গাজায় আর কত জিম্মি রয়ে গেছেন, কজন জীবিত
Published: 23rd, February 2025 GMT
যুদ্ধবিরতি চুক্তির আওতায় গত শনিবার গাজা থেকে আরও ছয় ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েলের দক্ষিণ অঞ্চলে নজিরবিহীন হামলা চালিয়ে আড়াই শতাধিক মানুষকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে গিয়েছিল।
ওই জিম্মিদের অনেকেই যুদ্ধবিরতি চুক্তির আওতায় মুক্তি পেয়েছেন। কেউ কেউ গাজায় মারা গেছেন। কয়েকটি মৃতদেহ ইসরায়েলের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েল থেকে ধরে নিয়ে যাওয়া জিম্মিদের কতজন মুক্তি পেয়েছেন, কতজন মারা গেছেন এবং আর কত জিম্মি এখনো জীবিত আছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে তার একটি হিসাব দিয়েছে আল-জাজিরা।
আল-জাজিরার হিসাব অনুযায়ী সেদিন ইসরায়েল থেকে ২৫১ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। জিম্মিদের মধ্যে ইসরায়েলি ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র, থাইল্যান্ড, নেপালসহ আরও বেশ কয়েকটি দেশের নাগরিকেরা ছিলেন।
আল-জাজিরা বলেছে, যুদ্ধবিরতির মধ্যে বন্দিবিনিময় এবং অন্যান্য চুক্তির মাধ্যমে ১৩৮ জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে হামাস।
তার মধ্যে ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে সাত দিনের একটি অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি চলে। সে সময় হামাস ১০৫ থেকে ১০৭ জন জিম্মিকে মুক্তি দেয়।
গত বৃহস্পতিবার চার জিম্মির মৃতদেহ ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করে হামাস।
গাজা অভিযান চালানোর সময় ইসরায়েলি সেনারা ৪০ জিম্মির মৃতদেহ উদ্ধার করেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ গাজায় ইসরায়েলের অভিযানের সময় ইসরায়েলি সেনাদের হাতে নিহত হন। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী-আইডিএফ তাদের সেই ‘ভুলবশত’ হামলার কথা স্বীকার করেছে।
আরও পড়ুনছয় জিম্মিকে ফেরত পেয়েও ফিলিস্তিনি বন্দীদের মুক্তি দিলেন না নেতানিয়াহু৯ ঘণ্টা আগেহামাস দাবি করেছে, গাজায় যেসব জিম্মি নিহত হয়েছেন তাদের বেশির ভাগই ইসরায়েলি হামলার মধ্যে পড়ে প্রাণ হারিয়েছেন।
গাজায় আরও ৬১ জন জিম্মি থাকার কথা। এই ৬১ জিম্মির মধ্যে ৩১ জনকে মৃত ঘোষণা করেছে ইসরায়েল।
গাজায় অভিযানের সময় ইসরায়েলি সেনারা আট জিম্মিকে জীবিত উদ্ধার করে।
আল–জাজিরার খবরে আরও বলা হয়েছে, গাজায় এখনো যে কজন জিম্মি রয়েছেন তাঁদের মধ্যে পাঁচজন ইসরায়েলের নাগরিক নন। ওই পাঁচজনের মধ্যে তিনজন থাইল্যান্ড, একজন নেপাল এবং একজন তানজানিয়ার নাগরিক। ধারণা করা হয়, জিম্মি থাইল্যান্ডের একজন এবং নেপালের নাগরিক এখনো জীবিত আছেন।
আরও পড়ুনজিম্মিদের একসঙ্গে মুক্তি দিতে ‘রাজি’ হামাস১৭ ঘণ্টা আগেদীর্ঘ প্রায় ১৬ মাস রক্তাক্ত সংঘাতের পর গত ১৯ জানুয়ারি থেকে গাজায় একটি আনুষ্ঠানিক যুদ্ধবিরতি শুরু হয়েছে। প্রথম ধাপের ৪২ দিনের যুদ্ধবিরতির সময় ৩৩ ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেওয়ার কথা হামাসের।
গত শনিবার হামাস ছয় জিম্মিকে মুক্তি দেয়। তাঁরা হলেন এলিয়া কোহেন, ওমের শেম-তোভ, ওমের ওয়েনকার্ট, তাল শোহাম, আভেরা মেনজিসটু ও হিশাম আল-সাইয়েদ। তাঁদের মধ্যে আভেরা ও হিশাম বেসামরিক নাগরিক। এ দুজন প্রায় এক দশক ধরে গাজায় বন্দী ছিলেন।
যুদ্ধবিরতির চুক্তির শর্ত অনুযায়ী এরই মধ্যে হামাস কয়েকবারে ২৫ জন জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে বলে শনিবার এএফপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
আরও পড়ুনজিম্মি শিরির মরদেহ কোথায় ছিল, কেন ভুল হয়েছিল, জানাল হামাস৪ ঘণ্টা আগে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য় ইসর য় ল ইসর য় ল র জন জ ম ম আল জ জ র র সময়
এছাড়াও পড়ুন:
আসামি না হয়েও স্বেচ্ছায় কারাগারে যাওয়া সেই যুবক প্রতারণা মামলায় গ্রেপ্তার
চট্টগ্রামে মাদকের একটি মামলায় আসামি সেজে আদালতে আত্মসমর্পণের পর কারাগারে যাওয়া এক যুবককে জালিয়াতি ও প্রতারণার মামলায় গ্রেপ্তার (শ্যোন অ্যারেস্ট) দেখিয়েছেন আদালত। তাঁর নাম মো. রাকিব। পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আজ মঙ্গলবার দুপুরে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এস এম আলাউদ্দিন মাহমুদ শুনানি শেষে এই আদেশ দেন। কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে প্রকৃত আসামি মো. সুমনের হয়ে আদালতে স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ করেন রাকিব। আদালতের আদেশে ১ জুলাই থেকে তিনি কারাগারে রয়েছেন।
নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (প্রসিকিউশন) মফিজ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, কারাগারে আটক রাকিবকে জালিয়াতি ও প্রতারণা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করে কোতোয়ালি থানা-পুলিশ। শুনানি শেষে আদালত তা মঞ্জুর করেন। আসামিকে রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে।
আদালত সূত্র জানায়, ২০২৪ সালের ৩১ আগস্ট নগরের আকবর শাহ থানার কৈবল্যধাম এলাকায় একটি পিকআপ ভ্যানে অভিযান চালিয়ে ৪০ কেজি গাঁজা উদ্ধার করে র্যাব, যার মূল্য ৪ লাখ টাকা। ঘটনাস্থল থেকে গ্রেপ্তার করা হয় গাড়িচালক রাহাত ইসলামকে। পালিয়ে যান চালকের সহকারী (হেলপার) মো. সুমন। এ ঘটনায় র্যাব কর্মকর্তা বাদী হয়ে আকবর শাহ থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করেন। তদন্ত শেষে চলতি বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। এতে রাহাত ইসলাম ও মো. সুমনকে আসামি করা হয়।
আদালত পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্রটি গ্রহণ করে পলাতক আসামি সুমনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। এরই মধ্যে সুমনের গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনার পূর্বধলা এলাকায় অভিযান চালায় পুলিশ। বিষয়টি জানতে পেরে সুমন নিজেকে কারামুক্ত রাখতে তাঁর পরিবর্তে নোয়াখালীর রাকিবকে আদালতে আত্মসমর্পণ করায় ১ জুলাই। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. মোস্তফা শুনানি শেষে আসামির জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠান। সুমনের হয়ে রাকিব আত্মসমর্পণের সময় তাঁর পক্ষে আইনজীবী ছিলেন ওয়াহিদ মুরাদ।
আদালতে একজনের পরিবর্তে আরেকজন আত্মসমর্পণের বিষয়টি ধরা না পড়লেও কারাগারে গিয়ে ধরা পড়ে। জাতীয় পরিচয়পত্রের ডেটাবেজে (তথ্যভান্ডার) ভোটারদের আঙুলের ছাপ সংরক্ষিত আছে। এ পদ্ধতিকে বলা হয় ফিঙ্গারপ্রিন্ট আইডেনটিফিকেশন অ্যান্ড ভেরিফিকেশন সিস্টেম। ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এ পদ্ধতি ব্যবহার শুরু করে চট্টগ্রাম কারা কর্তৃপক্ষ। এরই মধ্যে আঙুলের ছাপে ধরা পড়েছে অনেক বন্দীর আসল পরিচয়। এসব ঘটনায় মামলাও হয়েছে। ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি মাসের জুলাই পর্যন্ত আত্মসমর্পণ করে জালিয়াতির মাধ্যমে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে আসা ১৬ জনের আঙুলের ছাপে শনাক্ত করা হয়।
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ তত্ত্বাবধায়ক মো. ইকবাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, আদালত থেকে কারাগারে আসা প্রত্যেক নতুন আসামির আঙুলের ছাপ নেওয়া হয়। সেখানে আসামির জাতীয় পরিচয়পত্রে থাকা আসল পরিচয় উঠে আসে। ইকবাল হোসেন আরও বলেন, ‘সুমনের হয়ে কারাগারে আসা রাকিব স্বীকার করেছেন তিনি মাদক মামলার প্রকৃত আসামি নন। ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে তিনি সুমন সেজেছেন। তাঁকে বলা হয়েছে, দ্রুত কারাগার থেকে ছাড়িয়ে নেওয়া হবে। তাই তিনি রাজি হয়েছেন। বিষয়টি চিঠি দিয়ে আদালতকে জানানো হয়েছে।’
আরও পড়ুনচট্টগ্রামে ‘আয়নাবাজি’, ধরা পড়েছে আঙুলের ছাপে০৮ নভেম্বর ২০২৩কারাগার থেকে চিঠি পাওয়ার পর মামলা করার নির্দেশ দেন চট্টগ্রাম চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কাজী মিজানুর রহমান। একই সঙ্গে আসামিকে আত্মসমর্পণকারী আইনজীবী ওয়াহিদ মুরাদের কাছে কারণ ব্যাখ্যা চেয়েছেন আদালত। আদালতের প্রসিকিউশন শাখার আকবর শাহ থানার জিআরও সাইদুর রহমান বাদী হয়ে গত রোববার রাতে নগরের কোতোয়ালি থানায় প্রতারণা ও জালিয়াতির অভিযোগে মামলা করেন। মামলায় মো. রাকিব ও মো. সুমনকে আসামি করা হয়। সুমন এখনো পলাতক।