Prothomalo:
2025-12-10@20:35:30 GMT

রাজশাহীর পদ্মায় কুমিরের দেখা

Published: 20th, October 2025 GMT

রাজশাহীর পদ্মার চরে পাখির ছবি তুলতে বেরিয়েছিলেন এক পাখিপ্রেমী দম্পতি। তাঁরা দেখা পেয়েছেন কুমিরের। তা–ও আবার মিঠাপানির কুমির। প্রকৃতি সংরক্ষণবিষয়ক সংস্থাগুলোর জোট আইইউসিএন বাংলাদেশে এই কুমিরকে বিলুপ্ত ঘোষণা করেছে। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে ঘটে এই ঘটনা। পাখির বদলে কুমিরের ছবি নিয়ে বাড়ি ফেরেন ইমরুল কায়েস-উম্মে খাদিজা ইভা দম্পতি।

গরু চরাতে গিয়ে সেদিন দুপুরে রাজশাহীর ষাটবিঘা চরের রাজু আহাম্মেদ প্রথম কুমিরটি দেখতে পান। রাজু জানান, কুমিরটি চরে উঠে এসেছিল। পানি থেকে তিন-চার হাত দূরে। তিনি তখন মুঠোফোনে গান শুনছিলেন। গান বন্ধ করে ছবি তুলতে গেলেই কুমিরটি পানিতে নেমে যায়। অনেকক্ষণ পর নিশ্বাস নেওয়ার জন্য একবার শুধু মুখ বের করেছিল। রাজুর সঙ্গে বন বিভাগের কর্মী সোহেল রানার পরিচয় রয়েছে। তিনি তাঁকে ফোন করে এই খবর দেন। এরপর রাজশাহী বন বিভাগের বন্য প্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বন্য প্রাণী পরিদর্শক জাহাঙ্গীর কবির ফোন করেন ইমরুল কায়েসকে।

ইমরুল ও খাদিজা দম্পতির বাড়ি নগরের কাজীহাটা এলাকায়। সেখান থেকে অতি কাছেই পদ্মা নদী। নগরের শ্রীরামপুর আই বাঁধ থেকে অপর পাশে পদ্মা নদীতে যে চর পড়ে, সেখানে কাশবনের মধ্যে লাল মুনিয়া দেখা যায়। মুনিয়ার ছবি তোলার জন্য তাঁরা সেদিন সকাল সকাল নৌকা নিয়ে বেরিয়ে পড়েন।

খাদিজার ভাষায়, রোদের মধ্যে চরে হাঁটতে হাঁটতে খুব ক্লান্ত হয়ে পড়েন। ঘাটের দোকানে এসে চানাচুর, বিস্কুট ও কোমল পানীয় খেতে খেতেই ঘুমে তাঁর চোখ বন্ধ হয়ে আসছিল। ঠিক সেই মুহূর্তে কায়েসের মুঠোফোনে বন বিভাগের ফোনটা আসে। তারপর ঘুম ছুটে গেল। পাখি বাদ দিয়ে কুমিরের ছবির নেশায় নেমে পড়েন।

উম্মে খাদিজা বলেন, মাথার ওপরে তখন কড়া রোদ। অনেক ক্লান্ত। তবু ভাবছিলেন, এতটা পথ এসে কুমির না দেখে ফিরে যাবেন, তা হয় না। প্রায় হতাশ হয়ে তিনি কায়েসকে বলেন, কুমির মনে হয় এতক্ষণে চলে গেছে। তারপরও থেমে থাকতে পারলেন না। এদিকে তাঁরা যেখানে দাঁড়িয়ে ছিলেন তার সামনের খাঁড়িতে কোমরসমান পানি। তাঁরা স্যান্ডেল খুলে ক্যামেরা মাথার ওপর ধরে খাঁড়ি পার হবেন, ভয়ে ছিলেন কোনোভাবে যাতে পা পিছলে না যায়।

খাদিজা বলেন, খাঁড়ি থেকে ওঠার পর বুঝতে পারছিলেন না আসলে কোন দিকে যাবেন। শেষমেশ না বুঝেই হাঁটা ধরেন, যেদিক দুচোখ যায়। হাঁটতে হাঁটতে একসময় একেবারে ভারতের সীমান্তে গিয়ে প্রত্যক্ষদর্শী রাজু আহাম্মেদের বাড়ি খুঁজে পান।

এবার রাজুকে সঙ্গে নিয়ে হাঁটতে লাগলেন। যেখানে রাজু কুমির দেখেছিলেন সেই খাঁড়ির কাছে এসে দেখেন কুমির নেই। খাদিজা বলেন, তখন মনটা আরও খারাপ হয়ে গেল। ধপাস করে একটা গাছের নিচে বসে পড়েন।

কিছুক্ষণ বসে থাকার পর কায়েস ড্রোন ওড়ালেন। প্রথমে ড্রোনটা তাঁদের ডান দিকে পাঠালেন। কৌতূহলী হয়ে তিনি কায়েসকে জিজ্ঞেস করলেন, কুমির পাওয়া গেল কি না। কায়েস মাথা নাড়া দিয়ে বোঝালেন কুমির নেই। শুনে তিনি হতাশ হয়ে মাথা নিচু করে বসে থাকলেন। একটু পর কায়েস হুট করে উত্তেজিত হয়ে বলে উঠলেন, ‘পাগলি, কুমির!’ তিনি খুশিতে লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়ালেন। ড্রোন চালু রাখা অবস্থায় দুজনে কুমিরের দিকে হাঁটা ধরেন।

উম্মে খাদিজার ভাষায়, ‘কিছু দূর হাঁটতে হাঁটতে অবশেষে জীবনে প্রথম সামনাসামনি প্রকৃতিতে কুমিরের দেখা পেলাম। কায়েস ড্রোন দিয়ে কিছু ভিডিও নিল। আমি ক্যামেরায় কিছু ছবি তুললাম ও ভিডিও করলাম।’

ইমরুল কায়েস-উম্মে খাদিজা দুজনই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর। পেশায় তাঁরা আলোকচিত্রী।

এই কুমিরের বিষয়ে আইইউসিএনের মুখ্য গবেষক এ বি এম সারোয়ার আলম (সীমান্ত দীপু) বলেন, ২০১৫ সালে মিঠাপানির কুমিরকে বাংলাদেশে বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। তারপরও পাবনায় একটা দেখা গেছে। অন্য জায়গায় আরও দুটি পাওয়া যায়। এ দুটোকে সুন্দরবনের করমজল সেন্টারে রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, এগুলো বাংলাদেশের প্রকৃতিতে বেড়ে ওঠা কুমির না হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এরা বয়স্ক। ভারতের চাম্বুল নদ থেকে আসতে পারে।

আইইউসিএনের এই গবেষক বলেন, বাংলাদেশে তিন প্রজাতির কুমির রয়েছে। এর মধ্যে লোনাপানির কুমির, যা দেখা যায় সুন্দরবনে; মিঠাপানির কুমির, যা ইতিমধ্যে বিলুপ্ত আর রয়েছে ঘড়িয়াল, যা পদ্মা–যমুনায় দেখা যায়।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রক ত ইমর ল

এছাড়াও পড়ুন:

লটারির পুরস্কার যখন পিকাসোর চিত্রকর্ম

পাবলো পিকাসোর চিত্রকর্মের বিশ্বজোড়া কদর। দামও আকাশছোঁয়া। সে জন্যই হয়তো শিল্পপ্রেমীদের অনেকেই পিকাসোর চিত্রকর্ম নিজের সংগ্রহে রাখার কথা কল্পনাও করতে পারেন না। তাঁদের জন্য বড় সুযোগ হতে পারে ফ্রান্সের একটি দাতব্য সংস্থার লটারি। ১০০ ইউরোর লটারির টিকিট কিনে মিলতে পারে পিকাসোর একটি চিত্রকর্ম।

এই লটারির টিকিট পাওয়া যাবে ‘ওয়ান পিকাসো হানড্রেড ইউরো ডটকম’ নামের একটি ওয়েবসাইটে। এর উদ্দেশ্য মহৎ। মোট ১ লাখ ২০ হাজার টিকিট বিক্রির অর্থ যাবে আলঝেইমার রোগ নিয়ে গবেষণায়। আগামী বছরের ১৪ এপ্রিল নিলামকারী প্রতিষ্ঠান ক্রিস্টির প্যারিস কার্যালয়ে বিজয়ীর হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে।

পিকাসোর ওই চিত্রকর্মে ‘ডোরা মার’ নামের এক নারীকে আঁকা হয়েছে। তিনি পিকাসোর একজন বড় পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। ১৯৪১ সালে আঁকা চিত্রকর্মটির শিরোনাম ‘তেত দ্য ফাম’। বাংলায় এর অর্থ হচ্ছে ‘নারীর মাথা’। কাগজের ওপর গোয়াশ রঙে আঁকা চিত্রকর্মটির উচ্চতা ১৫ দশমিক ৩ ইঞ্চি। চিত্রকর্মটির বর্তমান বাজারদর ১০ লাখ ইউরো বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর আগেও ওয়ান পিকাসো হানড্রেড ইউরো ডটকমে এমন লটারির আয়োজন করা হয়েছিল। প্রথমটি ২০১৩ সালে। সেবার লেবাননের তায়ার শহর রক্ষায় ৪৮ লাখ ইউরোর তহবিল জোগাড় করা হয়েছিল। আর পরেরবার ২০২০ সালে আফ্রিকায় পানির উৎস ও পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থার জন্য তোলা হয়েছিল ৫১ লাখ ইউরো। ওই দুবারও কিন্তু পুরস্কার ছিল পিকাসোর দুটি চিত্রকর্ম।

সম্পর্কিত নিবন্ধ