মিচেল স্টার্ক নেই, প্যাট কামিন্স নেই, নেই জশ হ্যাজলউডও। অস্ট্রেলিয়া আজ চ্যাম্পিয়নস ট্রফি অভিযান শুরু করছে তিন নিয়মিত ও অভিজ্ঞ পেসারকে ছাড়া। এক যুগ পর এই প্রথম ৫০ ওভারের আইসিসি টুর্নামেন্টের কোনো ম্যাচে তিনজনের একজনও নেই। অথচ গত ১২ বছরের মধ্যে অস্ট্রেলিয়া যে দুবার বিশ্বকাপ জিতেছে, দুটিতেই ছিলেন তাঁরা তিনজন।

স্টার্ক, কামিন্স ও হ্যাজলউডকে না পাওয়াটা ‘বিগ লস’ই মনে হচ্ছে স্টিভেন স্মিথের। তিন অভিজ্ঞ পেসারের বদলে যাঁরা দলে আছেন, তাঁদের সম্মিলিত অভিজ্ঞতা যে ১৯৭৯ সালের পর আইসিসি টুর্নামেন্টে সর্বনিম্ন!

এবারের চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে তিন পেসারের মধ্যে সবার আগে ছিটকে গেছেন হ্যাজলউড। ডানহাতি এ পেসার নিতম্বের চোটে ভুগছেন। এরপর হাঁটুর চোটে টুর্নামেন্ট শেষ হয়ে যায় কামিন্সেরও। কামিন্স শুধু পেস আক্রমণের একজনই নন, অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়কও। তাঁর জায়গায় অধিনায়কত্বের দায়িত্ব দেওয়া হয় স্মিথকে।

হ্যাজলউড, কামিন্স ছিটকে গেলেও স্টার্ক চ্যাম্পিয়নস ট্রফির দলে ছিল সপ্তাহ দু-এক আগেও। এমনকি বাঁহাতি এ পেসার কোনো চোটেও পড়েননি। আচমকাই ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া জানিয়ে দেয়, স্টার্ক নিজেকে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি থেকে সরিয়ে নিয়েছেন। যদিও ঠিক কী কারণে এমন সিদ্ধান্ত জানা যায়নি।

স্টার্ক, কামিন্স ও হ্যাজলউড—এ তিনজনকে ছাড়া অস্ট্রেলিয়া সর্বশেষ ৫০ ওভারের আইসিসি টুর্নামেন্ট খেলেছে ২০১৩ চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে। সেবার কামিন্স ও হ্যাজলউড দলেই ছিলেন না। আর দলে থাকলেও লন্ডনে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচে খেলানো হয়নি স্টার্ককে। অস্ট্রেলিয়া একাদশে খেলিয়েছিল মিচেল জনসন, ক্লিন্ট ম্যাকাই ও জেমস ফকনারদের। তবে ১৭ জুন দ্য ওভালের ম্যাচটির পর ৫০ ওভারের আইসিসি টুর্নামেন্টের সব ম্যাচেই স্টার্ক, কামিন্স ও হ্যাজলউডের মধ্যে অন্তত একজন খেলেছেনই।

এর মধ্যে ২০১৫ ও ২০২৩ বিশ্বকাপ জিতেছে অস্ট্রেলিয়া। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ২০১৫ বিশ্বকাপের ফাইনালে ছিলেন স্টার্ক, হ্যাজলউড। আর ২০২৩ বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে ফাইনালে ছিলেন তিনজনই, নিয়েছেন ৭ উইকেটও। এ দুই বিশ্বকাপের মাঝে ২০১৭ চ্যাম্পিয়নস ট্রফির দলে ছিলেন তিনজনই, ২০১৯ বিশ্বকাপে স্টার্ক ও কামিন্স।

তিন অভিজ্ঞ পেসারের জায়গায় অস্ট্রেলিয়ার চ্যাম্পিয়নস ট্রফির দলে আছেন শন অ্যাবোট, স্পেনসার জনসন ও নাথান এলিস, যাঁরা অভিজ্ঞতায় বেশ পিছিয়ে। স্টার্ক, হ্যাজলউড ও কামিন্সদের সম্মিলিত ৩০৮ ম্যাচে শিকার মোট ৫২৫ উইকেট, অ্যাবোট-জনসন-এলিসদের ৪০ ম্যাচে ৪৭। ১৯৭৯ বিশ্বকাপের পর আর কোনো আইসিসি টুর্নামেন্টে অস্ট্রেলিয়ার বোলিং আক্রমণ এত কম অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ছিল না।

ভয়ের জায়গা আছে আরও একটি। ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরের পর এখন পর্যন্ত স্টার্ক-কামিন্স-হ্যাজলউডকে ছাড়া মোট ২৮টি ওয়ানডে খেলেছে অস্ট্রেলিয়া, জিততে পেরেছে মাত্র ১০টি। সব মিলিয়ে তিন অভিজ্ঞ পেসারের না থাকাটা অস্ট্রেলিয়ার জন্য বড় ক্ষতি। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মাঠে নামার আগে অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক স্মিথের কথায়ও যা ফুটে উঠেছে, ‘তাদের না থাকা অবশ্যই বড় ক্ষতি। নিঃসন্দেহে তারা বিশ্বমানের পারফরমার। দলের জন্য অনেক বছর ধরে অবদান রেখে এসেছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে তারা এখন সঙ্গে নেই। আমাদের যা আছে তার দিকেই মনোযোগ দিতে হবে।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ক ম ন স ও হ য জলউড র আইস স

এছাড়াও পড়ুন:

একটি টাইম স্কেল-সিলেকশন গ্রেডপ্রাপ্তদের দুটি উচ্চতর গ্রেড পেতে আইনি বাধা কাটল

সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মজীবীদের ক্ষেত্রে একই পদে কর্মরত কোনো কর্মচারী দুই বা ততোধিক উচ্চতর স্কেল (টাইম স্কেল)/সিলেকশন গ্রেড (যে নামেই হোক) পেয়ে থাকলে, তিনি উচ্চতর গ্রেড পাবেন না উল্লেখ করে জাতীয় বেতন স্কেল স্পষ্টীকরণ-সংক্রান্ত পরিপত্র পুরোটাই অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্ট রায় দিয়েছিলেন।

হাইকোর্টের এই রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা পৃথক চারটি আপিল ও আটটি লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) নিষ্পত্তি করে আজ বুধবার রায় দিয়েছেন আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতির দায়িত্বে থাকা আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ হাইকোর্টের রায় সংশোধন করে এ রায় দেন।

রায়ের পর রিট আবেদনকারীদের অন্যতম আইনজীবী ইব্রাহিম খলিল প্রথম আলোকে বলেন, স্পষ্টীকরণ–সংক্রান্ত পরিপত্রের প্যারা-গ অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। ফলে ২০১৫ সালের জাতীয় পে–স্কেলের উচ্চতর গ্রেডের প্রাপ্যতাসংক্রান্ত প্যারা-৭ যেমন আছে, তেমনই থাকবে। স্পষ্টীকরণ পরিপত্রের প্যারা-গ-এর কারণে দুটি উচ্চতর গ্রেড পাওয়ায় যে প্রতিবন্ধকতা, তা আর থাকল না। এটি না থাকার কারণে সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে কর্মরত প্রায় ১৫ লাখ কর্মকর্তা-কর্মচারী এই সুবিধা পাবেন। অর্থাৎ যাঁরা ২০১৫ সালের আগে একটা টাইম স্কেল বা সিলেকশন গ্রেড পেয়েছেন, তাঁদের দুটি উচ্চতর গ্রেড পেতে বাধা আইনি বাধা থাকছে না।

পে-স্কেলের ৭ অনুচ্ছেদে আছে ‘স্বয়ংক্রিয়ভাবে’

এর আগে সব পর্যায়ের সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত চাকরিজীবীদের জন্য নতুন বেতনকাঠামো (জাতীয় পে–স্কেল)–সংক্রান্ত আদেশ ২০১৫ সালের ডিসেম্বর প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করা হয়। এটি জাতীয় পে–স্কেল ২০১৫ নামে পরিচিত।

পে–স্কেলের ৭ অনুচ্ছেদে উচ্চতর গ্রেডের প্রাপ্যতা সম্পর্কে উল্লেখ রয়েছে। ৭ (১) উপ–অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, কোনো স্থায়ী কর্মচারী পদোন্নতি ছাড়া একই পদে ১০ বছর পূর্তিতে এবং চাকরি সন্তোষজনক হওয়া সাপেক্ষে, স্বয়ংক্রিয়ভাবে ১১তম বছরে পরবর্তী উচ্চতর গ্রেডে বেতন প্রাপ্য হবেন।

৭ (২) উপ–অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কোনো কর্মচারী তাঁর চাকরির ১০ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেডে বেতন প্রাপ্তির পর পরবর্তী ৬ষ্ঠ বছর পদোন্নতি প্রাপ্ত না হলে ৭ম বছরে চাকরি সন্তোষজনক হওয়া সাপেক্ষে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরবর্তী উচ্চতর গ্রেডে বেতন প্রাপ্য হবেন।

৭ (৩) উপ–অনুচ্ছেদের ভাষ্য, (১) ও (২) উপ–অনুচ্ছেদে উল্লেখিত আর্থিক সুবিধা বেতন স্কেলের চতুর্থ গ্রেড পর্যন্ত প্রযোজ্য হবে এবং চতুর্থ গ্রেড বা তার ওপরের গ্রেডের কোনো কর্মচারী এই সুবিধা গ্রহণ করে এই আদেশের অধীন তৃতীয় গ্রেড বা তার ওপরের গ্রেডে বেতন প্রাপ্য হবেন না।

আর ৭ (৪) উপ–অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, কোনো কর্মচারী দুই বা ততোধিক সিলেকশন গ্রেড স্কেল বা উচ্চতর স্কেল (টাইম স্কেল) বা অন্য কোনো স্কেলের সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছার এক বছর পর পরবর্তী উচ্চতর স্কেলপ্রাপ্ত হয়েছেন, তিনি এই অনুচ্ছেদের অধীন উচ্চতর গ্রেড প্রাপ্য হবেন না।

পরিপত্রের প্যারা-গ অবৈধ

জাতীয় বেতনকাঠামো প্রজ্ঞাপন প্রকাশের পর ‘জাতীয় বেতন স্কেল, ২০১৫ স্পষ্টীকরণ’ বিষয়ে ২০১৬ সালের ২১ সেপ্টেম্বর পরিপত্র জারি করে অর্থ মন্ত্রণালয়। এর (গ) অনুচ্ছেদে উচ্চতর গ্রেডের প্রাপ্যতা বিষয়ে বলা রয়েছে।

(গ) (১) উপ–অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, একই পদে কর্মরত কোনো কর্মচারী দুই বা ততোধিক উচ্চতর স্কেল (টাইম স্কেল)/সিলেকশন গ্রেড (যে নামেই হোক) পেয়ে থাকলে তিনি এই অনুচ্ছেদের অধীন উচ্চতর গ্রেড পাবেন না।

(গ) (২)–এর ভাষ্য, একই পদে কর্মরত কোনো কর্মচারী একটিমাত্র উচ্চতর স্কেল (টাইম স্কেল)/সিলেকশন গ্রেড (যে নামেই হোক) পেয়ে থাকলে উচ্চতর স্কেল (টাইম স্কেল)/সিলেকশন গ্রেড পাওয়ার তারিখ থেকে পরবর্তী ছয় বছর পূর্তির পর সপ্তম বছরে পরবর্তী উচ্চতর গ্রেড প্রাপ্য হবেন।

(গ) (৩) উপ–অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, একই পদে কর্মরত কোনো কর্মচারী কোনো প্রকার উচ্চতর স্কেল (টাইম স্কেল)/সিলেকশন গ্রেড (যে নামেই হোক) না পেয়ে থাকলে সন্তোষজনক চাকরির শর্তে তিনি ১০ বছর চাকরি পূর্তিতে ১১তম বছরে পরবর্তী উচ্চতর গ্রেড এবং পরবর্তী ৬ষ্ঠ বছরে পদোন্নতি না পেলে ৭ম বছরে পরবর্তী উচ্চতর গ্রেড প্রাপ্য হবেন।

আর সরকারি কর্মচারীদের প্রদত্ত এসব আর্থিক সুবিধা কোনোক্রমেই ২০১৫ সালের ১৫ ডিসেম্বরের আগে দেওয়া হবে না বলে পরিপত্রের (গ) (৪) উল্লেখ করা হয়।

আইনজীবী ইব্রাহিম খলিল প্রথম আলোকে বলেন, ২০১৫ সালের পে–স্কেলের ৭ (৩) অনুচ্ছেদ অনুসারে চতুর্থ গ্রেড বা তার ওপরের কর্মচারী উচ্চতর গ্রেড প্রাপ্য হবেন না। একই সঙ্গে ২০১৫ পে–স্কেলে আগে যেসব কর্মচারী দুই বা ততোধিক টাইম স্কেল বা সিলেকশন গ্রেড পেয়েছেন, তাঁরাও উচ্চতর গ্রেড প্রাপ্য হবেন না মূল পে–স্কেলে বলা আছে। অথচ ২০১৫ সালের আগে যাঁরা একটি মাত্র টাইম স্কেল অথবা সিলেকশন গ্রেড পেয়েছেন, তাঁরা একটিমাত্র উচ্চতর গ্রেড পাবেন বলে স্পষ্টীকরণ–সংক্রান্ত পরিপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, যা ২০১৫ সালের জাতীয় পে–স্কেলের ৭ অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। পরিপত্র দিয়ে মূল জাতীয় বেতনকাঠামো সংশোধন এখতিয়ারবহির্ভূত। যে কারণে রিটগুলো করা হয়।

মামলার পূর্বাপর

‘জাতীয় বেতন স্কেল, ২০১৫ স্পষ্টীকরণ’ বিষয়ে ২০১৬ সালের ২১ সেপ্টেম্বরের পরিপত্রের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে একই বছর রিট করেন কয়েকজন সরকারি চাকরিজীবী। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট রুলসহ আদেশ দেন। রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১৭ সালের ৪ জানুয়ারি হাইকোর্ট রায় দেন। রায়ে স্পষ্টীকরণ পরিপত্রটি অবৈধ ঘোষণা করা হয়।

এই রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করে। ২০২০ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগ রাষ্ট্রপক্ষের লিভ টু আপিল মঞ্জুর করেন। পাশাপাশি পরিপত্রটি অবৈধ ঘোষণার হাইকোর্টের রায়ের কার্যকারিতা স্থগিত করেন। ২০২০ সালে রাষ্ট্রপক্ষ নিয়মিত আপিল করে।

এ ছাড়া ওই পরিপত্র নিয়ে বিভিন্ন সময় সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মচারীরা পৃথক রিট করেন, যার পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টে পরিপত্রটি অবৈধ ঘোষিত হয়।

হাইকোর্টের পৃথক রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ পৃথক আপিল ও লিভ টু আপিল করে। ২০২০ সালে রাষ্ট্রপক্ষের করা আপিলের সঙ্গে অপর আপিল ও লিভ টু আপিলের ওপর একসঙ্গে শুনানি হয়। রাষ্ট্রপক্ষের এসব আপিল ও লিভ টু আপিল নিষ্পত্তি করে আজ রায় দেন সর্বোচ্চ আদালত।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক। রিট আবেদনকারীর পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সালাহ উদ্দিন দোলন ও আইনজীবী ইব্রাহিম খলিল শুনানি করেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • একটি টাইম স্কেল-সিলেকশন গ্রেডপ্রাপ্তদের দুটি উচ্চতর গ্রেড পেতে আইনি বাধা কাটল