কুমিল্লায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গুলি-হামলার ঘটনায় ৬ মাস পর থানায় মামলা হয়েছে। এতে কুমিল্লা ৬ (সদর) আসনের সাবেক এমপি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার এবং জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান লিটন ও সাধারণ সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর আলম ভূঁঞাসহ ২৬১ জনকে আসামি করা হয়েছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কুমিল্লা মহানগর শাখার সংগঠক মো.

ইনজামুল হক রানা বাদী হয়ে বুধবার দুপুরে কোতোয়ালি মডেল থানায় ওই মামলাটি দায়ের করেন। রানা জেলার আদর্শ সদর উপজেলার শহরতলীর ডুমুরিয়া চাঁন্দপুর এলাকার আমির হোসেনের ছেলে। সমকালকে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মহিনুল ইসলাম। 

মামলায় অভিযোগ করা হয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে তৎকালীন এমপি বাহারের নির্দেশে আসামিরা গত বছরের ৩ আগস্ট দুপুর ১২টার দিকে কুমিল্লা নগরীর পুলিশ লাইন উচ্চবিদ্যালয়ের পাশের সড়কে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার উপর হামলা চালায়। গুলি ও হামলায় বেশ কিছু ছাত্র-জনতা গুলিবিদ্ধ হয়ে রক্তাক্ত জখমসহ গুরুতর আহত হয়।

মামলায় আলোচিত অপর আসামিরা হচ্ছেন, আদর্শ সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম টুটুল, ভাইস চেয়ারম্যান তারিকুর রহমান জুয়েল, আহমেদ নিয়াজ পাভেল, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান হোসনেয়ারা বকুল, সদর দক্ষিণ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাবলু, লাকসাম উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এড. ইউনুছ ভ‚ইয়া, বুড়িচং উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আখলাক হায়দার, মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আতিক উল্লাহ খোকন, মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক আবদুল্লাহ আল মাহমুদ সহিদ, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি জহিরুল ইসলাম রিন্টু, সাধারণ সম্পাদক সাদেকুর রহমান পিয়াস, আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি আবদুল মমিন ফেরদৌস, সাবেক পিপি জহিরুল ইসলাম সেলিম, কুসিকের অপসারিত প্যানেল মেয়র হাবিবুর আল-আমিন সাদী, মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা নূর-উর রহমান মাহমুদ তানিম, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক অ্যাড. ফাহমিদা জেবিন, মহানগর ছাত্রলীগের  সাবেক আহ্বায়ক আবদুল আজিজ সিহানুক। মামলায় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) সেকশন অফিসার রেজাউল ইসলাম মাজেদ, বিল্লাল হোসেন, কুবির কর্মচারী পরিষদ সভাপতি জসিম উদ্দিন, কুবি শাখা ছাত্রলীগের নেতা রেজা-ই এলাহী ও বিপ্লব চন্দ্র দাসসহ বেশ কিছু শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তাকে আসামি করা হয়েছে। এছাড়াও মামলায় সিটি করপোরেশনের বেশ কিছু কাউন্সিলর, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, আইনজীবী, জেলা সদর ও বিভিন্ন উপজেলার আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। এ মামলায় গুরুতর আহত ৫ জনকে স্বাক্ষীভুক্ত করা হয়েছে। 

কুমিল্লায় এই প্রথম জুলাই আগস্ট ছাত্র জনতার আন্দোলনে হামলার ঘটনায় সর্বাধিক সংখ্যক প্রায় দুই ডজন আইনজীবীকে এক মামলায় অভিযুক্ত করা হলো। মামলার বিষয়ে জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান লিটন বলেন, প্রায় ১৬ শ’ আইনজীবী নিয়ে জেলা আইনজীবী সমিতি। মামলায় ঢালাওভাবে অনেক আইনজীবীকে আসামি করা হয়েছে। যা দুঃখ ও দুর্ভাগ্যজনক। আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের তফসিল হওয়ার ঘোষণা করার দিন ধার্য আছে। মামলার কারণে নির্বাচনেও প্রভাব পড়বে। ছাত্র-জনতার ওপর হামলার দিনের ছবি ও ভিডিও ফুটেজ দেখে প্রকৃত অপরাধীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান এই আইনজীবী নেতা।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে মামলার বাদী মো. ইনজামুল হক রানার মোবাইলে কল করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন কুমিল্লা মহানগর শাখার আহ্বায়ক আবু রায়হান বলেন, আন্দোলন চলাকালে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের দোসররা প্রকাশ্যে নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর হামলা করেছিল। আসামীদের অনেকেই সরাসরি ঘটনাস্থলে ছিলেন। অন্যদের মধ্যে কেউ কেউ অর্থ, অস্ত্র সরবরাহ ও পরিকল্পনায় ছিলেন। হামলার ভিডিও ও স্থিরচিত্র আমাদের কাছে আছে। হামলায় জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেপ্তারের দাবি জানান তিনি। 

কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মো. মহিনুল ইসলাম সমকালকে জানান, বাদীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে মামলাটি এফআইআর (রেকর্ড) করা হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: এমপ ব হ র ছ ত র জনত র র রহম ন ল ইসল ম আইনজ ব উপজ ল আবদ ল আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

এনায়েত করিম ও গোলাম মোস্তফা পাঁচ দিন রিমান্ডে

রাজধানীর রমনা থানায় করা সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক এনায়েত করিম চৌধুরী ওরফে মাসুদ করিম ও এস এম গোলাম মোস্তফা আজাদকে পাঁচ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দিয়েছেন আদালত।

পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট সারাহ ফারজানা হক আজ বুধবার এ আদেশ দেন।

প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী।

পিপি ওমর ফারুক ফারুকী প্রথম আলোকে বলেন, সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত এনায়েত করিম চৌধুরী ও এস এম গোলাম মোস্তফাকে আদালতে হাজির করে সাত দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার আবেদন করে পুলিশ। আসামিপক্ষ থেকে জামিনের আবেদন করা হয়। উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে আদালত মাসুদ ও মোস্তফাকে পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

এর আগে এনায়েত করিম ওরফে মাসুদ করিমকে গত সোমবার দুদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

রাষ্ট্রপক্ষ থেকে বলা হয়, এনায়েত করিম চৌধুরী ওরফে মাসুদ করিম মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর প্রতিনিধি হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। বাস্তবে তিনি র-এর (ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা) এজেন্ট। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে অস্থিতিশীল করার মিশন নিয়ে তিনি বাংলাদেশে এসেছেন। বর্তমান সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত। তাঁর দুটি মুঠোফোন জব্দ করা হয়েছে। সেটির ফরেনসিক পরীক্ষা করা হলে তাঁর ষড়যন্ত্রের বিষয়ে আরও অনেক নতুন তথ্য জানা যাবে। এনায়েত করিম চৌধুরী ওরফে মাসুদ করিমসহ আর কারা ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত, সেটি জানার জন্য তাঁকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা জরুরি।

অপরদিকে এনায়েত করিম চৌধুরীর পক্ষে তাঁর আইনজীবীরা আদালতের কাছে দাবি করেন, তিনি ৬ সেপ্টেম্বর দেশে এসেছেন, তাঁর আমেরিকায় ফিরে যাওয়ার কথা ১৪ সেপ্টেম্বর। তিনি বাংলাদেশে এসে গুলশানে অবস্থান করছিলেন।

এনায়েত করিম চৌধুরীর আইনজীবী ফারহান এমডি আরাফ বলেন, এ ঘটনার সঙ্গে তাঁর মক্কেল কোনোভাবেই জড়িত নন। তিনি একজন মার্কিন নাগরিক। সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে তিনি কোনোভাবে যুক্ত নন।

এর আগে গত শনিবার এনায়েত করিম চৌধুরীকে (৫৫) সন্দেহভাজন হিসেবে আটকের পর ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, গত শনিবার সকালে রাজধানীর মিন্টোরোড থেকে এনায়েত করিম চৌধুরীকে আটক করা হয়। তাঁর কাছ থেকে জব্দ করা পাসপোর্টের তথ্য অনুযায়ী, তিনি মার্কিন নাগরিক।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক সূত্র প্রথম আলোকে জানিয়েছে, এনায়েত করিম নিজেকে মাসুদ করিম নামে পরিচয় দেন। তিনি নিজেকে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের প্রধান বলে পরিচয় দিয়ে থাকেন। এই পরিচয়ে তিনি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী নেতাদের রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করার স্বপ্ন দেখান। ২০১৮ সালের ভোটের আগেও তিনি একাধিক রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে দেশের বাইরে বৈঠক করেন।

পুলিশ বলছে, গত শনিবার এনায়েত করিম চৌধুরী প্রাডো গাড়িতে করে মিন্টোরোড এলাকায় সন্দেহজনকভাবে ঘোরাফেরা করছিলেন। গাড়ি থামিয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে ওই এলাকায় ঘোরাঘুরি করার বিষয়ে সদুত্তর দিতে পারেননি। পরে তাঁকে আটক করে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠিয়ে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়। আদালত তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। পাশাপাশি সোমবার রিমান্ড শুনানির দিন ধার্য করেন।

সংশ্লিষ্ট একজন পুলিশ কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেছেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এনায়েত করিম বলেছেন, বর্তমান সরকার পরিবর্তন করে নতুন জাতীয় সরকার গঠনে কাজ করতে তিনি বাংলাদেশে এসেছেন। তাঁর দাবি, তিনি বিশেষ একটি দেশের গোয়েন্দা সংস্থার এজেন্ট। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার খুব নাজুক অবস্থায় আছে। সেনাবাহিনীর সঙ্গেও এই সরকারের দূরত্ব তৈরি হয়েছে। এই সুযোগে বর্তমান সরকারকে পরিবর্তন করতে বাংলাদেশে এসেছেন। সরকারি উচ্চ ও নীতিনির্ধারক পর্যায়ের একাধিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বলে জানিয়েছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী নেতা ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে গোপন বৈঠক করেছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে যশোর আইনজীবী সমিতির চার সদস্যকে সাময়িক বহিষ্কার
  • যশোরে ৪ আইনজীবীকে বহিষ্কার
  • ক্ষতিপূরণের বিরুদ্ধে আপিল করতে ২৫ শতাংশ অর্থ জমা দেওয়ার বিধান প্রশ্নে রুল
  • আইনজীবী সোমার মৃত্যুতে আইনজীবী সমিতির শোক সভা ও দোয়া
  • এনায়েত করিম ও গোলাম মোস্তফা পাঁচ দিন রিমান্ডে
  • ভাঙ্গা থেকে দুটি ইউনিয়ন বাদ দেওয়া প্রশ্নে রুল
  • বাগেরহাটে চারটি সংসদীয় আসন রাখতে নির্দেশ কেন নয়: হাইকোর্ট
  • পান্থকুঞ্জ পার্ক ও হাতিরঝিল অংশে নির্মাণকাজে স্থিতাবস্থা আপাতত বহাল, চলবে না কার্যক্রম
  • চারটি আসন বহালের দাবিতে বাগেরহাটে নির্বাচন কার্যালয় ঘেরাও, উচ্চ আদালতে দুটি রিট
  • বরিশালে তরুণীকে ধর্ষণের পর হত্যা: ২ জনের মৃত্যুদণ্ড