ভারতের পার্লামেন্টে বিরোধীদের আলোচনার দাবি না মেনে বিবৃতি জয়শঙ্করের
Published: 6th, February 2025 GMT
অবৈধ অভিবাসীদের হাতে হাতকড়া ও পায়ে শিকলের বেড়ি পরিয়ে ফেরত পাঠানো হলেও যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ভারত সরকার প্রতিবাদ পর্যন্ত জানায়নি। বিষয়টি নিয়ে বিজেপিবিরোধীরা পার্লামেন্টে আলোচনার দাবি তুললে তা মানা হয়নি। পরে বিরোধী দলগুলোর বিক্ষোভের মুখে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর আজ বৃহস্পতিবার রাজ্যসভায় বিবৃতি দেন। তাতে শুধু বলা হয়, অবৈধ অভিবাসীদের সঙ্গে যাতে দুর্ব্যবহার করা না হয়, তা নিশ্চিত করতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারত কথা বলছে।
গত বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক পণ্যবাহী বিমানে ১০৪ জন অবৈধ ভারতীয় অভিবাসীকে ফেরত পাঠানো হয়। হাতে হাতকড়া ও পায়ে বেড়ি পরানো যাত্রীদের ছবি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। ফেরত আসা যাত্রীদের সাক্ষাৎকারও প্রচারিত হয়। তাঁদের নামানো হয় অমৃতসর বিমানবন্দরে।
পরে জানাজানি হয়, পুরো যাত্রাপথে যাত্রীদের শৃঙ্খলিত রাখা হয়েছিল। এই অমানবিক প্রত্যাবর্তন নিয়ে আলোচনার জন্য সংসদের দুই কক্ষে বিরোধীরা দাবি জানালেও তা মানা হয়নি। প্রতিবাদে দফায় দফায় লোকসভা অচল থাকে। সংসদ ভবন চত্বরে রাহুল গান্ধী, প্রিয়াঙ্কা গান্ধীসহ বিভিন্ন বিরোধী দলের সদস্যরা বিক্ষোভ দেখান। অংশ নেন সমাজবাদী পার্টি, তৃণমূল কংগ্রেস, ডিএমকে, আম আদমি পার্টির সদস্যরাও।
এই বিক্ষোভের মুখে রাজ্যসভায় বৃহস্পতিবার বেলা দুইটায় বিবৃতি দেন জয়শঙ্কর। এর আগে তিনি দেখা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে। বিবৃতিতে তিনি বলেন, অবৈধ ভারতীয় অভিবাসীদের ফেরত পাঠানো নতুন কিছু নয়। ২০০৯ সাল থেকে প্রতিবছর কতজনকে যুক্তরাষ্ট্র ফেরত পাঠিয়েছে, সেই হিসাব দেওয়ার পাশাপাশি তিনি বলেন, উড়োজাহাজে সব সময়ই অভিবাসীদের নিয়ন্ত্রণে (হাতকড়া ও পায়ে বেড়ি) রাখা হয়। তবে নারী ও শিশুদের সেই নিয়ন্ত্রণের আওতায় রাখা হয় না। তিনি বলেন, সে দেশের নিয়ম মেনেই তা করা হয় এবং এটা শুধু ভারতীয়দের ক্ষেত্রেই করা হচ্ছে না, এই নিয়ম চালু রয়েছে ২০১২ সাল থেকে।
জয়শঙ্করের বিবৃতির পর বিরোধীরা বেশ কিছু প্রশ্ন তোলেন। সব প্রশ্নের উত্তর তিনি স্পষ্ট ভাষায় দেননি। হাতকড়া ও বেড়ি পরানো ভারতীয়দের ফেরত পাঠানোর রীতির প্রতিবাদও করেননি। কলম্বিয়া সরকারের মতো ভারত কেন নিজস্ব বিমান পাঠাল না, সেই প্রশ্নও করা হয়েছিল। জয়শঙ্কর তা-ও এড়িয়ে গেছেন। স্পষ্টতই সরকার চায় না প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির যুক্তরাষ্ট্র সফরের আগে এ নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করতে। যুক্তরাষ্ট্রের বিরাগভাজন হতে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: হ তকড়
এছাড়াও পড়ুন:
স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ চলবে: হামাস
স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়ার প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হামাস। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া এক ঘোষণাপত্রের অস্ত্র ত্যাগের আহ্বানের জবাবে সংগঠনটি এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
বৃহস্পতিবার হামাসের সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দখলদারির অবসান এবং জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সম্পূর্ণ সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ থামবে না তারা।
মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া ঘোষণায় বলা হয়েছিল, ‘গাজায় যুদ্ধ বন্ধে হামাসকে (এই উপত্যকায়) তার শাসনের অবশ্যই অবসান ঘটাতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ ও সমর্থনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। সার্বভৌম ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের সঙ্গে এটি সংগতিপূর্ণ।’
সৌদি আরব, কাতার, ফ্রান্স ও মিসরসহ ১৭টি দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লিগ ঘোষণাপত্রটি সমর্থন করেছে। এটি ‘দ্য নিউইয়র্ক’ ঘোষণাপত্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
বৃহস্পতিবার আলাদা এক বিবৃতিতে প্রতি শুক্রবার, শনিবার ও রোববার বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও তাদের মিত্র দেশগুলোর দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ করার আহ্বান জানিয়েছে হামাস। ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে তারা।
অনাহারে মৃত্যু ১৫৪গাজায় কর্মরত চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, উপত্যকাটিতে অনাহারে আরও দুই শিশু এবং এক তরুণ মারা গেছে। এ নিয়ে সেখানে অনাহারে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫৪ জনে। তাদের মধ্যে শিশু ৮৯টি।
গাজায় প্রায় ২১ লাখ মানুষের বসবাস। উপত্যকাটিতে গত মার্চ থেকে নতুন করে অবরোধ শুরু করে ইসরায়েল। ফলে সেখানে ত্রাণবাহী কোনো ট্রাক প্রবেশ করতে পারছিল না। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সম্প্রতি কিছুদিন ধরে গাজায় সীমিত পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশ করতে দিচ্ছে ইসরায়েল। এই ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য।
ত্রাণ নিতে প্রাণহানি ১৩৭৩জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, গাজায় গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ আনতে গিয়ে মোট ১ হাজার ৩৭৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৮৫৯ জন মারা গেছেন বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে। গত মে মাসের শেষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাটি ইসরায়েলি সেনাদের সহায়তায় গাজার কয়েকটি স্থানে ত্রাণ দিচ্ছে।
বাকি ৫১৪ জন মারা গেছেন ত্রাণবাহী ট্রাকের আশপাশে। তাঁরা ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। অধিকাংশই ইসরায়েলের সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকালে গাজায় অন্তত আরও ৪২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ত্রাণ আনতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন। এই নিয়ে প্রায় ২২ মাসের সংঘাতে গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের হামলা নিহত হয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার ৩৩২ জন।
গাজায় স্টিভ উইটকফশুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ গাজা সফর করেছেন। তিনি উপত্যকাটির রাফা এলাকায় জিএইচএফের একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রও ঘুরে দেখেন। এ সময় ইসরায়েলে নিয়োজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হুকাবি তাঁর সঙ্গে ছিলেন। তাঁরা পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাজায় ছিলেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে উইটকফ নিজেই এই কথা জানিয়েছেন। আগের দিন তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। উইটকফ বলেছেন, ‘মাঠের পরিস্থিতি বুঝতে ও তথ্য সংগ্রহ করতে আমরা গাজায় গিয়েছিলাম। গাজার মানবিক পরিস্থিতির একটি স্পষ্ট ধারণা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে পৌঁছে দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য, যাতে করে গাজাবাসীর জন্য খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছাতে পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করা যায়।’
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক বিশেষ দূত ও আবাসন খাতের সাবেক আইনজীবী উইটকফের আন্তর্জাতিক নীতি ও মানবিক সহায়তা-সংক্রান্ত কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তা সত্ত্বেও তিনি মধ্যপ্রাচ্যের সংকট সমাধানের চেষ্টার পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধেও কূটনীতি চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন।