দেশের অর্থনীতির অবস্থা যা–ই হোক না কেন, ক্রিকেটে টাকা–পয়সা বেশ ভালোই। চ্যাম্পিয়নস ট্রফি খেলে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল আরও বড় অঙ্কের টাকা কামিয়ে নিতে পারে। কীভাবে? সহজ হিসাব। চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জিতে। বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক নাজমুল হোসেন চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে খেলতে স্কোয়াড নিয়ে দেশ ছাড়ার আগে শিরোপা জয়ের আশার কথা শুনিয়েছেন।

তা চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জিতলে বাংলাদেশ দল প্রাইজমানি হিসেবে পাবে কত? ২২ লাখ ৪০ হাজার ডলার, যা টাকার হিসাবে ২৭ কোটি ৬ লাখ ৪৬ হাজার ৪২৪ টাকা। ব্যাপারটা এমন নয় যে শুধু বাংলাদেশ জিতলেই এই প্রাইজমানি পাবে, যে দল চ্যাম্পিয়ন হবে সেই দলই এই প্রাইজমানি পাবে। আজ চ্যাম্পিয়নস ট্রফির প্রাইজমানি প্রকাশ করেছে আইসিসি।

চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ফাইনালে হেরে যাওয়া দল প্রাইজমানি হিসেবে চ্যাম্পিয়ন দলের অর্ধেক অর্থ পাবে—১১ লাখ ২০ হাজার ডলার (প্রায় ১৩ কোটি ৫৩ লাখ ২১২ টাকা)। সেমিফাইনালে বাদ পড়ে যাওয়া দুটি দলের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৫ লাখ ৬০ হাজার ডলার করে ( প্রায় ৬ কোটি ৭৬ লাখ ৬১ হাজার ৬০৬ টাকা)।

চ্যাম্পিয়নস ট্রফি এবার হতে যাচ্ছে ৬ বছর পর। ২০১৭ সালে সর্বশেষ আসরের চেয়ে এবার ৫৩ শতাংশ প্রাইজমানি বেড়েছে এই টুর্নামেন্টের।

ধরুন বাংলাদেশ সেমিফাইনালেও উঠতে পারল না; তবু কিন্তু অর্থ আয়ের সুযোগ আছে। গ্রুপ পর্বে প্রতিটি জয়ের জন্য প্রাইজমানি ৩৪ হাজার ডলার (৪১ লাখ ৮ হাজার ২৬ টাকা)। গ্রুপ পর্বে বাংলাদেশ খেলবে ভারত, পাকিস্তান ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে।

আয়ের সুযোগ আছে আরও। আট দলের এই টুর্নামেন্টে পঞ্চম ও ষষ্ঠ দল প্রাইজমানি হিসেবে পাবে ৩ লাখ ৫০ হাজার ডলার ( প্রায় ৪ কোটি ২২ লাখ ৮৮ হাজার টাকা) করে। সপ্তম ও অষ্টম দল প্রাইজমানি হিসেবে পাবে ১ লাখ ৪০ হাজার ডলার (প্রায় ১ কোটি ৬৯ লাখ ১৫ হাজার ৪০১ টাকা) করে। এ ছাড়া প্রতিটি দল টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণের জন্য পাবে ১ লাখ ২৫ হাজার ডলার (প্রায় ১ কোটি ৫১ লাখ ৩ হাজার ৩৭ টাকা) করে।

১৯ ফেব্রুয়ারি শুরু হবে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি। পাকিস্তান ও দুবাইয়ে ম্যাচগুলো অনুষ্ঠিত হবে। ১৯৯৬ সালের পর এই প্রথম আইসিসির কোনো ইভেন্ট আয়োজন করবে পাকিস্তান।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

সাকিবের পথে হাঁটছেন মিরাজ

সাকিব আল হাসানের সঙ্গে নিজের তুলনাকে মেহেদী হাসান মিরাজ হয়তো উপভোগই করেন। কারণ, তাঁর স্বপ্ন সাকিবের মতো বিশ্বনন্দিত অলরাউন্ডার হয়ে ওঠা। সেই পথে বোধ হয় গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে টেস্টে দেশে-বিদেশে সম্প্রতি ভালো করছেন। পাকিস্তানে দারুণ প্রশংসিত ছিলেন অলরাউন্ড পারফরম্যান্স করে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই টেস্টের হোম সিরিজে উভয় টেস্টে নিজেকে ছাপিয়ে গেলেন। সিলেটের হারের ম্যাচেও ১০ উইকেট ছিল তাঁর। চট্টগ্রামে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট নিয়ে সাকিব ও সোহাগ গাজীর কাতারে নাম লেখালেন। মূলত মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ইনিংস ব্যবধানে টেস্ট জেতা সম্ভব হয়। 

গতকাল শতকের ঘরে যেতে কম কসরত করতে হয়নি তাঁর। নব্বইয়ের ঘরে গিয়ে তো অনিশ্চয়তায় পড়ে গিয়েছিলেন হাসানের আউটের শঙ্কায়। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হওয়ায় দ্বিতীয় শতকের দেখা পান তিনি। ২০২১ সালে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি ছিল মিরাজের। গতকালের পারফরম্যান্স নিয়ে টাইগার এ অলরাউন্ডার বলেন, ‘ব্যাটিংয়ের সময় চেষ্টা করেছিলাম ২ রান নিয়ে ১০০ রানে যেতে। সেভাবে দৌড় দিয়েছিলাম। কিন্তু ফিল্ডারের হাতে বল চলে গিয়েছিল (হাসি)। তার পর তো আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছিলাম। হাসান অনেক ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তানজিমও ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তাইজুল ভাইও। এই তিনজনকেই অনেক অনেক ধন্যবাদ। কারণ, ওদের জন্যই আমি ১০০ রান করতে পেরেছি।’ 

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে করা সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট প্রাপ্তিকে নিজের সেরা পারফরম্যান্স দাবি মিরাজের, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে ১০০ করেছিলাম, ৩ উইকেট নিয়েছিলাম। অল্পের জন্য ৫ উইকেট হয়নি। হলে ভালো লাগত। ওই ম্যাচ হেরেছিলাম এই মাঠে। সে জিনিসটা মাথায় ছিল। ভালো লাগছে ম্যাচটি জিতেছি।’ মিরাজ ১৬২ বলে ১১টি চার ও একটি ছয় মেরে ১০৪ রান করেন। ২১ ওভারে ৩২ রান দিয়ে নেন পাঁচ উইকেট।

টেস্টে এ রকম অলরাউন্ড পারফরম্যান্স বাংলাদেশে আর দু’জনের আছে। সাকিব আল হাসান দু’বার ম্যাচে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট পেয়েছেন ২০১১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে মিরপুরে আর ২০১৪ সালে খুলনায়। সোহাগ গাজী নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট শিকার করেন চট্টগ্রামে। সেই মাইলফলক ছোঁয়া মিরাজকে সম্প্রতি অলরাউন্ডার ক্যাটেগরিতে ফেলা হয়। সাকিবের বিকল্প ভাবা হয় তাঁকে এখন। 

এ ব্যাপারে মিরাজের অভিমত, ‘দেখেন একটা জিনিস, যখন সাকিব ভাই ছিলেন, ভিন্ন রোল ছিল। এখন ভিন্ন রোল। যেহেতু টিম ম্যানেজমেন্ট, সবাই ব্যাটিংয়ে আস্থা রাখে। আমিও ভেবেছি আমার ব্যাটিংটা গুরুত্বপূর্ণ। এখন হয়তো আমি লিডিং রোল প্লে করছি, আগে সাকিব ভাই করত। এখন আমাদের দায়িত্ব আরও বেশি।’ 

সিলেটে দুই ইনিংসে পাঁচ উইকেট করে নিয়েও দলকে জেতাতে পারেননি মিরাজ। চট্টগ্রামে সাদমান, তাইজুলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ম্যাচ জয়ের নায়ক হন। এই সাফল্য নিয়ে বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে, প্রথম ম্যাচ হারার পর যেভাবে কামব্যাক করেছি, এটা খুবই দরকার ছিল। আমাদের সবাই ভেবেছিল, আমরা ভালো করব।’ মিরাজ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন কোচিং স্টাফ ও সতীর্থের কাছে। আর তাঁর কাছে কৃতজ্ঞতা পুরো দলের।

সম্পর্কিত নিবন্ধ