Prothomalo:
2025-10-20@07:01:39 GMT

তেল চুরি শুরু জাহাজ থেকে

Published: 20th, October 2025 GMT

সরকারি তেল কোম্পানিতে তেল চুরির ঘটনা মোটামুটি নিয়মিতই ধরা পড়ে, তদন্ত কমিটিও হয়। তবে চুরি থামে না। যমুনা অয়েল কোম্পানির এক প্রতিবেদন বলছে, ২০২০ সালের ২৩ এপ্রিল রাজশাহীতে রেল ওয়াগনে রাখা ৫ হাজার লিটার ডিজেল পাচারের সময় কোম্পানির একজন কর্মকর্তাসহ কয়েকজন রেলওয়ে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন। পাঁচ বছর আগের সেই মামলা এখনো বিচারাধীন।

আট বছর আগে ২০১৭ সালের জুলাইয়ে চাঁদপুরের যমুনার ডিপোতে অবৈধভাবে ৭ লাখ লিটারের বেশি ডিজেল বিক্রির ঘটনায় ডিপো কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠে। পরের মাসেই এ ঘটনায় প্রতিবেদন দেয় তদন্ত কমিটি। জড়িতদের সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। তাঁরা এখনো বহিষ্কার রয়েছেন। দুদকেও তদন্ত চলমান আছে। তবে পুরো চক্র শনাক্ত না হওয়ায় চুরি থামছে না।

জ্বালানি তেল আমদানি ও উৎপাদনের কাজটি করে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। বাজারে সেই তেল বিক্রি করে বিপিসির আওতাধীন তিন কোম্পানি পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা। কোম্পানিগুলো তেল বিক্রি থেকে নির্দিষ্ট কমিশন পায়। তেল বিক্রির লাভ বা লোকসানের দায় বিপিসির। তবে নির্দিষ্ট পরিচালন ক্ষতি (অপারেশনাল লস) বাদ দিয়ে তেল বিক্রির হিসাব বুঝিয়ে দিতে হয় কোম্পানিগুলোকে।

মুনা অয়েল কোম্পানির এক প্রতিবেদন বলছে, ২০২০ সালের ২৩ এপ্রিল রাজশাহীতে রেল ওয়াগনে রাখা ৫ হাজার লিটার ডিজেল পাচারের সময় কোম্পানির একজন কর্মকর্তাসহ কয়েকজন রেলওয়ে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন। পাঁচ বছর আগের সেই মামলা এখনো বিচারাধীন।

দুই ধরনের ক্ষতি হিসাব করার সুযোগ পায় তেল কোম্পানি। একটি রূপান্তরজনিত ক্ষতি। বিষয়টি হলো, যখন তাপমাত্রা বেশি থাকে, তখন তেল পরিমাণে বেড়ে যায়। বিপিসি সূত্র বলছে, তেল কেনার সময় ১৫ ডিগ্রি তাপমাত্রায় তেল পরিমাপ করে নেয় বিপিসি। তবে দেশের ভেতরে তেল সরবরাহের সময় তারা মাপে ৩০ ডিগ্রি তাপমাত্রায়। বিপিসির একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা উদাহরণ দিয়ে বলেন, তাপমাত্রার এ তারতম্যের কারণে ৩০ হাজার টন তেল বেড়ে ৩০ হাজার ৩০০ টন হয়ে যায়। দেশে শীতের তিন মাস ছাড়া বছরের বাকি সময় তেল বাড়ে। বিজ্ঞানের এই সূত্র চোরদের জানা আছে।

আরও পড়ুন‘তেল চুরি’, বানিয়েছেন ব্রাজিল বাড়ি, ফ্ল্যাটসহ হয়েছেন সম্পদের মালিক ১৮ অক্টোবর ২০২৫

আরেকটি কাজের সময়কার ক্ষতি। দুটি মিলে পরিচালন ক্ষতি হিসেবে শূন্য দশমিক ৩০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় পায় তারা। বছর শেষের হিসাবে এর চেয়ে কমই ক্ষতি হয় তেল কোম্পানির। যদিও হিসাবে নানা রকম গরমিল আছে।

বিপিসি সূত্র বলছে, তেল কেনার সময় ১৫ ডিগ্রি তাপমাত্রায় তেল পরিমাপ করে নেয় বিপিসি। তবে দেশের ভেতরে তেল সরবরাহের সময় তারা মাপে ৩০ ডিগ্রি তাপমাত্রায়।

যমুনা তেল কোম্পানির ফতুল্লা, দৌলতপুর ও বাঘাবাড়ী ডিপোর গত এক বছরের (২০২৪-২৫) তেলের হিসাব সংগ্রহ করে বিশ্লেষণ করেছে প্রথম আলো। বাঘাবাড়ির হিসাব বলছে, রূপান্তরের সময় তাপমাত্রা কমায় অক্টোবর থেকে মার্চ—ছয় মাস তাদের তেলের সার্বিক পরিমাণ কমেছে। বাকি ছয় মাস বেড়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি কমেছে জানুয়ারিতে, প্রায় ১ শতাংশ, যা সোয়া ২ লাখ লিটারের সমপরিমাণ। যদিও জানুয়ারিতে কাজের সময় তাদের তেল বেড়েছে ১৩ হাজার ৪৩৭ লিটার।

দৌলতপুর ডিপোর হিসাব বলছে, রূপান্তরে তেল কমেছে সেপ্টেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত। যদিও এই আট মাসে কাজের সময় তাদের তেল বেড়েছে। এর মধ্যে এপ্রিলে রূপান্তরে ক্ষতি হয়েছে ৫৩ হাজার লিটার, আর কাজের সময়ে বেড়েছে ৯৬ হাজার লিটার। তাতে সব মিলে এ মাসে তাদের কোনো ক্ষতি হয়নি। ফতুল্লা ডিপোর হিসাব বলছে, ডিসেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত চার মাস রূপান্তরে ক্ষতি হয়েছে ফতুল্লায়। বাকি আট মাস তাদের তেল বেড়েছে।

তেল চুরি হয় কীভাবে? এর উত্তর খুঁজে বের করতে বিপিসি ও তেল কোম্পানির কর্মকর্তা, জাহাজ, সমুদ্রে তেল খালাসের জেটি, ডিপোর কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলেছে প্রথম আলো।

কোম্পানির দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, তাঁরা বিপিসির নির্ধারিত পরিচালন ক্ষতির চেয়েও অপচয় কম করছেন। তাহলে চুরি হয় কীভাবে। যদিও কর্মকর্তাদের কেউ কেউ বলছেন, কাগজপত্রে ঠিক হিসাব দেখালেও নিয়মিত চলছে তেল চুরির ঘটনা।

তেল চুরি হয় কীভাবে? এর উত্তর খুঁজে বের করতে বিপিসি ও তেল কোম্পানির কর্মকর্তা, জাহাজ, সমুদ্রে তেল খালাসের জেটি, ডিপোর কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলেছে প্রথম আলো। তাঁরা বলছেন, তেল চুরির একটি বড় উপায় হলো ক্যালিব্রেশন রিপোর্ট বা তেল মজুতের সক্ষমতা জালিয়াতি। ট্যাংক, লরি, জাহাজের তেল ধারণের সক্ষমতা পরীক্ষা করে সনদ দেয় বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই)। তেল চুরির চক্র জালিয়াতির মাধ্যমে এই সক্ষমতা কম দেখায়। এতে আসল সক্ষমতা ব্যবহার করে বাড়তি তেল চুরির সুযোগ তৈরি হয়।

ডিপোতে তেল পরিমাপের মধ্যেও আছে চুরির সুযোগ। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, তেল মাপা হয় সনাতনী প্রক্রিয়ায়, হাতে রড নিয়ে। এর মাধ্যমে ডিপোর ট্যাংক, ট্যাংকলরি ও জাহাজের গভীরতা পরিমাপ করা হয়। এতে মাত্র ১ মিলিমিটার কম দেখালেই ৩০০ থেকে ৫৯০ লিটার পর্যন্ত তেল চুরি করা যায়।

যমুনার খুলনার দৌলতপুর ডিপোতে গত আগস্ট মাসে সক্ষমতা জালিয়াতির একটি ঘটনা ধরা পড়ে। সাড়ে ১৩ হাজার লিটারের একটি লরির সক্ষমতা ৯ হাজার লিটার দেখিয়ে চুক্তি করেছিল যমুনা। পরে ধরা পড়ায় চুক্তি বাতিল করা হয়। এ ছাড়া গত মাসে যমুনার ফতুল্লা ডিপো থেকে পৌনে চার লাখ লিটার ডিজেল গায়েবের ঘটনায় সক্ষমতা জালিয়াতির বিষয়টি সামনে আসে। ইতিমধ্যে ডিপোর দুটি ট্যাংকের সক্ষমতা পুনরায় যাচাইয়ের নির্দেশ দিয়েছে যমুনা।

ডিপোতে তেল পরিমাপের মধ্যেও আছে চুরির সুযোগ। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, তেল মাপা হয় সনাতনী প্রক্রিয়ায়, হাতে রড নিয়ে। এর মাধ্যমে ডিপোর ট্যাংক, ট্যাংকলরি ও জাহাজের গভীরতা পরিমাপ করা হয়। এতে মাত্র ১ মিলিমিটার কম দেখালেই ৩০০ থেকে ৫৯০ লিটার পর্যন্ত তেল চুরি করা যায়।

তাপমাত্রা বাড়লে জ্বালানি তেল বাড়ে, আর কমলে তেলও কমে। এটি বৈজ্ঞানিক সূত্র। এটি কাজে লাগায় তেল চুরির চক্র। দিনের শুরুতে সকালে একবার তেল মাপা হয় ডিপোতে। আবার বিকেলেও একবার তেল মাপা হয়। সকাল ও বিকেলের তাপমাত্রার পার্থক্য থাকে। সাধারণত সারা দিন রোদের তাপমাত্রায় তেলের পরিমাণ বাড়ে। এই বাড়তি তেলের পুরোটা হিসাবে না দেখিয়ে চুরি করা হয়।

তবে আরও ভয়ংকর হলো ভেজাল মিশিয়ে চুরি করা। বাইরে থেকে কম দামের ভেজাল তেল ডিপোতে নিয়ে এসে পেট্রল ও অকটেনের সঙ্গে মেশানো হয়। ভেজাল তেল নিয়ে অভিযোগ আছে গ্রাহকের। মাঝেমধ্যে অভিযান চালিয়ে পেট্রলপাম্পকে জরিমানা করা হয়। তবে ডিপো থেকে ভেজাল তেলের এ ব্যবসা থামেনি। ডিপোতে অভিযানও হয় না।

ডিপো থেকে সংগ্রহ করা জ্বালানি তেলের মান নিয়ে অভিযোগ জানিয়ে গত ১২ অক্টোবর বিপিসিকে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম ডিলারস, ডিস্ট্রিবিউটরস, এজেন্টস অ্যান্ড পেট্রলপাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন। এতে বলা হয়, তিনটি তেল কোম্পানির মানে ভিন্নতা দেখা যাচ্ছে। পেট্রল ও অকটেনের মান খারাপ হওয়ায় মোটরসাইকেল ও গাড়ির ট্যাংকে মরিচা ও জং ধরছে। পাম্পে তেল মজুতের ট্যাংকেও জং ধরছে। সঠিক মাপে তেল দিতে সমস্যা হচ্ছে। তেলের মান ও রঙে পরিবর্তন হচ্ছে। অতীতে কোনো সময় এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি। অতিমাত্রায় পাতলা তেলে ‘ডিসপেনসারে’ (যার মাধ্যমে ফিলিং স্টেশন থেকে তেল দেওয়া হয়) সমস্যা হওয়ায় অনেক সময় সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত অকটেন সরবরাহ করা যায় না। ডিজেলের মানও অত্যন্ত নিম্ন, যা অতীতে ছিল না।

তাপমাত্রা বাড়লে জ্বালানি তেল বাড়ে, আর কমলে তেলও কমে। এটি বৈজ্ঞানিক সূত্র। এটি কাজে লাগায় তেল চুরির চক্র। দিনের শুরুতে সকালে একবার তেল মাপা হয় ডিপোতে। আবার বিকেলেও একবার তেল মাপা হয়। সকাল ও বিকেলের তাপমাত্রার পার্থক্য থাকে।

এর আগে নিম্নমানের তেল পাওয়ার অভিযোগ জানিয়ে গত ১ সেপ্টেম্বর পদ্মা তেল কোম্পানিকে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ জ্বালানি তেল পরিবেশক সমিতি। এতে বলা হয়, খুলনার দৌলতপুরে পদ্মার ডিপো থেকে আসা পেট্রল ও অকটেনের গন্ধ তীব্র। মোটরসাইকেল ঠিকমতো ‘মাইলেজ’ (১ লিটার তেল খরচ করে কত কিলোমিটার চলা যায়) পাচ্ছে না।

পেট্রলপাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সৈয়দ সাজ্জাদুল করিম কাবুল প্রথম আলোকে বলেন, বিএসটিআই এসে পেট্রলপাম্পে জরিমানা করে, তারা ডিপোতে যায় না। অথচ ডিপো থেকে পাতলা তেল সরবরাহ করা হচ্ছে।

চুরির শুরু তেলের জাহাজ থেকেই

চট্টগ্রামে তেল চুরির বিষয়ে গত মে মাসে একটি গোপন প্রতিবেদন বিপিসিতে পাঠায় জ্বালানি বিভাগ। এতে বলা হয়, বিদেশ থেকে বড় জাহাজে আসা তেল প্রথমে ছোট জাহাজে খালাস করা হয়। এরপর এটি আনা হয় গুপ্তাখালে থাকা তিন তেল কোম্পানির প্রধান ডিপোর টার্মিনালে।

ডিপো থেকে চারটি ধাপে তেল সরবরাহ করা হয়। অধিকাংশই যায় নদীপথে, ছোট ছোট জাহাজে করে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রায় প্রতিটি জাহাজে নির্ধারিত সক্ষমতার চেয়ে ৮০০ থেকে ১ হাজার লিটার তেল বাড়তি নেওয়ার গোপন জায়গা থাকে। ট্রেনের ওয়াগনে তেল পরিবহনের ক্ষেত্রেও বাড়তি তেল দেওয়ার ঘটনা ঘটে। প্রতিটি ট্যাংকলরিতে ১৫০ থেকে ২০০ লিটার তেল বাড়তি দিয়ে দেন চক্রের সদস্যরা। এমনকি ড্রামে তেল ভর্তির সময়ও ১৫ থেকে ২০ লিটার বাড়তি দিয়ে দেওয়া হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, কর্ণফুলী নদীর জাহাজ থেকে তেল চুরি করে পটিয়া, শান্তিরহাট, মইজ্জারটেক, চাক্তাই, খাতুনগঞ্জসহ স্থানীয় পাইকারি ও খুচরা বাজারে পাচার করা হচ্ছে। কর্ণফুলী নদীতে সন্ধ্যার পর থেকে শুরু হয় তেল চুরি।

ট্রেনের ওয়াগনে তেল পরিবহনের ক্ষেত্রেও বাড়তি তেল দেওয়ার ঘটনা ঘটে। প্রতিটি ট্যাংকলরিতে ১৫০ থেকে ২০০ লিটার তেল বাড়তি দিয়ে দেন চক্রের সদস্যরা। এমনকি ড্রামে তেল ভর্তির সময়ও ১৫ থেকে ২০ লিটার বাড়তি দিয়ে দেওয়া হয়।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, তেল চুরির বড় দুটি জায়গা হলো চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় তিন তেল কোম্পানির মূল ডিপো এবং নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা ও গোদনাইলের ডিপো। এ দুটি জায়গায় নজরদারি নিশ্চিত করতে পারলেই চুরি অনেকাংশে কমে যাবে।

ডিপো থেকে তেল চুরির কৌশল

নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের গোদনাইল এলাকায় পদ্মা ও মেঘনা তেল কোম্পানির ডিপো। এখানে অনুসন্ধান চালিয়ে একটি গোয়েন্দা সংস্থা প্রতিবেদন তৈরি করে জ্বালানি বিভাগে পাঠিয়েছে। এতে বলা হয়, চুরির সঙ্গে জড়িত কিছু ফিলিং স্টেশন। ডিজেল বা পেট্রল কেনার রসিদ দিয়ে গাড়িতে করে অকটেন নিয়ে যায় তারা। পরে কারিগরি ক্ষতি ও তাপমাত্রাজনিত বৃদ্ধির ফলে পাওয়া বাড়তি তেলের সঙ্গে হিসাব মিলিয়ে দেওয়া হয়। স্টেশনমালিকদের আর্থিক সুবিধা দেয় তেল চুরির চক্র। এ ছাড়া ডিপোতে তেলে ভেজাল মিশিয়ে পরিমাণে বাড়ানোর ঘটনাও ঘটে। অনুসন্ধানের সময় একটি ট্যাংকলরিতে ১৮ হাজার লিটার চালানের বিপরীতে ২২ হাজার লিটার সরবরাহের ঘটনা দেখা গেছে। আরেকটি গাড়িতে সাড়ে ১৩ হাজার লিটার তেল দিয়ে চালান দেওয়া হয় ৯ হাজার লিটারের। তেল চুরির কাজে ব্যবহৃত ৪টি ট্যাংকলরি ও ৭টি ফিলিং স্টেশনের নাম দেওয়া হয়েছে প্রতিবেদনে।

তেল চুরির প্রতিবেদন বলছে, পদ্মার ডিপো থেকে ১২৯টি ট্যাংকলরিতে করে বিমানবন্দরে তেল সরবরাহ করা হয়। প্রতিটি গাড়ি দিনে দুটি ট্রিপ দেয়, প্রতি ট্রিপে ২০ লিটার করে কম সরবরাহ করা হয়। এভাবে দিনে ৫ হাজার ১৬০ লিটার তেল চুরি হয়। চুরির এ তেল নির্দিষ্ট ১৭-১৮টি ট্যাংকলরির মাধ্যমে ডিপো থেকে বের করে চক্রে থাকা ডিলারদের কাছে সরবরাহ করা হয়। এভাবে বছরে ১৫ কোটি টাকার তেল চুরি করা হয় এ ডিপোর জেটফুয়েল থেকে। চালানের চেয়ে বাড়তি তেল নিয়ে এ চুরিতে যুক্ত থাকা ১৪টি ট্যাংকলরির নম্বর উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। গোদনাইলের মেঘনা ডিপোতে দিনে সরবরাহ করা হয় সাড়ে ১৩ লাখ লিটার, সিস্টেম লস যায় ৪ হাজার ৫০ থেকে ৬ হাজার ৭৫০ লিটার। পদ্মার ডিপো থেকে দিনে সরবরাহ করা হয় গড়ে ২৫ লাখ ৬০ হাজার লিটার। সিস্টেম লস যায় ৭ হাজার ৬৮০ থেকে ১২ হাজার ৮০০ লিটার। দুটি ডিপো মিলে দিনে গড়ে চুরি হয় ১৩ হাজার ৫০০ লিটার। এভাবে বছরে চুরি হয় বর্তমান বাজারদরে ৪৪ কোটি ৫০ লাখ টাকার তেল। ডিপোর অনেকেই চুরির সঙ্গে জড়িত। এতে নেতৃত্ব দেন সিবিএ নেতা, ডিপো ও পয়েন্ট ইনচার্জ এবং মিটার রিডাররা।

অনুসন্ধানের সময় একটি ট্যাংকলরিতে ১৮ হাজার লিটার চালানের বিপরীতে ২২ হাজার লিটার সরবরাহের ঘটনা দেখা গেছে। আরেকটি গাড়িতে সাড়ে ১৩ হাজার লিটার তেল দিয়ে চালান দেওয়া হয় ৯ হাজার লিটারের। তেল চুরির কাজে ব্যবহৃত ৪টি ট্যাংকলরি ও ৭টি ফিলিং স্টেশনের নাম দেওয়া হয়েছে প্রতিবেদনে।

সারা দেশে তিন কোম্পানি মিলে ৪৭টি ডিপো রয়েছে। গোদনাইলের মতো একই হারে চুরি ধরা হলেও সব মিলে বছরে কয়েক হাজার কোটি টাকার তেল চুরি হয়। সুপারিশ হিসেবে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ডিপো কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের গত ১৫ বছরের সম্পদের হিসাব নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। পুরো তেল সরবরাহ কাঠামোকে স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তির আওতায় আনা গেলে নজরদারি ও চুরি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হতে পারে।

বিপিসির চেয়ারম্যান আমিন উল আহসান প্রথম আলোকে বলেন, তেল বিপণন প্রক্রিয়া পুরোটা স্বয়ংক্রিয় না হলে অনিয়মগুলো থেকে যাবে। এটি ধাপে ধাপে করা হচ্ছে। ডিপোতে ফ্লো মিটার (মাপার বিশেষ যন্ত্র) বসানো হচ্ছে, এরপর আর গভীরতা মেপে তেল দেওয়া হবে না। ফতুল্লা, গোদনাইলের ডিপো স্বয়ংক্রিয় করা হবে। তেল কম বা বেশি দিতে পারবে না। তেলের গুণগত মান পরীক্ষার জন্য মেশিন বসানো হচ্ছে। কর্মকর্তাদের বদলি করা হচ্ছে। আগের চেয়ে অনিয়ম কমে এসেছে।

স্বয়ংক্রিয় প্রক্রিয়া থামাতে পারে চুরি

জ্বালানি তেলের চাহিদা বাড়তে থাকায় প্রতিবছর বিক্রি বাড়ার কথা। বিপিসি সূত্র বলছে, আগের বছরের তুলনায় ২০২০-২১ অর্থবছরে বিক্রি বেড়েছে ১৪ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে বেড়েছে ১০ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে উল্টো কমেছে ৮ শতাংশ। আর ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বিক্রি বেড়েছে মাত্র ১ শতাংশ। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বাস্তবে বাজারে তেল বিক্রি হচ্ছে আরও বেশি। কম দামের নিম্নমানের তেল মিশিয়ে ভেজাল তেল বিক্রি করায় প্রকৃত হিসাব পাওয়া যাচ্ছে না।

পদ্মা, মেঘনা ও যমুনার তেল ডিপোতে দুর্নীতি ও কর্ণফুলী নদীতে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে তেল চুরি বন্ধে কিছু নির্দেশনা দিয়ে গত ২৮ আগস্ট তিন কোম্পানিকে চিঠি দিয়েছে বিপিসি। এতে বলা হয়, রড দিয়ে হাতে তেল মাপার পরিবর্তে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে তেল মাপার ব্যবস্থা করতে হবে। বিপিসি ও তেল কোম্পানির কার্যক্রম স্বয়ংক্রিয় করতে হবে। ট্যাংকলরি, জাহাজ ও রেলের ওয়াগনে তেল সরবরাহের সময় নিয়মিত পরিদর্শন করতে হবে। মূল মজুতাগার ও ডিপোতে রাখা তেল নিয়মিত পরীক্ষা করে মান যাচাই করতে হবে। ডিপো থেকে ট্যাংকলরিতে তেল সরবরাহের সময় বিএসটিআই নির্ধারিত সক্ষমতা অনুসারে তেল পরিমাপ নিশ্চিত করতে হবে।

জ্বালানি তেলের হিসাবে প্রচুর ফাঁকি আছে। কাগজে–কলমে হিসাব ঠিক রাখা হয়। যথাযথ নিরীক্ষাও হয় না। তাই চুরির বিস্তারিত জানা যায় না। তাপমাত্রায় জ্বালানি তেল বাড়ে বা কমে। বাড়তি তাপমাত্রায় পাওয়া তেলের টাকাটা পকেটে চলে যায়। সনাতন উপায় তেল মাপার মধ্যেও ফাঁকি আছে। তেল বিপণন প্রক্রিয়া স্বয়ংক্রিয় করতে হবে।সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার জ্বালানিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ম তামিম

এদিকে কিছু সুপারিশ দ্রুত বাস্তবায়নে গত ২৯ সেপ্টেম্বর তিন কোম্পানিকে আবার চিঠি দিয়েছে বিপিসি। এতে বলা হয়, ট্যাংকলরির হালানাগাদ সক্ষমতা প্রতিবেদন দেখে তেল দিতে হবে। ভেজাল রোধে আধুনিক ল্যাব স্থাপন করতে হবে। অবৈধ উৎস থেকে তেল সংগ্রহ ও বিক্রি বন্ধে ডিপো থেকে ফিলিং স্টেশনের তেল নেওয়ার তথ্য নিয়মিত নজরদারি করতে হবে। জ্বালানি তেলের অনিয়ম, ভেজাল ও চুরি বন্ধে চট্টগ্রামের প্রধান স্থাপনাসহ সব ডিপোর কার্যক্রম স্বয়ংক্রিয় প্রক্রিয়ায় আনতে হবে।

এর আগে গত সরকারের সময় জ্বালানি তেলের সব কটি ডিপো স্বয়ংক্রিয় প্রক্রিয়ায় আনার উদ্যোগ নিয়েছিল বিপিসি। দরপত্র আহ্বান করা হলেও পরে সেটি থেমে যায়। এখন নতুন করে ধাপে ধাপে বিভিন্ন ডিপো স্বয়ংক্রিয় করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে বিপিসি।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার জ্বালানিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ম তামিম প্রথম আলোকে বলেন, জ্বালানি তেলের হিসাবে প্রচুর ফাঁকি আছে। কাগজে–কলমে হিসাব ঠিক রাখা হয়। যথাযথ নিরীক্ষাও হয় না। তাই চুরির বিস্তারিত জানা যায় না। তাপমাত্রায় জ্বালানি তেল বাড়ে বা কমে। বাড়তি তাপমাত্রায় পাওয়া তেলের টাকাটা পকেটে চলে যায়। সনাতন উপায় তেল মাপার মধ্যেও ফাঁকি আছে। তেল বিপণন প্রক্রিয়া স্বয়ংক্রিয় করতে হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ত ল সরবর হ র সময় একব র ত ল ম প ত ল সরবর হ ক স বয় ক র য় প প ট রলপ ম প ত ল পর ম প প রক র য় য় ক জ র সময় কর মকর ত প রথম আল র য় প রক র প ন তর ১৩ হ জ র র র সময় ন র সময় দ লতপ র র সময় ত পর ম ণ অকট ন সরক র বলছ ন র ঘটন বছর র কলর ত

এছাড়াও পড়ুন:

করপোরেটের ধাক্কায় নিতাইগঞ্জের ব্যবসায় মন্দা

নারায়ণগঞ্জ শহরের প্রাণকেন্দ্রে শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে গড়ে ওঠা নিতাইগঞ্জ একসময় ছিল দেশের অন্যতম পাইকারি মোকাম। আটা, ময়দা, চিনি, লবণ, ডাল, ভোজ্যতেলসহ নানা ধরনের খাদ্যপণ্য ও গবাদিপশুর খাদ্যও এখান থেকে দেশের ৪০ টির বেশি জেলায় সরবরাহ হতো। প্রতিদিন লেনদেন হতো কয়েক শ কোটি টাকার। নৌ ও সড়কপথে যাতায়াতের সুবিধা থাকায় এখান থেকে ঢাকাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে মালামাল সহজেই পৌঁছাত।

কিন্তু নিতাইগঞ্জের সেই ব্যস্ততা এখন আর নেই। অনেক মিলকারখানা বন্ধ হয়ে গেছে, গুদামগুলোর অধিকাংশ জায়গাই ফাঁকা, ক্রেতার সমাগম খুব কম—সব মিলিয়ে ঐতিহ্যবাহী এই ব্যবসাকেন্দ্রে নেমেছে মন্দার ছায়া।

সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, নারায়ণগঞ্জের বিবি সড়কের নিতাইগঞ্জে শ্রমিকেরা ট্রাকে আটা-ময়দা তুলছেন, কেউ ঠেলাগাড়িতে মাল আনছেন। গম, চাল, ডাল আনলোডের কাজও চলছে। কিন্তু কর্মচাঞ্চল্য আগের মতো নেই। পাইকারি বেচাকেনা কমে যাওয়ায় ব্যবসায়ী, কর্মচারী ও শ্রমিকেরা অলস সময় কাটাচ্ছেন। অথচ আগে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন প্রান্তের পাইকারি ব্যবসায়ীদের পদচারণে নিতাইগঞ্জ মুখর থাকত। এলাকাটি এখন অনেকটাই যেন নিস্তব্ধ হয়ে পড়েছে।
নিতাইগঞ্জের জয় ট্রেডার্সের ব্যবস্থাপক কৃষ্ণ বাবু, যিনি ৩৫ বছর ধরে এখানে কাজ করছেন, বলেন, ‘আগে প্রতিদিন শতাধিক ট্রাকে মাল লোড-আনলোড হতো, এখন তার অর্ধেকও হয় না।’

পাইকারি মুদি ব্যবসায়ী দিলীপ রায় বলেন, ‘একসময় সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বেচাকেনা হতো। এখন ব্যবসার কর্মব্যস্ততায় ভাটা পড়েছে, ক্রেতাও কম।’

করপোরেট আগ্রাসন ও বাজার সংকোচন
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো এখন বিদেশ থেকে গম, চিনি, সয়াবিন ইত্যাদি আমদানি করে প্রক্রিয়াজাত করে সরাসরি সুপারশপ ও পরিবেশকদের কাছে সরবরাহ করছে। ফলে নিতাইগঞ্জের পাইকাররা প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছেন না।

ভাই ভাই ট্রেডার্সের ব্যবস্থাপক পরিতোষ সাহা বলেন, ‘নব্বইয়ের দশক থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত ছিল সোনালি সময়। তখন দিনে শতাধিক ট্রাক মাল আসত, এখন ৩০-৪০ ট্রাকও আসে না। বড় বড় করপোরেট কোম্পানি সরাসরি বাজারে আসায় আমাদের মতো মাঝারি ব্যবসায়ীদের টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে।’

মুন্সীগঞ্জ থেকে আসা ব্যবসায়ী সজীব হোসেন বলেন, ‘আগে সবকিছু নিতাইগঞ্জ থেকেই নেওয়া হতো। এখন কোম্পানি থেকেই দোকানে মাল পৌঁছে দেয়। পরিবহন খরচ বাঁচে। তাই মাসে তিন-চারবারের বদলে এক-দুবার নিতাইগঞ্জে আসি।’

ডাল ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আগে আমরা নিজেরাই ভারত থেকে ডাল ও ছোলা আনতাম। এখন বড় গ্রুপগুলো কার্গো জাহাজে মাল আনে—আমাদের পক্ষে টেকা সম্ভব নয়।’

অর্থনৈতিক সংকট ও প্রভাব
একসময় নিতাইগঞ্জের ব্যাংকগুলোতে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার লেনদেন হতো, এখন সেটিও অর্ধেকে নেমে এসেছে। ব্যবসায়ে ধস নামায় স্থানীয় অর্থনীতিতেও প্রভাব পড়েছে। আগে শত শত শ্রমিক পণ্য ওঠানো–নামানো, বস্তা সেলাই, ট্রাকে পণ্য লোড–আনলোডের কাজে ব্যস্ত থাকতেন। এখন তাঁদের অনেকেই কাজ হারিয়েছেন।

বরিশালের বাকেরগঞ্জের দুলাল হাওলাদার, যিনি ৩৮ বছর ধরে এখানে শ্রমিক হিসেবে কাজ করছেন, তিনি বলেন, ‘আগে কাজের চাপ সামলানো যেত না, এখন কাজ অর্ধেক কমে গেছে। তাই অনেক শ্রমিক অন্য পেশায় চলে গেছেন।’

খাজা গরীবে নেওয়াজ লবণ মিলের মালিক পুলক দেওয়ান বলেন, ব্যবসা আগের মতো নেই। পাইকারদের আনাগোনা কমায় প্রভাব পড়েছে। আগে পাঁচজন শ্রমিক ছিলেন, এখন দুজনেই কাজ চালাতে হয়।

অবকাঠামো সমস্যা
ব্যবসায়ীরা জানান, করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো পাড়া–মহল্লা পর্যন্ত পণ্য পৌঁছে দেওয়ায় নিতাইগঞ্জ যেমন মার খেয়েছে তেমনি যানজট, পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধি ও ডলার–সংকটের কারণেও ব্যবসা দুর্বল হয়েছে। এখানকার ৭২টি ফ্লাওয়ার মিলের অর্ধেকই এখন বন্ধ, অন্যগুলোও ঠিকমতো চলছে না।

১৯৭২ সাল থেকে ব্যবসা করছেন ওয়াজেদ আলী বাবুল। তিনি অটো ফ্লাওয়ার মিল বিজনেস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের সভাপতি। বলেন, আগে নারায়ণগঞ্জ পাটের জন্য বিখ্যাত ছিল, এখন পাটের ব্যবসা নেই। মদনগঞ্জে ধান-চালের গাল্লাও নেই। নিতাইগঞ্জও একই পথে হাঁটছে। এর অস্তিত্ব টিকবে কিনা সন্দেহ।

জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালক আহমেদুর রহমান বলেন, নিতাইগঞ্জ দেশের পাইকারি ব্যবসার ঐতিহ্য। ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের জন্য প্রণোদনা ও সহজ ঋণ না দিলে ঐতিহ্যবাহী এই পাইকারি মোকামটি টিকবে না। এটাকে টিকিয়ে রাখতে হলে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে।

ঐতিহ্য বিলুপ্তির আশঙ্কা

নিতাইগঞ্জ শুধু একটি বাজার নয়, এটি নারায়ণগঞ্জের অর্থনৈতিক ইতিহাসের প্রতীক। যুগ যুগ ধরে এখান থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে খাদ্যপণ্য সরবরাহ হয়েছে। এখন ব্যবসায়ে ধস নামায় স্থানীয় অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, হারিয়ে যাচ্ছে একটি ঐতিহ্য।

ব্যবসায়ী বিকাশ দাস বলেন, ‘আমাদের বাপ-দাদারা এই মোকাম গড়েছিলেন। এখন যদি সরকারি সহায়তা না মেলে, নিতাইগঞ্জের নাম হয়তো ভবিষ্যতে শুধু বইয়ে পড়তে হবে।’

নিতাইগঞ্জ পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সভাপতি শংকর সাহা বলেন, নিতাইগঞ্জ দুই শতকের ঐতিহ্যের পাইকারি ব্যবসাকেন্দ্র। করপোরেট আগ্রাসন, আমদানিনির্ভরতা ও লজিস্টিক সমস্যায় ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বেচাকেনা অর্ধেকে নেমেছে। অনেক মিল বন্ধ, গুদাম ফাঁকা, শ্রমিকদের কর্মসংস্থান কমেছে। সরকার যদি ছোট ব্যবসায়ীদের জন্য প্রণোদনা ও সহজ ঋণের ব্যবস্থা না করে তাহলে নিতাইগঞ্জ হয়তো ভবিষ্যতে শুধু ইতিহাসের পাতায়ই থাকবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ৩ দিন বিদ্যুৎহীন মনোহরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
  • ২০০ বছর পর বন্ধ হচ্ছে ‘বেকার অ্যান্ড টেইলর’
  • পাকিস্তানের প্রতিটি ইঞ্চি এখন ব্রহ্মস ক্ষেপণাস্ত্রের নাগালে: রাজনাথ সিংয়ের হুমকি
  • রাশিয়ায় হামলা চালাতে ইউক্রেনকে টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র দিচ্ছেন না ট্রাম্প
  • হোয়াইট হাউস থেকে খালি হাতে ফিরলেন জেলেনস্কি
  • সরকারি পানির লাইনে পোকা, শামুক, দুর্গন্ধ
  • হোয়াইট হাউজ থেকে খালি হাতে ফিরলেন জেলেনস্কি
  • করপোরেটের ধাক্কায় নিতাইগঞ্জের ব্যবসায় মন্দা
  • দ্রুত বিদ্যুৎ-গ্যাস দিন, চালু করুন