রিট খারিজ, বাংলাদেশ ব্যাংক আইন মেনেই ‘নগদে’ প্রশাসক নিয়োগ দিয়েছে: হাইকোর্ট
Published: 16th, February 2025 GMT
মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা (এমএফএস) প্রতিষ্ঠান ‘নগদ’ পরিচালনায় প্রশাসক নিয়োগ নিয়ে করা রিটটি গ্রহণযোগ্য নয় বলে তা খারিজ করে রায় (রুল ডিসচার্জ) দিয়েছেন হাইকোর্ট।
বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ রোববার এ রায় দেন। নগদ বাংলাদেশ ডাক বিভাগের এজেন্ট উল্লেখ করে রায়ে আদালত বলেন, আইন বাস্তবায়ন করেই বাংলাদেশ ব্যাংক প্রশাসক নিয়োগ দিয়েছে।
রায়ের পর বাংলাদেশ ব্যাংকের আইনজীবী বি এম ইলিয়াস কচি প্রথম আলোকে বলেন, ‘নগদ ডাক বিভাগের এজেন্ট বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রশাসক নিয়োগের আগে কারণ দর্শানোর জন্য ডাক বিভাগকে নোটিশ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ডাক বিভাগ নোটিশের জবাব দেয়। এ ছাড়া নগদের কার্যক্রম পরিদর্শন করে বাংলাদেশ ব্যাংক অনিয়ম পায়। এসবের ভিত্তিতে গ্রাহকদের স্বার্থেই প্রশাসক নিয়োগ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এ ক্ষেত্রে রিট আবেদনকারীকে কোনো নোটিশ দেওয়া হয়নি বলে দাবি করা হয় রিটে। যেহেতু নগদ ডাক বিভাগের এজেন্ট, তাই রিট আবেদনকারীর সংক্ষুব্ধতা থাকলে তিনি সেখানে আবেদন করতে পারতেন, যা তিনি করেননি। এসব দিক বিবেচনায় রিট গ্রহণযোগ্য না হওয়ায় তা খারিজ করে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। এর ফলে বাংলাদেশ ব্যাংককের নগদে প্রশাসক নিয়োগ বৈধ বলে প্রমাণিত হলো।’
গত বছরের ২১ আগস্ট বাংলাদেশ ব্যাংক নগদে প্রশাসক নিয়োগ বিষয়ে অভ্যন্তরীণ আদেশ জারি করে। এতে বলা হয়, ডাক বিভাগের ডিজিটাল আর্থিক সেবা ‘নগদে’ চট্টগ্রাম অফিসের পরিচালক মুহম্মদ বদিউজ্জামান দিদারকে এক বছরের জন্য প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ করা হলো।
প্রশাসক নিয়োগের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে নগদের স্বতন্ত্র পরিচালক মো.
২০০৪ সালের পরিশোধ ও নিষ্পত্তিব্যবস্থা আইনের ৩১(১) ও (২) ধারা প্রতিপালন না করে ‘নগদে’ প্রশাসক নিয়োগের গত ২১ আগস্টের মেমো (আদেশ) কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, রুলে তা জানতে চাওয়া হয়।
রুল বিচারাধীন থাকা অবস্থায় প্রশাসকের নীতিগত কার্যক্রম পরিচালনা নিয়ে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে রিট আবেদনকারী সম্পূরক আবেদন করেন। এর শুনানি নিয়ে গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর হাইকোর্ট প্রশাসকের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কার্যক্রম পরিচালনায় পক্ষগুলোকে অন্তর্বর্তী সময়ের জন্য স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে নির্দেশ দেন। পরে মেয়াদ বাড়ানো হয়। চূড়ান্ত শুনানি শেষে রিটটি গ্রহণযোগ্য নয় বলে রুল ডিসচার্জ (খারিজ) করে আজ রায় দেন আদালত।
আদালতে রিট আবেদনকারীর পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জমির উদ্দিন সরকার ও মুস্তাফিজুর রহমান খান এবং আইনজীবী আবুল কালাম খান ও মো. জামিলুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী বি এম ইলিয়াস কচি ও আইনজীবী সাইফুল ইসলাম।
রায়ের পর রিট আবেদনকারীর অন্যতম আইনজীবী মো. জামিলুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, রিট আবেদনকারীর সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
প্রধান উপদেষ্টা একটি দলের প্রতি বিশেষ অনুরাগ প্রকাশ করেছেন: জামায়াতে ইসলামী
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠককে স্বাভাবিক বললেও, দুইজনের যৌথ বিবৃতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে জামায়াতে ইসলামী।
শনিবার জামায়াতের নির্বাহী পরিষদের বৈঠকের পর বিবৃতিতে দলটি বলেছে, ‘যৌথ বিবৃতি প্রদান বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির ব্যত্যয় বলে আমরা মনে করি। এর মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা একটি দলের প্রতি বিশেষ অনুরাগ প্রকাশ করেছেন, যা তার নিরপেক্ষতা ক্ষুণ্ন করেছে।’
দলের আমির ডা. শফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে বিবৃতিতে বলা হয়েছে। এতে আরও বলা হয়, ‘১৩ জুন লন্ডনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মাদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে, তাকে জামায়াত খুবই স্বাভাবিক মনে করে। ইতোমধ্যে প্রধান উপদেষ্টা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে পৃথক পৃথকভাবে এবং যৌথভাবে বৈঠক করেছেন।’
লন্ডন বৈঠকের যৌথ বিবৃতি নিয়ে প্রশ্ন তুলে জামায়াত বলেছে, ‘গত ৬ জুন জাতির উদ্দেশে ভাষণে ২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করেন প্রধান উপদেষ্টা। তার এই ঘোষণার পর লন্ডন সফরে একটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক শেষে বিদেশে যৌথ প্রেস ব্রিফিং এবং বৈঠকের বিষয় সম্পর্কে যৌথ বিবৃতি প্রদান করা বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির ব্যত্যয় বলে জামায়াত মনে করে। এর মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা একটি দলের প্রতি বিশেষ অনুরাগ প্রকাশ করেছেন, যা তার নিরপেক্ষতা ক্ষুণ্ন করে।’
লন্ডন বৈঠকের যৌথ বিবৃতিতে মধ্য ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের সম্ভাবনার কথা বলা হয়েছে। জামায়াত এ প্রসঙ্গে বিবৃতিতে বলেছে, ‘আমরা মনে করি দেশে ফিরে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে এ ব্যাপারে প্রধান উপদেষ্টার অভিমত প্রকাশ করাই সমীচীন ছিল।’
জামায়াত ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের বিরোধী নয় বিবৃতিতে স্পষ্ট করা হয়। এতে বলা হয়েছে, ‘গত ১৬ এপ্রিল জামায়াত আমির দলীয় দৃষ্টিভঙ্গী তুলে ধরে জানিয়েছিলেন ২০২৬ সালের রসজানের পূর্বে ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচন হতে পারে।’
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘জামায়াত মনে করে সরকার প্রধান হিসেবে কোনো একটি দলের সঙ্গে যৌথ প্রেস ব্রিফিং নৈতিকভাবে কিছুতেই যথার্থ নয়। প্রধান উপদেষ্টা একটি দলের সঙ্গে বৈঠকের পর যৌথ বিবৃতি দেওয়ায় আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হওয়ার বিষয়ে জনগণের মধ্যে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। যেখানে বাংলাদেশে অনেকগুলো রাজনৈতিক দল সক্রিয়ভাবে বিদ্যমান, সেখানে শুধু একটি দলের সঙ্গে আলাপে দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা সঠিক বলে বিবেচিত হতে পারে না। জামায়াত আশা করে, অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য বর্তমান অন্তর্বতীকালীন সরকার নিরপেক্ষ থেকে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করবে এবং বিচার ও সংস্কারের ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ নিশ্চিত করবে। সরকারের নিরপেক্ষতা এবং অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিয়ে যে সংশয় দেখা দিয়েছে তা নিরসনে প্রধান উপদেষ্টার ভূমিকা জাতির সামনে স্পষ্ট করার জন্য বাংলাদেশ জামায়াতের নির্বাহী পরিষদ অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে।’
এর আগে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকের দিন জামায়াত আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া না জানালেও দলটির শীর্ষস্থানীয় নেতারা সমকালকে বলেছিলেন, ‘জামায়াতই প্রথম বলেছে, রমজানের আগে নির্বাচন হওয়া উচিত। তাই নির্বাচনের যে নতুন সময়সীমা বলা হচ্ছে, এ নিয়ে আপত্তির কিছু নেই। কিন্তু সরকার যেভাবে শুধু বিএনপির সঙ্গে বৈঠক করে সময়সীমা নির্ধারণ করেছে, তা অগ্রহণযোগ্য।’
জামায়াত নেতারা শুক্রবার রাতেই সমকালকে বলেছিলেন, যৌথ বিবৃতির মাধ্যমে বোঝানো হচ্ছে– সরকার এবং বিএনপি সমশক্তি। এর পর আর সরকারের নিরপেক্ষতা থাকে না। এ বক্তব্য ড. ইউনূসকে জানাবে জামায়াত।