‘বাংলাদেশ ডিপ্লোমেটিক এক্সিলেন্স মেডেল’ পেলেন সৌদি রাষ্ট্রদূত
Published: 28th, January 2025 GMT
‘বাংলাদেশ ডিপ্লোমেটিক এক্সিলেন্স মেডেল’ পেয়েছেন সৌদি আরবের বিদায়ী রাষ্ট্রদূত ঈসা ইউসুফ ঈসা আল-দুহাইলান। তার হাতে এ পুরস্কার তুলে দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন।
দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ব্যাপ্তি ও বাংলাদেশে সৌদি বিনিয়োগ বাড়ানোর পাশাপাশি সৌদি আরবে বাংলাদেশি কর্মী নেওয়ার ক্ষেত্রে অবদানের জন্য তাকে এ পুরস্কার দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক অনুষ্ঠানে সৌদি রাষ্ট্রদূতকে এ পুরস্কার দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো.
পুরস্কার পেয়ে উচ্ছ্বসিত ঈসা ইউসুফ ঈসা আল-দুহাইলান বলেছেন, “আমি সব সময় মনে রাখব বাংলাদেশের জাতীয় সংগীতের কথা—‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি।’ আমি সৌদি আরবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হয়ে থাকব।”
ঈসা ইউসুফ ঈসা আল-দুহাইলান ঢাকায় পাঁচ বছর রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালনের সময় নিজেকে বাংলাদেশের বন্ধু প্রমাণ করেছেন। তার ভূমিকার কারণে করোনাভাইরাস মহামারিকালেও বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবে কর্মী যাওয়া পুরোপুরি বন্ধ হয়নি।
এছাড়াও ঢাকায় সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরসহ দুই দেশের মধ্যে উচ্চপর্যায়ের সফর বিনিময়, বাংলাদেশে সৌদি বিনিয়োগ ও দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বৃদ্ধি, ‘রুট টু মক্কা ইনিশিয়েটিভ’সহ বিভিন্ন সৌদি উদ্যোগে বাংলাদেশকে যুক্ত করার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রদূত হিসেবে ঈসা ইউসুফ ঈসা আল-দুহাইলান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।
ঈসা ইউসুফ ঈসা আল-দুহাইলান ২০২০ সালের মার্চে বাংলাদেশে রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। পরের পাঁচ বছরে শুধু সৌদি আরবেই প্রায় ১৪ লাখ কর্মী গেছেন বাংলাদেশ থেকে। সৌদি ভিসা সহজ হয়েছে।
পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মো. তৌহিদ হোসেন বলেছেন, “সৌদি আরব আমাদের বিশ্বস্ত বন্ধু। ৩০ লাখ সৌদি প্রবাসী বাংলাদেশে রেমিট্যান্স আনতে বিশেষ ভূমিকা রাখছেন। দুই দেশের মধ্যে শক্তিশালী বন্ধন আছে। বাংলাদেশে সৌদি আরবের বিনিয়োগ এই বন্ধনকে আরো দৃঢ় করেছে। আমরা জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য একযোগে গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। উভয় দেশই বিশ্বব্যাপী স্থিতিশীলতা ও সম্প্রীতির পক্ষে সমর্থন জানানোর ক্ষেত্রে ধারাবাহিকভাবে ঐক্যবদ্ধ থেকেছে।”
আগামী দিনে দুই দেশের সম্পর্ক আরো ভালো হবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন।
‘বাংলাদেশ ডিপ্লোমেটিক এক্সিলেন্স মেডেল’ পাওয়ায় বিদায়ী সৌদি রাষ্ট্রদূতকে অভিনন্দন জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা।
ঢাকা/হাসান/রফিক
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর পরর ষ ট র উপদ ষ ট
এছাড়াও পড়ুন:
গন্ধগোকুলের বাঁচার লড়াই
দেশের অনেক এলাকা থেকেই গন্ধগোকুল হারিয়ে গেছে; কিন্তু পাবনার বেড়া পৌর এলাকার কয়েকটি মহল্লায় এখনো এ প্রাণীর বিচরণ চোখে পড়ে। তবে আগের মতো অত বেশি দেখা যায় না। প্রকৃতি সংরক্ষণবিষয়ক সংস্থাগুলোর আন্তর্জাতিক জোটের (আইইউসিএন) তালিকা অনুযায়ী এগুলো ‘বিপদাপন্ন’ প্রাণী।
প্রাণীটির আসল নাম গন্ধগোকুল হলেও বেড়া উপজেলায় এটি ‘নেল’ নামে পরিচিত। অনেকে এগুলোকে বাগডাশও বলেন। এর শরীর থেকে পোলাও চালের গন্ধের মতো মিষ্টি গন্ধ ছড়ায়। সন্ধ্যার পর অন্ধকার নামলে পৌর এলাকার বিভিন্ন বাড়ির ঘরের চাল ও গাছের ওপর দিয়ে শুরু হয় এর চলাচল। এ সময় এর শরীরের গন্ধ উৎপাদনকারী গ্রন্থি থেকে রস নিঃসৃত হতে থাকে বলে যে স্থান দিয়েই এরা যাক না কেন, বেশ কিছুক্ষণ ধরে সেখানে সেই গন্ধ নাকে আসে। তখন মহল্লার বাসিন্দারা বুঝতে পারেন, আশপাশে হয়তো গন্ধগোকুল আছে, নয়তো একটু আগেই আশপাশ দিয়ে গেছে।
দীর্ঘদিন ধরেই গন্ধগোকুল বা নেল নামের প্রাণীটির সঙ্গে বেড়া পৌরবাসীর সম্পর্ক। বেশির ভাগ বাসিন্দার কাছেই প্রাণীটি বেশ পছন্দের। তবে অল্প কিছু মানুষ এগুলোকে অপছন্দ করেন গৃহপালিত হাঁস-মুরগি, কবুতর ধরে নিয়ে যাওয়ার কারণে। তবে গত ১০-১২ বছরের মধ্যে পৌরবাসী এই প্রাণীকে ফাঁদ পেতে ধরেছেন বা এগুলোর কোনো ক্ষতিসাধন করেছেন বলে শোনা যায় না।
বন্য প্রাণী ও পরিবেশবিশেষজ্ঞদের মতে, গন্ধগোকুল প্রকৃতির উপকারী একটি নিশাচর প্রাণী। গন্ধগোকুল ব্যাঙ, ইঁদুরসহ ক্ষতিকর পোকামাকড় খেয়ে উদ্ভিদের বংশবৃদ্ধিতে দারুণ ভূমিকা রাখে; কিন্তু ভুল ধারণার কারণে অনেকেই প্রাণীটির জীবন হুমকির দিকে ঠেলে দিচ্ছেন। একটি সময় ছিল, যখন এগুলোকে দেশের প্রায় সর্বত্রই— বনাঞ্চল বা বনসংলগ্ন ঝোপঝাড় বা গ্রামাঞ্চলে দেখা যেত। তবে এখন এগুলো বিলুপ্তির পথে।
গন্ধগোকুল তাল ও খেজুরের রস পান করে, ইঁদুর, ছোট পাখি ও পোকামাকড় প্রভৃতি খেয়ে জীবনধারণ করে; কিন্তু কখনো কখনো গৃহপালিত হাঁস-মুরগি বা কবুতর ধরে নিয়ে যায় বলে মানুষ এগুলো ফাঁদ পেতে ধরে হত্যা করে। আবার অনেক সময় রাস্তা পারাপারের সময় গাড়িচাপায়ও মারা যায়। এতে এগুলোর অস্তিত্ব কিছুটা হুমকির মুখে পড়েছে। এগুলোকে বিপদাপন্ন বলা যেতে পারে।
পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গন্ধগোকুলের রয়েছে বিশেষ এক ভূমিকা। খাদ্যশৃঙ্খলের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অবস্থান প্রাণীটির। এগুলো মূলত ক্ষতিকর পোকামাকড় ও ফলমূল খেয়ে এর বীজ বিস্তারের মাধ্যমে পরিবেশের প্রচুর উপকার সাধন করে। যেমন বটের ফল বা অন্যান্য ফল যখন খায়, তখন এর মলের দ্বারা নির্গত সেই বীজগুলো সফল উদ্ভিদে পরিণত হয়। অর্থাৎ এর পেটের ভেতর দিয়ে ফলের বীজগুলো গজানোর উপযুক্ত পরিবেশ (জার্মিনেশন) পায় বলে তা পরবর্তী সময়ে বীজের অঙ্কুরোদ্গমে শতভাগ কার্যকর হয়ে থাকে।
বছরে সাধারণত দুবার প্রজনন করে। গর্ভধারণকাল দুই মাসের কিছু বেশি। পুরোনো গাছের খোঁড়ল, গাছের ডালের ফাঁক, পরিত্যক্ত ঘর, ধানের গোলা বা তাল-সুপারির আগায় ছানা তোলে। সাধারণত প্রতিবারই ছানা হয় তিনটি।
বেড়ার মনজুর কাদের মহিলা কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত সহকারী অধ্যাপক আবদুস সালাম বলেন, ‘দেশের অনেক এলাকা থেকেই গন্ধগোকুল বিলুপ্ত হতে বসেছে। তবে বেড়া পৌর এলাকায় এগুলোর বিচরণ যেমন কিছুটা বেশি, তেমনি পৌরবাসীও এগুলোর প্রতি সহানুভূতিশীল।’
প্রাণীটির ছবি তুলে রাজশাহী বিভাগীয় বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ অধিদপ্তরের বন্য প্রাণী পরিদর্শক জাহাঙ্গীর কবিরের কাছে পাঠালে তিনি সেটিকে ‘বাগডাশ’বলে শনাক্ত করেন। তিনি বলেন, ‘প্রাণীটির অস্তিত্ব এখনো দেশের বিভিন্ন জায়গায় আছে। এর মধ্যে বেড়া পৌর এলাকায় এগুলোর বিচরণ কিছুটা বেশি বলে শুনেছি।’
বেড়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, বাগডাশ বা গন্ধগোকুল মানুষের কাছাকাছি থাকে; কিন্তু মানুষ দেখলে খুবই ভয় পায়। খুবই লাজুক স্বভাবের প্রাণী এটি। আবাসভূমি ধ্বংস ও হাঁস-মুরগি বাঁচানোর জন্য ব্যাপক নিধনের কারণে এগুলো এখন বিপন্ন। তবে প্রাণীটি কিন্তু প্রকৃতির বন্ধু। তাই সবারই উচিত এগুলোর প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া।