি। নতুন একটি পুলিশ বাহিনী গড়তে এই তরুণ তুর্কিরা বড় শক্তি হতে পারে।
ফ্যাসিবাদের পতনের পর দেশে অন্তত এক সপ্তাহ পুলিশ ছিল না। আমরা তখন টের পেয়েছি, নগরবাসীর একটি নিশ্চিন্ত মাথায় এক পশলা ঘুমের জন্য পুলিশ কত কাজ করে! সঙ্গে সঙ্গে এটিও প্রমাণিত– ওই সময়ের মধ্যে আমরা যা কল্পনা করেছিলাম, তার চেয়ে অনেক কম দুর্ঘটনা ঘটেছে। ফলে এই বাংলাদেশ নিয়ে হতাশাবাদীরা যতই হতাশা প্রকাশ করুক, আমরা এখনও আশা ছাড়তে চাই না। বাংলাদেশ জিতবেই। সে জয়ে জনগণের সবচেয়ে কাছের বাহিনী হিসেবে পুলিশ সম্মুখসারির যোদ্ধারূপে ভূমিকা রাখবে। তাই বলতে চাই– পোশাকের রং যেমন হোক, কর্ম হোক ভালো। একই কথা আমরা বলতে চাই র্যাব ও আনসার বাহিনীর ক্ষেত্রেও।
অনি আতিকুর রহমান: সহসম্পাদক, সমকাল
atikbanglaiu@gmail.com
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আইন ছ ত র জনত সরক র র ক জ কর মন ত র সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা হাবিবকে নিয়ে বাবুলের গণসংযোগ ও ৩১ দফার লিফলেট
বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঘোষিত রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের রূপ রেখার ৩১ দফা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে নারায়ণগঞ্জ শহরে গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ করেছেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব।
রোববার (২ নভেম্বর) বিকেলে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী বিএনপি নেতা আবু জাফর আহাম্মেদ বাবুলের নেতৃত্বে গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ কর্মসূচীতে উপস্থিত ছিলেন হাবিবুর রহমান হাবিব।
এদিন আবু জাফর আহাম্মেদ বাবুলের নেতৃত্বে শহরের মন্ডলপাড়া, বাবুরাইল, বেপারীপাড়া, দেওভোগ, আখড়া, জিউস পুকুর, নন্দীপাড়া, বোয়ালিয়া খালসহ বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করা হয়।
এসময় বিএনপি ও বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও স্থানীয় জনগণ উপস্থিত ছিলেন। লিফলেট বিতরণকালে আবু জাফর আহাম্মেদ বাবুল বাবুরাইলে একটি ক্রীড়া সংগঠনের ক্লাব উদ্বোধন করেন।
এরপর নাসিকের সাবেক প্যানেল মেয়র ওবায়েদ উল্লাহর বাসায় গিয়ে তার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। লিফলেট বিতরণকালে হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, বাবুল ভাই আমার অত্যন্ত প্রিয়।
আমি আশা করি আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সব দিক বিবেচনা করে সঠিক সিদ্ধান্ত নিবেন। জনগণ যাকে চাইবে যার ভেতরে দোষ ত্রুটি নেই এমন লোককে মনোনয়ন দেয়া হবে।
এবারের নির্বাচনে আমাদের বিরুদ্ধ ষড়যন্ত্র হচ্ছে। এই ষড়যন্ত্রকে মোকাবেলা করে জনগণকে নিয়ে যিনি পাশ করতে পারবে তাকে মনোনয়ন দেয়া হবে।
বাবুল ভাই আপনাদের নিয়ে কাজ করছেন আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দৃষ্টিতেও আছেন। আশা করি দল তাকে মূল্যায়ন করবে।