Samakal:
2025-05-01@05:33:41 GMT

পোশাক বদলালেই কি পুলিশ বদলাবে?

Published: 4th, February 2025 GMT

পোশাক বদলালেই কি পুলিশ বদলাবে?

পোশাক তো বদলাতেই হয়। ধুলোবালিতে নোংরা হলে বদলাতে হয়; আবহাওয়া অনুযায়ী বদলাতে হয়; হাল ফ্যাশনের সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়েও বদলাতে হয়। ষাটের দশকের শেষ দিকে ‘টেডি’ পোশাক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল; সত্তরের দশকে ‘বেলবটম’। এখন আর সেসব কেউ পরে না। ফ্যাশন বদলেছে; বদলেছে পোশাক। মানুষ কিন্তু তেমনই আছে; বদলায়নি। কেউ কেউ অবশ্য বদলেছে; পোশাকের কারণে নয়; বদলেছে অন্তর্সত্তা। আসলে মানুষের বদলটা ঘটে ভেতর থেকেই; পোশাক থেকে নয়।

ইদানীং কথা চলছে পুলিশ বাহিনীর পোশাক বদলের। অনেক জল্পনাকল্পনার পর চূড়ান্ত হয়েছে নতুন পোশাক। ২০ জানুয়ারি সচিবালয়ে আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে এমনটিই জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.

) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে নানা রকমের মন্তব্য চলছে। কেউ কেউ বলছেন, জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে পুলিশ বাহিনীর আচরণের কারণে পোশাকের পরিবর্তন জরুরি হয়ে পড়েছিল। কেউবা আবার এতে ষড়যন্ত্রের আভাসও দেখছেন।

যতটুকু জানা যায়, ২০২০ সাল থেকেই পুলিশের বর্তমান পোশাক পরিবর্তন নিয়ে আলোচনা চলছিল। ২০২১ সালের শুরুর দিকে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের জন্য বেশ কয়েকটি পোশাকের ট্রায়ালও হয়। তার পরও নানা কারণে নতুন পোশাক পাননি পুলিশ সদস্যরা। এরই মাঝে পতন ঘটে গেছে সরকারের। ধরে নেওয়া যায়, আগের সিদ্ধান্তের ধারাবাহিকতায়ই বর্তমান সিদ্ধান্তটি নেওয়া হয়েছে।
অখণ্ড ভারতীয় উপমহাদেশে পুলিশের ইউনিফর্মের রং ছিল খাকি। ব্রিটিশ অফিসার স্যার হ্যারি লুমসডেনের পরামর্শে ১৮৪৭ সালে এটি চালু হয়। তার একশ বছর পর ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগ হয়ে ভারত ও পাকিস্তান হয়েছে; কিন্তু পুলিশের পোশাকের রং খাকিই রয়ে গিয়েছিল। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠিত স্বাধীন বাংলাদেশেও খাকি রং চালু ছিল। 

বাংলাদেশ পুলিশের পোশাকে সবচেয়ে বড় পরিবর্তন আসে ২০০৪ সালে; মহানগরগুলোয় হালকা জলপাই রং, জেলা পুলিশের গাঢ় নীল। র‍্যাবের কালো ও এপিবিএনের পোশাক তৈরি করা হয় খাকি, বেগুনি আর নীল রঙের মিশ্রণে। এমনকি ২০০৯ সালেও কিছুটা পরিবর্তন আসে। প্রতিবারই এর পেছনে ‘অকাট্য যুক্তি’ দেখানো হয়েছে।
যে যুক্তিতেই পুলিশের পোশাক পরিবর্তন হোক না কেন; গত অর্ধশতাব্দীতে পুলিশের আচরণে উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন এসেছে? উনিশ শতকের মাঝামাঝি আনুষ্ঠানিক যাত্রার সময় থেকেই পুলিশ বাহিনী শাসক শ্রেণির লাঠিয়াল হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ব্রিটিশ এবং পাকিস্তান আমলে যেহেতু আজকের মতো রাজনৈতিক ‘ক্যাডার’ ছিল না; পুলিশই ছিল শাসক শ্রেণির ভরসা। পুলিশ কাজটি দক্ষতার সঙ্গে চালিয়ে গেছে। 

আশা করা হয়েছিল, স্বাধীনতার পর অন্তত স্বাধীন দেশের উপযোগী পুলিশ বাহিনী গড়ে উঠবে। কিন্তু তা ঘটেনি। না ঘটারই কথা। কারণ স্বাধীনতার মধ্য দিয়ে শাসক বদলালেও শাসকের শ্রেণি বদলায়নি। শাসক শ্রেণি তার শ্রেণিস্বার্থেই তা হতে দেয়নি। সেই হিসাবে বলা যায়, যতদিন শাসক শ্রেণির চরিত্র বদল না হবে; পুলিশের গুণগত পরিবর্তন আশা করা বাহুল্য হয়েই থাকবে।

বলা হয়– পুলিশ জনগণের বন্ধু। বন্ধুই তো হওয়ার কথা! কিন্তু হতে পারেনি। হতে দেওয়া হয়নি। কারণটা খুবই স্পষ্ট। রাষ্ট্র নিজেই যেখানে শোষণের মাধ্যম, পুলিশ যে মাধ্যমের হাতিয়ার; সেখানে পুলিশ জনগণের বন্ধু হয় কেমন করে? মানুষ আসলে পুলিশকে ভয় পায়; যেমন ভয় পেয়েছে ব্রিটিশ আমলে, তেমনি পাকিস্তান আমলে। এখনও তেমনটিই চলছে। ভয়কে জিইয়ে রেখে বন্ধু হওয়া যায় না। কিন্তু পুলিশের প্রতি এই ভয়টা শাসক শ্রেণির খুব প্রয়োজন। প্রয়োজন ক্ষমতায় যাওয়া এবং ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য। গণতন্ত্রহীন কিংবা দুর্বল গণতন্ত্রের দেশে পুলিশ কখনও জনগণের বন্ধু হতে পারে না।
আমাদের দেশে সুবিদিত, পুলিশকে ম্যানেজ করতে পারলে অনেক কিছু ম্যানেজ করা যায়। পুলিশ হাতে থাকলে নির্বাচনে জেতা যায়; প্রতিপক্ষকে শায়েস্তা করা যায়; জমির দখল নেওয়া বা উচ্ছেদ করা; ইত্যাকার কাজ! এ কারণে প্রবল পরাক্রমশালী মন্ত্রী-এমপিরা পর্যন্ত পুলিশকে সমঝে চলেন। চলতে তারা বাধ্য। কারণ স্বাধীনতার ৫৩ বছরেও দেশে গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করতে পারেনি। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার দুর্বলতার কারণে জনগণের ক্ষমতায়নও ঘটেনি। সংবিধানে যা-ই লেখা থাকুক; জনগণ কেবলই ‘প্রজা’। আসল রাজা ‘রাষ্ট্র’। আর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা কাঠামোতে আরোহণে পুলিশের সহযোগিতা অনিবার্য।
নিজেদের অনিবার্যতা সম্পর্কে পুলিশও বিলক্ষণ সচেতন। তাই তারাও সুযোগ গ্রহণ করে। কিছুদিন আগেই কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলায় বিএনপির কর্মিসভায় হাজির হয়ে নিজেকে আওয়ামী লীগ আমলে নির্যাতিত দাবি করে বক্তৃতা করলেন থানার ওসি মঈনুল ইসলাম (সমকাল, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪)। বোঝাতে চাইলেন, তিনি বিএনপির লোক। 

মঈনুল ইসলাম মনে করেছেন, রাজনীতির যে অবস্থা, তাতে আগামী নির্বাচনে বিএনপিরই ক্ষমতায় যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। তাই তিনি এখন থেকেই ভবিষ্যতের ক্ষেত্র প্রস্তুত করছেন। এ ধরনের কাজ আমরা আওয়ামী লীগ আমলেও দেখেছি। পুলিশ সদস্যরা আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের জন্য ভোটের প্রচারণা করেছেন। বিরোধী দল মোকাবিলায় আওয়ামী লীগের দলীয় ক্যাডারের মতো আচরণ করেছেন। 
২০২৩ সালের আগস্টে কুমিল্লার নাঙ্গলকোট থানার ওসি তদানীন্তন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের জন্য প্রকাশ্যেই ভোট চেয়ে বক্তৃতা করেছিলেন। একই কাজ করেছিলেন জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ থানার ওসি। তিনিও আওয়ামী লীগকে নিজের দল দাবি করে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে ভোট চেয়ে বক্তব্য দেন। এসব খবর সে সময়কার পত্রপত্রিকায় ছাপা হয়েছে। সমালোচনাও হয়েছে। কিন্তু সরকার তা গায়ে লাগায়নি। কেনইবা লাগাবে! সরকারি দল আর পুলিশ– ইতিহাসের সব পর্যায়েই মিলেমিশে রাষ্ট্র নামে শোষণযন্ত্রকে পাহারা দিয়ে আসছে। সম্পর্কটি তাই সিমবায়োটিক; দু’পক্ষই লাভবান তাতে। যতদিন এই সম্পর্ক ভাঙা না যাবে, পোশাক বদলে কোনো কাজ হবে না।

মোদ্দাকথা, পোশাকের ক্ষেত্রে যতই পরিবর্তন আনা হোক; রাষ্ট্র নিজে যতদিন জনগণের বন্ধু না হবে, ততদিন পুলিশও বন্ধু হবে না। হতে পারবে না। সবার আগে তাই রাষ্ট্রকে জনগণের হতে হবে। কিন্তু চরিত্র না বদলালে রাষ্ট্রও জনগণের হবে না। তাই রাষ্ট্রের চরিত্রকে বদলাতে হবে সর্বাগ্রে। শোষক পুঁজির মালিকানা ভেঙে রাষ্ট্রকে নিয়ে আসতে হবে জনগণের মালিকানায়। লিখতে হবে নতুন খতিয়ান। তখনই কেবল পুলিশ হবে জনগণের বন্ধু। মানুষ তখন পোশাকের দিকে নয়, তাকাবে পোশাকের ভেতরের মানুষটার দিকে।

মোশতাক আহমেদ: কলাম লেখক; অবসরপ্রাপ্ত পলিটিক্যাল অ্যাফেয়ার্স অফিসার, জাতিসংঘ

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র জন য ক ষমত আওয় ম বদল ত ক বদল বদল ছ

এছাড়াও পড়ুন:

শারীরিক শাস্তি শিশুর বিকাশে বড় বাধা, বিলোপ জরুরি

শিশুদের শারীরিক শাস্তি দেওয়া এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি প্রচলিত এবং সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য সহিংসতা। ইউনিসেফ জানাচ্ছে, বিশ্বে প্রতিবছর ১ থেকে ১৭ বছর বয়সী ১ কোটি ৬০ লাখের বেশি শিশু শারীরিক শাস্তির শিকার হয়।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো ও ইউনিসেফের যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত ‘মাল্টিপল ইন্ডিকেটর ক্লাস্টার সার্ভে ২০১৯’ অনুযায়ী, বাংলাদেশের ১ থেকে ১৪ বছর বয়সী ৮৯ শতাংশ শিশু জরিপ–পূর্ববর্তী এক মাসের মধ্যে শারীরিক শাস্তির শিকার হয়েছে।

জরিপে আরও দেখা যায়, ৩৫ শতাংশ অভিভাবক মনে করেন, শিশুকে শাস্তি দেওয়ার প্রয়োজন আছে। বাংলাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শাস্তি নিষিদ্ধ করতে ২০১১ সালে একটি পরিপত্র জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

তারপরও শিশুরা শিক্ষকদের হাতে মারধর ও অপমানের শিকার হচ্ছে। তা ছাড়া বাড়ি, প্রতিষ্ঠান, কর্মক্ষেত্র ইত্যাদিতেও শিশুদের শাস্তি দেওয়া হয়।

শারীরিক শাস্তি বলতে এমন শাস্তিকে বোঝায়, যেখানে কোনো না কোনো মাত্রার ব্যথা বা অস্বস্তি প্রদানের উদ্দেশ্যে শারীরিক বল প্রয়োগ করা হয়। নিষ্ঠুর ও অবমাননাকর আচরণ এ ধরনের শাস্তির অন্তর্ভুক্ত। শাস্তি শিশুর মানবিক মর্যাদা ক্ষুণ্ন করে এবং নিঃসন্দেহে শিশু অধিকারের ভয়াবহ লঙ্ঘন।

শাস্তির নামে নিত্যদিনের সহিংসতা প্রতিবছর হাজার হাজার শিশুর আঘাত ও মৃত্যুর কারণ হয়। শাস্তির ব্যাপক সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা প্রমাণ করে, শিশু প্রতিপালনে কিছুটা সহিংসতা স্বাভাবিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে। এটি সমাজে শিশুদের অধস্তন অবস্থান তুলে ধরে এবং অন্যান্য ধরনের সহিংসতার পথ তৈরি করে দেয়। সমাজের সবচেয়ে ছোট ও সবচেয়ে অরক্ষিত সদস্য হিসেবে শিশুদের নির্যাতন থেকে কম নয়; বরং বেশি সুরক্ষা পাওয়া উচিত।

শারীরিক ও মানসিক শাস্তির কুফল

গ্লোবাল পার্টনারশিপ টু অ্যান্ড ভায়োলেন্স এগেইনস্ট চিলড্রেন প্রকাশিত ‘করপোরাল পানিশমেন্ট অব চিলড্রেন: সামারি অব রিসার্চ অন ইটজ ইমপ্যাক্ট অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েশনস’ (অক্টোবর, ২০২১) জানাচ্ছে, ৩০০টির বেশি গবেষণা শাস্তির সঙ্গে অসংখ্য নেতিবাচক ফলের সম্পৃক্ততা প্রমাণ করেছে। কোনো গবেষণায় শাস্তির কোনো সুফল পাওয়া যায়নি।

শাস্তি শিশুদের স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং সামগ্রিক বিকাশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। শৈশবের এই দৈনন্দিন সহিংসতা প্রাপ্তবয়স্ক জীবনে আক্রমণাত্মক মনোভাব, অপরাধপ্রবণতা ও অসামাজিক আচরণের আশঙ্কা বাড়িয়ে দেয়।

শাস্তি নিয়ে ভ্রান্ত ধারণা

বাংলাদেশের মা-বাবা, শিক্ষকসহ অনেকের মধ্যেই ভুল ধারণা রয়েছে যে শাস্তি শিশুদের সঠিক আচরণ করতে শেখায়। কিন্তু এটা ভুল ধারণা। বড়রা যখন শিশুদের কিছু শেখানোর নামে মারধর অথবা বকাবকি করেন, তখন শিশুরা শুধু শাস্তি এড়ানোর জন্যই কোনো আচরণ করতে শেখে। কিন্তু তারা এর কারণ উপলব্ধি করে না। এর ফলে পরবর্তী সময়ে তারা পুনরায় একই আচরণ করে। শেখানোর কৌশল হিসেবে শাস্তি একটি অকার্যকর পদ্ধতি।

গবেষণায় প্রমাণিত যে শিশুদের বেড়ে ওঠায় শাস্তি নয়, প্রয়োজন ভালোবাসা এবং বয়স অনুযায়ী নির্দেশনা।

সমাজে সহিংসতার চক্র ভাঙতে হলে শাস্তি বিলোপ করতে হবে

মা-বাবা এবং শিক্ষকদের শিশুরা সবচেয়ে বেশি বিশ্বাস করে। তাঁরা যখন শাস্তি দেন, তখন শিশুরা ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে নির্যাতনকে স্বাভাবিক মনে করে, মেনে নিতে শেখে। শাস্তি পাওয়া শিশুরা প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর নিজেরাও নির্যাতন করবে অথবা নির্যাতনের শিকার হবে—এমন আশঙ্কা বেড়ে যায়। আমরা যদি শিশুদের শাস্তি দেওয়া বন্ধ না করি, তাহলে সমাজে সহিংসতার চক্র ভাঙা অসম্ভব হয়ে পড়বে।

৬৮টি দেশ সব ক্ষেত্রে শিশুদের শাস্তি নিষিদ্ধ করেছে

৪০ বছর আগে শুধু সুইডেন ও ফিনল্যান্ড শারীরিক শাস্তি নিষিদ্ধ করে আইন পাস করেছিল, কিন্তু আজ ৬৮টি রাষ্ট্র শিশুদের সুরক্ষায় এবং তাদের অধিকার সমুন্নত রাখতে সব ক্ষেত্রে (বাড়ি, বিদ্যালয়, কর্মক্ষেত্র, বিকল্প শিশু পরিচর্যা কেন্দ্রসহ সব ধরনের প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি) শাস্তি নিষিদ্ধ করে আইন করেছে। বাংলাদেশ এখনো এ তালিকায় নেই।

যখন আইন বাস্তবায়িত হয়, তখন সমাজে শারীরিক শাস্তির গ্রহণযোগ্যতা ও ব্যবহার এবং অন্যান্য ধরনের সহিংসতা ক্রমাগত হ্রাস পায়। সুইডেন এর একটি উদাহরণ।

চাই সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন

প্রায়ই শোনা যায় যে মা-বাবা ও শিক্ষক কর্তৃক শাস্তি প্রদান আমাদের সমাজে বহুদিন ধরেই চলে আসছে এবং এটি এখানে সাধারণ চর্চা। অনেকে এমনও দাবি করেন যে তাঁরা আজ যে অবস্থানে আছেন, শাস্তি না দিলে তাঁরা সে জায়গায় আসতে পারতেন না! মা-বাবা তাঁদের শাস্তি না দিলে তাঁরা কেমন মানুষ হয়ে বেড়ে উঠতেন, সেটা কিন্তু কেউ জানে না।

আগে প্রচলিত ছিল বলেই আমরা কোনো আচরণ অব্যাহত রাখব, তা হতে পারে না, বিশেষত যখন জানি যে সেটা শিশুদের জন্য ক্ষতিকর।

সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য বলেই চোখের সামনে শিশুদের শাস্তি পেতে দেখলেও কেউ কিছু বলেন না। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ‘ঠাট্টা’ করে শিশুদের শাস্তি দেওয়ার কথা কোনো মা-বাবা পোস্ট করেন। যাঁরা অন্য অনেক বিষয়ে সংবেদনশীল এবং নানা ধরনের অধিকার আদায়ে আন্দোলন করেন, তাঁদেরও শিশুদের শাস্তি নিয়ে অসংবেদনশীল আচরণ করতে দেখা যায়।

শিশুদের শাস্তি বিলোপে সুপারিশ

প্রাপ্তবয়স্কদের মতো শিশুদেরও আইনের দ্বারা সহিংসতা থেকে সুরক্ষিত থাকার সমান অধিকার রয়েছে এবং এর মধ্যে শাস্তি থেকে সুরক্ষাও অন্তর্ভুক্ত। বিশ্বের সব দেশ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) ১৬.২-এ শিশুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা বন্ধ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে এ প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে।

শিশুদের প্রতি শাস্তি বিলোপে বাংলাদেশে যা করণীয়

সব ক্ষেত্রে (বাড়ি, বিদ্যালয়, কর্মক্ষেত্র, বিকল্প শিশু পরিচর্যা কেন্দ্রসহ সব ধরনের প্রতিষ্ঠান) শিশুদের শাস্তি নিষিদ্ধ করে একটি নতুন আইন প্রণয়ন; নীতিমালা, কর্মসূচি ও জনসচেতনতামূলক প্রচারণার মাধ্যমে আইনি নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা এবং এর বাস্তবায়ন যথাযথভাবে হচ্ছে কি না, তা নিশ্চিত করা; শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শাস্তি নিষিদ্ধকরণে সরকার যে পরিপত্র জারি করেছে, তার বাস্তবায়ন ও মনিটরিং; শাস্তি না দিয়ে ইতিবাচকভাবে শিশুদের বড় করা ও শিক্ষা প্রদান সম্পর্কে মা-বাবা এবং শিক্ষকদের দক্ষতা বাড়ানো; জাতীয় পর্যায়ে এসডিজি সূচক ১৬.২.১ অন্তর্ভুক্ত করে অগ্রগতি পরিমাপ করা; শিশুদের মতামতকে সম্মান প্রদর্শন করা এবং শাস্তি বন্ধের প্রক্রিয়ার বিভিন্ন ধাপে শিশুদের কথা শোনা।

লায়লা খন্দকার: উন্নয়নকর্মী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা কমাতে গুরুত্ব আরোপ
  • অফিসে ঢুকে প্রধান শিক্ষককে জুতাপেটা করার অভিযোগ
  • মাওলানা রঈস উদ্দিন হত্যার বিচার দাবি ১০৪ নাগরিকের
  • গোবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি
  • শারীরিক শাস্তি শিশুর বিকাশে বড় বাধা, বিলোপ জরুরি
  • সন্তানের বন্ধু হতে চাইলে
  • সবুজ এলাকায় পুলিশের প্রাণঘাতী অস্ত্রের ব্যবহার কম হয়
  • গোবিপ্রবিতে কর্মকর্তাদের শৃঙ্খলাবিষয়ক কর্মশালা শুরু
  • মূলধারার শিক্ষার সঙ্গে কারিগরি শিক্ষা সম্পৃক্ত করা দরকার: শিক্ষা উপদেষ্টা
  • মেয়েদের সবকিছুতেই জ্বালা: রাতাশ্রী