Samakal:
2025-11-03@11:00:42 GMT

রক্তে রঞ্জিত ভালোবাসা!

Published: 13th, February 2025 GMT

রক্তে রঞ্জিত ভালোবাসা!

যুবকরা বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হলে দক্ষ ও মনোযোগী সৈনিক হয়ে উঠতে পারে না– এই যুক্তিতে তৃতীয় শতকে রোমের শাসক দ্বিতীয় ক্লডিয়াস বিয়ে নিষিদ্ধ করেন। ভ্যালেন্টাইন নামে এক সাহসী বীর এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাখ্যান করেন। গোপনে যুবক-যুবতীদের বিয়ের বন্দোবস্ত করতেন তিনি। ক্লডিয়াস এ খবর জানতে পারেন। ভ্যালেন্টাইনকে কারাগারে পাঠিয়ে রাষ্ট্রীয় আইন অমান্যের দায়ে মৃত্যুদণ্ড দেন। কথিত আছে, ভ্যালেন্টাইন কারাগারে অবস্থানকালে জেলারের মেয়ের প্রেমে পড়েন। মৃত্যুর আগে জেলারের কন্যাকে তিনি একটি চিঠি লেখেন। ১৪ ফেব্রুয়ারি তাঁর ফাঁসি হয়। 


ভ্যালেন্টাইন একজন খ্রিষ্ট ধর্ম প্রচারক ছিলেন। শাসক দ্বিতীয় ক্লডিয়াস কারাবন্দি ভ্যালেন্টাইনকে দুটো প্রস্তাব দিয়েছিলেন– ১.

খ্রিষ্ট ধর্ম ত্যাগ করো। ২. কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চাও। ভ্যালেন্টাইন দুটো প্রস্তাবই প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। তাঁর সেই সাহসকে সম্মান জানাতে পরে পোপ গ্লসিয়াস কারাগারে ভ্যালেন্টাইন যেখানে ছিলেন সেই স্থানটিকে গির্জায় পরিণত করেন। একই সঙ্গে ১৪ ফেব্রুয়ারি ‘ভ্যালেন্টাইন ডে’ পালনের জন্য স্বধর্মের অনুসারীদের প্রতি আহ্বান জানান। যদিও দিবসটি ঘিরে এখন বাস্তবে চলছে রমরমা বাণিজ্য।
আছে ফুল নিয়ে বাণিজ্য, তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে কার্ড, জুয়েলারি, চকলেট। এসব বাবদ শুধু আমেরিকাতে এই দিনে প্রায় ২৫.৮ বিলিয়ন ডলার ব্যয় হয়। বাংলাদেশেও এই ঢেউ আছড়ে পড়েছে নব্বই দশকে। এর আড়ালে হারিয়ে যেতে বসেছে এক ভিন্ন ভালোবাসার গল্প, এক লড়াকু প্রেমিকের আত্মদান। 
২ 
১৯৮৩ সালের এই ১৪ ফেব্রুয়ারিতেই ঢাকা শহরে ঘটেছিল আরেক আত্মদানের ঘটনা। তার আগের বছর ২৪ মার্চ জোরপূর্বক ক্ষমতা দখল করে সামরিক একনায়ক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। তাঁর শিক্ষামন্ত্রী ড. মজিদ খানের নেতৃত্বে একটি শিক্ষা কমিশন গঠিত হয়েছিল। সে কমিশন প্রস্তাব করে যে, উচ্চশিক্ষা হবে খুবই সীমিতসংখ্যক শিক্ষার্থীর জন্য। ৫০ শতাংশ ব্যয় বহন করতে পারবে যারা, তারা উচ্চশিক্ষা পাবে। এই ঘোষণা স্পষ্টতই ছিল রাষ্ট্রে বিরাজমান বৈষম্যকে স্থায়ী করার অপচেষ্টা। তবে শিক্ষার্থীরা তা মেনে নেয়নি। 


এর বিরুদ্ধে ১৯৮৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা থেকে হাজার হাজার শিক্ষার্থীর মিছিল সচিবালয় অভিমুখে যাত্রা করেছিল। দোয়েল চত্বর পেরিয়ে মিছিল হাইকোর্টের সামনে পুলিশি বাধার সম্মুখীন হয়। বিনা উস্কানিতে পেটুয়া পুলিশ বাহিনী বেপরোয়া হিংস্র নেকড়ের মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর। চলে লাঠিচার্জ, টিয়ার শেল ও গুলি বর্ষণ। প্রাণ হারান জাফর, জয়নাল, দিপালী সাহাসহ অনেকে। গণহারে গ্রেপ্তার চলে। সরকারি প্রেস নোটে ১ হাজার ৩৩১ জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছিল।


শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের উত্তাল তরঙ্গ ছড়িয়ে পড়ে প্রতিটি শহরে, থানায়। দীর্ঘদিনের চাপা পড়া ক্ষোভের স্ফুলিঙ্গ শিক্ষার্থীদের হাতেই প্রথম জ্বলে ওঠে। চট্টগ্রামে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনেও পুলিশ গুলি চালায়। গুলিতে নিহত হন মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী কাঞ্চন। কাঞ্চনের মৃত্যু বারুদে আগুন দেওয়ার মতো বিস্ফোরণ তৈরি করেছিল। 
শেষমেশ জনমতের চাপে ওই শিক্ষা কমিশনের প্রতিবেদন বাতিল করে স্বৈরাচারী শাসক। তবে ওই আন্দোলন অচিরেই সামরিক শাসনবিরোধী গণতন্ত্রের আন্দোলনে রূপ নেয়।  আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পাশাপাশি বাম দলগুলোও মাঠে নামে। তৈরি হয় প্রথমে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৫ দলীয় জোট এবং বিএনপি নেতৃত্বাধীন ৭ দলীয় জোট। পরবর্তী সময়ে ১৫ দলীয় জোট থেকে বেরিয়ে বামপন্থিরা গড়ে তোলে ৫ দলীয় জোট। চলে ৮ দল, ৭ দল ও ৫ দলের যুগপৎ ধারার আন্দোলন; যা ১৯৯০ সালে প্রলয়ঙ্করী এক গণঅভ্যুত্থানে পরিণত হয়ে এরশাদের অবৈধ শাসনের অবসান ঘটায়। সাময়িক সময়ের জন্য হলেও আন্দোলনের অন্যতম শহীদ নূর হোসেনের আকাঙ্ক্ষা অনুসারে মুক্তি পায় গণতন্ত্র, নিপাত যায় স্বৈরাচার।


তবে ১৯৯০-এর গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরাচার নিপাত গেলেও স্বৈরতন্ত্র নিঃশেষ হযনি। ১৯৯৫-৯৬ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার আন্দোলন, ২০০৭-০৮ সালে ১/১১ রূপী ছদ্মবেশী সেনাশাসন এবং সর্বশেষ ২০২৪-এর শিক্ষার্থী-জনতার অভ্যুত্থান সে কথাই বলে। বর্তমানে রাষ্ট্র একটি ক্রান্তিকালের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এখনও নিশ্চিত নয়, সেই ক্লডিয়াসের মতো কোনো স্বৈরশাসক ভবিষ্যতে এখানে আবারও চেপে বসবে কিনা। এরশাদের মতো কোনো সামরিক শাসকও যে ফিরে আসাবে না, তার নিশ্চয়তা দেওয়া যায় না। ফলে প্রতিবছর ১৪ ফেব্রুয়ারি এখানে যেমন স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস প্রাসঙ্গিকভাবেই পালিত হয়, তেমনি ভ্যালেন্টাইন ডে পালনও অপ্রয়োজনীয় নয়।


আমাদের প্রত্যাশা স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবসের মতো ‘ভ্যালেন্টাইন ডে’ও যথাযথ ভাবগাম্ভীর্য নিয়ে পালিত হবে। বাণিজ্য নয়, মানুষের অধিকার সুরক্ষার প্রতিজ্ঞা এতে প্রাধান্য পাক। সবার মুখে হাসি ফোটানোর প্রেরণাকে দৃঢ় করতে মানুষে মানুষে ভালোবাসার সানাই বেজে উঠবে– এটিই কামনা।   


রিয়াজ মাহমুদ: কবি ও প্রাবন্ধিক

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ভ য ল ন ট ইন ১৪ ফ ব র য় র দল য় জ ট র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

৪২ বছর পর নিউ জিল‌্যান্ডের কাছে হোয়াইটওয়াশ ইংল‌্যান্ড

১৯৮৩ সাল আবার মনে করাল ইংল‌্যান্ড। নিউ জিল‌্যান্ডে গিয়ে সেবার ইংল‌্যান্ড ৩-০ ব‌্যবধানে ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হয়েছিল। ৪২ বছর পর একই অভিজ্ঞতা হলো এবার তাদের।

আগেই সিরিজ নিশ্চিত করা নিউ জিল‌্যান্ড এবার আরো চেপে ধরেছিল ইংল‌্যান্ডকে। তবুও লড়াই করে ওয়েলিংটনে অতিথিরা ২২২ রানের পুঁজি পায়। হোয়াইটওয়াশের মিশনে থাকা নিউ জিল‌্যান্ডের ব‌্যাটিং তেমন ভালো হয়নি। লো স্কোরিং ম‌্যাচ জমে উঠে। শেষ পর্যন্ত ৪৪.৪ ওভারে হাতে ২ উইকেট রেখে লক্ষ‌্যে পৌঁছে যায় কিউইরা। ১৯৮৩ সালের পর প্রথম নিউ জিল‌্যান্ড ইংল‌্যান্ডকে ওয়ানডেতে হোয়াইটওয়াশ করল।

টস হেরে ব‌্যাটিং করতে নেমে ইংল‌্যান্ড চরম বিপর্যয়ে পড়ে। ৯৭ রানে ৬ উইকেট হারায় তারা। ১০২ রানে তাদের শেষ স্বীকৃত ব‌্যাটসম‌্যান জস বাটলার (৩৮) আউট হন। তখন ধারণা করা হচ্ছিল অল্পতেই গুটিয়ে যাবে সাবেক বিশ্ব চ‌্যাম্পিয়নরা।

কিন্তু সেখানে ঢাল হয়ে দাঁড়ান ব্রাইডন চার্স ও জেমি ওভারটন। দুজন ৫৮ রানের জুটি গড়েন। যেখানে ব্রাইডন আক্রমণাত্মক ক্রিকেট উপহার দিয়ে ৪ ছক্কা ও ১ চারে ৩০ বলে ৩৬ রান করেন। ইংল‌্যান্ডের সর্বোচ্চ রানের জুটি আসে তাদের ব‌্যাটেই।

শেষ ব‌্যাটসম‌্যান হিসেবে ওভারটন আউট হন ৪১তম ওভারে। ৬২ বলে ১০ চার ও ২ ছক্কায় ৬৮ রান করেন ডানহাতি ব‌্যাটসম‌্যান। এর আগে জেমি স্মিথ (৫), বেন ডাকেট (৮), জো রুট (২) ও হ‌্যারি ব্রুক (৬) দ্রুত আউট হন। দলের প্রথম ব‌্যাটসম‌্যান হিসেবে দুই অঙ্কের ঘরে যেতে পারেন পাঁচ নম্বরে নামা জ‌্যাকব মিচেল। তবুও ১১ রানের বেশি করতে পারেননি তিনি।

নিউ জিল‌্যান্ডের বোলিং ছিল নিয়ন্ত্রিত। ৬৪ রানে ৪ উইকেট নিয়ে সেরা ছিলেন ব্লায়ার টিকনার। ৩ উইকেট পেয়েছেন জ‌্যাকব টাফি। ২টি পেয়েছেন জ‌্যাক ফলকস।

জবাব দিতে নেমে উদ্বোধনী জুটিতে ৭৮ রান পায় কিউইরা। ডেভন কনওয়ে ৩৪ ও রাচীন রাভিন্দ্রা ৪৬ রান করেন। এরপর ছন্দ হারিয়ে ব‌্যাকফুটে চলে যায় স্বাগতিকরা। কিন্তু ডার্ল মিচেলের অনবদ‌্য ৪৪ ও শেষ দিকে মিচেল স্টানারের ২৭ রানে নিউ জিল‌্যান্ড লড়াইয়ে ফেরে। শেষ দিকে জ‌্যাক ফলকসের ১৪ ও ব্লায়ার টিকনারের ১৮ রানে নিউ জিল‌্যান্ডের জয় নিশ্চিত হয়।

ইংলিশদের হয়ে ২টি করে উইকেট নেন ওভারটন ও স‌্যাম কারান।

এই সিরিজে ইংল‌্যান্ডের ব‌্যাটিং একটুও ভালো হয়নি। প্রথম ম‌্যাচে ২২৩ ও দ্বিতীয়টিতে ১৭৫ রানে গুটিয়ে যায়। নিউ জিল‌্যান্ড জয় পায় যথাক্রমে ৪ ও ৫ উইকেটে। শেষ ম‌্যাচে খানিকটা প্রতিদ্বন্দ্বীতা গড়লেও হোয়াইটওয়াশ এড়াতে পারেনি ইংল‌্যান্ড।

বল হাতে ৪ উইকেট ও ব‌্যাটিংয়ে ১৮ রান করে ম‌্যাচ সেরা নির্বাচিত হন টিকনার। ১৭৮ রান করে সিরিজ সেরা ডার্ল মিচেল।

ঢাকা/ইয়াসিন 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ৪২ বছর পর নিউ জিল‌্যান্ডের কাছে হোয়াইটওয়াশ ইংল‌্যান্ড