ভালোবাসা দিবসে বর্ষা-মুন্নার গান
Published: 12th, February 2025 GMT
গায়িকা বর্ষা চৌধুরীর অনেক পরিচয়। একাধারে তিনি— উদ্যোক্তা, অভিনেত্রী ও সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজের সুখ-দুঃখের কথা বলে প্রায়ই আলোচনায় আসেন। অনেক দর্শকের মতে, বর্ষা চৌধুরীর জীবনের নানা চড়াই-উতরাই সিনেমার গল্পকেও হার মানায়।
এদিকে, বেশ কিছুদিন ধরে নানা ইস্যুতে আলোচনায় রয়েছেন বর্ষা। এসবের মাঝে নতুন খবর দিলেন। বিশ্ব ভালোবাসা দিবসকে সামনে রেখে নতুন গান নিয়ে হাজির হচ্ছেন এই শিল্পী।
‘কত লোকে কত কথা বলে’ শিরোনামের গানটির কথা লিখেছেন অভিনেতা ও প্রযোজক মুন্না খান। গানটিতে কণ্ঠ দিয়েছেন বর্ষা চৌধুরী ও রোহান রাজ। আর মিউজিক্যাল ফিল্মটিতে অভিনয় করেছেন নবাগত অভিনেত্রী মহিমা এবং ইব্রাহিম খান।
আরো পড়ুন:
প্রশংসা কুড়াচ্ছে সাব্বির-কোনালের গান
ফাহিমের ভালোবাসার গান ‘আদুরে দিন’
নতুন গানটি নিয়ে বর্ষা বলেন, “বেশ বড় আয়োজনে ভালোবাসা দিবসকে কেন্দ্র করে গানটি নির্মাণ করা হয়েছে। গানের কথাগুলোও বেশ চমৎকার। আশা করি, গানটি সবার ভালো লাগবে।”
এদিকে মুন্না খান বলেন, “সিনেমা প্রযোজনার পাশাপাশি নিয়মিত বিভিন্ন ধরণের মিউজিক্যাল ফিল্ম নির্মাণ করে যাচ্ছি। সেই ধারাবাহিকতায় ভালোবাসা দিবসকে সামনে রেখে আমাদের নতুন এই গান। বর্ষা খুব চমৎকার গেয়েছে তারই সঙ্গে রোহান রাজও। আশা করছি, গানটি সকলের মন ছুঁয়ে যাবে।”
জানা যায়, ভালোবাসা দিবসকে সামনে রেখে ১১ ফেব্রুয়ারি মুন্না খান মাল্টিমিডিয়ার ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত হবে গানটি।
ঢাকা/রাহাত/শান্ত
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
স্বপ্নের দেশ আমেরিকা: শেষ পর্ব
ট্যাক্সিতে বসে চারদিক দেখতে দেখতে যাচ্ছি। চমৎকার রাস্তা! ডানে বাঁয়ে যেদিকে তাকাই দিগন্ত পর্যন্ত চোখ যায়। আমেরিকায় নেমে যে বিষয়টি আমার চোখে পড়েছে তা হলো এর দিগন্তজোড়া বিশালতা। চারদিকে তাকিয়েই বোঝা যায় কি বিশাল এই দেশ! গাদাগাদি বিল্ডিং নেই, বেশ ফাঁকা। বিশাল আয়তনের বিত্তবৈভব আর প্রাচুর্যের দেশ সেটা বোঝা যায়। রাস্তাায় ট্রাফিক জ্যাম নেই। আমরা অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই লং আই ল্যান্ড সিটিতে পৌঁছলাম। এখানেই আমাদের হোটেল লা কুইন্টা।
ট্যাক্সি ছেড়ে ব্যাগেজপত্র নিয়ে হোটেলে ঢুকলাম। রিসেপশনে বসে আছে বিশালদেহী এক যুবতী। আমার রিজার্ভেশন ছিল। ফরমালিটিজ সেরে রুমে গেলাম। চমৎকার রুম পছন্দ হলো। কাপড় ছেড়ে লম্বা হট শাওয়ার নিলাম। দীর্ঘ ১৬ ঘণ্টার জার্নিতে শরীরের অবস্থা যাচ্ছেতাই। এর মধ্যে মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান বিশ্বজিৎদা আমার খাবার নিয়ে হাজির। এয়ারপোর্টে রিসিভ করতে না যাওয়ার অপরাধ ভোলাতে এবং খুশী করতে তার এই চেষ্টা। সোলার বক্সে রাস্তায় মোড়ানো খাবারের প্যাকেট খুলে মনটা আনন্দে লাফিয়ে উঠল। গরম ভাত, গরুর মাংস, ভেজিটেবল আর ডাল। সুদুর আমেরিকায় এসেই খাঁটি বাঙালি খাবার। পেট পুরে খেলাম এবং খেয়েই বিছানায় কম্বলের নিচে নিজেকে চালান করে দিলাম। প্লেনে জার্নির ঘোর কাটেনি কিন্তু গোসল সেরে খেয়ে পরম তৃপ্তি নিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই ঘুমিয়ে পড়লাম।
ঘুম ভাঙলো সন্ধ্যার আগে। জানালার পর্দা সরিয়ে বাইরে তাকালাম। চমৎকার ঝকঝকে বিকেলের রোদ! বাথরুমে ঢুকে চোখে-মুখে পানি দিয়ে ফ্রেশ হলাম। ফোন করলাম বিশ্বজিৎদাকে। জানতে পারলাম এই হোটেলেই আছেন ফেরদৌস ওয়াহিদ এবং তার ছেলে এ প্রজন্মের জনপ্রিয় গায়ক হাবিব ওয়াহিদ। ফেরদৌস ভাইকে ফোন করতেই চিৎকার করে উঠলেন ‘বস আপনি কখন আইলেন?’ বললাম ‘দুপুরে এসেছি।’ একটু পর তিনি রুমে এলেন। ফেরদৌস ভাইয়ের সাথে অনেক গল্প হলো, নিচে নেমে চা খেলাম। ভাগনে পাতাকে ফোন দিলাম। পাতা বলল, মামা আপনি হোটেলেই থাকেন আমি আসছি। পাতা এলো সন্ধ্যার আগে। ওর সাথে বের হলাম নিউ ইয়র্ক দেখবো বলে। হেঁটে হেঁটে এলাম কাছেই মেট্রো রেল স্টেশেনে। টিকেট কেটে ট্রেনে করে এসে নামলাম ম্যানহাটনে। এই সেই ম্যানহাটন, নিউ ইয়র্কের মূল সিটি। চার দিকে সমুদ্র, লম্বালম্বি সাজানো গোছানো চমৎকার এবং বিশাল শহর। মোট ১২টি বড় রাস্তা লম্বালম্বি এবং ১৩৫টি ছোট রাস্তা আড়াআড়ি। ম্যানহাটনেই বিশাল বিশাল বিল্ডিং এবং চমৎকার সব বিল্ডিং! ফুটপাতে হেঁটে চলছে অসংখ্য সব মানুষ, নানা জাতের নানা বর্নের। আমেরিকা আসলে বহু জাতির দেশ। এখানে রাস্তায় দেখা যায় সাদা কালো লম্বা খাটো নানান কিছিমের মানুষ। ম্যানহাটনের চারদিকেই সমুদ্র। এর পূর্ব দিকে কুইনস্, দক্ষিণে ব্রুকলেন। দক্ষিণে ব্যাটারী পার্ক সিটির সমুদ্রপাড়ে এসে দাঁড়ালে সমুদ্রের মধ্যে দেখা যায় লিবার্টী অব স্ট্যাচু মশাল হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
ম্যানহাটন সিটিতে সেন্ট্রাল পার্ক, ওয়াশিংটন পার্ক, ব্যাটারী পার্ক, টমশন পার্ক, সিটি হল পার্ক, ইউনিয়ন পার্ক সহ মোট ১৭টি পার্ক রয়েছে। পার্কগুলো চমৎকার সাজানো সবুজ বৃক্ষে ভরা। ম্যানহাটনকে বলা হয় মিউজিয়ামের শহর। আমেরিকানরা মিউজিয়াম ভালোবাসে। শহরের মধ্যে আছে আমেরিকান মিউজিয়াম অব ন্যাচারাল হিস্ট্রি, মেট্রোপলিটন মিউজিয়াম অব মডার্ন আর্ট, মিউজিয়াম অব সিটি নিউ ইয়র্ক, হুইটনি মিউজিয়াম, ইত্যাদি। মিউজিয়ামে দেশী-বিদেশী পর্যাটকদের প্রচণ্ড ভিড় দেখেছি।
রাত হয়েছে। শহরে জ্বলে উঠেছে রঙিন বাতি। রাতের ম্যানহাটনের রূপ অন্যরকম। একবারেই স্বপ্নের মতো। টাইম স্কয়ারের সামনে দাঁড়িয়ে অনেকক্ষণ ধরে দেখলাম চারদিকে। এই হলো স্বপ্নরাজ্য, সারা পৃথিবীর স্বর্গের দুয়ার। সমুদ্রের পাড়ে গিয়ে দাঁড়ালাম কিছুক্ষণ, ঠান্ডা বাতাসে শরীর জুড়িয়ে গেল।
হারবারে ওপেন স্টেজে কনসার্ট হচ্ছে হাজার হাজার দর্শক গান উপভোগ করছেন। আমরা কিছুক্ষণ থেকে পাতাকে বললাম, চলো টুইন টাওয়ার দেখবো। পাতা বলল, টুইন টাওয়ার তো নেই, সেই জায়গাটি আছে। আমি বললাম, সেটাই তো দেখব। হেঁটে হেঁটে গেলাম সেই বিখ্যাত জায়গায়। দেখলাম জায়গাটি ঘিরে রেখেছে। ভেতরে দেখার জন্য একটি ফাঁকা জানালার মতো সেখান দিয়েই দেখলাম ভেতরে কনসট্রাকশন হচ্ছে। অনেক যন্ত্রপাতি বিশাল আকার ক্রেন ইত্যাদি। দ্রুত নির্মাণ হচ্ছে আর একটি বিশাল টাওয়ার। যার নাম দিয়েছে ‘ফ্রিডম টাওয়ার’। এরপর ফিরে এলাম হোটেলে। রুমে ফিরে ফোন করলাম ফেরদৌস ভাইকে। তিনি এলেন, গল্প চলল রাত ১২টা পর্যন্ত। তারপর ঘুম।
পরদিন পহেলা জুন। গোসল সেরে রেস্টুরেন্টে নামলাম। দেখা হলো কলকাতার বিখ্যাত লেখক শমরেশ মজুমদারের সাথে। তিনিও ওপার বাংলা থেকে এসেছেন এই আন্তর্জাতিক বাংলা উৎসবে যোগ দিতে। তার সাথে কুশল বিনিময় করে নিজের পরিচয় দিলাম। এরপর রেস্টুরেন্টে ঢুকলেন কলকাতার বর্তমান প্রজন্মের খুবই জনপ্রিয় গায়ক শ্রীকান্ত আচার্য। ওনারা এসেছেন গতকাল বিকেলে এ উৎসবে যোগ দিতে। বাংলাদেশ থেকে এসেছেন ড. আনিসুজ্জামান, রাবেয়া খাতুন, আনিসুল হক, হাবিব ওয়াহিদ, মাহমুদুজ্জামান বাবু, কুদ্দুছ বয়াতী।
আন্তর্জাতিক বাংলা উৎসবের উদ্বোধন হবে আগামী কাল ২ জুন। কাজ নেই তাই ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ আজকেই। আমার বন্ধু আমান উদ দৌলাকে ফোন করলাম। এ সেই সাংবাদিক আমান যে ৯০-এর গণঅভ্যুত্থানে রাজনৈতিক কলাম লিখে বিখ্যাত হয়েছিলেন। পরবর্তিতে দৈনিক জনকণ্ঠের সিনিয়র সাংবাদিক হিসেবে কাজ করেছেন দীর্ঘদিন। বর্তমানে আমেরিকায় নিউ ইয়র্কে সাংবাদিকতার উপর পড়াশোনা করছেন এবং ‘ওয়ার্ল্ড নিউজ ব্যাংক’ নামে একটি ওয়েব নিউজ এর সম্পাদনা করছেন।
আমান এলো। ওর সাথে বের হলাম। আমরা প্রথমেই গেলাম জাতিসংঘ সদর দপ্তরে। বিশাল ভবনের সামনে সারি সারি পতাকা উড়ানোর ফ্লাগ স্ট্যান্ড। অনেকগুলো যতগুলো দেশ জাতিসংঘের সদস্য। ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তুললাম। ঢোকবার মুখেই গেটের বাম দিকে একটি চমৎকার ম্যুরাল! একটি মেটালিক গ্লোব। সোনালী রঙের। গ্লোবটির মধ্যে ফাটল, ভেতরে যন্ত্রপাতি ঠাসা। ডানে আর একটি স্ট্যাচু। বিশাল একটি পিস্তল এবং পিস্তলের ব্যারেলটি মোড়ানো। বোঝা যায় যুদ্ধ বন্ধের প্রতীকী ব্যঞ্জনা এটি। আমান বলল, সবাই এসে এই বিল্ডিংটাই দেখে যায় কিন্তু ভেতরে প্রবেশ করে না। আসল দেখার বিষয় তো ভেতরে। আমরা ভেতরে প্রবেশ করলাম। ১৩ ডলার করে টিকেট কেটে বসে থাকলাম। লবির দেয়ালজুড়ে জাতিসংঘের এ যাবৎ যারা মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করেছেন তাদের ছবি। একটি সুন্দরী মেয়ে আমদের এক জায়গায় দাঁড় করিয়ে প্রথমে তার পরিচয় দিল। আমাদের জাতিসংঘ ভবন দেখতে আসার জন্য ধন্যবাদ জানাল এবং নিয়ম কানুন বলে দিল। আমরা তাকে অনুসরণ করলাম।
প্রথমেই আমাদের একটি চমৎকার হলরুমে নিয়ে এলেন। বেশ বড়, গ্যালারীতে সারি সারি চেয়ার। স্টেজের মাঝখানে মহাসচিবের চেয়ার। আর দুই দিকে ৯টি ৯টি ১৮টি চেয়ার কমিটির সদস্যদের বসবার জন্য। এখানে মিটিং হয়। এরপর এক এক করে আরো ছোট-বড় ৪টি হল রুম আমরা দেখলাম। কোন হলে কি ধরনের মিটিং হয় তার বর্ণনা দিলেন মেয়েটি। হলগুলোর প্রবেশ মুখে লবিতে দেয়ালজুড়ে বিশাল একটি তৈলচিত্র। আমাদের শিল্প ভবনের প্রবেশ মুখে এসএম সুলতানের ‘সবাক সচল ইতিহাস’ নামের চিত্র কর্মটির সাথে মিল আছে অনেকটা। ইউএন শান্তি মিশনে কর্মরত সৈনিকদের বেশ কিছু ছবি দেখলাম। হঠাৎ করেই চেখে পড়লো বাংলাদেশের পতাকার ছবি, খুশী হলাম। কাছে গিয়ে দেখলাম ইউ এন শান্তি মিশনে বাংলাদেশের কয়েকজন সৈন্য মারা গিয়েছিলেন তাদের লাশ কফিনে করে বাংলাদেশের পতাকায় ঢেকে দেশে পাঠিয়েছিল এ সেই ছবি। বাইরের বিশাল লবিতে জাতিসংঘের সদস্যভুক্ত দেশ থেকে দেয়া চমৎকার সব উপঢৌকন সাজিয়ে রেখেছে। ভারতের তাজমহল, থাইল্যান্ডের নৌকা, নেপালের মন্দির আরো কত কি। দুঃখজনক বাংলাদেশের কিছুই নেই সেখানে। তেমনি পরবর্তিতে গিয়েছিলাম ডালাস ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে। সেখানেও দেখেছিলাম সারি সারি ঝুলছে বিভিন্ন দেশের পতাকা। ১৬০টি পতাকার মধ্যে খুঁজে পাইনি বাংলাদেশের পতাকা। সেখানে কর্মরত অফিসারকে জিজ্ঞাসা করে জেনেছি যে সব দেশের শো রুম আছে সেই সব দেশের পতাকা ঝুলানো হয়। ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে বাংলাদেশের একটি শোরুমও নেই।
জাতিসংঘ ভবন থেকে বেড়িয়ে আমরা গেলাম মিউজিয়াম দেখতে। বিশাল মিউজিয়াম অসংখ্য মানুষ মিউজিয়ামে ঢুকছে বের হচ্ছে। ভেতরে ঢুকে আরো বিস্মিত হলাম। বিশাল হল রুমে বিস্ময়কর সব জিনিস সাজিয়ে রাখা হয়েছে প্রতিটির নীচে দার বর্ণনা। শুনশান নীরবতা, দর্শনার্থীরা চুপচাপ দেখছে। আমরা ঘণ্টাখানেক ছিলাম। সামান্য অংশই দেখেছি দেখার মতো করে দেখলে পুরো মাসই হয়তো লেগে যাবে।
২ জুন লং আইল্যান্ড সিটির লাগুটিয়া কলেজের হল রুমে এবং সুপরিসর চত্তরে শুরু হলো আন্তর্জাতিক বাংলা উৎসব ২০০৭ । বিকেল ৫টায় ড. আনিসুজ্জামান স্যার উৎসবের উদ্বোধন করলেন। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের এবং কলকাতার লেখক, গায়ক উপস্থিত ছিলেন। উত্তর আমেরিকার নিউ ইয়র্কে বসবাসরত বাঙালিরা এসেছেন উৎসবে যোগ দিতে। মেলা বেশ জমে উঠেছে। নিউ ইয়র্কে বাঙালিদের মিলনমেলা। সন্ধ্যার পর হল ভরে গেল কানায় কানায়, শুরু হলো গানের আসর। কলকাতার শ্রীকান্ত আচার্য তার চমৎকার ভরাট গলার গানে মুগ্ধ করলেন সবাইকে। এর আগে পালাগান গেয়েছেন বাংলাদেশের কদ্দুছ বয়াতী। গান চলে রাত ৯টা পর্যন্ত। এভাবেই কটলো বাংলা উৎসবের প্রথম দিন।
দ্বিতীয় দিনেও বিকেল বেলা শুরু হলো উৎসবের অনুষ্ঠান মালা । রবীন্দ্র আলোচনা, নজরুল আলোচনা, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে লেখক কবি গুণীজনরা আলোচনা করলেন। এসব অনুষ্ঠানে দর্শকসংখ্যা খুবই কম ছিল। সন্ধ্যায় শুরু হলো গানের অনুষ্ঠান। প্রথমেই মঞ্চে উঠলেন বাংলাদেশে শিল্পী মাহমুদুজ্জামান বাবু। সুদূর আমেরিকার মাটিতে তিনি যখন গেয়ে উঠলেন ‘আমি বাংলার গান গাই’ শ্রোতারা আনন্দে চিৎকার করে উঠলেন। এক সাথে গেয়ে উঠলেন বাংলার গান। বাবু পরপর অনেকগুলো গান শোনালেন। এরপর এলো হাবিব। বাংলাদেশের তরুণদের মধ্যে হাবিব সত্যিই একজন ব্যতিক্রমী মিউজিক কম্পোজার।
পরদিন গেলাম নিউ ইয়ার্কে বাঙালিদের এলাকা বলে খ্যাত জ্যাকসন হাইটসে। এখানেই মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট বিশ্বজিৎ সাহার বইয়ের দোকান। বিশাল দোকান। নিউ ইয়র্কে বসবাসরত বাঙালিদের বইয়ের চাহিদা মেটাতে এখানে রয়েছে বিশাল বইয়ের সম্ভার। আমাদের সাথে সফরসঙ্গী হিসেবে আরো আছেন অনন্যা প্রকাশনীর মুনির আহমেদ, সময় প্রকাশনীর ফরিদ আহমেদ এবং মওলা ব্রাদার্স-এর মাহমুদুল হক।
মুক্তধারার অফিসে দেখা হলো মুনির ভাইয়ের সাথে। আমরা বসে চা খেতে খেতে গল্প করছিলাম। এর মধ্যেই সেখানে হাজির হলেন আনিসুজ্জামান স্যার, আনিসুল হক, কদ্দুছ বয়াতী। জমে উঠল আড্ডা। সন্ধ্যার আগেই একে একে চলে গেলেন সবাই। আমি রইলাম বিশ্বজিৎ বাবুর কাছে। তিনি কাজে ব্যস্ত হতেই আমিও বেড়িয়ে পড়লাম জ্যাকসন হাইটস দেখতে। এখানকার বেশীর ভাগ মানুষ বাংলাদেশী। রাস্তায় লুংগি পড়া মাথায় গোল টুপির ট্রিপিক্যাল বাঙালিও চোখে পড়েছে। খাবার দোকানগুলোও দেখলাম বাঙালিদের। এক দোকানে ঢুকে পড়লাম। ভদ্রলোকের বাসা ঢাকার গ্রীন রোডে। কাপড়ের দোকান দিয়েছেন। মাল সংগ্রহ করেন ঢাকা এবং চায়না থেকে। বেশ ভালো ব্যবসা করছেন। নিউ ইয়ার্কে দোকানগুলোতে লক্ষ্য করেছি চায়নার প্রোডাক্ট ভরা। মুক্ত বাজার অর্থনীতিতে আমেরিকান সরকার ঠেকাতে পাড়ছে না চায়নাকে।
ফিরে গেলাম বিশ্বজিৎ বাবুর মুক্তধারায়। রাতে তিনি নিয়ে গেলেন একটি বাঙালি রেস্টুরেন্টে। ভাত, পাবদা মাছ, গরুর মাংস, সবজী ডাল দিয়ে ডিনার সারলাম। লক্ষ করেছি এই রেস্টুরেন্টে কাজ করছে বাঙালি মেয়েরা। অনেক রাতে বিশ্বজিৎ বাবুর গাড়ি নামিয়ে দিয়ে গেল হোটেলে। আগামী কাল ভোর পাঁচটায় রওনা হবো ডালাসের উদ্দ্যেশে। (শেষ)
তারা//