জার্মানির রাজনৈতিক দল অলটারনেটিভ ফর জার্মানির (এএফডি) সহনেতা অ্যালিস ভাইডেল বিভিন্ন কারণেই ব্যতিক্রমী একজন ব্যক্তি। একদিকে তাঁর উগ্র ডানপন্থী দলে রয়েছে পুরুষের আধিপত্য। অন্যদিকে, অভিবাসনবিরোধী দলটি নিজেকে প্রথাগত পারিবারিক মূল্যবোধ ও সাধারণ মানুষের রক্ষাকর্তা হিসেবে তুলে ধরে থাকে। তবে আপাতদৃষ্টিতে ভাইডেলের সঙ্গে এসব সাংঘর্ষিক।

৪৬ বছর বয়সী ভাইডেলের জীবনসঙ্গী শ্রীলঙ্কায় জন্মগ্রহণকারী এক নারী। তাঁরা দত্তক নেওয়া দুই সন্তানকে একসঙ্গে লালন-পালন করছেন।

ভাইডেলের চলচ্চিত্রকার হিসেবেও পরিচিতি রয়েছে। অর্থনীতি নিয়ে পিএইচডি করেছেন চীনে। ইংরেজি ও মান্দারিন ভাষায় সাবলীলভাবে কথা বলতে পারেন তিনি।

ভাইডেলের জন্ম পশ্চিম জার্মানিতে। কিন্তু তাঁর নেতৃত্বাধীন এএফডি সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় সাবেক পূর্ব জার্মানিতে, যা সাবেক কমিউনিস্ট জার্মানি হিসেবেও পরিচিত। রাজনীতি শুরুর আগে ভাইডেল যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিনিয়োগ ব্যাংক গোল্ডম্যান স্যাকস ও জার্মানির অ্যালিয়ানজ গ্লোবাল ইনভেস্টরসে চাকরি করেছেন। তা ছাড়া কিছুদিন ফ্রিল্যান্স বাণিজ্য পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ করেছেন তিনি।

ব্যতিক্রমী কর্মজীবনের কারণেই ভাইডেল এএফডির জন্য ‘সম্পদে’ পরিণত হয়েছেন বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। তাঁদের মতে, জার্মানির কর্তৃপক্ষগুলো এএফডিকে গণতন্ত্রবিরোধী মনে করে। কিন্তু ভাইডেলের উদার মনোভাবের কারণে দলটি সমাজের বহু মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারছে।

ভাইডেলকে প্রায় সময় কালো স্যুট, সাদা শার্ট ও গলায় মুক্তার মালা পরতে দেখা যায়। বিশ্লেষকদের মতে, নিজের কিছু সহকর্মীর চেয়ে নানা বিষয়ে তিনি বেশি দক্ষ। তবে সমালোচকেরা তাঁকে ভয়ানক সুবিধাবাদী ও ‘ভালো মানুষের মুখোশধারী’ বলে মনে করেন।

এএফডি বেশি পুরোনো দল নয়। ১২ বছর আগে যাত্রা শুরু করা দলটি জার্মানির আজ রোববারের নির্বাচনে বেশ ভালো অবস্থানে রয়েছে। এ নির্বাচনের মাধ্যমে দলটি জার্মানির রাজনৈতিক অঙ্গনে নিজেদের শক্ত অবস্থান জানান দেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এমনকি এ আশঙ্কাও করা হচ্ছে দলটি ইউরোপের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশটির শাসনব্যবস্থাকে জটিল করে তুলতে পারে।

জার্মানির বোখুম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অলিভার লেম্বকে বলেন, ‘ভাইডেল এমন এক ব্যক্তি, যিনি এএফডির প্রথাগত রাজনৈতিক এলাকার বাইরে বৃহত্তর জনগোষ্ঠী ও মধ্যবিত্ত বুর্জোয়া শ্রেণির কাছে আবেদন তৈরি করতে পারেন। [দলটির] উন্মাদ ও চরমপন্থীদের আখড়ায় শুধু তাঁকেই পরিপক্ব বলে মনে হয়।’

এএফডির এ নেতার আমলে গত কয়েক বছরে দলটির সমর্থক বেড়েছে। এ সময় মূলত অভিবাসনবিরোধী মনোভাব ও চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজের ভঙ্গুর জোটের কার্যক্রমে সৃষ্ট হতাশা থেকে লাভবান হয়েছে দলটি। শলৎজের নেতৃত্বাধীন জোট গত নভেম্বরে ভেঙে গেছে।

জার্মানিতে সাম্প্রতিক নির্বাচনী প্রচারে বেশ কিছু সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় ক্ষোভ উসকে দিয়েছেন ভাইডেল। সহিংসতার ঘটনায় একাধিক অভিবাসীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

আজকের নির্বাচন নিয়ে চালানো কিছু জরিপে দেখা গেছে, সবচেয়ে বেশি ২৯ শতাংশ সমর্থন রয়েছে রক্ষণশীল হিসেবে পরিচিত ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়নের (সিডিইউ)। ২১ শতাংশ নিয়ে এরপরই রয়েছে এএফডি। ১৬ শতাংশ নিয়ে তৃতীয় স্থানে শলৎজের নেতৃত্বাধীন সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এসপিডি)।

এএফডি এবারের আগে কখনো চ্যান্সেলর প্রার্থী দেয়নি। ভাইডেল এরই মধ্যে স্বীকার করেছেন যে এখনই তাঁর দলের সরকারের শরিক হওয়ার তেমন একটা সম্ভাবনা নেই। তাঁর এ মন্তব্যের কারণে অন্যান্য দলগুলো এএফডির সঙ্গে কাজ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। ফলে এএফডিকে ঘিরে একধরনের সহযোগিতা না করার মনোভাব গড়ে উঠেছে।

এসপিডি প্রধান ওলাফ শলৎজের (বাঁয়ে) নির্বাচনী প্রচারণার পোস্টার ও এএফডি প্রধান অ্যালিস ভাইডেলের নির্বাচনী প্রচারণার পোস্টার। জার্মানির হামবুর্গে, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন ত ক কর ছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

২২ ক্যাডার নিয়ে চলতেন স্বেচ্ছাসেবক দলের জিতু

বগুড়ায় মেয়েকে উত্ত্যক্ত ও বাবাকে খুনে অভিযুক্ত জিতু ইসলাম দলীয় প্রভাবে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। কথায় কথায় যাকে-তাকে অহেতুক মারধর করতেন। চলতেন ২২ জনের ক্যাডার বাহিনী নিয়ে। তারা সবাই নানা অপকর্মে জড়িত এবং একাধিক মামলার আসামি। তাঁর আয় চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসা থেকে। গতকাল রোববার এলাকায় গিয়ে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
জানা যায়, জিতু ফুলবাড়ী কারিগরপাড়ার মৃত সেকেন্দার আলীর ছেলে। ২০০৩ সালে এলাকায় বালু ব্যবসা নিয়ে প্রতিপক্ষ রবিউল ইসলামকে খুন করেন। সেই মামলায় তাঁর ১৪ বছর সাজা হয়। সাজা খেটে তিন বছর আগে বের হন। এর পর এলাকায় গড়ে তোলেন সন্ত্রাসী বাহিনী। তাঁর বাহিনীতে যে ২২ জন সদস্য, তারা কেউ রাজনৈতিক দলের পদ-পদবিতে নেই। হত্যা মামলা ছাড়াও জিতুর বিরুদ্ধে একটি মাদক ও একটি ডাকাতির মামলা রয়েছে।

ফুলবাড়ীর এক মুদি দোকানি বলেন, জিতু মাঝেমধ্যে তাঁর দোকান থেকে বাকি নিতেন। দু’বছরে বাকির পরিমাণ প্রায় ৪৮ হাজার টাকা হয়। তখন একদিন টাকা চান। এ কারণে জিতু তাঁকে মারধর করে নাকে খত নেন।
বৃন্দাবন এলাকার আরেক ব্যবসায়ী বলেন, মাঝেমধ্যে জিতু তাঁর বাহিনী নিয়ে হাজির হতেন। মোটা অঙ্কের চাঁদা চাইতেন। চাঁদার কমপক্ষে অর্ধেক দিয়ে তবে নিস্তার পাওয়া যেত। এ ছাড়া ঈদে সেলামির নামে মোটা অঙ্কের চাঁদা দিতে হতো তাঁকে।

স্থানীয় ব্যবসায়ী জানান, তাঁর কাছে মোটা অঙ্কের চাঁদা চান জিতু। না দেওয়ায় দোকানে ককটেল হামলা করেন। বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকায় আগস্টের পর জিতু বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। এলাকার একাধিক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর কাছ থেকে মোটা অঙ্কের চাঁদা নিয়ে আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ আছে তাঁর বিরুদ্ধে। ছোট ভাই মিতুলও তাঁর বাহিনীর সদস্য।

জিতু গত ১৯ ফেব্রুয়ারি জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের ১০১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির সহসাধারণ সম্পাদকের পদ পান। সন্ত্রাসী হয়ে দলের পদ পাওয়ায় এলাকায় তাঁকে নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পদ পেয়ে তিনি আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন।

এলাকার এক ভুক্তভোগী বলেন, ‘জিতুর কারণে আমরা মুখ খুলতে পারি না। সে চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসার মাধ্যমে এলাকা অতিষ্ঠ করে তুলেছে। বিশেষ করে রাজনৈতিক দলের পদ-পদবি পেয়ে ভয়ংকর হয়ে ওঠে। তার নির্যাতনের শিকার অর্ধশতের কম হবে না। তার বখাটেপনার কারণে কেউ মেয়ে বিয়ে দিতে রাজি হতো না।’
এক বছর আগে থেকে ফুলবাড়ির পাশেই শহরের শিববাটি এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করতে থাকেন জিতু। সেই এলাকার বাসিন্দা রিকশাচালক শাকিল হোসেন। শাকিলের মেয়ে স্থানীয় ভান্ডারী সিটি বালিকা বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। এক মাস আগে ৫২ বছর বয়সী জিতু বিয়ের প্রস্তাব দেন শাকিলের মেয়েকে। বিষয়টি শাকিল জেনে রাগ করেন। জিতুর ওপর চড়াও হন। কিছুতে রাজি না হলে নানাভাবে নির্যাতন করতে থাকেন জিতু। তাঁর মেয়েকেও উত্ত্যক্ত করতেন। এরই এক পর্যায়ে শনিবার বিকেলে শাকিলকে পিটিয়ে খুন করেন জিতু ও তাঁর বাহিনী।
এ হত্যার ঘটনায় জিতুকে এক নম্বর আসামি করে ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে গতকাল রোববার বগুড়া সদর থানায় হত্যা মামলা করেছেন শাকিলের স্ত্রী মালেকা খাতুন। পুলিশ শনিবার রাতেই জিতু ও তাঁর সহযোগী মতি এবং বিপ্লবকে আটক করে।

সন্ত্রাসীকে দলের পদ দেওয়ার বিষয়ে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি সরকার মুকুল বলেন, ‘আমি জানতাম না, সে দলের নাম ভাঙিয়ে এসব অপকর্ম করছে। আমরা তাকে দল থেকে বহিষ্কার করেছি।’ শনিবার রাতে স্বেচ্ছাসেবক দল কেন্দ্রীয় সভাপতি এস এম জিলানী ও সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসানের সই করা বিবৃতিতে জিতু ইসলামকে বহিষ্কার করা হয়। সেই সঙ্গে তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অনুরোধ জানানো হয়।

বগুড়া সদর থানার ওসি হাসান বাসির বলেন, ‘এ মামলার অন্য আসামিদেরও গ্রেপ্তার করা হবে।’
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও ফুলবাড়ী পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক জোবায়ের খান জানান, গতকাল জিতুসহ তিন আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়। সাত দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়। সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মেহেদী হাসান পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এদিকে হত্যার প্রতিবাদ ও দোষীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম জেলা শাখা। গতকাল বিকেলে শহরের সাতমাথায় সংগঠনের সভাপতি অ্যাডভোকেট দিলরুবা নূরী এতে সভাপতিত্ব করেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ