ভিড় তো বেড়েছেই। বিভিন্ন স্টলে পছন্দের বইয়ের খোঁজে ছুটে আসছেন পাঠক। কবিতা, গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, শিশুতোষ রচনা– সব ধরনের বইয়ের চাহিদা বাড়ছে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ওপর প্রকাশিত বইয়ের বিক্রি বেশি।
গতকাল মঙ্গলবার অমর একুশে বইমেলায় কথাগুলো বলছিলেন ঐতিহ্য প্রকাশনীর বিক্রয় প্রতিনিধি জোবায়ের। সরেজমিন দেখা যায়, ঐতিহ্যের স্টলে উপচে পড়া ভিড়। পাশে বাতিঘরের স্টলেও ঢুকতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছিল। স্বল্প পরিসরে সুন্দর করে সাজানো স্টলের প্রতি আগ্রহ বেশি তরুণদের। রিকশা পেইন্টের আদলে নকশা করা স্টল কুঁড়েঘরের সামনে শাড়ি পরে তরুণীদের ছবি তুলতে দেখা যায়। ঢাকা কমিকসের স্টলে শিশু-কিশোরদের ভিড় লেগেছিল। তাদের চোখ আটকে ছিল নতুন কমিকসে।
স্কুল-কলেজে গতকাল ছিল সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মাঘী পূর্ণিমার ছুটি। এর প্রভাব পড়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান মেলা প্রাঙ্গণে। স্কুলপড়ুয়াদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। তাদের ভিড় ও প্রাণচাঞ্চল্যে মুখর হয়ে ওঠে পরিবেশ। এমনকি শিশু চত্বরেও দেখা যায় বেশ ভিড়। সন্তানদের নিয়ে এসেছেন অভিভাবকরা। ময়ূরপঙ্খী স্টলের সেলসের দায়িত্বে থাকা বীথি বলেন, গত শুক্রবার থেকে মেলায় ভিড় বাড়ছে। মাঝের দু’দিন ক্রেতা-দর্শনার্থীর উপস্থিতি একটু কম ছিল। তবে মঙ্গলবার তা আবার বেড়েছে।
সম্প্রীতি প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী রেজাউল করিম বিল্লাল বলেন, যা প্রত্যাশা করেছিলাম, লোকসমাগম ও বিক্রি তার চেয়ে অনেক বেশি। লিটল ম্যাগ চত্বরেও গতকাল সন্ধ্যায় বেশ পাঠকের আনাগোনা দেখা যায়।
সন্তানদের স্কুল বন্ধ থাকায় তাদের নিয়ে আজিমপুর থেকে এসেছেন আহমেদ শফী। তিনি বলেন, আজ অফিস খোলা। তবু এমন ভিড় হবে, ভাবিনি। তবে ক্রেতা-দর্শনার্থীর ভিড়ের মধ্যে মেলা প্রাঙ্গণে বিপুল সংখ্যক হকারের আনাগোনাও দেখা গেছে। কয়েক স্থানে ধূমপান করতেও দেখা যায়, যা নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করেন দর্শক ও পাঠকরা। দর্শনার্থী মাহিদ বলেন, এখানে নারী-শিশুসহ সবাই আসেন। তার মধ্যে ধূমপান বিরক্তিকর।
মেলা প্রাঙ্গণে গত সোমবার ‘সব্যসাচী’ স্টলে হট্টগোলের কোনো প্রভাব মেলায় পরিলক্ষিত হয়নি। কেবল মেলার বিভিন্ন পয়েন্টে বেড়েছে পুলিশের পাহারা। বন্ধ থাকা সব্যসাচী স্টলের সামনে উৎসুক জনতাকে ছবি তুলতে দেখা যায়। অমর একুশে বইমেলা-২০২৫ এর মেলার ১১তম দিনেও ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো’ গানটি তেমন শোনা যায়নি।
নতুন বই
গতকাল মেলায় নতুন বই এসেছে ৯১টি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য– বাংলা একাডেমি থেকে মোহাম্মদ আশরাফুল হাবীবের ‘কুশান গানের পরিবেশনা রীতির বিবর্তনে গায়েন-অভিনেতার ভূমিকা’; পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.
মূল মঞ্চের আয়োজন
বিকেল ৪টায় বইমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় আদর্শায়িত কল্পলোক ও শাহেদ আলীর ‘দ্বিধাচিত্ত মন’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। চঞ্চল কুমার বোসের সভাপতিত্বে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন শিবলী আজাদ। আলোচনায় অংশ নেন মোস্তাক আহমাদ দীন। শিবলী আজাদ বলেন, শাহেদ আলীর গল্পে যেমন দার্শনিক প্রতীতি রূপায়ণের চেষ্টা রয়েছে, তেমনি রয়েছে সামাজিক বৈষম্য আর অনাচার ফুটিয়ে তোলার প্রয়াস। তাঁর রচনাগুলো উত্তাল সময়, ঝঞ্ঝা-বিক্ষুব্ধকালের বৌদ্ধিক ও নান্দনিক প্রতীতির প্রতি লেখকের এক ধরনের প্রতিক্রিয়া।
মোস্তাক আহমাদ দীন বলেন, রাজনীতি-সচেতন সক্রিয় ব্যক্তিত্ব শাহেদ আলী সাহিত্যের বিভিন্ন অঙ্গনে তাঁর প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। তাঁর রাজনৈতিক ও সৃষ্টিশীল জীবনকে কখনও একাত্ম করেননি। এমনকি তাঁর গল্পের মধ্যে কঠোর নীতিবোধও আরোপ করেননি।
‘লেখক বলছি’ মঞ্চে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন নাসির আলী মামুন এবং মামুন সারওয়ার। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আবৃত্তি করেন কবি মুস্তাফা মজিদ, শফিকুল ইসলাম বাহার ও আনজুমান আরা। সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী মো. সালমান, মাহমুনুল হক সিদ্দিক, জাকির হোসেন আখের, সঞ্জয় কুমার দাস, শরণ বড়ুয়াসহ অনেকে।
আজকের আয়োজন
বিকেল ৪টায় বইমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘গণ-অভ্যুত্থান ২০২৪-এর কবিতা’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। ফরহাদ মজহারের সভাপতিত্বে এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন হাসান রোবায়েত; আলোচনায় অংশ নেবেন মঈন জালাল চৌধুরী ও আশফাক নিপুন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: বইম ল বইম ল উপস থ গতক ল
এছাড়াও পড়ুন:
পূজাকে ঘিরে আইনশৃঙ্খলায় বাহিনী তৎপর : ডিসি
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, আইনসৃঙ্খলা স্বাভাবিক রয়েছে, বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজাকে ঘিরে সকল ধর্মমত, সকল সম্প্রদায় তারা একত্রিত হয়েছে।
সকলেই সার্বিক সহয়তা করছে যাতে করে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পূজা উৎসব সুন্দর ভাবে পজলন করতে পারে। পূজাকে ঘিরে একটি গোষ্ঠি চাইবে পূজা উৎসব নষ্ট করে দেয়ার জন্য।
সে জন্য আমাদের তৎপরতা রয়েছে। আমাদের গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করছে। তার পাশাপাশি র্যাব, বিজিবি, সেনাবাহিনী ও বাংলাদেশ পুলিশবাহিহনী সবাই কাজ করছে যাতে করে সুন্দর ভাবে পূজা উৎসব শেষ করতে পারি।
মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে ৫নং ঘাটে দূর্গা পূজার প্রতিমা বিসর্জনের স্থান পরিদর্শনকালে তিনি এ নির্দেশনা দেন।
দূর্গা পূজা বিজয়া দশমী শেষে প্রতিমা বিসর্জনের সময় যেকোনো অপ্রীতিকর দূর্ঘটনা এড়াতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সুন্দর ভাবে প্রতিমা বিসর্জনের স্থান নিরাপদ রাখতে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন জেলা প্রশাসক।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, নারায়ণগঞ্জের ২২৩টি পূজা মণ্ডপে সুষ্ঠুভাবে পূজা উদযাপনে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। শান্তি ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে এবং সম্প্রীতি বজায় রেখে বর্তমানে পূজা উদযাপনের প্রস্তুতি চলছে।
এসময় তিনি প্রতিটি মণ্ডপে সুষ্ঠুভাবে ও নির্বিঘ্নে পূজা অনুষ্ঠান সম্পন্ন করতে প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সংশ্লিষ্ট সবাইকে যথাযথ সহযোগিতার নির্দেশনা দেন।
তিনি বলেন, সকলে মিলে সব উৎসব উদযাপন করাই বাংলার ঐতিহ্য ও গৌরব।
এসময় জেলা প্রশাসন, সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিআইডব্লিউটিএ, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।