সিএনজি বা পেট্রলচালিত অটোরিকশার চালক মিটারের বেশি ভাড়া আদায় করলে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের ও জরিমানা আদায় করতে সম্প্রতি পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছিল সরকারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। তবে এই নিদের্শনার প্রতিবাদে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর রামপুরা, মিরপুর-১, মিরপুর-১৪ নম্বরসহ বিভিন্ন রাস্তায় সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালকরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। এরপর গ্যাস বা পেট্রলচালিত ৪ স্ট্রোক থ্রি-হুইলার যান (অটোরিকশা) মিটারে না চললে চালকের জরিমানা-সম্পর্কিত বিআরটিএ’র নির্দেশনা বাতিল করা হয়।

এ ঘটনার এক সপ্তাহ না যেতেই এবার ১৩ দফা দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ ও স্মারকলিপি পেশ কর্মসূচি পালন করেছেন সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালকরা। দাবি মানা না হলে বিআরটিএ কার্যালয় ঘেরাও করার হবে বলেও ঘোষণা দিয়েছেন তারা।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়।

ঢাকায় নতুন করে ১৫ হাজার, চট্টগ্রামে ১০ হাজার সিএনজিচালিত অটোরিকশা বরাদ্দ দেওয়া ও রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশের হয়রানি বন্ধসহ ১৩ দফা দাবিতে এ বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে ঢাকা ও চট্টগ্রাম জেলা সিএনজি অটোরিকশা শ্রমিক ঐক্য পরিষদ।

দাবি মেনে না নেওয়া হলে ২৭ ফেব্রুয়ারি (বৃহস্পতিবার) বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) কার্যালয় ঘেরাও করার ঘোষণা দেন তারা। বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে শ্রমিকদের একটি প্রতিনিধিদল সচিবালয়ে গিয়ে স্মারকলিপি জমা দেয়।

সমাবেশে ঢাকা ও চট্টগ্রাম জেলা সিএনজিচালিত অটোরিকশা শ্রমিক ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক মো.

রুহুল আমিন মুন্সী বলেন, সড়ক পরিবহন আইন থেকে শ্রমিক স্বার্থবিরোধী সব ধারা বাতিল করতে হবে। মালিকদের জমা ৯০০ টাকার বদলে ৮০০ টাকা নির্ধারণ করতে হবে। জমা বৃদ্ধির ষড়যন্ত্র বন্ধ করতে হবে।

'ঢাকা মেট্রো-থ' নম্বরের ৩ হাজার অটোরিকশাকে মহানগরে চলাচলের অনুমতি দেওয়ার দাবি জানিয়ে রুহুল আমিন মুন্সী বলেন, “ঢাকা শহরে অনেক অবৈধ সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলছে। বিআরটিএ ও পুলিশ কর্মকর্তারা টাকা নিয়ে এসব চলাচলের ব্যবস্থা করে দিচ্ছে। এগুলো বন্ধ করতে হবে।

রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশের হয়রানি বন্ধের দাবি জানিয়ে সংগঠনের যুগ্ম আহ্বায়ক সাখাওয়াত হোসেন দুলাল বলেন, আন্দোলন করেই দাবি আদায় করতে হবে। দাবি আদায়ের আন্দোলনে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে আহ্বান জানান তিনি।

সংগঠনের সদস্যসচিব আবদুল জব্বার মিয়া বলেন, দ্রব্যমূল্য যেভাবে বাড়ছে, সেভাবে শ্রমিকদের আয় বাড়ছে না। শ্রমিকেরা সন্তানদের পড়াশোনা করাতে পারছে না, অসুস্থ মা-বাবার চিকিৎসাও করাতে পারছে না। রাস্তায় নামলে নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব আরট এ

এছাড়াও পড়ুন:

দুই সপ্তাহের মধ্যে তেহরানে সুপেয় পানি ফুরিয়ে যেতে পারে

তীব্র খরার কবলে পড়েছে ইরানের রাজধানী তেহরান। সেখানে বাসিন্দাদের সুপেয় পানির প্রধান উৎসটি দুই সপ্তাহের মধ্যে শুকিয়ে যাওয়ার ঝুঁকি দেখা দিয়েছে।

ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম আইআরএনএ গতকাল রোববার এ খবর জানিয়েছে।

তেহরানে পানি সরবরাহ কোম্পানির পরিচালক বেহজাদ পারসার বরাত দিয়ে আইআরএনএর খবরে বলা হয়, তেহরানে খাবার পানি সরবরাহের পাঁচটি উৎসের একটি আমির কবির বাঁধ। সেটিতে এখন মাত্র ১ কোটি ৪০ লাখ ঘনমিটার পানি আছে। এটি জলাধারটির মোট ধারণক্ষমতার মাত্র ৮ শতাংশ।

বেহজাদ পারসা সতর্ক করে দিয়ে বলেন, এই পরিমাণ পানি দিয়ে মাত্র দুই সপ্তাহ তেহরানের খাবার পানির চাহিদা মেটানো যাবে।

ইরানি সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, তেহরানে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৩০ লাখ ঘনমিটার পানির প্রয়োজন পড়ে।

কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে তীব্র খরার মোকাবিলা করছে ইরান। গত মাসে স্থানীয় এক কর্মকর্তা বলেছিলেন, তেহরান প্রদেশে এবার বৃষ্টির যে মাত্রা, তেমনটা গত এক শতাব্দীতে খুব একটা দেখা যায়নি।

এক কোটির বেশি মানুষের নগর তেহরান তুষারাচ্ছন্ন আলবোর্জ পর্বতমালার দক্ষিণ ঢালে অবস্থিত। এই পর্বতমালার সর্বোচ্চ উচ্চতা ৫ হাজার ৬০০ মিটার (১৮ হাজার ৩৭০ ফুট) পর্যন্ত। এই পর্বতমালা থেকে উৎপন্ন নদীগুলো বহু জলাধারে পানির জোগান দেয়।

বেহজাদ পারসা বলেন, এক বছর আগেও আমির কবির বাঁধে ৮ কোটি ৬০ লাখ ঘনমিটার পানি ছিল। কিন্তু তেহরান অঞ্চলে বৃষ্টির পরিমাণ প্রায় শতভাগ হ্রাস পেয়েছে।

তেহরানে পানি সরবরাহ করা বাকি জলাধারগুলোর বিষয়ে কোনো তথ্য দেননি এই কর্মকর্তা।

ইরানি সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, তেহরানে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৩০ লাখ ঘনমিটার পানির প্রয়োজন পড়ে।

এক বছর আগেও আমির কবির বাঁধে ৮ কোটি ৬০ লাখ ঘনমিটার পানি ছিল। কিন্তু তেহরান অঞ্চলে বৃষ্টির পরিমাণ প্রায় শতভাগ হ্রাস পেয়েছে।বেহজাদ পারসা, তেহরানে পানি সরবরাহ কোম্পানির পরিচালক

পানি সাশ্রয়ের পদক্ষেপ হিসেবে সাম্প্রতিক দিনগুলোতে তেহরানের বেশ কয়েকটি এলাকায় বারবার সরবরাহ বন্ধ রাখা হচ্ছে বলে জানা গেছে। আর চলতি গ্রীষ্মে ঘন ঘন পানি সরবরাহ বন্ধ রাখার ঘটনাও ঘটেছে।

জুলাই ও আগস্টে পানি ও বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য দুই দিন সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছিল। ইরানে সে সময় তাপপ্রবাহের মধ্যে প্রতিদিন একাধিকবার লোডশেডিং হয়েছে।

ওই দুই মাসে তেহরানে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস (১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট) ছাড়িয়ে গেছে, কোথাও কোথাও তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস (১২২ ডিগ্রি ফারেনহাইট) ছুঁয়ে গিয়েছিল।

জুলাই ও আগস্ট মাসে তেহরানে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস (১০৪ ফারেনহাইট) ছাড়িয়ে গেছে, কোথাও কোথাও তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস (১২২ ফারেনহাইট) ছুঁয়ে ছিল।

ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ‘আজ যেভাবে আলোচনা হয়েছে, পানিসংকট পরিস্থিতি তার চেয়েও গুরুতর।’

ইরানজুড়ে পানিসংকট একটি বড় সমস্যা, বিশেষ করে দেশের দক্ষিণের শুষ্ক প্রদেশগুলোতে। ভূগর্ভস্থ সম্পদ ব্যবহারে অব্যবস্থাপনা ও সম্পদের অতিরিক্ত ব্যবহারকে পানি ঘাটতির জন্য দায়ী করা হয়। জলবায়ু পরিবর্তনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব পরিস্থিতি আরও খারাপ করতে ভূমিকা রাখছে।

আরও পড়ুনপ্রচণ্ড গরমে পানির ঘাটতি বেড়ে যাওয়ায় ইরানিদের কম পানি ব্যবহারের আহ্বান২০ জুলাই ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ