বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা শুরু হয়েছে। এর মধ্যে এখনো সিদ্ধান্তহীনতার মধ্যে রয়েছে গুচ্ছভিত্তিক ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। আগের বছর ২৪টি বিশ্ববিদ্যালয় অংশ নিলেও এবার কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় স্বপ্রণোদিত হয়ে ‘শিক্ষার মান’ উন্নয়নের তাগিদে এককভাবে ভর্তি পরীক্ষা নিচ্ছে বলে এরই মধ্যে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে।

কয়েক মাস ধরে ‘গুচ্ছ ভর্তি’ পরীক্ষা নিয়ে দোলাচলের মধ্যে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের স্মারকলিপির পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে তিনবার উপাচার্যদের চিঠি দিয়ে ‘গুচ্ছ ভর্তি’ পরীক্ষার অনুরোধ জানিয়েও কাজ হয়নি।

সর্বশেষ গত সপ্তাহে চতুর্থবারের মতো শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে উপাচার্যদের চিঠি পাঠিয়ে কড়া ভাষায় বলা হয়েছে, দেশের সাধারণ শিক্ষার্থীদের ‘স্বার্থ ও দাবি’ বিবেচনা করে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের জন্য গুচ্ছপদ্ধতিতে ভর্তি কার্যক্রম ‘কঠোরভাবে’ মেনে চলার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের ‘নির্দেশ’দেওয়া হলো।

যদিও এই ‘নির্দেশ’ দেওয়ার কয়েক দিন পার হলেও গুচ্ছ থেকে বের হওয়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর দৃশ্যত কোনো সাড়া চোখে পড়েনি; বরং গুচ্ছকে তুচ্ছ জ্ঞান করে ‘একক’ ভর্তি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি সাড়ছে। ব্যাপারটা এমন হয়ে গিয়েছে যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ‘অটোনোমাস’ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষমতাচর্চা করছে, সেখানে ভর্তি-ইচ্ছুক ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় কেউ নয়। নিজেদের একাডেমিক কমিটির সিদ্ধান্তকে বড় করে দেখছে তারা।

কিন্তু এটা কি হওয়ার কথা ছিল? কেন তারা গুচ্ছ থেকে এক সারিতে দাঁড়াতে চাচ্ছে? গুচ্ছের সমস্যাগুলো কী ছিল? কয়েক বছর ধরে গুচ্ছে অংশগ্রহণকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দাবি করে আসছে যে তারা কাঙ্ক্ষিত মানের শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে পারছে না। যোগ্য ও মেধাবীদের বেছে নিতে না পারার দরুন বিশ্ববিদ্যালয়ের মান কমছে।

আসলে কি তা–ই? বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার ঠিক কোন যোগ্যতাকে তারা ‘মেধার’ মাপকাঠিতে ফেলাতে চায়? একটি বইয়ের গৎবাঁধা কিছু প্রশ্ন, যা বছরের পর বছর ধরে চলে আসছে, সেগুলো শিক্ষার্থীরা অনুশীলন করে ‘ভর্তি পরীক্ষায় উগরে’ দিতে পারলে কি মেধার স্বাক্ষর নিশ্চিত করা যায়? যদি সেটাই হয়, তাহলে যে শিক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম হন, দ্বিতীয় হন; সেই শিক্ষার্থী পরবর্তী সময় স্নাতকে প্রথম হন? দ্বিতীয় হন?
না, হন না।

আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় দেখেছি, যাঁরাই ভর্তি পরীক্ষায় ভালো করেন, পরবর্তী সময় শিক্ষাজীবনে তাঁরা যে ভালো করবেন, তার কোনো নিশ্চয়তা কেউই দিতে পারেন না। ভর্তি পরীক্ষা কখনোই মেধাযাচাইয়ের ক্ষেত্র নয়, এটা নিছক একটি প্রতিযোগিতা। অনেকটাই দৌড় প্রতিযোগিতার মতো। সবাই দৌড়ায়, কিন্তু দিন শেষে কয়েক সেকেন্ডের তফাতে চূড়ান্ত ফিতায় ছুঁতে পারেন একজনই। আর এভাবে চলে আসে প্রতিযোগিতার ভগ্নাংশ। ভর্তি পরীক্ষাকে তাই যাঁরা মনে করছেন ‘বিশ্ববিদ্যালয় উচ্চতা’ পরিমাপের মানদণ্ড, তাঁরা দয়া করে নিজেদের সংশোধন করে নিন। সেটাই যদি হয়, তাহলে বিশ্ব পরিমণ্ডলের র‍্যাঙ্কিং আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘মান’ বের করা যেত।

আমরা যদি ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমেই নিজেদের বড় বিশ্ববিদ্যালয়, দামি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে দাবি করি, তাহলে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আন্তর্জাতিক কেন, এশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে পারত।

সুতরাং ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে কোনো ইগোয়েজিম দেখানো বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নিম্ন মানসিকতার পরিচয় বহন করে। মনে রাখতে হবে, আপনাদের নিজস্ব অর্থায়নে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত হয় না; বরং জনগণের করের টাকার ওপর নির্ভর করে আপনাদের বিশ্ববিদ্যালয় চালাতে হয়। তাই সরকারের কথাকে গুরুত্ব না দেওয়া কিংবা উপেক্ষা করা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত আইনের সঙ্গে শিষ্টাচারবহির্ভূত আচরণ বটে।

গুচ্ছভিত্তিক ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে গুবলেট পাকিয়ে ফেলেছে যথাযথ ভর্তিপ্রক্রিয়া অনুসরণ না করে। শিক্ষার্থীদের পছন্দক্রম অনুযায়ী ভর্তি পর পরবর্তী সময় আসনগুলোয় যে অদলবদল হয়, তার দীর্ঘসূত্রতার অভিযোগ বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বিভিন্ন সময়ে এসেছে। অথচ এই তুচ্ছ একটি সমস্যা কীভাবে সমাধান করা যাবে, তা নিয়ে কেউ কথা বলছে না, এমনকি সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয় না।

অথচ বিষয়টি আমরা কিছু পরিকল্পনার বাস্তবায়ন করলে সমাধান করে ফেলতে পারি। আমি আগেও প্রথম আলোতে লিখেছি, আবার বলেছি। এই ২৪ বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত অবস্থান, শিক্ষকসংখ্যা ও সুযোগ-সুবিধার ওপর ভিত্তি করে দুই বা তিনটি ক্যাটাগরি করা যেতে পারে। যেখানে একজন শিক্ষার্থী ভর্তির সময় তাঁর পছন্দক্রম দেবেন। স্কোর অনুযায়ী এসব শিক্ষার্থী পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি হবেন। এই ক্ষেত্রে আন্তবিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রতিযোগিতাপূর্ণ বিভাগগুলোয় আবার শিক্ষার্থীদের বিষয়ভিত্তিক স্কোর ও পছন্দ অনুযায়ী ভর্তিপ্রক্রিয়া শেষ করতে পারবে।

এই প্রক্রিয়া অনুসরণ করলে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগগুলোয় অটোমাইগ্রেশেনের প্রয়োজন পড়বে না। ভর্তিপ্রক্রিয়ার জন্য অবশ্যই একটি ভালো মানের সার্ভার ও ওয়েবসাইটের প্রয়োজন পড়বে। যেখানে স্বচ্ছতার ভিত্তিতে একজন শিক্ষার্থী নিজের ভর্তি পরীক্ষার স্কোর ও কাঙ্ক্ষিত বিষয়ে ভর্তি হবেন।

অথচ অটোমাইগ্রেশনের ঝামেলায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ভর্তির সমস্যায় পড়ছে দাবি করে ‘গুচ্ছ বা সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা’কে জটিল ও অজনপ্রিয় করার প্রয়াস চালিয়ে আসছে। ভর্তি পরীক্ষা থেকে আসা কিছু কাঁচা পয়সার জন্য কতিপয় ব্যক্তি শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের আবার ভোগান্তির ব্যবস্থা করছেন, যা কখনোই কাঙ্ক্ষিত হতে পারে না।

ধারণা করছি, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুর্বলতা অথবা সেখানে কিছু কর্মকর্তার ব্যক্তিগত সুবিধার আশকারায় হয়তো এবার গুচ্ছভিত্তিক ভর্তি পরীক্ষা থেকে ওই সব বিশ্ববিদ্যালয় ছিটকে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। গণ-অভ্যুত্থানপরবর্তী শিক্ষা মন্ত্রণালয় নখদর্পহীন বাঘ কি না, তা ভাবার সময় এসেছে।

মনে রাখতে হবে, গুচ্ছভিত্তিক ভর্তি পরীক্ষা ভবিষ্যতে একক ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন বড় সোপান। ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম কিংবা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়কে এই কাতারে আনতে না পারার ব্যর্থতা অবশ্যই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাঁধে আসে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্জুরি কমিশনের কাঁধেও তা পড়ে। অথচ সরকার চাইলে এসব বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে জাতীয় বা সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন কেবল একটি ঘোষণার অপেক্ষায় ছিল। ইউজিসি যদি বলে, ‘তোমরা যদি সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষায় অংশ না গ্রহণ করো, তাহলে তোমাদের বার্ষিক বাজেট বন্ধ অথবা ৩০ শতাংশ কম আসবে।’ তাহলে নিশ্চিত থাকেন, ভবিষ্যতে একক ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে কেউ পিছপা হতো না।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বারবার তাগাদায়ও যদি ওই সব বিশ্ববিদ্যালয় এবার গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় না আসে, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আচার্য রাষ্ট্রপতি স্বপ্রণোদিত হয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারেন। কারণ, যে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করছে, তাদের অধ্যাদেশের ৯(৫) বলা হয়েছে, ‘চ্যান্সেলরের নিকট যদি সন্তোষজনকভাবে প্রতীয়মান হয় যে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রম বিঘ্নিত হওয়ার মতো অস্বাভাবিক পরিস্থিতি বিরাজ করছে, তাহলে এই আইনের যা কিছুই থাকুক না কেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রম চালু রাখার স্বার্থে প্রয়োজনীয় আদেশ ও নির্দেশ দিতে পারবেন, যা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মানতে বাধ্য থাকবে।’

বিশ্বাস করি, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দ্রুত তাদের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেবে। লাখো শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কষ্ট লাঘবে এগিয়ে আসবে।

ড.

নাদিম মাহমুদ গবেষক, ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়। ই–মেইল: [email protected]

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পর ক ষ য় পর ক ষ র র জন য গ রহণ পছন দ

এছাড়াও পড়ুন:

সকালের সবচেয়ে বরকতময় সময় ব্যবহারের ৭ কৌশল

সকাল মানুষের জীবনের একটি মূল্যবান সময়, যা দিনের বাকি অংশের জন্য সুর নির্ধারণ করে। সকাল আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করার, শরীর ও মনকে প্রস্তুত করার এবং দিনের লক্ষ্য অর্জনের একটি সুবর্ণ সুযোগ।

সামাজিক মাধ্যম, কাজের চাপ এবং পারিবারিক দায়িত্ব আমাদের অনেক সময় কেড়ে নেয়, তাই সকালকে সঠিকভাবে ব্যবহার করে আমরা জীবনকে আরও উৎপাদনশীল করতে পারি।

১. আল্লাহর সঙ্গে দিনের শুরু

ফজরের নামাজের ১৫-২০ মিনিট আগে উঠে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া এবং দোয়া করা জীবনকে আমূল বদলে দিতে পারে। এই সময়টি শান্ত ও পবিত্র, যখন আল্লাহর সঙ্গে কোনো বাধা থাকে না।

কে আছে আমাকে ডাকার, আমি সাড়া দেব? কে আছে আমার কাছে চাওয়ার, আমি দান করব? কে আছে ক্ষমা প্রার্থনা করার, আমি ক্ষমা করব?সহিহ বুখারি, হাদিস: ১,১৪৫

নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘প্রতি রাতে, যখন রাতের শেষ তৃতীয়াংশ বাকি থাকে, তখন আমাদের রব নিকটতম আসমানে নেমে আসেন এবং বলেন, ‘কে আছে আমাকে ডাকার, আমি সাড়া দেব? কে আছে আমার কাছে চাওয়ার, আমি দান করব? কে আছে ক্ষমা প্রার্থনা করার, আমি ক্ষমা করব?”’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১,১৪৫)।

তাহাজ্জুদের সময় আপনার হৃদয়ের কথা আল্লাহর কাছে প্রকাশ করুন। এতে মানসিক শান্তি বাড়বে এবং দিনের জন্য ইতিবাচক মনোভাব তৈরি হবে। যদি আপনি নতুন হন, সপ্তাহে এক দিন থেকে শুরু করুন এবং ধীরে ধীরে এটি অভ্যাসে পরিণত করুন।

ফজরের আগে অবশিষ্ট সময়ে কোরআন তিলাওয়াত করুন, কারণ কোরআনে বলা হয়েছে, ‘ভোরে কোরআন পড়া (ফেরেশতাদের) দ্বারা প্রত্যক্ষ করা হয়।’ (সুরা ইসরা. আয়াত: ৭৮)।

আরও পড়ুনইশরাকের নামাজ: সকালের আলোয় আল্লাহর নৈকট্য ০৪ জুলাই ২০২৫২. ফজরের পর ঘুম থেকে দূরে থাকুন

ফজরের নামাজের পর ঘুমিয়ে পড়া অনেকের অভ্যাস, কিন্তু এটি সকালের বরকতময় সময় নষ্ট করে। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ আমার উম্মতের জন্য সকালের সময়কে বরকতময় করেছেন।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ২৬,৪৮১)।

এই সময়ে বড় বড় কাজ সহজে সম্পন্ন করা যায়, কারণ এতে আল্লাহর বিশেষ বরকত রয়েছে।

আল্লাহ আমার উম্মতের জন্য সকালের সময়কে বরকতময় করেছেন। মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ২৬,৪৮১

ফজরের পর ঘুমের প্রলোভন এড়াতে নিজেকে ব্যস্ত রাখুন। এই সময়ে পড়াশোনা, কোরআন মুখস্থ করা বা কোনো ব্যক্তিগত প্রকল্পে কাজ করা যায়। এটি দিনের বাকি সময়ে অবসরের জন্য সময় বাঁচায় এবং আগামী দিনে আরও তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস তৈরি করে।

বিশ্বের সফল ব্যক্তিরাও ভোর চারটা বা পাঁচটায় উঠে কাজ শুরু করার কথা বলেন, যা তাদের সাফল্যের একটি রহস্য।

৩. করণীয় তালিকা তৈরি করুন

একটি করণীয় তালিকা তৈরি করা দিনের পরিকল্পনাকে সুসংগঠিত করে। আমরা প্রায়ই মনে মনে কাজের পরিকল্পনা করি, কিন্তু মস্তিষ্কের ধারণক্ষমতা সীমিত। একটি ডায়েরি বা ফোনের নোট অ্যাপে কাজের তালিকা লিখে রাখলে সময় ও শক্তি সঠিকভাবে ব্যবহার করা যায়। সম্পন্ন হওয়া কাজগুলো তালিকা থেকে কেটে দেওয়ার একটা আলাদা আনন্দ আছে।

এই তালিকায় দৈনন্দিন কাজের পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্যও অন্তর্ভুক্ত করুন। যেমন কোরআনের একটি নির্দিষ্ট অংশ মুখস্থ করা বা একটি নতুন দক্ষতা শেখার পরিকল্পনা। এটি আপনাকে দিনের শুরুতে ফোকাসড রাখবে এবং উৎপাদনশীলতা বাড়াবে।

আরও পড়ুনযে ৪টি পরীক্ষা নবীজি (সা.)–এর জীবনকে দৃঢ়তা দিয়েছে২২ জুলাই ২০২৫বিশ্বের সফল ব্যক্তিরাও ভোর চারটা বা পাঁচটায় উঠে কাজ শুরু করার কথা বলেন, যা তাদের সাফল্যের একটি রহস্য।৪. সকালে স্ক্রিন থেকে দূরে থাকুন

সকালের মূল্যবান সময় সামাজিক মাধ্যমে বা ফোনে অযথা স্ক্রল করে নষ্ট করা উচিত নয়। অনেকে সকালে ফোন হাতে নিয়ে ‘শুধু একটু দেখে নিই’ ভেবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা হারিয়ে ফেলেন। এটি মানসিক চাপ বাড়ায় এবং সকালের শান্তি নষ্ট করে।

নিয়ম করুন, সকালের নাশতা বা কিছু কাজ শুরু না করা পর্যন্ত ফোন বা সামাজিক মাধ্যমে যাবেন না। সকালে খবর পড়া এড়িয়ে চলুন। কারণ, এটি নেতিবাচক মনোভাব তৈরি করতে পারে। যখন ফোন ব্যবহার করবেন, তখন ইতিবাচক ও প্রেরণাদায়ক কনটেন্ট দেখুন, যা আপনার দিনকে উজ্জ্বল করবে।

৫. শরীরচর্চা করুন

শরীরচর্চার উপকারিতা আমরা সবাই জানি। বিশেষ করে এই সময়ে, যখন অনেকে বাড়ি থেকে কাজ করছেন, শরীরচর্চা শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য। বাড়িতে কাজ করার ফলে ঘাড়ে ও পিঠে ব্যথা, পেশির সমস্যা বাড়ছে।

সকালে মাত্র ৩০ মিনিট শরীরচর্চা, যেমন যোগ, পাইলেটস, হাই-ইনটেনসিটি ইন্টারভাল ট্রেনিং বা ব্রিস্ক ওয়াক, আপনার শরীরে রক্ত সঞ্চালন বাড়াবে এবং মনকে সতেজ করবে।

ইউটিউবে হাজারো ধরনের ব্যায়ামের ভিডিও পাওয়া যায়, যা বাড়িতে সামান্য জায়গায় করা যায়। যদি বাইরে যাওয়ার সুযোগ থাকে, তবে সকালে ৩০ মিনিট হাঁটুন। লক্ষ্য হলো শরীরকে সচল রাখা এবং শক্তি বৃদ্ধি করা।

আরও পড়ুনসুস্থ জীবন যাপনে মহানবী (সা.)-এর ৯ অভ্যাস২৪ জুলাই ২০২৫সকালে মাত্র ৩০ মিনিট শরীরচর্চা, যেমন যোগ, পাইলেটস, হাই-ইনটেনসিটি ইন্টারভাল ট্রেনিং বা ব্রিস্ক ওয়াক, আপনার শরীরে রক্ত সঞ্চালন বাড়াবে এবং মনকে সতেজ করবে।৬. পুষ্টিকর নাশতা গ্রহণ

ব্যস্ততার কারণে অনেকে সকালের নাশতা বাদ দেন, কিন্তু গবেষণা বলছে, পুষ্টিকর নাশতা দিনভর মনোযোগ বাড়ায়, অপ্রয়োজনীয় চিনির লোভ কমায় এবং শক্তি জোগায়। নাশতায় উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাবার, যেমন ওটস বা মাল্টিগ্রেইন রুটি, স্বাস্থ্যকর চর্বি যেমন অ্যাভোকাডো বা বাদাম, গ্রিক ইয়োগার্ট এবং ফল অন্তর্ভুক্ত করুন।

সময় কম থাকলে একটি স্মুদি তৈরি করুন—পালংশাক, আপেল এবং হিমায়িত কলা ব্লেন্ড করে সুস্বাদু ও পুষ্টিকর নাশতা তৈরি করা যায়। এটি দিনের শুরুতে সবুজ শাকসবজি গ্রহণের একটি সহজ উপায়।

৭. নিজেকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন

বাড়ি থেকে কাজ করার সময় অনেকে ক্যাজুয়াল পোশাকে থাকেন। বরং সকালে সুন্দর পোশাক পরুন, যা আপনার মেজাজ উজ্জ্বল করবে। একটু পছন্দের সুগন্ধি ব্যবহার করলে আত্মবিশ্বাস বাড়বে।

আল্লাহ সুন্দর এবং তিনি সৌন্দর্য পছন্দ করেন।সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৯১

নবীজি (সা) বলেছেন, ‘আল্লাহ সুন্দর এবং তিনি সৌন্দর্য পছন্দ করেন।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৯১)। নিজেকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা শুধু বাহ্যিক নয়, বরং এটি আপনার মানসিক প্রস্তুতি ও দিনের জন্য উৎসাহ বাড়ায়।

সকাল আমাদের দিনের ভিত্তি। ইসলাম আমাদের শেখায় যে সকাল আল্লাহর বরকত নিয়ে আসে। তাহাজ্জুদ, ফজরের পর জাগ্রত থাকা, করণীয় তালিকা তৈরি, স্ক্রিন থেকে দূরে থাকা, শরীরচর্চা, পুষ্টিকর নাশতা এবং নিজেকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন—এই সাতটি অভ্যাস আমাদের সকালকে উৎপাদনশীল করবে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

সূত্র: দ্য মুসলিম ভাইব ডট কম

আরও পড়ুনরহমতের দুয়ারে হাজিরা১৫ জুন ২০২৪

সম্পর্কিত নিবন্ধ