বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি ২২ হাজার কোটি টাকা বাড়ানো হয়েছে। শতকরা হিসেবে এর পরিমাণ ৫৫ ভাগ।  চলতি অর্থবছরের বাজেটে এখাতে ভর্তুকি ধরা রয়েছে ৪০ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু বিদ্যুৎ খাতে বিদ্যমান বকেয়া বিল পরিশোধ করার জন্য ভর্তুকির পরিমাণ ২২ হাজার কোটি টাকা বাড়ানো হয়েছে। ফলে চলতি ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকির পরিমাণ বাড়িয়ে ৬২ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত করা হচ্ছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিভাগের এক পরিসংখ্যানে দেখানো হয়েছে, বিদ্যুৎ ও গ্যাস খাতে পিডিবি ও পেট্রোবাংলার বকেয়া বেড়ে বর্তমানে  প্রায় ৬৭ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে গত ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) এর বকেয়া জমেছে ৮ কোটি ডলার। পুরোনো বকেয়া ছাড়াও চলতি বছরের বিল পরিশোধে পিডিবি, পেট্রোবাংলা ও বিপিসি মিলে প্রায় ১ হাজার ১০০ কোটি ডলারের চাহিদা দিয়েছে। এর মধ্যে বিপিসি’র চাহিদা ৪২০ কোটি ডলারের বেশি।

এ বিষয়ে একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, “ভুল পরিকল্পনা ও ভ্রান্ত নীতির কারণে দেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ব্যাপক দেনার সৃষ্টি হয়েছে। দেশের এই খাতটি তিন বছর ধরে নিয়মিত বকেয়া বিল পরিশোধের চাপে আছে। অর্থ সঙ্কটে থাকায় বিল দিতে পারছে না পিডিবি ও পেট্রোবাংলা। আবার চাহিদামতো ডলার না পাওয়ায় বিদেশি কোম্পানির বিলও নিয়মিত পরিশোধ করা যাচ্ছে না। এদিকে আগামী মার্চে গরম পড়া শুরু হলে,  তখন বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে যাবে। ফলে লোড-শেডিংও বাড়তে পারে। এ কারণে বিদেশি বিশেষ করে ভারতীয় কোম্পানি আদানির কাছ থেকে কেনা বিদ্যুৎতের বকেয়া বিল নিয়মিতভাবে পরিশোধ করার চেষ্টা করে যাচ্ছে সরকার । বিল বকেয়া থাকার কারণে আদানি বাংলাদেশকে গেল শীত মৌসুমে বিদ্যুৎ দেওয়ার পরিমান অর্ধেকে নামিয়ে আনে। তবে তারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছে আগামী গরমকালে তারা চুক্তি অনুযায়ী পুরোর বিদ্যুৎই বাংলাদেশে সরবরাহ করবে।”

অর্থ বিভাগ সূত্র জানায়, বিদ্যুতে ভর্তুকি কমিয়ে আনতে উৎপাদন ব্যয় কমিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে বিদ্যুৎ উৎপাদনে জ্বালানি তেলের পরিবর্তে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র ব্যবহার এবং বিদ্যুৎ ক্রয়ে ইতোপূর্বে সম্পাদিত চুক্তিগুলো পর্যালোচনার পাশাপাশি এনার্জি অডিট বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এসব উদ্যোগের ফলে চলতি অর্থবছরে বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রায় ১১ হাজার ৪৪৪ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

জানা গেছে, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে বিদ্যুতে ভর্তুকি আরও কমিয়ে আনতে আপাতত গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতর দাম বাড়ানো হচ্ছে না। তবে মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশের নিচে নেমে এলে তখন বিদ্যুৎ ও সারে মূল্য সমন্বয়ের বিষয়টি বিবেচনায় রাখা হয়েছে।

সূত্র জানায়, বিদ্যুৎ খাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন ২০১০’ বাতিল করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। একই সঙ্গে দেশিয় উৎস থেকে গ্যাস সরবরাহ বাড়ানোর লক্ষ্যে নতুন কূপ খননের মাধ্যমে দৈনিক ৬৪৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন বাড়ানোর কর্মপরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে এবং আগামী ২০২৮ সাল নাগাদ গ্যাসের দৈনিক উৎপাদন ১ হাজার ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট বাড়ানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে নতুন রিগ ক্রয়সহ বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এছাড়া গভীর সমুদ্রে তেল/গ্যাস অনুসন্ধানে ‘উৎপাদন বন্টন চুক্তি’ (পিএসসি) সম্পাদনে পুনরায় বিডিং রাউন্ড পরিচালনা হবে।

সূত্র জানায়, অন্যান্যের মধ্যে আগামীতে জ্বালানি তেলের সংরক্ষণ ও পরিশোধনের সক্ষমতা বাড়ানো এবং জ্বালানি সাশ্রয়ী আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর বৈদ্যুতিক গাড়ি ও যন্ত্র ব্যবহার উৎসাহিত করা হবে। এ জন্য আগামী বাজেটে এ সব কর রেয়াতসহ নানা সুবিধা দেওয়ার পরিকল্পনা করছে সরকার।

ঢাকা/টিপু

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র পর ম ণ পর শ ধ

এছাড়াও পড়ুন:

ইউক্রেনকে টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র দিতে পেন্টাগনের সায়, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন ট্রাম্প

ইউক্রেনকে দূরপাল্লার টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহে হোয়াইট হাউসকে সবুজ সংকেত দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা সদরদপ্তর পেন্টাগন। প্রতিরক্ষা দপ্তর মনে করছে, এই সরবরাহ যুক্তরাষ্ট্রের টমাহক মজুতের ওপর কোনো নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না। তবে এ বিষয়ে চূড়ান্ত রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত এখন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হাতে। বিষয়টি সম্পর্কে জানাশোনা আছে এমন তিনজন মার্কিন ও ইউরোপীয় কর্মকর্তা এ তথ্য জানিয়েছেন।

এর আগে অক্টোবর মাসে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে হোয়াইট হাউসে বৈঠকের সময় ট্রাম্প বলেছিলেন, তিনি ইউক্রেনকে এই ক্ষেপণাস্ত্র দিতে চান না। কারণ হিসেবে তখন তিনি বলেছিলেন, ‘আমাদের দেশকে রক্ষা করার জন্য যে জিনিসগুলো প্রয়োজন, সেগুলো আমরা কাউকে দিতে চাই না।’

পেন্টাগনের জয়েন্ট স্টাফ তাদের মূল্যায়ন হোয়াইট হাউসকে অক্টোবর মাসেই জানিয়েছিল, ট্রাম্পের সঙ্গে জেলেনস্কির বৈঠকের ঠিক আগে। জেলেনস্কি রাশিয়ার অভ্যন্তরে আরও কার্যকরভাবে তেল ও জ্বালানি স্থাপনাগুলোতে আঘাত হানতে সক্ষম এই ক্ষেপণাস্ত্রের জন্য জোরালোভাবে অনুরোধ করে আসছিলেন। টমাহক ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লা প্রায় প্রায় ১ হাজার ৬০০ কিলোমিটার।

যুক্তরাষ্ট্রের এই মূল্যায়ন ইউরোপীয় মিত্রদের উৎসাহিত করেছে। দুই ইউরোপীয় কর্মকর্তা বলেন, এখন ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ না করার পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের অজুহাত দেখানোর মতো তেমন আর কিছু নেই বলে তাঁরা মনে করেন। জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকের কয়েক দিন আগে ট্রাম্প নিজেও বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ‘অনেক টমাহক’ ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে যা তারা ইউক্রেনকে দিতে পারে।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যখন কয়েকদিন পর নাটকীয়ভাবে তাঁর মনোভাব পরিবর্তন করেন, এতে মার্কিন ও ইউরোপীয় কর্মকর্তারা অবাক হন। হোয়াইট হাউসে জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকের সূচনা বক্তব্যে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই টমাহক ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ‘প্রয়োজন’। এরপর রুদ্ধদ্বার বৈঠকে তিনি জেলেনস্কিকে জানান, যুক্তরাষ্ট্র এই ক্ষেপণাস্ত্র দেবে না—অন্তত এই মুহূর্তে নয়।

যুক্তরাষ্ট্র যদি ইউক্রেনকে টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করে, তবে একটি বড় প্রশ্ন থেকে যায় ইউক্রেন সেগুলো কীভাবে উৎক্ষেপণ করবে। সাধারণত, টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র যুদ্ধজাহাজ বা সাবমেরিন থেকে উৎক্ষেপণ করা হয়। কিন্তু ইউক্রেনের নৌবাহিনী এখন মারাত্মকভাবে দুর্বল।

সিএনএনের প্রতিবেদনে তখন বলা হয়েছিল, এই সিদ্ধান্তের ঠিক এক দিন আগে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন ট্রাম্প। পুতিন ট্রাম্পকে জানান, টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র মস্কো এবং সেন্ট পিটার্সবার্গের মতো বড় রুশ শহরগুলোতে আঘাত হানতে পারে। এটি যুদ্ধক্ষেত্রে তেমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে না, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া সম্পর্কের ক্ষতি করবে।

এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য হোয়াইট হাউস এবং পেন্টাগনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তারা কোনো সাড়া দেয়নি।

তবে সূত্রগুলো সিএনএন-কে আগেই জানিয়েছিল, ট্রাম্প ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহের বিষয়টি পুরোপুরি বাতিল করেননি। যদি ট্রাম্প নির্দেশ দেন, তবে দ্রুত ইউক্রেনকে সেগুলো সরবরাহ করার জন্য প্রশাসন পরিকল্পনা তৈরি করে রেখেছে।

সম্প্রতি শান্তি আলোচনার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিতে পুতিনের অনীহায় ট্রাম্প এতটাই হতাশ হয়েছেন যে, তিনি গত সপ্তাহে রুশ তেল কোম্পানিগুলোর ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন। একই সঙ্গে ইউক্রেন নিয়ে আলোচনা করার জন্য পুতিনের সঙ্গে বুদাপেস্টে যে বৈঠক হওয়ার কথা, তা আপাতত বাতিল করেছেন।

যদিও পেন্টাগনের মজুত নিয়ে কোনো উদ্বেগ নেই, তবে মার্কিন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা এখনো ভাবছেন, ইউক্রেন কীভাবে এই ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের প্রশিক্ষণ নেবে এবং সেগুলো মোতায়েন করবে। সূত্রগুলো আরও জানিয়েছে, ইউক্রেন যাতে কার্যকরভাবে এই ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করতে পারে, সেজন্য এখনো বেশ কিছু প্রায়োগিক বিষয় সমাধান করা দরকার।

হোয়াইট হাউসে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে স্বাগত জানান যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ১৭ অক্টোবর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দুই সপ্তাহের মধ্যে তেহরানে সুপেয় পানি ফুরিয়ে যেতে পারে
  • বেসরকারি ঋণ তলানিতে, তবে ঋণপত্র খোলায় গতি
  • বাজারে আগাম সবজি আসতে দেরি, দাম চড়া
  • টানা দুই মাস আড়াই বিলিয়ন ডলারের বেশি প্রবাসী আয় এসেছে
  • টমাহক কত দূরে আঘাত হানতে পারে, রাডারে কেন ধরা পড়ে না
  • তিন মাসে গৃহকর আদায় কমেছে ৩০ কোটি টাকা
  • জুলাই–সেপ্টেম্বরে ঋণছাড়ে এগিয়ে বিশ্বব্যাংক ও রাশিয়া, কোনো অর্থ দেয়নি চীন
  • সরকারি কর্মসম্পাদন পরিবীক্ষণ পদ্ধতি বাস্তবায়নে কমিটি 
  • ইউক্রেনকে টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র দিতে পেন্টাগনের সায়, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন ট্রাম্প
  • ২৯ দিনে প্রবাসী আয় ২৪৩ কোটি ডলার