বিদ্যুতে ভর্তুকির পরিমাণ ৬৬ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত হচ্ছে
Published: 17th, February 2025 GMT
বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি ২২ হাজার কোটি টাকা বাড়ানো হয়েছে। শতকরা হিসেবে এর পরিমাণ ৫৫ ভাগ। চলতি অর্থবছরের বাজেটে এখাতে ভর্তুকি ধরা রয়েছে ৪০ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু বিদ্যুৎ খাতে বিদ্যমান বকেয়া বিল পরিশোধ করার জন্য ভর্তুকির পরিমাণ ২২ হাজার কোটি টাকা বাড়ানো হয়েছে। ফলে চলতি ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকির পরিমাণ বাড়িয়ে ৬২ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত করা হচ্ছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিভাগের এক পরিসংখ্যানে দেখানো হয়েছে, বিদ্যুৎ ও গ্যাস খাতে পিডিবি ও পেট্রোবাংলার বকেয়া বেড়ে বর্তমানে প্রায় ৬৭ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে গত ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) এর বকেয়া জমেছে ৮ কোটি ডলার। পুরোনো বকেয়া ছাড়াও চলতি বছরের বিল পরিশোধে পিডিবি, পেট্রোবাংলা ও বিপিসি মিলে প্রায় ১ হাজার ১০০ কোটি ডলারের চাহিদা দিয়েছে। এর মধ্যে বিপিসি’র চাহিদা ৪২০ কোটি ডলারের বেশি।
এ বিষয়ে একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, “ভুল পরিকল্পনা ও ভ্রান্ত নীতির কারণে দেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ব্যাপক দেনার সৃষ্টি হয়েছে। দেশের এই খাতটি তিন বছর ধরে নিয়মিত বকেয়া বিল পরিশোধের চাপে আছে। অর্থ সঙ্কটে থাকায় বিল দিতে পারছে না পিডিবি ও পেট্রোবাংলা। আবার চাহিদামতো ডলার না পাওয়ায় বিদেশি কোম্পানির বিলও নিয়মিত পরিশোধ করা যাচ্ছে না। এদিকে আগামী মার্চে গরম পড়া শুরু হলে, তখন বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে যাবে। ফলে লোড-শেডিংও বাড়তে পারে। এ কারণে বিদেশি বিশেষ করে ভারতীয় কোম্পানি আদানির কাছ থেকে কেনা বিদ্যুৎতের বকেয়া বিল নিয়মিতভাবে পরিশোধ করার চেষ্টা করে যাচ্ছে সরকার । বিল বকেয়া থাকার কারণে আদানি বাংলাদেশকে গেল শীত মৌসুমে বিদ্যুৎ দেওয়ার পরিমান অর্ধেকে নামিয়ে আনে। তবে তারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছে আগামী গরমকালে তারা চুক্তি অনুযায়ী পুরোর বিদ্যুৎই বাংলাদেশে সরবরাহ করবে।”
অর্থ বিভাগ সূত্র জানায়, বিদ্যুতে ভর্তুকি কমিয়ে আনতে উৎপাদন ব্যয় কমিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে বিদ্যুৎ উৎপাদনে জ্বালানি তেলের পরিবর্তে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র ব্যবহার এবং বিদ্যুৎ ক্রয়ে ইতোপূর্বে সম্পাদিত চুক্তিগুলো পর্যালোচনার পাশাপাশি এনার্জি অডিট বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এসব উদ্যোগের ফলে চলতি অর্থবছরে বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রায় ১১ হাজার ৪৪৪ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
জানা গেছে, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে বিদ্যুতে ভর্তুকি আরও কমিয়ে আনতে আপাতত গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতর দাম বাড়ানো হচ্ছে না। তবে মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশের নিচে নেমে এলে তখন বিদ্যুৎ ও সারে মূল্য সমন্বয়ের বিষয়টি বিবেচনায় রাখা হয়েছে।
সূত্র জানায়, বিদ্যুৎ খাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন ২০১০’ বাতিল করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। একই সঙ্গে দেশিয় উৎস থেকে গ্যাস সরবরাহ বাড়ানোর লক্ষ্যে নতুন কূপ খননের মাধ্যমে দৈনিক ৬৪৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন বাড়ানোর কর্মপরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে এবং আগামী ২০২৮ সাল নাগাদ গ্যাসের দৈনিক উৎপাদন ১ হাজার ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট বাড়ানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে নতুন রিগ ক্রয়সহ বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এছাড়া গভীর সমুদ্রে তেল/গ্যাস অনুসন্ধানে ‘উৎপাদন বন্টন চুক্তি’ (পিএসসি) সম্পাদনে পুনরায় বিডিং রাউন্ড পরিচালনা হবে।
সূত্র জানায়, অন্যান্যের মধ্যে আগামীতে জ্বালানি তেলের সংরক্ষণ ও পরিশোধনের সক্ষমতা বাড়ানো এবং জ্বালানি সাশ্রয়ী আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর বৈদ্যুতিক গাড়ি ও যন্ত্র ব্যবহার উৎসাহিত করা হবে। এ জন্য আগামী বাজেটে এ সব কর রেয়াতসহ নানা সুবিধা দেওয়ার পরিকল্পনা করছে সরকার।
ঢাকা/টিপু
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র পর ম ণ পর শ ধ
এছাড়াও পড়ুন:
শিল্প খাতের উৎপাদন যেন ব্যাহত না হয়
গণ–অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করার পরও চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারেনি। তারা মাটির নিচে থাকা গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলন না করে জ্বালানি খাতকে আমদানিনির্ভর করার পাশাপাশি গোষ্ঠীবিশেষকে মোটা অঙ্কের কমিশন–বাণিজ্য করার সুযোগ দিয়েছিল।
অন্তর্বর্তী সরকার এখন পর্যন্ত জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নে টেকসই কোনো পদক্ষেপ নিয়েছে বলে জানা নেই। বরং তাদের নেওয়া কর্মসূচিতেও জন–অসন্তোষ প্রশমনের রাজনৈতিক প্রয়াস লক্ষ করা যাচ্ছে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান এবারের গ্রীষ্মে লোডশেডিং সীমিত রাখার কথা বলেছেন। সেটা যদি গ্যাসের উৎপাদন বাড়িয়ে করা হয়, দেশবাসী স্বাগতই জানাবে। সরকার শিল্প খাতে গ্যাসের সরবরাহ কমিয়ে বাসাবাড়ি বা অন্য খাতে বিদ্যুৎ সরবরাহ বাড়ানোর যে উদ্যোগ নিয়েছে, তাতে সমস্যা আরও বাড়বে। শিল্প খাতে গ্যাসের সরবরাহ কমানো মানে সেখানে উৎপাদন কমবে।
ইতিমধ্যে শিল্পপ্রতিষ্ঠানে গ্যাসের সরবরাহ কমানোয় উদ্বেগ জানিয়েছে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ)। জ্বালানি উপদেষ্টাকে পাঠানো চিঠিতে তারা বলেছে, কারখানাগুলোয় ন্যায্যতার ভিত্তিতে গ্যাসের সরবরাহ করা না হলেও উল্লেখযোগ্যসংখ্যক কারখানা বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এ কারণে আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা ও বোনাস পরিশোধে সংকট তৈরি করতে পারে বলেও শঙ্কা প্রকাশ করেছে সংগঠনটি।
বাংলাদেশ তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা) সূত্র বলছে, দেশে দিনে গ্যাসের চাহিদা ৩৮০ কোটি ঘনফুট। এখন সরবরাহ করা হচ্ছে ২৭০ কোটি ঘনফুট। এর মধ্যে ১০৫ কোটি ঘনফুট যাচ্ছে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোয়। বিদ্যুৎ খাত এখন সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পাচ্ছে। তাই আবাসিক ও শিল্প গ্রাহকের গ্যাস-সংকট বেড়েছে। গ্যাসের জোগান না বাড়িয়ে রেশনিং করে বা এক খাতে কমিয়ে, আরেক খাতে বাড়িয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার উদ্যোগ কোনো কাজে আসবে না বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন।
বিদ্যুৎ খাতে গ্যাস সরবরাহ বাড়ানো হয়েছে। এটা খুবই ভালো কথা। কিন্তু গ্যাসের উৎপাদন কিংবা আমদানি না বাড়াতে পারলে পরিস্থিতি আরও নাজুক হবে। অনেক জ্বালানিবিশেষজ্ঞ দেশে গ্যাস উৎপাদন বাড়ানোর কথা বলেছেন। সেটা তো রাতারাতি সম্ভব নয়। তথাকথিত সিস্টেম লস বা চুরি কমিয়ে কিছু গ্যাস বা বিদ্যুৎ হয়তো সাশ্রয় হবে। এ অবস্থায় এলএনজি ও জ্বালানি তেলের আমদানি বাড়াতে হবে; যাতে শিল্প খাতে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা যায়।
গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম নিয়েও সরকার চাপে আছে। আইএমএফ গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর জন্য চাপ দিচ্ছে। বর্তমানে পেট্রোবাংলা প্রতি ইউনিট গ্যাস বিক্রি করে পায় ২২ টাকা ৮৭ পয়সা। তাদের খরচ হচ্ছে গড়ে ২৭ টাকার বেশি—এটা সাধারণ গ্রাহকদের জন্য। এখানে সরকারকে ভর্তুকি দিতে হয়। কিন্তু শিল্পে প্রতি ইউনিট গ্যাস তারা বিক্রি করে ৩০ টাকায়; যেখানে ভর্তুকি দিতে হয় না।
জ্বালানি মন্ত্রণালয়কে সজাগ থাকতে হবে যাতে দেশের শিল্প খাত, বিশেষ করে তৈরি পোশাকশিল্পের উৎপাদন যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। জ্বালানি উপদেষ্টা গ্রাম ও শহরে লোডশেডিং ভাগ করে নেওয়ার কথা বলেছেন। খুবই আশার কথা। একই সঙ্গে তিনি যদি বলতেন, জনজীবনে লোডশেডিং কমানোর পাশাপাশি শিল্প খাতে গ্যাস সরবরাহও স্বাভাবিক থাকবে, তাতে শিল্পোদ্যোক্তারা আশ্বস্ত হতেন, দেশবাসীও।