চট্টগ্রামের খুলশী এলাকায় একটি ফ্ল্যাটে ডাকাতির সময় ১২ জনকে আটক করেছে পুলিশ। শুক্রবার রাতে সানমার রয়্যাল রিচ বিল্ডিংয়ের অষ্টম তলায় যমুনা অয়েল কোম্পানির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক গিয়াস উদ্দিন আনসারীর ফ্ল্যাট থেকে তাদের আটক করা হয়েছে।

পুলিশ জানায়, ডাকাত দলের সদস্যরা নিজেদেরকে প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) সদস্য বলে পরিচয় দিয়েছিল। তাদের কাছ থেকে ডাকাতি কাজে ব্যবহৃত একটি শাবল, নয়টি ডিজিএফআইর ভুয়া পরিচয়পত্র, তিনটি খেলনা পিস্তল, ২৫টি খালি প্লাস্টিকের বস্তা, দুইটি দঁড়ি ও দুইটি গামছা ও একটি কালো রঙের মাইক্রোবাস জব্দ করা হয়েছে। 

প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, প্রায় ১৫ জন ডাকাত দুটি মাইক্রোবাসে করে রাত সাড়ে ১০টার দিকে খুলশী থানাধীন দক্ষিণ খুলশী ৩ নম্বর রোডের সানমার রয়েল রিজ অ্যাপার্টমেন্টে আসে। তারা নিরাপত্তাকর্মীর হাত-পা ও চোখ বেঁধে ফেলে। সেই সঙ্গে তারা তাদের মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয় এবং সিসিটিভির হার্ডডিস্কও নিয়ে যায়। ডাকাতরা ইন্টারকম সংযোগও বিচ্ছিন্ন করে দেয়।

এরপর ডাকাত দলটি গিয়াস উদ্দিন আনসারীর ফ্ল্যাটে ঢুকে মালামাল লুটের চেষ্টা করে। তারা যখন সিন্দুক ভাঙার চেষ্টা করছিল, তখন প্রতিবেশীরা ৯৯৯-এ ফোন করে পুলিশকে খবর দেয়।

খবর পেয়ে খুলশী থানা পুলিশের একটি দল এলাকাটি ঘিরে ফেলে এবং ভবনে অভিযান চালিয়ে ১২ জন ডাকাতকে আটক করে। এ সময় তিনজন পালিয়ে যান।

আটক ১২ জন হলেন- মো.

ওয়াজেদ রাকিব (৩৬), মো. হোসেন (৪০), মো রোকন (৩৯), মো. ওসমান (৪০), মহিউদ্দিন (৪৫), আব্দুল সবুর (৩৭), মো. রুবেল হোসেন (২৬), মো. ইয়াকুব আলী (৩৯), মোজাহের আলম (৫৫), মো. হারুন অর রশিদ (৩৬), আব্দুল মান্নান (৩৯) ও শওকত আকবর ইমন (৩১)। 

খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মজিবুর রহমান কাওসার বলেন, 'প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ জানতে পেরেছে যে ডাকাত দলের সদস্যরা বিভিন্ন পেশায় জড়িত। তাদের সহযোগীদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারের জন্য জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।'

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (অপরাধ) রইস উদ্দিন জানান, পূর্ব পরিকল্পিতভাবে ডাকাতি করার উদ্দেশ্যে সানমার রয়্যাল রিচ বিল্ডিংয়ের অষ্টম তলায় যমুনা অয়েল কোম্পানির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক গিয়াস উদ্দিন আনসারীর ফ্ল্যাট প্রবেশ করে। সেখানে অভিযান চালিয়ে ১২ জন ডাকাতকে আটক করা হয়েছে।

রইস উদ্দিন আরও বলেন, এ ঘটনায় অ্যাপার্টমেন্ট মালিক বাদী হয়ে মামলা করেছেন। পরে তাদের সেই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

দেশের জন্য যা যা করা দরকার, সব করেছেন আহমদ ছফা

আহমদ ছফাকে বুদ্ধিজীবীদের অনেকেই সহ্য করতে পারতেন না। কিন্তু তাঁর বেশির ভাগ কথা এখন সত্যে পরিণত হয়েছে। দেশের সঙ্গে তিনি প্রাণকে যুক্ত করেছিলেন। দেশকে ভালোবেসে যা যা করা দরকার, তার সবকিছু করেছেন।

শুক্রবার বিকেলে আহমদ ছফা স্মৃতি বক্তৃতায় সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান এসব কথা বলেন। এশীয় শিল্পী ও সংস্কৃতি সভা জাতীয় জাদুঘরের সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে ‘আহমদ ছফা স্মৃতি বক্তৃতা-২০২৫’ আয়োজন করে। ‘আহমদ ছফার রাষ্ট্র বাসনা এবং জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পরিচয়’ শীর্ষক স্মৃতি বক্তৃতা দেন বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটের পরিচালক ফারুক ওয়াসিফ। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন এশীয় শিল্পী ও সাংস্কৃতিক সভার সভাপতি জহিরুল ইসলাম। আহমদ ছফা (১৯৪৩–২০০১) ছিলেন লেখক, প্রগতিশীল সাহিত্যকর্মী ও রাজনৈতিক চিন্তক।

অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান বলেন, ‘আহমদ ছফা ছিলেন মূলত সাহিত্যিক। তবে তিনি সাহিত্যের গণ্ডি পেরিয়ে চিন্তাকে রাষ্ট্রভাবনা বিষয়ে প্রসারিত করেছিলেন। তিনি ছিলেন অনেক দূরদৃষ্টিসম্পন্ন। তিনি এমন বিষয় নিয়ে চিন্তা করেছিলেন, তা অনেক সময় আমরা বুঝতে পারি না।’ ছফা বলেছিলেন, ‘বিপ্লবের একটি নতুন ভাষা থাকতে হবে। মানুষের রাষ্ট্রের বাসনা বুঝতে হবে। দেশটা আমার নিজের বলে মনে করলে তার সমস্যার সমাধানও আমার নিজের মতো করেই ভাবতে হবে।’

স্মৃতি বক্তৃতায় ফারুক ওয়াসিফ বলেন, আহমদ ছফা রাষ্ট্র নিয়ে গভীরভাবে ভেবেছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ যে ধরনের দেশ সেই বৈশিষ্ট্যকে ধারণ করার মতো কোনো তাত্ত্বিক রাজনৈতিক রূপরেখা নেই। কোনো রাজনৈতিক দলও নেই।

ফারুক ওয়াসিফ বলেন, ‘আমাদের মুক্তিযুদ্ধের পূর্বপরিকল্পনা ছিল না। একাত্তর ছিল অপরিকল্পিত। একইভাবে জুলাই অভ্যুত্থানও হয়েছে অপ্রস্তুতভাবে। এখন জুলাইয়ের নেতারা প্রান্তিক শক্তিতে পরিণত হয়েছেন। বড় দলের যে সামর্থ্য আছে, সেই শক্তি–সামর্থ্য তাদের নেই। তারা মিত্রহীন হয়ে পড়েছে।’

আহমদ ছফার বন্ধু ব্যবসায়ী আবদুল হক বলেন, জনগণ রাষ্ট্রের পরিবর্তন চেয়েছিল। বাংলাদেশের নবীন প্রজন্ম সেই পরিবর্তন ঘটিয়েছে। সারা বিশ্ব দেখেছে বাংলাদেশের মানুষ প্রতিবাদ করতে জানে। এখন একটি নতুন রাজনীতি দরকার।

সম্পর্কিত নিবন্ধ