Samakal:
2025-07-31@12:21:38 GMT

‘কাঁঠাল পাতা’য় বুঁদ কড়াইল বস্তি

Published: 13th, February 2025 GMT

‘কাঁঠাল পাতা’য় বুঁদ কড়াইল বস্তি

রাজধানীর কড়াইল বস্তির পূর্ব পাশে লেকের ধারে মাটির রাস্তা। এর এক পাশে লেক, আরেক পাশে বস্তি। টিঅ্যান্ডটি নৌকাঘাট থেকে মাটির রাস্তা ধরে দক্ষিণ দিকে যেতে আনুমানিক ৫০ গজ পর সাজনাতলা। সেখানে তিন যুবক দাঁড়িয়ে কথা বলছেন। প্রত্যেকের হাতে সিগারেট। পাশ কাটিয়ে কয়েক পা এগোতেই তাদের একজন হাঁক ছাড়লেন। ‘কাঁঠাল পাতা কার কয়টা লাগবে? আছে মাত্র কয়েকটা। পরে চাইলেও পাবেন না।’

এই চিত্র ৭ ফেব্রুয়ারি রাত ৯টার। কড়াইল বস্তিতে মাদকদ্রব্য সেবন করেন এমন চারজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, হেরোইনকে ‘কাঁঠাল পাতা’ বলে ডাকা হয়। সাধারণ মানুষ যাতে না বুঝতে পারে, সে জন্য এই সাংকেতিক নাম। ইয়াবাকে বলা হয় ‘পট’ বা ‘গুটি’। গাঁজার নাম ‘ঘাসপাতা’। কাগজে মুড়িয়ে তিন ধরনের পুরিয়া করে হেরোইন বিক্রি করা হয়। পুরিয়াভেদে এর মূল্য ৫০০, ১ হাজার ২০০ ও ৬ হাজার টাকা। হেরোইনের চাহিদা মাঝে হ্রাস পেলেও বছরখানেক ধরে বৃদ্ধি পেয়েছে।

সরেজমিন জানা গেছে, বস্তিসংলগ্ন এই লেকের পাশের মাটির রাস্তায় হেরোইন বেচাকেনার চারটি স্পট রয়েছে। দুপুরের পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত হেরোইন বেচাকেনা হয়। এ ছাড়া বস্তির বিভিন্ন জায়গায়ও রয়েছে গাঁজার স্পট। তবে ইয়াবা বিক্রির নির্দিষ্ট স্পট নেই। ইয়াবা বিক্রেতারা পকেটে নিয়ে ঘুরে বেড়ান কিংবা মোবাইল ফোনে অর্ডার পেয়ে ক্রেতার কাছে পৌঁছে দেন। এই কাজটি করা হয় খুব সতর্কতার সঙ্গে, যাতে ধরা না পড়ে।

বিশাল এলাকা নিয়ে বনানী থানার এই বস্তি কড়াইল নামে পরিচিত হলেও এর মধ্যে রয়েছে পৃথক নামের বস্তি। বেলতলা বস্তি, এরশাদনগর, গোডাউন, বউবাজার, বেদে, মোশারফ বাজার ও জামাইবাজার বস্তিকে একসঙ্গে কড়াইল বস্তি বলা হয়। এই এলাকায় প্রকাশ্যে ইয়াবা, হেরোইন, গাঁজাসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য বেচাকেনা এবং সেবন চললেও যেন দেখার কেউ নেই। মাঝেমধ্যে পুলিশ দুয়েকটি অভিযান চালালেও তাতে কার্যকর কিছু হয় না। আর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের দৃশ্যমান কোনো কার্যক্রমই নেই বস্তি এলাকায়।

বস্তিতে প্রায় সবাই নিম্ন আয়ের মানুষ। সাধারণ বাসিন্দারা তাদের উঠতি বয়সী ছেলেমেয়ে নিয়ে মাদক আতঙ্কে থাকেন, কখন না জানি মাদকে জড়িয়ে পড়ে! তাদের ভাষ্য, বস্তির ভেতর খুব সহজেই মাদক পাওয়া যায়। মাদকসেবীরা বস্তির সরু গলিতে প্রকাশ্যে মাদক সেবন করেন। কিছু গলি আছে, সেগুলোতে সন্ধ্যার পর মাদকের তীব্র গন্ধে হাঁটার উপায় থাকে না। কিন্তু তাদের নিষেধ করার মতো সাহস নেই কারও। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে জামাইবাজার বস্তির পঞ্চাশোর্ধ্ব এক রিকশাচালক জানান, তাঁর দুই ছেলে। ঘরের পেছনের গলিতে প্রকাশ্যে ইয়াবা বিক্রি হতো। বছর দুয়েক আগে তাঁর ১৬ বছরের ছোট ছেলে ইয়াবা সেবন শুরু করে। আক্ষেপ করে তিনি বলেন, ইয়াবা পাওয়া সহজ না হলে হয়তো আমার ছেলে ওই পথে পা বাড়াত না। এখনও তাকে ফেরাতে পারিনি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, লেকের পাশের মাটির রাস্তায় সজনে গাছের নিচে যারা হেরোইন বিক্রির জন্য দাঁড়িয়েছিলেন, তারা বস্তির চিহ্নিত মাদক কারবারি মো.

রানার লোকজন। রানা তাদের মাধ্যমে হেরোইন বিক্রি করেন। তবে বিক্রেতারা নিজের পকেটে বা হাতে এসব রাখেন না, লেকের কিনারায় কলাগাছের ফাঁকে কিংবা রাস্তার পাশে মাটিচাপা দিয়ে রেখে দেন। ক্রেতার কাছ থেকে একজন টাকা নেন, আরেকজন গোপন জায়গা থেকে হেরোইনের পুরিয়া এনে হাতে তুলে দেন। 

সরেজমিন জানা যায়, জামাইবাজার বস্তিসংলগ্ন নৌকাঘাটের পাশে মাটির রাস্তাসংলগ্ন মো. জাহাঙ্গীরের চায়ের দোকান। দোকানে বসেই সন্ধ্যা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত চা-বিস্কুটের আড়ালে তিনি হেরোইন বিক্রি করেন। দোকানে সিগারেটের খালি প্যাকেটে হেরোইনের পুরিয়া রাখা হয়। এ ছাড়া দোকানসংলগ্ন বাসায়ও থাকে। পরিচিত ক্রেতা ছাড়া তিনি বিক্রি করেন না। 

তাঁর ছোট ভাই জিল্লুর রহমানও একই কারবারে জড়িত। সম্প্রতি জিল্লুর যৌথ বাহিনীর হাতে হেরোইনসহ গ্রেপ্তার হয়েছেন। এরশাদনগর বস্তির মসজিদের গলিতে গাঁজা বিক্রি করেন সাগরের স্ত্রী জরিনা এবং রাজার গলিতে গাঁজা, ইয়াবা, হেরোইন বিক্রি করেন মো. কাঞ্চন। বেলতলা বস্তির আমির, আবুল ও এরশাদের ছেলে রুবেল গাঁজা-ইয়াবা বেচেন। মাছ বাজারের আফাজ ও আসেক, ঝিলপাড়ের ইব্রাহিম ও সাইদুল ইসলাম এবং বউবাজারের খামারবাড়ির শাহীন, ডাক্তারবাড়ির গলির রাসেল ও মোশারফ বাজারের শহিদুল ইয়াবার অন্যতম ব্যবসায়ী।

এ বিষয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ঢাকা মহানগর উত্তর কার্যালয়ের উপপরিচালক শামীম আহম্মেদ সমকালকে বলেন, অভিযান চালানো হয়। মামলাও হয়েছে বেশ কিছু। আবার অভিযান চালাব। 

বনানী থানার ওসি রাসেল সরোয়ার বলেন, বস্তি এলাকাকে তিনটি ভাগে ভাগ করে পুলিশ কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে। তাদের কাজ মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো। গত সোমবারও গাঁজাসহ দু’জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: হ র ইন ব ক র

এছাড়াও পড়ুন:

সব্যসাচী কাজী মোতাহার হোসেন বিজ্ঞান ও শিল্পের মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন

প্রথিতযশা অধ্যাপক ও পরিসংখ্যানবিদ কাজী মোতাহার হোসেন ছিলেন একজন সব্যসাচী মানুষ। তিনি নিজের কাজের মাধ্যমে বিজ্ঞান ও শিল্পের মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন। তাঁর ঐতিহ্য শিক্ষার্থীদের ধারণ করতে হবে।

জ্ঞানতাপস কাজী মোতাহার হোসেনের ১২৮তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আজ বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তারা এ কথাগুলো বলেন।

অনুষ্ঠানে স্মারক বক্তৃতা, বৃত্তি, পদক, পুরস্কার ও সনদ দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানের যৌথ আয়োজক কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগ এবং পরিসংখ্যান গবেষণা ও শিক্ষণ ইনস্টিটিউট।

অনুষ্ঠানে ‘যুগলের বন্ধন: কাজী নজরুল ইসলাম-কাজী মোতাহার হোসেন’ শীর্ষক স্মারক বক্তৃতা দেন অধ্যাপক ভীষ্মদেব চৌধুরী। তিনি দুই বন্ধুর সম্পর্কের রসায়নের নানা দিক তুলে ধরেন।

প্রধান অতিথি বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, এই অনুষ্ঠানের দুটো প্রাপ্তি আছে। প্রথমত, মানুষের অবদান ও মেধাকে স্বীকার করা হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, এই উপমহাদেশের একজন প্রথিতযশা সব্যসাচী মানুষের ঋণ স্বীকার করা হচ্ছে।

কাজী মোতাহার হোসেন যেকোনো বিবেচনায় একজন দার্শনিক বলে উল্লেখ করেন নিয়াজ আহমেদ খান। তিনি বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন বিজ্ঞান ও শিল্পের মধ্যে মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন। প্রথম সারির পরিসংখ্যানবিদ, বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা ছাড়াও তিনি অনেকগুলো সামাজিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন, প্রভাব বিস্তার করেছেন। একজন মানুষের ছোট জীবদ্দশায় এত গুণ সন্নিবেশিত করা কঠিন। কিন্তু তিনি তা করে দেখিয়েছেন।

সবাইকে নিয়ে চলা, প্রতিষ্ঠান তৈরি করা, নিজের জগতের বাইরে নানা কিছুতে হাত বাড়িয়ে দেওয়ার মতো ঐতিহ্য কাজী মোতাহার হোসেন করে গেছেন বলে উল্লেখ করেন নিয়াজ আহমেদ খান। তিনি বলেন, তাঁর সম্মানে যাঁরা আজ স্বীকৃতি পেলেন, তাঁরা এই ঐতিহ্যকে ধারণ করবেন। এটা (বিশ্ববিদ্যালয়) যে সামাজিক প্রতিষ্ঠান, সে বার্তা দেবেন। যেসব শিক্ষার্থী সম্মাননা পাচ্ছেন, তাঁদের ছোট প্রোফাইল তৈরি করে ওয়েবসাইটে তুলে দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশনের সভাপতি অধ্যাপক আবদুল মাজেদ বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন একজন সব্যসাচী মানুষ ছিলেন। বিজ্ঞানের এমন কোনো দিক নেই, যেখানে তাঁর পদচারণা ছিল না। তিনি দাবা খুব পছন্দ করতেন। দাবা খেলার কথা শুনলে তিনি ছুটে যেতেন। কাজী মোতাহার হোসেনকে নিয়ে তাঁর শোনা নানা গল্প তিনি স্মৃতিচারণা করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক জাফর আহমেদ খান বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন পরিসংখ্যান চর্চার পথিকৃৎ ছিলেন। বিজ্ঞান, দাবাচর্চারও পথিকৃৎ ছিলেন। এমন কোনো পুরস্কার নেই যে, তিনি পাননি। তাঁর দেখানো পথে যেন শিক্ষার্থীরা নিজেদের আলোকিত করতে পারেন।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী রওনাক হোসেন। এই আয়োজনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের বিভিন্ন বর্ষের সেরা শিক্ষার্থীদের বই, নগদ অর্থ ও সনদ তুলে দেওয়া হয়। এ ছাড়া কাজী মোতাহার হোসেনকে নিয়ে আয়োজিত রচনা প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • উপদেষ্টা আসিফের অনুসারীদের সঙ্গে বিএনপির কর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনায় মামলা হয়নি
  • উপদেষ্টা আসিফের সমর্থকদের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া
  • মুরাদনগরে উপদেষ্টা আসিফের অনুসারীদের সঙ্গে বিএনপির নেতা-কর্মীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, আহত ৩৫
  • বন্দরে ডেভিল হান্ট অভিযানে ছাত্রলীগ নেতা আয়াত গ্রেপ্তার  
  • রাবিতে আ.লীগ ট্যাগ দিয়ে চিকিৎসা কর্মীকে বিবস্ত্র করে মারধর
  • ইরানের সঙ্গে সংঘাত: ইসরায়েলকে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা দিতে সৌদি সরকারকে অনুরোধ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র
  • সিরিজের শেষ ম্যাচে নেই স্টোকস, দায়িত্বে পোপ
  • সব্যসাচী কাজী মোতাহার হোসেন বিজ্ঞান ও শিল্পের মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন
  • মুরাদনগরে দুই সন্তানসহ নারীকে হত্যায় বিএনপি নেতা গ্রেপ্তার, পরিবার বলছে ষড়যন্ত্র
  • কুমিল্লায় ট্রিপল মার্ডার মামলায় বিএনপি নেতা গ্রেপ্তার