Samakal:
2025-06-16@19:56:30 GMT

পোশাক বদলালেই কি পুলিশ বদলাবে?

Published: 4th, February 2025 GMT

পোশাক বদলালেই কি পুলিশ বদলাবে?

পোশাক তো বদলাতেই হয়। ধুলোবালিতে নোংরা হলে বদলাতে হয়; আবহাওয়া অনুযায়ী বদলাতে হয়; হাল ফ্যাশনের সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়েও বদলাতে হয়। ষাটের দশকের শেষ দিকে ‘টেডি’ পোশাক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল; সত্তরের দশকে ‘বেলবটম’। এখন আর সেসব কেউ পরে না। ফ্যাশন বদলেছে; বদলেছে পোশাক। মানুষ কিন্তু তেমনই আছে; বদলায়নি। কেউ কেউ অবশ্য বদলেছে; পোশাকের কারণে নয়; বদলেছে অন্তর্সত্তা। আসলে মানুষের বদলটা ঘটে ভেতর থেকেই; পোশাক থেকে নয়।

ইদানীং কথা চলছে পুলিশ বাহিনীর পোশাক বদলের। অনেক জল্পনাকল্পনার পর চূড়ান্ত হয়েছে নতুন পোশাক। ২০ জানুয়ারি সচিবালয়ে আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে এমনটিই জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.

) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে নানা রকমের মন্তব্য চলছে। কেউ কেউ বলছেন, জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে পুলিশ বাহিনীর আচরণের কারণে পোশাকের পরিবর্তন জরুরি হয়ে পড়েছিল। কেউবা আবার এতে ষড়যন্ত্রের আভাসও দেখছেন।

যতটুকু জানা যায়, ২০২০ সাল থেকেই পুলিশের বর্তমান পোশাক পরিবর্তন নিয়ে আলোচনা চলছিল। ২০২১ সালের শুরুর দিকে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের জন্য বেশ কয়েকটি পোশাকের ট্রায়ালও হয়। তার পরও নানা কারণে নতুন পোশাক পাননি পুলিশ সদস্যরা। এরই মাঝে পতন ঘটে গেছে সরকারের। ধরে নেওয়া যায়, আগের সিদ্ধান্তের ধারাবাহিকতায়ই বর্তমান সিদ্ধান্তটি নেওয়া হয়েছে।
অখণ্ড ভারতীয় উপমহাদেশে পুলিশের ইউনিফর্মের রং ছিল খাকি। ব্রিটিশ অফিসার স্যার হ্যারি লুমসডেনের পরামর্শে ১৮৪৭ সালে এটি চালু হয়। তার একশ বছর পর ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগ হয়ে ভারত ও পাকিস্তান হয়েছে; কিন্তু পুলিশের পোশাকের রং খাকিই রয়ে গিয়েছিল। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠিত স্বাধীন বাংলাদেশেও খাকি রং চালু ছিল। 

বাংলাদেশ পুলিশের পোশাকে সবচেয়ে বড় পরিবর্তন আসে ২০০৪ সালে; মহানগরগুলোয় হালকা জলপাই রং, জেলা পুলিশের গাঢ় নীল। র‍্যাবের কালো ও এপিবিএনের পোশাক তৈরি করা হয় খাকি, বেগুনি আর নীল রঙের মিশ্রণে। এমনকি ২০০৯ সালেও কিছুটা পরিবর্তন আসে। প্রতিবারই এর পেছনে ‘অকাট্য যুক্তি’ দেখানো হয়েছে।
যে যুক্তিতেই পুলিশের পোশাক পরিবর্তন হোক না কেন; গত অর্ধশতাব্দীতে পুলিশের আচরণে উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন এসেছে? উনিশ শতকের মাঝামাঝি আনুষ্ঠানিক যাত্রার সময় থেকেই পুলিশ বাহিনী শাসক শ্রেণির লাঠিয়াল হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ব্রিটিশ এবং পাকিস্তান আমলে যেহেতু আজকের মতো রাজনৈতিক ‘ক্যাডার’ ছিল না; পুলিশই ছিল শাসক শ্রেণির ভরসা। পুলিশ কাজটি দক্ষতার সঙ্গে চালিয়ে গেছে। 

আশা করা হয়েছিল, স্বাধীনতার পর অন্তত স্বাধীন দেশের উপযোগী পুলিশ বাহিনী গড়ে উঠবে। কিন্তু তা ঘটেনি। না ঘটারই কথা। কারণ স্বাধীনতার মধ্য দিয়ে শাসক বদলালেও শাসকের শ্রেণি বদলায়নি। শাসক শ্রেণি তার শ্রেণিস্বার্থেই তা হতে দেয়নি। সেই হিসাবে বলা যায়, যতদিন শাসক শ্রেণির চরিত্র বদল না হবে; পুলিশের গুণগত পরিবর্তন আশা করা বাহুল্য হয়েই থাকবে।

বলা হয়– পুলিশ জনগণের বন্ধু। বন্ধুই তো হওয়ার কথা! কিন্তু হতে পারেনি। হতে দেওয়া হয়নি। কারণটা খুবই স্পষ্ট। রাষ্ট্র নিজেই যেখানে শোষণের মাধ্যম, পুলিশ যে মাধ্যমের হাতিয়ার; সেখানে পুলিশ জনগণের বন্ধু হয় কেমন করে? মানুষ আসলে পুলিশকে ভয় পায়; যেমন ভয় পেয়েছে ব্রিটিশ আমলে, তেমনি পাকিস্তান আমলে। এখনও তেমনটিই চলছে। ভয়কে জিইয়ে রেখে বন্ধু হওয়া যায় না। কিন্তু পুলিশের প্রতি এই ভয়টা শাসক শ্রেণির খুব প্রয়োজন। প্রয়োজন ক্ষমতায় যাওয়া এবং ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য। গণতন্ত্রহীন কিংবা দুর্বল গণতন্ত্রের দেশে পুলিশ কখনও জনগণের বন্ধু হতে পারে না।
আমাদের দেশে সুবিদিত, পুলিশকে ম্যানেজ করতে পারলে অনেক কিছু ম্যানেজ করা যায়। পুলিশ হাতে থাকলে নির্বাচনে জেতা যায়; প্রতিপক্ষকে শায়েস্তা করা যায়; জমির দখল নেওয়া বা উচ্ছেদ করা; ইত্যাকার কাজ! এ কারণে প্রবল পরাক্রমশালী মন্ত্রী-এমপিরা পর্যন্ত পুলিশকে সমঝে চলেন। চলতে তারা বাধ্য। কারণ স্বাধীনতার ৫৩ বছরেও দেশে গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করতে পারেনি। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার দুর্বলতার কারণে জনগণের ক্ষমতায়নও ঘটেনি। সংবিধানে যা-ই লেখা থাকুক; জনগণ কেবলই ‘প্রজা’। আসল রাজা ‘রাষ্ট্র’। আর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা কাঠামোতে আরোহণে পুলিশের সহযোগিতা অনিবার্য।
নিজেদের অনিবার্যতা সম্পর্কে পুলিশও বিলক্ষণ সচেতন। তাই তারাও সুযোগ গ্রহণ করে। কিছুদিন আগেই কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলায় বিএনপির কর্মিসভায় হাজির হয়ে নিজেকে আওয়ামী লীগ আমলে নির্যাতিত দাবি করে বক্তৃতা করলেন থানার ওসি মঈনুল ইসলাম (সমকাল, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪)। বোঝাতে চাইলেন, তিনি বিএনপির লোক। 

মঈনুল ইসলাম মনে করেছেন, রাজনীতির যে অবস্থা, তাতে আগামী নির্বাচনে বিএনপিরই ক্ষমতায় যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। তাই তিনি এখন থেকেই ভবিষ্যতের ক্ষেত্র প্রস্তুত করছেন। এ ধরনের কাজ আমরা আওয়ামী লীগ আমলেও দেখেছি। পুলিশ সদস্যরা আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের জন্য ভোটের প্রচারণা করেছেন। বিরোধী দল মোকাবিলায় আওয়ামী লীগের দলীয় ক্যাডারের মতো আচরণ করেছেন। 
২০২৩ সালের আগস্টে কুমিল্লার নাঙ্গলকোট থানার ওসি তদানীন্তন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের জন্য প্রকাশ্যেই ভোট চেয়ে বক্তৃতা করেছিলেন। একই কাজ করেছিলেন জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ থানার ওসি। তিনিও আওয়ামী লীগকে নিজের দল দাবি করে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে ভোট চেয়ে বক্তব্য দেন। এসব খবর সে সময়কার পত্রপত্রিকায় ছাপা হয়েছে। সমালোচনাও হয়েছে। কিন্তু সরকার তা গায়ে লাগায়নি। কেনইবা লাগাবে! সরকারি দল আর পুলিশ– ইতিহাসের সব পর্যায়েই মিলেমিশে রাষ্ট্র নামে শোষণযন্ত্রকে পাহারা দিয়ে আসছে। সম্পর্কটি তাই সিমবায়োটিক; দু’পক্ষই লাভবান তাতে। যতদিন এই সম্পর্ক ভাঙা না যাবে, পোশাক বদলে কোনো কাজ হবে না।

মোদ্দাকথা, পোশাকের ক্ষেত্রে যতই পরিবর্তন আনা হোক; রাষ্ট্র নিজে যতদিন জনগণের বন্ধু না হবে, ততদিন পুলিশও বন্ধু হবে না। হতে পারবে না। সবার আগে তাই রাষ্ট্রকে জনগণের হতে হবে। কিন্তু চরিত্র না বদলালে রাষ্ট্রও জনগণের হবে না। তাই রাষ্ট্রের চরিত্রকে বদলাতে হবে সর্বাগ্রে। শোষক পুঁজির মালিকানা ভেঙে রাষ্ট্রকে নিয়ে আসতে হবে জনগণের মালিকানায়। লিখতে হবে নতুন খতিয়ান। তখনই কেবল পুলিশ হবে জনগণের বন্ধু। মানুষ তখন পোশাকের দিকে নয়, তাকাবে পোশাকের ভেতরের মানুষটার দিকে।

মোশতাক আহমেদ: কলাম লেখক; অবসরপ্রাপ্ত পলিটিক্যাল অ্যাফেয়ার্স অফিসার, জাতিসংঘ

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র জন য ক ষমত আওয় ম বদল ত ক বদল বদল ছ

এছাড়াও পড়ুন:

বাজেটের ত্রুটি সংশোধনের আহ্বান

২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট ২২ জুন পাসের আগে বাজেটে যেসব ত্রুটি রয়েছে তা সংশোধন করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ।

শনিবার (১৪ জুন) জাতীয় প্রেসক্লাবে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি আয়োজিত ‘বাজেট: দেড় দশকের অভিজ্ঞতা ও অর্থনীতির গতিপথ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, “আমরা চাই ২২ তারিখের আগে বাজেটে যেসব ত্রুটি রয়েছে তা সংশোধন করা হোক। আমাদের এখন যেসব সংস্কার কমিটিগুলো রয়েছে তারা যেসব সুপারিশ দিয়েছে, সেগুলো অল্প করেও যদি বাস্তবায়ন করা হতো, তাহলেও বাজেটে কিছুটা নতুনত্ব আসতো। সংস্কার কমিশনগুলো কি স্রেফ অলঙ্কার হিসেবে রয়েছে নাকি, আমার জানা নেই। আমি চাই, সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের উদ্যোগ সরকারের পক্ষ থেকে গ্রহণ করা হোক। এবারের বাজেটে দেখা যাচ্ছে যে সুদ সর্বোচ্চ পর্যায়ে আছে। এটা যদিও বর্তমান সরকারের দোষ না।এটার জন্য আগের সরকারই দায়ী।”

আরো পড়ুন:

নির্দেশনামূলক বাজেট দিতে অন্তর্বর্তী সরকার ব‍্যর্থ: এবি পার্টি

প্রস্তাবিত বাজেট নব্য ফ্যাসিবাদী রাজনৈতিক দর্শনের প্রতিফলন: জিএম কাদের

প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, “সরকার মেগা প্রকল্প থেকে বের হতে চায়, এটা তাদের প্রত্যাশা। কিন্তু যেসব মেগা প্রকল্প এখন চলমান রয়েছে, সেগুলোরও একটি পর্যালোচনা করতে হবে। উন্নয়ন নাম দিয়ে যেসব প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে, যা বিলাসী ও জনগণের জন্য বিপজ্জনক। যেমন-রূপপুর, মাতারবাড়ি, রামপাল, এসব প্রকল্প থেকে সরকারের বের হয়ে আসার কোনো উদ্যোগ আমরা দেখিনি। এখন থেকে বের হওয়ার জন্য সরকার যে উদ্যোগ নিতে পারতো, তা হলো জাতীয় সক্ষমতার উন্নয়নের বিকাশ ঘটানো। আর এই বিকাশ ঘটানো হলে অনেক কম দামে আমরা গ্যাস পাব, বিদ্যুৎ খাতে যে বিপুল পরিমাণ ভর্তুকি রয়েছে তা আর দিতে হবে না। পরিবেশ বিনাশী কোনো প্রকল্পেও যেতে হবে না সরকারের।”

অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, “তবে দুঃখজনক যে, বর্তমান সরকার যে বাজেট উপস্থাপন করেছে, তাতে এই ধরনের পরিকল্পনা নেই। বাজেটে আগের ধারাবাহিকতাই দেখা যাচ্ছে, ধারাবাহিকতায় উন্নয়ন শুধু শিরোনামে দেখা যায়, বাস্তবতায় তা হলো জনগণের জীবন বিপণ্নকারী।”

সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন লেখক কল্লোল মোস্তফা, গবেষক মাহা মির্জা প্রমুখ।

ঢাকা/রায়হান/সাইফ 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ইশরাক হোসেনের কাছে দায়িত্বশীল ও পরিপক্ব আচরণ প্রত্যাশা করব: উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ
  • নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করলেন মুফতি আমির হামজা
  • বিসিএস ক্যাডার এবং বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের মধ্যে তুলনা কেন?
  • বিসিএস ক্যাডার ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের মধ্যে তুলনা কেন?
  • লন্ডন বৈঠকে কারও দায়মুক্তির প্রসঙ্গ ছিল না: সালাউদ্দিন আহমেদ
  • ইরানের শাসকদের ক্ষমতাচ্যুত করার আহ্বান সাবেক শাহের পুত্রের
  • ভারতে কোনো বাংলাদেশি থাকলে উপযুক্ত চ্যানেলে পাঠাতে হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ট্রাম্পবিরোধী বিক্ষোভ, সামরিক কুচকাওয়াজ ঘিরে উত্তেজনা
  • যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ট্রাম্পবিরোধী বিক্ষোভ, সামরিক কুচকাওয়াজ ঘিরে ব্যাপক উত্তেজনা
  • বাজেটের ত্রুটি সংশোধনের আহ্বান