Samakal:
2025-09-18@10:19:18 GMT

‘কাঁঠাল পাতা’য় বুঁদ কড়াইল বস্তি

Published: 13th, February 2025 GMT

‘কাঁঠাল পাতা’য় বুঁদ কড়াইল বস্তি

রাজধানীর কড়াইল বস্তির পূর্ব পাশে লেকের ধারে মাটির রাস্তা। এর এক পাশে লেক, আরেক পাশে বস্তি। টিঅ্যান্ডটি নৌকাঘাট থেকে মাটির রাস্তা ধরে দক্ষিণ দিকে যেতে আনুমানিক ৫০ গজ পর সাজনাতলা। সেখানে তিন যুবক দাঁড়িয়ে কথা বলছেন। প্রত্যেকের হাতে সিগারেট। পাশ কাটিয়ে কয়েক পা এগোতেই তাদের একজন হাঁক ছাড়লেন। ‘কাঁঠাল পাতা কার কয়টা লাগবে? আছে মাত্র কয়েকটা। পরে চাইলেও পাবেন না।’

এই চিত্র ৭ ফেব্রুয়ারি রাত ৯টার। কড়াইল বস্তিতে মাদকদ্রব্য সেবন করেন এমন চারজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, হেরোইনকে ‘কাঁঠাল পাতা’ বলে ডাকা হয়। সাধারণ মানুষ যাতে না বুঝতে পারে, সে জন্য এই সাংকেতিক নাম। ইয়াবাকে বলা হয় ‘পট’ বা ‘গুটি’। গাঁজার নাম ‘ঘাসপাতা’। কাগজে মুড়িয়ে তিন ধরনের পুরিয়া করে হেরোইন বিক্রি করা হয়। পুরিয়াভেদে এর মূল্য ৫০০, ১ হাজার ২০০ ও ৬ হাজার টাকা। হেরোইনের চাহিদা মাঝে হ্রাস পেলেও বছরখানেক ধরে বৃদ্ধি পেয়েছে।

সরেজমিন জানা গেছে, বস্তিসংলগ্ন এই লেকের পাশের মাটির রাস্তায় হেরোইন বেচাকেনার চারটি স্পট রয়েছে। দুপুরের পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত হেরোইন বেচাকেনা হয়। এ ছাড়া বস্তির বিভিন্ন জায়গায়ও রয়েছে গাঁজার স্পট। তবে ইয়াবা বিক্রির নির্দিষ্ট স্পট নেই। ইয়াবা বিক্রেতারা পকেটে নিয়ে ঘুরে বেড়ান কিংবা মোবাইল ফোনে অর্ডার পেয়ে ক্রেতার কাছে পৌঁছে দেন। এই কাজটি করা হয় খুব সতর্কতার সঙ্গে, যাতে ধরা না পড়ে।

বিশাল এলাকা নিয়ে বনানী থানার এই বস্তি কড়াইল নামে পরিচিত হলেও এর মধ্যে রয়েছে পৃথক নামের বস্তি। বেলতলা বস্তি, এরশাদনগর, গোডাউন, বউবাজার, বেদে, মোশারফ বাজার ও জামাইবাজার বস্তিকে একসঙ্গে কড়াইল বস্তি বলা হয়। এই এলাকায় প্রকাশ্যে ইয়াবা, হেরোইন, গাঁজাসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য বেচাকেনা এবং সেবন চললেও যেন দেখার কেউ নেই। মাঝেমধ্যে পুলিশ দুয়েকটি অভিযান চালালেও তাতে কার্যকর কিছু হয় না। আর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের দৃশ্যমান কোনো কার্যক্রমই নেই বস্তি এলাকায়।

বস্তিতে প্রায় সবাই নিম্ন আয়ের মানুষ। সাধারণ বাসিন্দারা তাদের উঠতি বয়সী ছেলেমেয়ে নিয়ে মাদক আতঙ্কে থাকেন, কখন না জানি মাদকে জড়িয়ে পড়ে! তাদের ভাষ্য, বস্তির ভেতর খুব সহজেই মাদক পাওয়া যায়। মাদকসেবীরা বস্তির সরু গলিতে প্রকাশ্যে মাদক সেবন করেন। কিছু গলি আছে, সেগুলোতে সন্ধ্যার পর মাদকের তীব্র গন্ধে হাঁটার উপায় থাকে না। কিন্তু তাদের নিষেধ করার মতো সাহস নেই কারও। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে জামাইবাজার বস্তির পঞ্চাশোর্ধ্ব এক রিকশাচালক জানান, তাঁর দুই ছেলে। ঘরের পেছনের গলিতে প্রকাশ্যে ইয়াবা বিক্রি হতো। বছর দুয়েক আগে তাঁর ১৬ বছরের ছোট ছেলে ইয়াবা সেবন শুরু করে। আক্ষেপ করে তিনি বলেন, ইয়াবা পাওয়া সহজ না হলে হয়তো আমার ছেলে ওই পথে পা বাড়াত না। এখনও তাকে ফেরাতে পারিনি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, লেকের পাশের মাটির রাস্তায় সজনে গাছের নিচে যারা হেরোইন বিক্রির জন্য দাঁড়িয়েছিলেন, তারা বস্তির চিহ্নিত মাদক কারবারি মো.

রানার লোকজন। রানা তাদের মাধ্যমে হেরোইন বিক্রি করেন। তবে বিক্রেতারা নিজের পকেটে বা হাতে এসব রাখেন না, লেকের কিনারায় কলাগাছের ফাঁকে কিংবা রাস্তার পাশে মাটিচাপা দিয়ে রেখে দেন। ক্রেতার কাছ থেকে একজন টাকা নেন, আরেকজন গোপন জায়গা থেকে হেরোইনের পুরিয়া এনে হাতে তুলে দেন। 

সরেজমিন জানা যায়, জামাইবাজার বস্তিসংলগ্ন নৌকাঘাটের পাশে মাটির রাস্তাসংলগ্ন মো. জাহাঙ্গীরের চায়ের দোকান। দোকানে বসেই সন্ধ্যা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত চা-বিস্কুটের আড়ালে তিনি হেরোইন বিক্রি করেন। দোকানে সিগারেটের খালি প্যাকেটে হেরোইনের পুরিয়া রাখা হয়। এ ছাড়া দোকানসংলগ্ন বাসায়ও থাকে। পরিচিত ক্রেতা ছাড়া তিনি বিক্রি করেন না। 

তাঁর ছোট ভাই জিল্লুর রহমানও একই কারবারে জড়িত। সম্প্রতি জিল্লুর যৌথ বাহিনীর হাতে হেরোইনসহ গ্রেপ্তার হয়েছেন। এরশাদনগর বস্তির মসজিদের গলিতে গাঁজা বিক্রি করেন সাগরের স্ত্রী জরিনা এবং রাজার গলিতে গাঁজা, ইয়াবা, হেরোইন বিক্রি করেন মো. কাঞ্চন। বেলতলা বস্তির আমির, আবুল ও এরশাদের ছেলে রুবেল গাঁজা-ইয়াবা বেচেন। মাছ বাজারের আফাজ ও আসেক, ঝিলপাড়ের ইব্রাহিম ও সাইদুল ইসলাম এবং বউবাজারের খামারবাড়ির শাহীন, ডাক্তারবাড়ির গলির রাসেল ও মোশারফ বাজারের শহিদুল ইয়াবার অন্যতম ব্যবসায়ী।

এ বিষয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ঢাকা মহানগর উত্তর কার্যালয়ের উপপরিচালক শামীম আহম্মেদ সমকালকে বলেন, অভিযান চালানো হয়। মামলাও হয়েছে বেশ কিছু। আবার অভিযান চালাব। 

বনানী থানার ওসি রাসেল সরোয়ার বলেন, বস্তি এলাকাকে তিনটি ভাগে ভাগ করে পুলিশ কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে। তাদের কাজ মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো। গত সোমবারও গাঁজাসহ দু’জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: হ র ইন ব ক র

এছাড়াও পড়ুন:

কুবিতে নতুন ১৮ বিভাগ ও ৪ ইনস্টিটিউট চালুর সুপারিশ

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) ৮৯তম একাডেমিক কাউন্সিল মিটিংয়ে সার্বিকভাবে আসন সংখ্যা কমানোসহ অর্গানোগ্রামে আরো ১৮টি নতুন বিভাগের অন্তর্ভুক্তি, চারটি ইনস্টিটিউট চালু এবং ১২টি বিভাগে পিএইচডি ডিগ্রি চালুর সুপারিশ করা হয়েছে। 

সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।  

ল্যাবভিত্তিক বিভাগগুলোতে আসন সংখ্যা ৪০টি এবং ল্যাববিহীন বিভাগগুলোতে ৫০টি আসন রাখার সুপারিশ করা হয়েছে। নতুন ১৮টি বিভাগ অন্তর্ভুক্তির সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত বিভাগগুলো হলো—পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ, জৈব রসায়ন ও আণবিক জীববিজ্ঞান বিভাগ এবং জৈবপ্রযুক্তি ও জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ। সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত বিভাগগুলো হলো—সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, জনসংখ্যা বিজ্ঞান বিভাগ এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ। কলা ও মানবিক অনুষদভুক্ত গুলো হলো—ইসলামিক স্টাডিজ ও সংস্কৃতি বিভাগ, ইতিহাস বিভাগ এবং দর্শন বিভাগ। ব্যবসায় অনুষদভুক্ত বিভাগগুলো হলো— পর্যটন ও আতিথেয়তা ব্যবস্থাপনা বিভাগ, ব্যবসায়িক তথ্যবিজ্ঞান বিভাগ, আন্তর্জাতিক ব্যবসা বিভাগ এবং লজিস্টিক ও মার্চেন্ডাইজিং বিভাগ। প্রকৌশল অনুষদভুক্ত বিভাগগুলো হলো— বৈদ্যুতিক ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগ, রাসায়নিক প্রকৌশল বিভাগ, পুরকৌশল বিভাগ এবং যন্ত্রকৌশল বিভাগ। আইন অনুষদভুক্ত বিভাগটি হলো— অপরাধবিদ্যা বিভাগ। 

পাশাপাশি চারটি ইনস্টিটিউট গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে। সেগুলো হলো—আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় উন্নত গবেষণা কেন্দ্র এবং একাডেমিক মান বৃদ্ধি কেন্দ্র। এগুলোর গঠন কাঠামোও সুপারিশ করা হয়েছে। 

এর মধ্যে আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের জন্য পরিচালক হিসেবে একজন অধ্যাপক, নিয়মিত অধ্যাপক দুইজন, তিনজন সহযোগী অধ্যাপক, সেকশন অফিসার বা ম্যানেজার একজন, প্রশাসনিক কর্মকর্তা একজন, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার টাইপিস্ট একজন, অফিস সহায়ক দুইজন এবং একজন ক্লিনার। 

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় উন্নত গবেষণা কেন্দ্র এবং একাডেমিক মান বৃদ্ধি কেন্দ্রের জন্য পরিচালক হিসেবে একজন অধ্যাপক, একজন অতিথি অধ্যাপক, অতিরিক্ত পরিচালক হিসেবে একজন অধ্যাপক অথবা সহযোগী অধ্যাপক, সেকশন অফিসার অথবা ম্যানেজার হিসেবে একজন, প্রশাসনিক কর্মকর্তা একজন, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার টাইপিস্ট একজন, অফিস সহায়ক দুইজন এবং ক্লিনার একজন। 

১২টি বিভাগে পিএইচডি ডিগ্রি চালুর প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রতিটি বিভাগে ন্যূনতম ২৬ জন করে শিক্ষক রাখার ব্যাপারেও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। 

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন বলেছেন, “আমরা মিটিংয়ে এগুলো সুপারিশ করেছি। অর্গানোগ্রাম অনুসারে বিশ্ববিদ্যালয় ডিপার্টমেন্টের জন্য ছাড়পত্র চায়, তারপর কমিশন (ইউজিসি) যদি অনুমোদন দেয়, তখন সেটা অর্গানাগ্রামে যুক্ত হয়। অর্গানোগ্রামে থাকলেই যে বিভাগ হয়ে যাবে, এমন না। একটা অনুমোদন দিয়ে রাখে। এই অনুমোদনের আলোকে আবার যখন দরখাস্ত দেওয়া হয়, তখন কমিশন বসে সিদ্ধান্ত নেবে।”

তিনি আরো বলেন, “ইউজিসি আমাদের নির্দেশনা দিয়েছে আসন সংখ্যা কমাতে, যাতে কোয়ালিটি এডুকেশনের নিশ্চিত হয়। তারা ল্যাববেজড বিভাগের জন্য ৪০টি আসন এবং ল্যাববিহীন বিভাগের জন্য ৫০টি আসন বরাদ্দ দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে।”

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী বলেছেন, “অনেকগুলো সিদ্ধান্তই নেওয়া হয়েছে। তবে, এখনই না দেখে বলা যাচ্ছে না। রেজ্যুলেশন পাস হলে বিস্তারিত বলতে পারব।”

ঢাকা/এমদাদুল/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নরসিংদীতে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষ, গুলিতে বৃদ্ধ নিহত
  • ভোররাতে রণক্ষেত্র: নরসিংদীতে নিহত ১, গুলিবিদ্ধ ৫
  • গাজায় ২৬ হাজার শিশু তীব্র অপুষ্টির শিকার: জাতিসংঘ
  • গ্রাহকের কাছে পেয়ারা খেতে চায় জনতা ব্যাংকের কর্মকর্তা
  • গল্পটা এই ক্লাসরুম থেকেই শুরু: ইরফান সাজ্জাদ
  • রাশিয়ায় এক বাঙালি বিপ্লবীর খোঁজে
  • আপনার এত সাহস হয় কী করে, সাংবাদিককে নায়িকা
  • দুবাইয়ে বিকৃত যৌন ব্যবসা চক্রের প্রধানকে চিহ্নিত করল বিবিসির এক অনুসন্ধান
  • মহানবী (সা.)–এর ইন্তেকালের পরে শাসন নিয়ে যা ঘটেছে
  • কুবিতে নতুন ১৮ বিভাগ ও ৪ ইনস্টিটিউট চালুর সুপারিশ