আমি ষড়যন্ত্রের শিকার: বিএনপি নেত্রী শিরীন
Published: 23rd, February 2025 GMT
৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিবাদ সরকারের পতনের পর যখন দেশে স্বস্তি ফিরে আসে ঠিক তখনই আমার বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র শুরু হয় বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির বরিশাল বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরীন।
তিনি বলেন, একজন নারীকে রাজপথে প্রতিযোগিতা করে উঠে আসতে হয়। সেখানে আনুপাতিক হারে খুব অল্প সংখ্যক নারীই রাজনীতিতে শেষ পর্যন্ত টিকে থাকতে পারেন। আমি সেই ভাগ্যবানদের একজন- একেবারে তৃণমূল থেকে উঠে এসেছি। কিন্তু কিছু নষ্ট-ভ্রষ্টরা আমার ক্ষতি করতে উঠেপড়ে লেগেছে। রাজপথে টিকতে না পেরে অন্ধকার দিয়ে তার পথরোধ করার চেষ্টা করছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
রোববার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করে বলেন, তিনি একদিকে যেমন মহান আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস রাখেন তেমনি রাজনৈতিক আদর্শ জিয়া পরিবারের প্রতিও আস্থা পোষণ করেন। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান যেভাবে তার প্রতি আস্থা রেখেছেন সেটা অব্যাহত থাকবে বলে তিনি বিশ্বাস করেন। একইভাবে সকল ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করবেন বলেও জানান তিনি।
তিনি জানান, আওয়ামী লীগ সরকার পতনের ছয়দিনের ব্যবধানে ১১ আগস্ট দলের সব পদ-পদবি স্থগিত করা হয় বিলকিস জাহান শিরিনের। একটি গণমাধ্যমে ‘বরিশালে ১০ কোটি টাকার পুকুর দখল বিএনপি নেত্রী শিরীনের’ সংবাদ প্রকাশের জের ধরে তার এই পদ স্থগিত করা হয়। এরপর ধারাবাহিকভাবে একই গণমাধ্যমে তার বিরুদ্ধে আরেও অনেক সংবাদ প্রকাশ করা হয়। সেসব বিষয় নিয়ে তিনি সংবাদ সম্মেলন করেন।
বিলকিস জাহান শিরীন বলেন, ‘পুকুর দখল’ কথাটি মিথ্যা ও বানোয়াট এবং ষড়যন্ত্রমূলক। বিগত ৭০ বছরের পূর্বে ক্রয়সূত্রে আমার দাদা এই জমির রেকর্ডীয় মালিকানায় ভোগ দখল করে আসছেন। ওই জমিতে ২০ থেকে ২৫ জনের অধিক ওয়ারিশ রয়েছে। খাজনাসহ সরকারি অন্যান্য ফি তারাই পরিশোধ করতেন। ইতোমধ্যে অনেক ওয়ারিশ তাদের অংশ বিক্রি করেছে এবং সেখানে জলাশয় ভরাট করে স্থাপনাও নির্মিত হয়েছে। ওয়ারিশ হিসেবে আমার বাবা ৩ শতকের মালিক যেখানে বাবার ওয়ারিশ হিসেবে আমি আধা-শতাংশের কম অংশের মালিক। অথচ উদ্দেশ্যেমূলকভাবে আমাকে জড়িয়ে ১০ কোটি টাকার মিথ্যা সংবাদ প্রচার করে আমার, আমার পরিবার, এবং আমার দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করেছে এবং প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। এছাড়া ওই জলাশয়টি ২০ থেকে ২৫ বছর পূর্বেই অধিকাংশ ভরাট করা হয়েছিল। তাছাড়া জলাশয় ভরাটের ক্ষেত্রে আমার কোনো হাত নেই। কারণ ওয়ারিশরা কেউ আমার অধীনস্থ না। তারা সকলেই ওয়ারিশ সূত্রে মালিক।
তিনি বলেন, আমাকে জড়িয়ে একের পর এক মিথ্যা ও বানোয়াট ও বিভ্রান্তিমূলক সংবাদ প্রকাশ করা হচ্ছে। এর মধ্যে ‘অর্ধকোটি টাকা নিয়ে ফের বিতর্কে শিরীন’ শিরোনামে ষড়যন্ত্র মূলক ভাবে অসত্য সংবাদ প্রচার করে। অথচ ওই ঘটনার সঙ্গে দূরবর্তী কোনো সম্পৃক্ততাও আমার নেই।
শিরীন বলেন, আমার প্রতি এই প্রতিহিংসাপরায়ন আচরণের প্রেক্ষিতে আমার সামাজিক ও রাজনৈতিক মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হয়েছে। আমি সম্পূর্ণভাবে ষড়যন্ত্রের শিকার। এর মাধ্যমে একটি চিহ্নিত মহল আমার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার ধ্বংসের ষড়যন্ত্র করছে। যেখানে তারা সংবাদমাধ্যমকে ব্যবহার করছে বলে আমি মনে করি।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে
বান্দরবানের থানচি উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার মানুষের একমাত্র ভরসার জায়গা ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সংকটে এই হাসপাতাল কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। বর্তমানে পুরো হাসপাতাল চালাচ্ছেন মাত্র একজন চিকিৎসক। গত পাঁচবছরে চিকিৎসাধীন ও রেফার্ড করা ২৪ জন রোগী মারা গেছেন।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, ১৯৯৫ সালে ৩১ শয্যার থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যাত্রা শুরু করে। পরে এটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১২ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র দুইজন। তাদের মধ্যে একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন। এ কারণে রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ১৮ জন নার্স পদে রয়েছেন মাত্র চারজন। চারজন মিডওয়াইফ থাকার কথা, নেই একজনও।
আরো পড়ুন:
ফরিদপুরে পাগলা ঘোড়ার কামড়ে আহত ২০
বক্তব্য দেওয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়লেন কাদের সিদ্দিকী
প্রাথমিক থেকে শুরু করে জরুরি চিকিৎসার জন্য এই হাসপাতালে ছুটে যান পাহাড়ি ও বাঙালিরা। তাদের অভিযোগ, হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা যোগ হয়নি। প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক না থাকায় গর্ভবতী নারী, শিশু ও বৃদ্ধ রোগীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন।
দুর্গম এলাকার রোগীরা অনেক সময় নদীপথ কিংবা পাহাড়ি রাস্তা পাড়ি দিয়ে হাসপাতালে এলেও কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা পান না। বরং তাদের বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। অনেক সময় বান্দরবানে যাওয়ার পথে রোগীরা মারা যান। এ কারণে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন তারা।
হাসপাতালের পরিসংখ্যানবীদ পঙ্কজ বড়ুয়া জানান, ২০২০ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এখানে ভর্তি হয়েছেন ৫ হাজার ১৯৮ জন রোগী। এর মধ্যে ৪৫৬ জনকে রেফার্ড করা হয় বান্দরবান সদর হাসপাতালে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ১৭ জন রোগী।
থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স চালক মংক্যসিং মারমা বলেন, “২০১৯ সালে চাকরিতে যোগদান করার পর থেকে অন্তত সাতজন রেফার্ড করা রোগী মাঝপথে আমার গাড়িতেই মারা গেছেন।”
শৈসাই মং মারমা তিন বছর আগে বিনা চিকিৎসায় তার মাকে মারা যেতে দেখেছেন। তিনি জানান, তার মা শৈমেপ্রু মারমা (৩৪) অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর হঠাৎ তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। রেমাক্রী বাজার থেকে নদীপথে থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান মাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাকে জেলা সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। ভাড়া গাড়িতে জেলা হাসপাতালে যাওয়ার সময় চিম্বুক বারো মাইল এলাকায় তার মা মারা যান।
লেংরু ম্রো নামে চার সন্তানের মা হারিয়েছেন স্বামীকে। তিনি জানান, তার স্বামী রেং য়ুং ম্রো (৪৫) কিডনি জটিলতা নিয়ে থানচি হাসপাতালে যান। সঙ্গে সঙ্গে সেখান থেকে তাকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। থানচি থেকে বান্দরবান যাওয়ার মাঝপথে মারা যান তার স্বামী।
স্থানীয় বাসিন্দা মংমে মারমা বলেন, “হাসপাতালে চিকিৎসক, ওষুধ ও যন্ত্রপাতির সংকট দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বদলি হলেও অনেকেই থানচিতে যোগ দেন না, ডিপুটেশনে থেকে যান সদর হাসপাতালে। ফলে এ অঞ্চলের পাহাড়ি ও বাঙালি প্রায় ৩০ হাজার মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।”
রিয়েং ম্রো নামে অপর বাসিন্দা বলেন, “পাহাড়ে বসবাসকারীদের অধিকাংশ গরিব। জেলা সদর হাসপাতালে রোগী নিয়ে যাওয়া ব্যয়বহুল ও কষ্টকর। রেমাক্রি, বড় মোদক, তিন্দু থেকে থানচি সদরে রোগী আনতেই অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। এরপর আবার বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করলে সাধারণ মানুষ কীভাবে চিকিৎসা করাবে?”
থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. মো. ওয়াহিদুজ্জামান মুরাদ বলেন, “বর্তমানে হাসপাতালে আমিসহ দুইজন চিকিৎসক রয়েছেন। একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাধীন। তিন রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ফলে পুরো হাসপাতাল পরিচালনার দায়িত্ব আমাকে একাই সামলাতে হচ্ছে।”
তিনি আরো বলেন, “জনবল ও সরঞ্জাম সংকটের কারণে গুরুতর রোগীদের রেফার্ড করা ছাড়া উপায় থাকে না। দীর্ঘ পথের কারণে অনেকেই জীবিত অবস্থায় সদর হাসপাতালে পৌঁছাতে পারেন না।”
বান্দরবান জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ শাহীন হোসাইন চৌধুরী বলেন, “শুধু বান্দরবান নয়, পুরো তিন পার্বত্য জেলাতেই চিকিৎসক সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। নতুন করে ৪৮তম বিসিএসের ডাক্তার পদায়ন না হওয়া পর্যন্ত এই সংকট পুরোপুরি সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও বিভাগীয় প্রধানকে বিষয়টি চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের আট-দশজন চিকিৎসককে বান্দরবানে বদলি করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”
ঢাকা/মাসুদ