খাতুনগঞ্জে চাহিদার অর্ধেকও মিলছে না ভোজ্যতেল
Published: 2nd, February 2025 GMT
দেশে ভোজ্যতেল আমদানি হয়েছে পর্যাপ্ত। কিন্তু নিত্যপ্রয়োজনীয় এই পণ্য বাজার থেকে ‘উধাও’ হয়ে গেছে। ভোগ্যপণ্যের অন্যতম বৃহৎ পাইকারি মোকাম চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে চাহিদার অর্ধেকই মিলছে না ভোজ্যতেল। এ কারণে খুচরা বাজারে হন্যে হয়ে খুঁজেও চাহিদামতো তেল কিনতে পারছেন না ভোক্তা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কয়েক জায়গায় ভোজ্যতেল মিললেও প্রতি লিটারে বাড়তি ১৫ থেকে ২০ টাকা গুনতে হচ্ছে। কিছুদিন আগেও বোতলজাত সয়াবিন তেল লিটারপ্রতি ১৭০ থেকে ১৭৫ টাকায় পাওয়া যেত। একই তেল কিনতে এখন গুনতে হচ্ছে ১৯০ থেকে ১৯৫ টাকা। স্থানীয় দোকানে দাম পড়ছে প্রায় ২০০ টাকা। এতে নাভিশ্বাস ভোক্তাদের। ক্রেতার চাহিদার শীর্ষে থাকা এক ও দুই লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেলের সংকট বেশি। পরিবেশকদের কাছে বারবার তাগাদা দিয়েও তেল সরবরাহ না করার অভিযোগ বেশির ভাগ ব্যবসায়ীর। রমজানকে টার্গেট করে অসাধু ব্যবসায়ী, করপোরেট, শিল্প গ্রুপ ও মিল মালিকরা কারসাজি করে বাজার থেকে ভোজ্যতেল উধাও করছেন বলে অভিযোগ কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশসহ (ক্যাব) সংশ্লিষ্টদের।
গত ডিসেম্বরের মাঝামাঝি ভোজ্যতেলের দাম প্রতি লিটারে ৮ টাকা বাড়ানো হয়। তখন প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম নির্ধারণ করা হয় ১৭৫ টাকা, যা আগে ছিল ১৬৭ টাকা। প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেলের দাম ১৪৯ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৫৭ টাকা করা হয়। এ ছাড়া বোতলজাত পাঁচ লিটার সয়াবিন তেলের দাম নির্ধারণ করা হয় ৮৬০ টাকা, যা আগে ছিল ৮১৮ টাকা।
বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের (বিটিটিসি) তথ্য বলছে, রমজানে ভোজ্যতেলের চাহিদা থাকে প্রায় ৩ লাখ টন। এর বিপরীতে গত এক মাসে প্রায় ৪ লাখ টন সয়াবিন ও পাম অয়েল আমদানি হওয়ার কথা জানিয়েছে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস। একই সময়ে সয়াবিন তেল তৈরির কাঁচামাল সয়াবিন বীজ আমদানি হয়েছে প্রায় ৩ লাখ টন। এই হিসাবে চাহিদার তুলনায় বাজারে সরবরাহ বেশি থাকার কথা। তবে বাস্তব চিত্র ভিন্ন। সরকার আমদানি বাড়াতে ও দাম কমাতে ভোজ্যতেল আমদানিতে ভ্যাট ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করলেও বাজারে দেখা যাচ্ছে উল্টো গতি।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্যমতে, শীর্ষ কয়েকটি করপোরেট প্রতিষ্ঠান দেশে ভোজ্যতেল আমদানি ও পরিশোধন করে বিপণন করছে। এর মধ্যে প্রথম সারিতে আছে সিটি গ্রুপসহ চার থেকে পাঁচটি গ্রুপ। ঋণের দায়ে ব্যবসায়িক কার্যক্রম সীমিত করেছে শীর্ষ স্থানীয় আমদানিকারক এস আলম। এর সুযোগে কয়েকটি গ্রুপ বাজারে রাজত্ব করছে বলে মত সংশ্লিষ্টদের।
খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ছৈয়দ ছগীর আহমেদ বলেন, হঠাৎ করেই বাজারে ভোজ্যতেলের সংকট দেখা দিয়েছে। চাহিদার অর্ধেকও সরবরাহ না থাকার অভিযোগ ব্যবসায়ীদের। এ কারণে দামও বেড়েছে।
চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের বিভিন্ন মোকাম ঘুরে ভোজ্যতেলের তেমন দেখা মেলেনি। কিছু দোকানে সামান্য কিছু বোতলজাত সয়াবিন দেখা গেলেও দাম চড়া। কয়েক দিনের মধ্যে সেগুলোও শেষ হওয়ার কথা বলছেন ব্যবসায়ীরা। তাদের অভিযোগ, গত কয়েক দিন ধরে করপোরেট গ্রুপগুলো বাজারে ভোজ্যতেলের সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। সংকটকে পুঁজি করে ব্যবসায়ীরা প্রতি লিটারে দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন ইচ্ছামতো। দাম বেড়ে বর্তমানে খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে প্রতি লিটার ১৯০ টাকার ওপরে। যদিও কয়েক দিন আগেও একই তেল বিক্রি করা হয় ১৮৫ টাকায়। পাম অয়েল বিক্রি হচ্ছে প্রতি লিটার ১৬৬ থেকে ১৬৮ টাকা। কয়েক দিন আগে এটির দাম ছিল ১৬০ থেকে ১৬২ টাকা। কিছু দোকানে পাঁচ লিটারের বোতলের গায়ে ৮৫২ টাকা লেখা থাকলেও বিক্রি হচ্ছে ৯৩০ থেকে ৯৫০ টাকায়।
খাতুনগঞ্জের ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী মো.
সরবরাহ করা হচ্ছে না।
রূপচাঁদা ব্র্যান্ডের কান্ট্রি ডিরেক্টর দবিরুল ইসলাম দিদার বলেন, আমরা চাহিদামতো তেল বাজারে সরবরাহ করছি। স্বাভাবিক সময়ে ১০ থেকে ১২ হাজার টন ভোজ্যতেল সরবরাহ করলেও গত এক মাসে করেছি প্রায় ১৪ হাজার টন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ভ জ যত ল র ব যবস য় ল আমদ ন সরবর হ
এছাড়াও পড়ুন:
বিদ্যুৎ না থাকায় ডিইপিজেডে উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ
ঢাকার সাভার উপজেলার আশুলিয়ায় ঢাকা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (ডিইপিজেড) আজ সোমবার দুপুর থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। এ কারণে দুপুরের পর ডিইপিজেডের সব কারখানায় শ্রমিকদের ছুটি দেওয়া হয়েছে। ডিইপিজেডের জন্য নিরবচ্ছিন্নভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড পাওয়ারের বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাস–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করায় এ সংকট তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
ডিইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক মো. শরীফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ ইউনাইটেড পাওয়ারের ডিইপিজেডে বিদ্যুৎ সরবরাহের প্রকল্পটিতে গ্যাস–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। এতে তারা উৎপাদন করতে না পারায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারছে না। ফলে ডিইপিজেডে প্রায় ৯০টি কারখানার এক লাখের মতো শ্রমিককে ছুটি দেওয়া হয়।
বিদ্যুতের সংযোগ না থাকায় বড় ধরনের বিপর্যয়ের মুখে পড়তে হয়েছে উল্লেখ করে মো. শরীফুল ইসলাম বলেন, মঙ্গলবার যদি এটি অব্যাহত থাকে, তবে সংকট আরও বাড়বে। শ্রমিকেরা কাজ না করতে পেরে বিক্ষুব্ধ হলে বিষয়টি আরও জটিল হয়ে উঠবে। কোনো ধরনের নোটিশ ছাড়া এ ধরনের ঘটনায় বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
ডিইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘তিতাস বলছে, ইউনাইটেড পাওয়ারের কাছে বিল বকেয়া রয়েছে। তারা বকেয়া পরিশোধ করেনি। এ ব্যাপারে আদালতে দীর্ঘদিন ধরে মামলা চলছে। কিন্তু আমাদের কথা হচ্ছে, বেপজাকে কোনো ধরনের পূর্ব নোটিশ না দিয়ে হঠাৎ করে এ ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছেন। এ ধরনের পদক্ষেপের আগে ডিইপিজেডের গুরুত্ব বিবেচনা করে আলোচনার মধ্য দিয়ে বিষয়টির সমাধান করা উচিত ছিল।’
এ বিষয়ে ইউনাইটেড পাওয়ার প্ল্যান্টের ব্যবস্থাপক মো. মমতাজ হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘গ্যাসের কোনো প্রেশার নেই। প্রেশার শূন্য। কিন্তু কেন তিতাস কর্তৃপক্ষ এমনটি করল, সে ব্যাপারে এখানকার (আশুলিয়া অঞ্চলের) তিতাসের লোকজন কিছু বলতে পারেননি। আমরা নিজেরাও বিষয়টি নিয়ে জানি না। এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘আমার জানামতে, বকেয়া নিয়ে কোনো ধরনের মামলা নেই। তিতাস কেন গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিল, সেটি জানা নেই।’
জানতে চাইলে তিতাসের আশুলিয়া আঞ্চলিক কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী আবু ছালেহ মুহাম্মদ খাদেমুদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, গ্যাসের বিল বকেয়া থাকায় গ্যাস–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। এটি সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলের সিদ্ধান্ত। দুপুরের দিকে গ্যাস–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।