‘যে কোনো আঘাতেই থাকে জীবনের পাঠ’
Published: 22nd, February 2025 GMT
চার্লি চ্যাপলিন। কিংবদন্তি অভিনেতা ও ফিল্মমেকার। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ এই কমেডিয়ানের বিভিন্ন সাক্ষাৎকার থেকে অনুপ্রেরণার কথা তুলে এনেছেন ইমাম হোসেন মানিক
আমার প্রথম শর্ট ফিল্ম ‘কিড অটো রেস অ্যাট ভেনিস’। ১৯১৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এই শর্ট ফিল্মে অভিনয়ের আগ মুহূর্তে আমার মনে হলো, পরনে ব্যাগি প্যান্ট, পায়ে বড় আকারের জুতা পরে, মাথায় একটা ডার্ভি হ্যাট আর হাতে একটা ছড়ি নিয়ে দাঁড়ালে মন্দ হয় না! ব্যাগি প্যান্ট, কোট-টাই, ছোট হ্যাট আর ইয়া বড় জুতা– একেকটা জিনিস একেকটার সঙ্গে বড়ই বেখাপ্পা! যেই ভাবা সেই কাজ। দাঁড়িয়ে গেলাম ক্যামেরার সামনে। ব্যাস, এভাবেই জন্ম আজকের ‘লিটল ট্র্যাম্প’-এর।
প্রথম অভিনয়
আমি প্রথম অভিনয় শুরু করি সেই এই টুকুন বয়সে। তখন কত ছিল বয়স? এই ধরুন ১৪ বছর। তখন শার্লক হোমস নাটকের একটি ছোট চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পেয়ে গেলাম। শো শেষ হতেই আমার ভাই সিডনি, যে কিনা তখন সস্তা দরের মিউজিক হলগুলোয় কমেডিয়ান হিসেবে কাজ করত, সে আমার সঙ্গে যোগ দেয়। ‘রিপেয়ার্স’ নামের একটি কমেডি শোতে জনৈক প্লামবারের সহকারীর চরিত্রে অভিনয় করি আমি। তা করতে গিয়ে মায়ের পুতুলনাচের অঙ্গভঙ্গিমা আর বাবার মদ্যপ অবস্থার আচার-আচরণকে মনে করার চেষ্টা করি। এমনি করে নিজস্ব একটা ক্লাউনিং টেকনিক আবিষ্কার করে ফেলি আমি।
১৮ বছর বয়সে প্রধান চরিত্রে ডাক.
আমার বয়স যখন ১৮ বছর, তখন আমাকে ফ্রেড কার্নো ট্রুপের একটি কমেডির প্রধান চরিত্রটি করতে দেওয়া হয়। সেটির উদ্বোধনী প্রদর্শনীতে, মঞ্চটি আচমকা ভয়ংকরভাবে কেঁপে ওঠে। ঠিক আমার মায়ের মতোই, আমিও কণ্ঠস্বর হারিয়ে ফেলি। সব অভিনেতাকেই সব চরিত্রে অভিনয়ের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল। ফলে সিডনি আমাকে পরামর্শ দিল পুতুলনাচের মাতালটির চরিত্রে অভিনয় করতে। ‘অ্যা নাইট ইন অ্যান ইংলিশ মিউজিক হল’ নামের সেই একাঙ্কিকায় আমার অভিনয় দর্শকরা মুহূর্তেই ভীষণ পছন্দ করল।
যুক্তরাষ্ট্র সফর ও ১৫০ ডলারের চুক্তি
১৯১০ সালে আমরা জার্সি সিটি, ক্লিভল্যান্ড, সেন্ট লুইস, মেনেপোলিস, ক্যানসাস সিটি, বাট, বিলিংস ও ডেনভার- আমেরিকান জনবহুল এ অঞ্চলগুলোয় পারফর্ম করি। যুক্তরাষ্ট্রে আমার দ্বিতীয় ট্যুরটি হয়েছিল ১৯১২ সালে। এটিতে বেশ লাভবান হলাম আমি। মাতাল চরিত্রে আমার কমেডি অভিনয় ইতোমধ্যে দেখেছিলেন কিস্টন স্টুডিওর প্রধান ম্যাক সিনেট। তিনি আমাকে সপ্তাহে ১৫০ ডলার বেতনে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার প্রস্তাব দিলেন। তখনকার দিনে এটি বেশ বড় ধরনেরই বেতন ছিল। কার্নোর সঙ্গে ১৯১৩ সালে আমার চুক্তি শেষ হলে, ম্যাকের দলে লস অ্যাঞ্জেলেসে যোগ দিলাম।
মায়ের পথ ধরে
আমার বাবা চার্লস চ্যাপলিন সিনিয়র। তিনি ছিলেন বিচিত্রানুষ্ঠানের একজন দক্ষ অভিনেতা। মদ্যপানের বদঅভ্যাস ছিল তাঁর। আমার বয়স যখন তিন বছর, বাবা তখন আমাদের ছেড়ে চলে যান। কেননা আমার মা প্রেমে পড়েছিলেন আরেক অভিনেতার। সে সূত্রে একটি পুত্র হয়েছিল মায়ের। আমাদের তিনজনের খরচ বহন করতে মা তখনও মঞ্চে গান গাওয়া অব্যাহত রেখেছিলেন। মা হান্নাহ চ্যাপলিন মিউজিক হলে গান গাইতেন। অভিনয়ও করতেন। আমাদের সঙ্গে আমার চার বছর বয়সী সৎ ভাই সিডনিও ছিল তখন। প্রতি রাতে নিজের সঙ্গে আমাদের দুই ভাইকেও মিউজিক হলে নিয়ে যেতেন মা। কেননা তখনও ডে-কেয়ার ব্যবস্থা চালু হয়নি। ১৯৮৪ সালের মাঝামাঝিতে, পারফর্ম করার সময় আচমকাই গানের কণ্ঠটি হারিয়ে ফেলেন মা। মুহূর্তেই রাগী দর্শকরা তাঁর দিকে এটা-ওটা ছুড়তে শুরু করে দেয়। বয়স আমার তখন পাঁচ বছর। এ ঘটনায় আমি এতটাই মুষড়ে পড়েছিলাম যে, আনমনেই দৌড়ে মঞ্চে উঠে পড়ি এবং মায়ের অসম্পন্ন গানটি গেয়ে দিই। দর্শকরা আমাকে পছন্দ করলেও, আমার মায়ের চাকরিটা চলে গেল। এভাবেই শেষ হয়ে গেল তাঁর মঞ্চ-ক্যারিয়ার। আমি সেদিনই প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, মায়ের ক্যারিয়ার শেষ হওয়া পথেই আমি ক্যারিয়ার গড়ব!
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: জ বন আম দ র আম র ম র বয়স
এছাড়াও পড়ুন:
এবারের ঈদযাত্রায় প্রাণহানি গত ঈদের চেয়ে বেশি: যাত্রী কল্যাণ সমিতি
পবিত্র ঈদুল আজহায় সারা দেশে ৩৭৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৯০ জন নিহত ১১৮২ জন আহত হয়েছে। একই সময়ে রেলপথে ২৫টি দুর্ঘটনায় ২৫ জন নিহত, ১২ জন আহত হয়েছে। নৌপথে ১১টি দুর্ঘটনায় ১২ জন নিহত ও ৬ জন নিখোঁজ রয়েছে। সড়ক, রেল ও নৌপথে সর্বমোট ৪১৫টি দুর্ঘটনায় ৪২৭ জন নিহত ও ১১৯৪ জন আহত হয়েছে।
ঈদযাত্রা শুরুর দিন ৩১ মে থেকে ঈদ শেষে কর্মস্থলে ফেরা ১৪ জুন পর্যন্ত ১৫ দিনে ৩৭৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৯০ জন নিহত ১১৮২ জন আহত হয়েছে। বিগত ২০২৪ সালের ঈদুল আজহায় ৩০৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৩৬ জন নিহত ও ৭৬২ জন আহত হয়েছিল। বিগত ঈদুল আজহার সাথে তুলনা করলে সড়ক দুর্ঘটনা ২২ দশমিক ৬৫ শতাংশ, প্রাণহানি ১৬ দশমিক ০৭ শতাংশ, আহত ৫৫ দশমিক ১১ শতাংশ বেড়েছে।
সোমবার (১৬ জুন) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে যাত্রী কল্যাণ সমিতি আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী এতথ্য তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “সড়কে দুর্ঘটনা ও মানুষের যাতায়াতের ভোগান্তি কমিয়ে ঈদযাত্রা স্বস্তিদায়ক করতে হলে ঈদের আগে কমপক্ষে ৪ দিনের সরকারি ছুটি থাকা দরকার। ঈদের যাতায়াত ব্যবস্থাপনা নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রয়োজন। সবার আগে আমাদের গণপরিবহন ও ব্যবস্থাপনার সক্ষমতা বাড়াতে হবে, ছোট যানবাহন মহাসড়ক থেকে উচ্ছেদ করতে হবে। প্রশিক্ষিত দক্ষ চালক, ফিটনেস বিহীন যানবাহন, মানসম্মত সড়কের পাশাপাশি আইনের সুশাসন নিশ্চিত করা জরুরি।”
আরো পড়ুন:
কক্সবাজারে সড়কে গাছ ফেলে ডাকাতি, অপহরণ ৩
রামুতে বাস-কাভার্ডভ্যান সংঘর্ষে নিহত ৩
যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, দেশের সড়ক-মহাসড়কের বৃষ্টির কারণে ছোট বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এসব গর্তে বেপরোয়া যানবাহন দুর্ঘটনায় পতিত হয়েছে। ঈদের পরে বেশিরভাগ দুর্ঘটনা বিরামহীন ও বিশ্রামহীনভাবে যানবাহন চালাতে গিয়ে সংগঠিত হয়েছে। ফলে এসব দুর্ঘটনায় সিংহভাগ খাদে পড়ে ও দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকের পেছনের লেগে যাওয়ার ঘটনা বেশি ঘটেছে। অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য ও পথে পথে যাত্রী হয়রানি এবারের ঈদেও চরমে ছিল। গণপরিবহনগুলোতে ঈদকে কেন্দ্র করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্যর কারণে বাসের ছাদে, ট্রেনের ছাদে, খোলা ট্রাকে, পণ্যবাহী পরিবহনে যাত্রী হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দরিদ্র লোকজনদের ঈদে বাড়ি যাতায়াত করতে হয়েছে।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, বরাবরের মতো এবারও দুর্ঘটনার শীর্ষে রয়েছে মোটরসাইকেল। এবারের ঈদে ১৩৪টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৪৭ জন নিহত, ১৪৮ জন আহত হয়েছে। যা মোট সড়ক দুর্ঘটনার ৩৫ দশমিক ৩৫ শতাংশ। এই সময় সড়কে দুর্ঘটনায় আক্রান্ত ৬১ জন চালক, ৫০ জন পরিবহন শ্রমিক, ৫৮ জন পথচারী, ৪০ জন নারী, ৩০ জন শিশু, ৩২ জন শিক্ষার্থী, ৭ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ৫ জন শিক্ষক, একজন চিকিৎসক, একজন প্রকৌশলী, ৮ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীর পরিচয় মিলেছে।
সংগঠিত দুর্ঘটনা বিশ্লেষণে দেখা যায়, মোট যানবাহনের ২৬ দশমিক ৫৪ শতাংশ মোটরসাইকেল, ১৯ দশমিক ১১ শতাংশ ট্রাক-কাভার্ডভ্যান, ১৮ দশমিক ৫৮ শতাংশ বাস, ১৩ দশমিক ৬২ শতাংশ ব্যাটারিচালিত রিকশা, ৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ কার-মাইক্রো, ৭ দশমিক ৬১ শতাংশ নছিমন-করিমন ও ৭ দশমিক ০৭ শতাংশ সিএনজিচালিত অটোরিকশা এসব দুর্ঘটনায় জড়িত ছিল।
দুর্ঘটনার ২৮ দশমিক ২৩ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ৪০ দশমিক ৬৩ শতাংশ পথচারীকে গাড়ি চাপা দেওয়ার ঘটনা, ২০ দশমিক ০৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ার ঘটনায়, দশমিক ৭৯ শতাংশ ট্রেন-যানবাহনে ও ১০ দশমিক ২৯ শতাংশ অন্যান্য অজ্ঞাত কারণে দুর্ঘটনা সংগঠিত হয়েছে।
দুর্ঘটনার ধরন বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মোট সংঘটিত দুর্ঘটনার ৩৭ দশমিক ২০ শতাংশ জাতীয় মহাসড়কে, ২৮ দশমিক ২৩ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়কে, ২৮ দশমিক ৪৯ শতাংশ ফিডার রোডে সংঘটিত হয়। এছাড়া সারা দেশে সংঘটিত মোট দুর্ঘটনার ৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ ঢাকা মহানগরীতে, দশমিক ৭৯ শতাংশ চট্টগ্রাম মহানগরীতে ও দশমিক ৭৯ শতাংশ রেলক্রসিংয়ে সংগঠিত হয়েছে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রচার সম্পাদক মোহাম্মদ আলাউদ্দিন মাসুদ, সংগঠনের অর্থ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান রাসেল, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ ইয়াছিন চৌধুরী, নির্বাহী কমিটির সদস্য অধ্যক্ষ রফিকা আফরোজ, ড্রাইভারস ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মো. বাদল আহমেদ, জিএম মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ।
ঢাকা/এম/এসবি