পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার তেঁতুলিয়া নদীতে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ইলিশ শিকারের সময় মৎস্য অধিদপ্তর ও নৌ পুলিশের অভিযানিক দলের ওপর হামলা করেছেন একদল জেলে। গতকাল রোববার সন্ধ্যার দিকে তেঁতুলিয়া নদীর মমিনপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

হামলায় দুজন আহত হয়েছেন। হামলা করে পালিয়ে যাওয়ার সময় তিন জেলেকে আটক করা হয়েছে। তাঁদের তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, মা ইলিশ রক্ষায় চলতি মাসের ৪ থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুম ঘোষণা করেছে মৎস্য অধিদপ্তর। এ কারণে উপজেলা মৎস্য কার্যালয় ও নৌ পুলিশের একাধিক টহল দল তেঁতুলিয়া নদীতে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে আসছে। গতকাল সন্ধ্যার দিকে তেঁতুলিয়া নদীর মমিনপুর এলাকায় একটি অভিযানিক দল পৌঁছালে কয়েকজন জেলে তাঁদের ওপর হামলা করে। এ ঘটনায় দলের সদস্য আবদুর রাজ্জাক (৫৫) ও স্পিডবোটের চালক মো.

রুবেল (৩৫) আহত হন। তখন তিন হামলাকারীকে আটক করেন তাঁরা। পরে ওই তিন জেলেকে দণ্ড দেওয়া হয়।

সাজাপ্রাপ্ত জেলেরা হলেন উপজেলার কেশবপুর গ্রামের মো. জসিম আকন (৩৮), অসিম আকন (৪০) এবং একই গ্রামের গ্রামের মো. রেজাউল আকন (৪৫)। ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক ছিলেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. সোহাগ মিলু। জ্যেষ্ঠ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা এম এম পারভেজ এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

বাউফল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আকতারুজ্জামান সরকার প্রথম আলোকে বলেন, দণ্ডপ্রাপ্ত হামলাকারী তিন জেলেকে জেলা কারাগারে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: উপজ ল মৎস য

এছাড়াও পড়ুন:

সরকার ও সেনাবাহিনী: গণতন্ত্রে উত্তরণ ও ন্যায়বিচার যেন ব্যাহত না হয়

৮ অক্টোবর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তিনটি মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে। আদালত এই তিন মামলায় মোট ৩২ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।

এর মধ্যে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে গুম-নির্যাতনের মাধ্যমে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে হয়েছে দুটি মামলা। আর জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় রাজধানীর রামপুরা ও বনশ্রী এলাকায় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে হয়েছে অপর মামলাটি। এই তিন মামলায় যে ৩২ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে, তাঁদের মধ্যে ২৫ জন সেনাবাহিনীর সাবেক ও বর্তমান ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।

১১ অক্টোবর সেনা সদরের সংবাদ সম্মেলনে সেনাবাহিনীর অ্যাডজুট্যান্ট জেনারেল মেজর জেনারেল মো. হাকিমুজ্জামান জানান, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তিনটি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হওয়া ২৫ কর্মকর্তার মধ্যে ১৫ জন এখনো সেনাবাহিনীতে কর্মরত আছেন। একজন অবসর প্রস্তুতিমূলক ছুটিতে (এলপিআর) আছেন। এই ১৬ জনের মধ্যে গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক সামরিক সচিব মেজর জেনারেল কবীর আহাম্মদ ছাড়া বাকি ১৫ জনের সবাই সেনা হেফাজতে আছেন।

আরও পড়ুনসবই যদি সেনাবাহিনী করে, জনপ্রশাসনের কী কাজ?১৩ জানুয়ারি ২০১৩

অভিযুক্তরা যেহেতু একটি ডিসিপ্লিনড (শৃঙ্খলাবদ্ধ) বাহিনীর সদস্য, তাই তাঁদের বিচারের প্রক্রিয়াটি খুবই সংবেদনশীল বিষয়। এই কর্মকর্তাদের বিচারের ক্ষেত্রে সেনা আইন (দ্য আর্মি অ্যাক্ট, ১৯৫২), না আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩—কোনটা প্রযোজ্য হবে, তা নিয়েও কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন। তবে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে ন্যায়বিচারের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।

 সেনা সদরের সংবাদ সম্মেলনে মেজর জেনারেল মো. হাকিমুজ্জামান বলেন, ‘সেনাবাহিনী দ্ব্যর্থহীনভাবে বিচারের পক্ষে অবস্থান করে। সেনাবাহিনী ন্যায়বিচারের পক্ষে। “নো কম্প্রোমাইজ উইথ ইনসাফ”। আমরা বিশ্বাস করি, আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে এবং বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সত্য প্রতিষ্ঠিত হবে। গুমের শিকার পরিবারগুলোর প্রতি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছে।’ (সেনা সদরের সংবাদ সম্মেলন: হেফাজতে ১৫ সেনা কর্মকর্তা, আত্মগোপনে একজন, প্রথম আলো অনলাইন, ১২ অক্টোবর ২০২৫)

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে সেনাবাহিনীর কিছু সমন্বয়হীনতা বা দূরত্ব তৈরি হওয়া নিয়ে গত এক বছরে বিভিন্ন সময়ে জনপরিসরে ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কিছু আলোচনা হয়েছে। এ ধরনের আলোচনা নাগরিকদের মধ্যে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করে। সেদিক থেকে বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমদের বক্তব্য তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি নির্বাচন সামনে রেখে যে ‘ঝুঁকি’র কথা বলেছেন, সব পক্ষকেই সেটা গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা উচিত।২.

শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী শাসনামলে বিচার বিভাগ, আমলাতন্ত্র, পুলিশ, সামরিক বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থাসহ প্রতিটি প্রতিষ্ঠানেই নানা রকম নেতিবাচক প্রবণতা ও দৃষ্টান্ত তৈরি হয়েছিল। খুব স্বাভাবিকভাবেই এর কিছু প্রভাব সেনাবাহিনীর ওপরও পড়েছিল। এর ফলে উচ্চপদস্থ কিছু সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ক্রসফায়ারের নামে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম এবং ‘আয়নাঘর’ তৈরির মতো অভিযোগ উঠেছে। প্রশ্ন হলো, এসব অভিযোগের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দায় কতটা আর বাহিনীর দায় কতটা?

এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে সেনাবাহিনীর অ্যাডজুট্যান্ট জেনারেল বলেন, ‘অভিযোগপত্রে উল্লেখিত ঘটনাসমূহ যখন সংঘটিত হয়েছিল বলে অভিযোগ করা হয়েছে, তখন অভিযুক্তদের কেউই সেনাবাহিনীর সরাসরি কমান্ডের অধীনে কর্মরত ছিলেন না। তাঁরা প্রত্যেকেই ডেপুটেশন বা প্রেষণে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব) অথবা ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্সের (ডিজিএফআই) মতো অন্যান্য সংস্থায় কর্মরত ছিলেন।’

মেজর জেনারেল হাকিমুজ্জামান আরও বলেন, ‘র‍্যাব সরাসরি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত হয়। এই বাহিনীর কার্যক্রম বা রিপোর্টিং কাঠামো কোনোভাবেই সেনা সদরের এখতিয়ারভুক্ত নয়। আর ডিজিএফআই সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে পরিচালিত একটি সংস্থা। এটি সেনাবাহিনীর কমান্ড কাঠামোর অন্তর্ভুক্ত নয়। সুতরাং অভিযুক্তদের কর্মকাণ্ড সেনাবাহিনীর প্রাতিষ্ঠানিক কমান্ডের বাইরে সংঘটিত হওয়ায় সে সম্পর্কে সেনা সদরের পক্ষে অবগত হওয়া বা নজরদারি করা সম্ভব ছিল না।’ (প্রথম আলো অনলাইন, ১২ অক্টোবর ২০২৫)

আরও পড়ুনগুম-বিচারবহির্ভূত হত্যার দায় এড়ানোর সুযোগ নেই২০ আগস্ট ২০২২

এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে স্বৈরাচারী শাসনামলে রাষ্ট্রের সবকিছু চলত এক ব্যক্তি অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে। কিন্তু এখন এ বিষয়গুলো নিয়ে গঠনমূলকভাবে চিন্তা করার সময় এসেছে। অপরাধের দায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের হলেও, এ বিষয়ে সেনাবাহিনীর কিছু করণীয় আছে বলে প্রতীয়মান হয়। এ ক্ষেত্রে কিছু বিষয় বিবেচনায় রাখতে হবে। বিগত আমলে বিচার বিভাগ, আমলাতন্ত্র ও পুলিশের মতো সেনাবাহিনীতে কিছু ক্ষেত্রে দলীয়করণের চেষ্টা হয়েছে। এটা মনে রাখতে হবে, সরকারের কোনো অন্যায় কর্মকাণ্ডে সমর্থন দেওয়া, কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতি পক্ষপাত দেখানো কিংবা রাজনীতিতে প্রভাব খাটানোর চেষ্টা সেনাবাহিনীর পেশাদারির জন্য বড় হুমকি। এ ক্ষেত্রে কোনো ব্যত্যয় হওয়া চলবে না।

আরেকটি বিষয়, সেনাবাহিনীর অনেক সদস্য অবসরের পর বেসামরিক প্রশাসন, ব্যবসা-বাণিজ্য, করপোরেট কোম্পানি কিংবা রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। এটা একদিকে যেমন তাঁদের নাগরিক অধিকার, তেমনি তা সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তিতেও সূক্ষ্মভাবে প্রভাব ফেলতে পারে। অনেক সময়েই অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্যদের বক্তব্য বা কর্মকাণ্ডকে বাহিনীর আনুষ্ঠানিক অবস্থানের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলার প্রবণতা লক্ষ করা গেছে। এসব বিভ্রান্তি দূর করতে বাহিনীর প্রাতিষ্ঠানিক অবস্থান ও ব্যক্তিগত মতামতের মধ্যে পরিষ্কার সীমারেখা টানতে হবে। এসব ক্ষেত্রে সেনাবাহিনীর নীতি আরও স্পষ্ট হওয়া উচিত।

আরও পড়ুনজুলাই হত্যাকাণ্ড: যত গুম–খুনের বিচার আইসিটির মাধ্যমেই যুক্তিযুক্ত২৪ আগস্ট ২০২৪৩.

চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের চূড়ান্ত পর্যায়ে শেখ হাসিনা সরকারের ওপর থেকে সেনাবাহিনী কার্যত তাদের সমর্থন তুলে নিয়েছিল। শেখ হাসিনার পদত্যাগের বিষয়টিও সেনাপ্রধানের মাধ্যমেই দেশবাসী জানতে পারে। অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের জন্য রাজনীতিবিদ এবং গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক আয়োজনের ক্ষেত্রেও সেনাবাহিনীর ভূমিকা ছিল। এরপর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিয়ে সেনাবাহিনীকে মাঠে নামানো হয়। সেনাবাহিনী এখনো মাঠেই আছে এবং আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় নির্বাচন পর্যন্ত মাঠেই থাকবে বলে ধারণা করা যায়।

নির্বাচনে সেনাবাহিনীর ভূমিকা নিয়ে সাম্প্রতিক এক সাক্ষাৎকারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক রিদওয়ানুল হক বলেন, ‘আগামী নির্বাচনের একটি বড় বিষয় হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণ। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সেনাবাহিনীকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে। তার মানে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণেও সেনাবাহিনীর একটি স্টেক তৈরি হয়েছে। তা ছাড়া বর্তমান ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায় রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা রক্ষায় সেনাবাহিনীকে ভূমিকা রাখতে হচ্ছে।...’ (জুলাই সনদকে সংবিধানের ওপর স্থান দেওয়া যাবে না, রিদওয়ানুল হক, বিশেষ সাক্ষাৎকার, প্রথম আলো, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫)

এর আগে আরেকটি সাক্ষাৎকারে অর্থনীতিবিদ হোসেন জিল্লুর রহমান বলেছিলেন, ‘সেনাবাহিনী আমাদের রাষ্ট্রীয় সক্ষমতার অন্যতম একটি স্তম্ভ। হুটহাট কোনো অপরিপক্ব আলোচনার মাধ্যমে এই ক্ষমতাগুলোকে দুর্বল ও বিতর্কিত করা শেষ বিচারে নিজের পায়ে কুড়াল মারার শামিল। কখনো কখনো ছোট কোনো বিষয় বা সংকীর্ণ দলীয় বা ব্যক্তিগত স্বার্থে বড় সমস্যা তৈরি করা হচ্ছে কি না, সেদিকে আমাদের সজাগ দৃষ্টি রাখা খুবই জরুরি।...’ (রাজনৈতিক বন্দোবস্তের আলোচনায় জনগণ নেই, হোসেন জিল্লুর রহমান, বিশেষ সাক্ষাৎকার, প্রথম আলো, ৬ এপ্রিল ২০২৫)

৪.

১৫ অক্টোবর জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের উদ্দেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, ‘আমরা চাই না প্রতিরক্ষা বাহিনীগুলোর মধ্যে কোনো রকমের ভারসাম্য নষ্ট হোক। আমরা সেটি অ্যাফোর্ড (সামলে নেওয়া) করতে পারব না এই মুহূর্তে। আমরা চাই আপনার সাথে প্রতিরক্ষা বাহিনীর সুসম্পর্ক বজায় থাকুক। রাষ্ট্র একটা ব্যালান্সড অবস্থায় থাকতে হবে। আমরা নির্বাচনকে সামনে রেখে কোনো রকমের ঝুঁকির মধ্যে যেতে চাই না।...’ (প্রধান উপদেষ্টাকে সালাহউদ্দিন: আমরা চাই, আপনার সাথে প্রতিরক্ষা বাহিনীর সুসম্পর্ক বজায় থাকুক, প্রথম আলো অনলাইন, ১৬ অক্টোবর ২০২৫)

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে সেনাবাহিনীর কিছু সমন্বয়হীনতা বা দূরত্ব তৈরি হওয়া নিয়ে গত এক বছরে বিভিন্ন সময়ে জনপরিসরে ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কিছু আলোচনা হয়েছে। এ ধরনের আলোচনা নাগরিকদের মধ্যে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করে। সেদিক থেকে বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমদের বক্তব্য তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি নির্বাচন সামনে রেখে যে ‘ঝুঁকি’র কথা বলেছেন, সব পক্ষকেই সেটা গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা উচিত।

আরও পড়ুনসেনা ও ছাত্র–জনতার ঐক্যে যেন ফাটল না ধরে ১৩ এপ্রিল ২০২৫

অভিযুক্ত সেনা কর্মকর্তাদের বিচারের মুখোমুখি করার বিষয়টি নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার এবং সেনাবাহিনীর মধ্যে নতুন করে কোনো টানাপোড়েন তৈরি হোক—এটা একেবারেই কাম্য নয়। সব দোষী কর্মকর্তার যথোপযুক্ত বিচার করতে হবে—এটা যেমন আমাদের চাওয়া, তেমনি সেনাবাহিনী নিয়ে কুৎসা কিংবা সেনা অভ্যুত্থানের গুজব রটিয়ে দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরির চেষ্টা বন্ধ করতে হবে। ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক উত্তরণের যে সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, কোনো হঠকারিতা করে তাতে ব্যাঘাত সৃষ্টি করা উচিত হবে না।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জন্মের ইতিহাসটা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। জনগণকে ভিত্তি ও কেন্দ্র করে মুক্তিযুদ্ধের সময় এই বাহিনী সৃষ্টি হয়েছিল। তাই যেকোনো পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনী জনগণের পক্ষে, গণতন্ত্রের পক্ষে, ন্যায়বিচারের পক্ষে অবস্থান করবে—এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

মনজুরুল ইসলাম প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক

মতামত লেখকের নিজস্ব

সম্পর্কিত নিবন্ধ