পঁচাত্তর বছর বয়সী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের পতন ও পরিণতি অভিনব। স্বৈরাচার ও ফ্যাসিস্ট সরকারের তকমা নিয়ে দলটি ক্ষমতাচ্যুত। চব্বিশের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমন করতে গিয়ে গণহত্যা চালানোর অভিযোগে বিচারের মুখোমুখি করা হয়েছে দলটির নেতাকর্মীকে। দলটির প্রধান রাষ্ট্রক্ষমতা ছেড়ে দেশত্যাগ করে আশ্রয় নিয়েছেন ভারতে।
আওয়ামী লীগের পতনের ছয় মাস হয়েছে। এই সময়ে দেশে সবচেয়ে আলোচিত বিষয়– সংস্কার, নির্বাচন ও আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধকরণ। সংস্কার নিয়ে দৃশ্যমান অগ্রগতির পক্ষে বলা যায়, সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে। কমিশনের রিপোর্ট জমাদান প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। নির্বাচনের পক্ষে বলা যায়, আগের নির্বাচন কমিশন ভেঙে দিয়ে নতুন নির্বাচন কমিশনও গঠন করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে আওয়ামী লীগ নিয়ে। আওয়ামী লীগের এই পরিণতি ও বাস্তবতাকে কীভাবে মূল্যায়ন করছে দলটি?
আওয়ামী লীগের পতনের ছয় মাস পূর্ণ হলো। কিন্তু এখন পর্যন্ত দলটির নেতাকর্মীর কথায় বা আচরণে কোনো প্রকার পরিবর্তন দেখা গেল না। জুলাই-আগস্টে গণহত্যা নিয়ে সামান্য অনুশোচনা প্রকাশের ঘটনাও দেখা গেল না। কেন দেখা গেল না? একটি প্রাচীন রাজনৈতিক দল, যার নেতৃস্থানীয়রা পালিয়ে বা আত্মগোপনে থাকলেও বিপুলসংখ্যক কর্মী-সমর্থক এখনও রয়েছেন, তাদের কাছে এই ঘটনা কী বার্তা দিচ্ছে? সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব এখনও গণঅভ্যুত্থান ও তাদের সরকারের পতনকে ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছে। বিশেষ করে দলটির সভাপতি শেখ হাসিনার যেসব ফোনালাপ সামাজিক মাধ্যমে প্রচার হয়েছে, তাতে দেখা মিলবে সেই আগের শেখ হাসিনার। তাঁর কথাবার্তা সেই আগের মতোই রয়ে গেছে। ন্যূনতম কোনো অনুশোচনা নেই। একই রকম ক্ষোভ ও ক্রোধের প্রকাশ দেখা যাবে। সর্বশেষ ৫ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় একটি গ্রুপ কলে শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমাদের বাড়িঘর আছে, ওদের বাড়িঘর আছে না? এখন আর বসে থাকার সময় নাই, আমাদের বাড়িঘরে আগুন দিচ্ছে, ওদের বাড়িঘরে আগুন দিতে হবে সব দিক থেকে.
দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছরের শাসনের পর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে পতনের পর থেকেই দিশাহারা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী। গণহত্যা ও ছাত্র-জনতার ওপর দমন-পীড়নের অভিযোগে অভিযুক্ত হয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বিপুলসংখ্যক নেতা। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারের মুখোমুখি হয়েছেন সিনিয়র অনেক নেতা। দাবি উঠছে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের।
এমন পরিস্থিতিতে দলটির প্রধান শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার ছয় মাস পূর্তিতে আনুষ্ঠানিকভাবে বক্তব্য রাখলেন। এ ঘোষণাকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উত্তেজনা চলে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেওয়া ছাত্র-জনতা ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ফেসবুকে ধানমন্ডি ৩২ অভিমুখে ‘বুলডোজার মিছিল’ এবং ‘মার্চ টু ধানমন্ডি ৩২’ কর্মসূচির ডাক দেন। তাঁর এই বক্তব্য ঘিরে উত্তেজনা তৈরি হলো। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগ-সংশ্লিষ্টদের বাসভবন ও স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। ঢাকায় ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের বাসভবন, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাসভবন সুধা সদনেও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ি গুঁড়িয়ে দিতে বুলডোজার ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া খুলনা, চট্টগ্রাম, সিলেট, বরিশাল, কুমিল্লা, কুষ্টিয়া, ভোলা, রংপুরসহ দেশের আরও কয়েকটি স্থানে আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়ি ও শেখ মুজিবের ম্যুরাল ভাঙচুর করা হয়। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত ৫ আগস্ট ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছিল বিক্ষুব্ধ জনতা। এর পর থেকে বাড়িটি পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিল। এখন কোনো প্রকার দায় ও বিচারের আওতায় না এসে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা এবং তার ফলে ছাত্র-জনতার প্রতিরোধ ও প্রতিক্রিয়ায় আওয়ামী লীগ পিছু হটার মধ্য দিয়ে দলটি আরও করুণ পরিণতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব ফেসবুকে কর্মসূচি ঘোষণা করে ঠিক কোন ধরনের রাজনৈতিক সুবিধা আদায় করতে পারবেন? শীর্ষ নেতৃত্ব এবং তাঁর পরিবারের প্রত্যেক সদস্য নিরাপদে দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। বিপরীতে দলের তৃণমূল নেতাকর্মী হামলা-মামলার ভয়ে আত্মগোপনে রয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে গণহত্যার বিচার হওয়া এবং দলটি গণহত্যার জন্য ক্ষমা চাওয়ার আগে যে কোনো ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচির মূলত দুটি উদ্দেশ্য থাকতে পারে। প্রথমত, নতুন রাজনৈতিক কর্মসূচি ঘোষণা করার মধ্য দিয়ে নিজেদের গণহত্যার অভিযোগে বিচারের মুখোমুখি হওয়াকে যে কোনো উপায়ে বিতর্কিত করা। পাশাপাশি নিজেদের পক্ষে সমর্থন আদায় করা। দ্বিতীয়ত, আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর বাংলাদেশ অস্থিতিশীল ও অকার্যকর রাষ্ট্র– এটা প্রমাণ করা।
৫ আগস্টের পর থেকে দেশে আওয়ামী লীগের সক্রিয় কর্মকাণ্ড লক্ষ্য করা যায়নি। দলের প্রধানের বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা, গুম, নির্যাতনসহ অনেক মামলা হয়েছে। চলমান মামলায় আদালতে আত্মসমর্পণ না করায় ‘পলাতক’ ঘোষণা করা হয়েছে শেখ হাসিনাকে। তাঁর প্রত্যর্পণের জন্য গত ২৩ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ভারতকে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুরোধ জানিয়েছে। এমন অবস্থায় দলটির কর্মসূচি পালন প্রায় দুঃসাধ্য। এর আগে ১০ নভেম্বর রাস্তায় নামার ঘোষণা দিলেও দলটির কাউকে দেখা যায়নি। যেখানে জুলাই-আগস্টে গণহত্যার স্মৃতি এখনও দগদগে, সেখানে কোনো প্রকার অনুশোচনাহীন একটি রাজনৈতিক দল কীভাবে রাজনীতিতে ফিরতে চাইতে পারে? আমরা এখানে স্মরণ করতে পারি, একাত্তরে গণহত্যার দোসর জামায়াত ও তাদের ছাত্র সংগঠন ছাত্রশিবির এ রকম রাজনীতি করতে চাইছে। একাত্তর প্রশ্নে জামায়াত-শিবির এবং চব্বিশ প্রশ্নে আওয়ামী লীগ ক্ষমা, অনুশোচনার মধ্য দিয়ে এগিয়ে না এলে রাজনৈতিক দল হিসেবে জনগণের মুখোমুখি হতে পারবে কি?
বাংলাদেশে সরকার পতনের আরও নজির আছে। এরশাদের পতনের পর জাতীয় পার্টির অধিকাংশ নেতা জেলে থাকার সময়ে মিজান চৌধুরী দলের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে সংসদে ৩৫টি আসন পেতে সক্ষম হয়েছিল জাতীয় পার্টি। বিগত আওয়ামী লীগ সরকার বিএনপিকে অফিসে বসতে দেয়নি। নেতাকর্মীকে মামলা দিয়ে ব্যাপক ধরপাকড় ও জেল-জুলুম করেছে। তা সত্ত্বেও বিএনপির রুহুল কবির রিজভী দলের কার্যালয়ে থেকে প্রতিদিন বক্তৃতা-বিবৃতি-সমালোচনা চালিয়ে গেছেন। বিপরীতে আওয়ামী লীগের লন্ডভন্ড দলীয় কার্যালয় এখন ছিন্নমূল মানুষের আস্তানায় পরিণত। কোথাও কোনো নেতা নেই।
নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের ফেসবুক পেজে শেখ হাসিনার অডিও বক্তব্য ঘিরে যে পরিস্থিতি তৈরি হলো, তার দায় কার? খোলা চোখে মনে হতে পারে– ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়িটি ভেঙে ফেলা হয়েছে। ইট-পাথর-সিমেন্ট-রডের মজবুত গাঁথুনি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু খেয়াল করলেই দেখা যাবে, এটা হচ্ছে চব্বিশের জুলাই-আগস্টে নির্মম হত্যাকাণ্ডের পরও ক্ষমা না চেয়ে উল্টো দম্ভোক্তি করার পাল্টা জবাব। একই সঙ্গে শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়া ভারতের প্রতিও এক ধরনের বার্তা। বাংলাদেশের আইনে পলাতক থেকে ভারতে অবস্থান নিয়ে ভবিষ্যতে শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যক্রম কীভাবে পরিচালিত হবে, সে বিষয়েও প্রতিবেশী দেশটি আরেকবার ভাববে, আশা করি।
এহ্সান মাহমুদ: সহকারী সম্পাদক, সমকাল; কথাসাহিত্যিক
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: জ ল ই আগস ট ছ ত র জনত র ক ষমত চ য ত দ র ব ড় ঘর গণহত য র র র জন ত ন ত কর ম র পতন র ধ নমন ড অবস থ আওয় ম সরক র দলট র
এছাড়াও পড়ুন:
যে ‘ধর্মীয় অনুপ্রেরণায়’ ইরানে এই হামলা চালাল ইসরায়েল
ইসরায়েল আবারও ইরানে বড় রকমের হামলা করেছে। হামলায় ইরানের বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা ও পরমাণুবিজ্ঞানী নিহত হয়েছেন। হামলা হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ঘাঁটি ও আবাসিক এলাকায়। একদিন পর পাল্টা হামলা চালায় ইরান। এতে কয়েকজন ইসরায়েলি নিহত হয়। ধ্বংস হয় তেলআবিবের কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা।
ইসরায়েল তার ইরানবিরোধী এ হামলার নাম দিয়েছে ‘রাইজিং লায়ন’। এ নাম রাখা হয়েছে হিব্রু বাইবেলের একটি চরণ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে। যে নাম ইসরায়েলের একটি শক্তিশালী ও বিজয়দীপ্ত ভবিষ্যতের প্রতিশ্রুতি দেয়।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বৃহস্পতিবার ইহুদিদের সবচেয়ে পবিত্র উপাসনাস্থল জেরুজালেমের ওয়েস্টার্ন ওয়ালের একটি ফাটলে হাতে লেখা একটি চিরকুট রেখে আসার সময় ছবি তোলেন। এটি ছিল মূলত ইরানে ইসরায়েলের হামলার ইঙ্গিত।
শুক্রবার তার অফিস থেকে সেই চিরকুটে একটি ছবি প্রকাশ করা হয়। সেখানে লেখা ছিল: ‘জনগণ সিংহের মতো উঠে দাঁড়াবে।’
এই বাক্যাংশটি হিব্রু বাইবেলের গ্রন্থ বুক অব নাম্বারস (গণনা পুস্তক) ২৩:২৪ পদ থেকে এসেছে। যেখানে বলা হয়েছে: ‘দেখো, এই জাতি একটি মহান সিংহের মতো উঠে দাঁড়াবে এবং একটি তরুণ সিংহের মতো নিজেকে উদ্দীপ্ত করবে; সে শিকার না খাওয়া পর্যন্ত বিশ্রাম নেবে না এবং নিহতদের রক্ত না পান করা পর্যন্ত থামবে না।’
এই চরণটি হিব্রু বাইবেলের অ-ইসরায়েলীয় একজন নবী ও ভবিষ্যদ্বক্তা বালামের প্রথম ভবিষ্যদ্বাণীর অংশ। সেখানে তিনি ইসরায়েলের শক্তি ও ক্ষমতার কথা বলেন। তাদের এমন এক সিংহের সঙ্গে তুলনা করেন যে নিজের ক্ষুধা না মেটানো পর্যন্ত বিশ্রামে যায় না।
অনেকেই মনে করেন, এই অভিযানের নাম ইরানের শেষ শাহ-এর পুত্রের প্রতি ইঙ্গিত হতে পারে। কারণ পারস্য রাজপরিবারের প্রতীক হিসেবেও সিংহ ব্যবহৃত হতো।
ইসরায়েলের ঐশ্বরিক অধিকারের দাবিইসরায়েল প্রায়শই তার সামরিক অভিযানের নাম হিব্রু বাইবেল বা ওল্ড টেস্টেমেন্ট থেকে নেয় বা ধর্মীয় অনুপ্রেরণা থেকে গ্রহণ করে। ফিলিস্তিনি ভূমির উপর ইহুদিদের তথাকথিত ঐশ্বরিক অধিকারের দাবি এবং মধ্যপ্রাচ্যে তাদের যুদ্ধকে ন্যায্যতা দিতে ইসরায়েল এসব ধর্মীয় বিষয় ব্যবহৃত করে বলে অনেকে মনে করে থাকেন।
উদাহরণস্বরূপ, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী সিরিয়ার সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে চালানো এক অভিযানের নাম দিয়েছিল, ‘অ্যারো অব বাশান।’ ‘বাশান’ শব্দটি ইসরায়েলিদের ধর্মগ্রন্থ ওল্ড টেস্টামেন্টে ব্যবহৃত হয়েছে। এটি দিয়ে মূলত সিরিয়ার দক্ষিণ ও জর্ডান নদীর পূর্বে অবস্থিত একটি অঞ্চলকে নির্দেশ করা হয়। বাশানের রাজাকে পরাজিত করে ইসরায়েলিরা সেই অঞ্চলকে দখল করেছিল।
গাজা উপত্যকার ওপর হামলা চালাতেও অস্ত্র ও অভিযানের জন্য হিব্রু বাইবেলীয় প্রতীক বা অনুষঙ্গ ব্যবহার করছে ইসরায়েল। নেতানিয়াহু অন্তত তিনবার গাজায় আক্রমণের জন্য হিব্রু বাইবেলীয় আমালেক কাহিনি ব্যবহার করেছেন।
২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর এক বিবৃতিতে নেতানিয়াহু হিব্রু বাইবেল ও ওল্ড টেস্টামেন্টের গ্রন্থ ‘বুক অব ডিউটেরনমি’(২৫:১৭) এর থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন:
‘আমালেক তোমার সঙ্গে যা করেছিল তা মনে রেখো, আমরা মনে রাখি এবং আমরা যুদ্ধ করি।’
এর মধ্য দিয়ে গাজাবাসীদের উপর পূর্ণাঙ্গ হামলা করা উচিত বলে নেতানিয়াহু ইঙ্গিত করেন। কারণ ডিউটেরনমির এই উদ্ধৃতি বাইবেলের স্যামুয়েল গ্রন্থে বর্ণিত আমালেকীয়দের বিরুদ্ধে সম্পূর্ণ ধ্বংসের আহ্বান হিসেবে বিবেচিত হয়।
বাইবেলের এ কাহিনিতে ইসরায়েলিদের ওপর আক্রমণকারীদের সম্পূর্ণরূপে নির্মূল করার আহ্বান জানানো হয়েছে। গাজার গোটা জনসংখ্যাকে সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিহ্ন করে দিতে বাইবেলের এ কাহিনিকে হাজির করেছেন নেতানিয়াহু।
গণহত্যার মামলায় নেতানিয়াহুর বক্তব্যইসরায়েলের বিরুদ্ধে দক্ষিণ আফ্রিকার দায়ের করা গণহত্যার মামলায় আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে) প্রথম শুনানিতে দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষের আইনজীবী হিব্রু বাইবেলের উদ্ধৃতির মাধ্যমে নেতানিয়াহুর এই বক্তব্যকে গাজার জনগণের বিরুদ্ধে গণহত্যায় প্ররোচনা হিসেবে তুলে ধরেন।
আইনজীবী আরও জানান, নেতানিয়াহু ৩ নভেম্বর সেনাদের উদ্দেশ্যে লেখা আরেকটি চিঠিতে একই আমালেকীয় গল্প পুনরাবৃত্তি করেন।
ধর্মীয় নাম ব্যবহার করে সামরিক প্রযুক্তিইসরায়েলি সেনাবাহিনীর যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি গাজায় বোমাবর্ষণে সহায়তা করছে, তাদের নাম ‘ল্যাভেন্ডার’ এবং ‘দ্য গসপেল’, যা উভয়ই হিব্রু বাইবেলীয় ধর্মগ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে।
টিআরটি ওয়ার্ল্ডের বিশ্লেষক রাভালে মহিদিনের মতে, প্রায়ই ধর্মীয় ধর্মগ্রন্থ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ইসরায়েলের অস্ত্রের নামকরণ করা হয়। যেমন, স্যামসন রিমোট কন্ট্রোলড ওয়েপন স্টেশন।
জেরিকো ব্যালিস্টিক মিসাইল-এর নাম রাখা হয়েছে জেরিকো শহরের নামে। হিব্রু বাইবেল ও ওল্ড টেস্টামেন্টের একটি গ্রন্থ ‘বুক অব যশুয়া’ অনুসারে ইসরায়েলিরা এই শহর ফিলিস্তিনিদের কাছ দখল করেছিল।
ডেভিড’স স্লিং নামক আরেকটি ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থার নাম রাখা হয়েছে বাইবেলের মেষপালক ডেভিড ও বিশাল যোদ্ধা গোলিয়াথের মধ্যকার বিখ্যাত সেই লড়াইয়ের স্মরণে, যেখানে ডেভিডের বিজয় হয়েছিল। এই কাহিনী আছে হিব্রু বাইবেল ও ওল্ট টেস্টামেন্টের একটি গ্রন্থ ‘বুক অব স্যামুয়েল’-এ।
*দ্য নিউ আরব, মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা বিষয়ক লন্ডনভিত্তিক সংবাদমাধ্যম। টিআরটি ওয়ার্ল্ডের বিশ্লেষক ও হার্ভার্ডের গবেষক রাভালে মহিদিনের একটি লেখার অবলম্বনে দ্য নিউ আরব এ বিশ্লেষণটি প্রকাশ করেছে। অনুবাদ করেছেন: রাফসান গালিব