বাংলাদেশে ক্ষমতা পালাবদলে দুটি বিষয় ভারতের জন্য ‘অত্যন্ত উদ্বেগজনক’ বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। তার দাবি, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা হচ্ছে, যা দেশটির দৃষ্টিভঙ্গিতে বেশ প্রভাব ফেলছে; অন্যটি দু’দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি।

শনিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর বলেন, ‘‘প্রথমত, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর ধারাবাহিক হামলার ঘটনা; আমি মনে করি, এটা আমাদের চিন্তাভাবনার ওপর যথেষ্ট প্রভাব ফেলছে। এটা এমন একটা বিষয়, যা নিয়ে আমাদের কথা বলা উচিত এবং আমরা তা বলছি।’’

‘‘দ্বিতীয়ত, তাদের নিজেদের রাজনীতি আছে, আপনি একমত হতে পারেন বা না হতে পারেন, দিন শেষে আমরা প্রতিবেশী। তাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে, তারা আমাদের সঙ্গে কেমন সম্পর্ক চায়।’’

আরো পড়ুন:

গিলকে ফিরিয়ে পাকিস্তানের স্বস্তি

মহারণের আগে সব বিভাগেই পিছিয়ে ‘আনপ্রেডিকটেবল’ পাকিস্তান

এ সময় বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের ‘ভারতবিরোধী’ বক্তব্যকে ‘হাস্যকর’ আখ্যায়িত করেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বলেন, ‘‘বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো সদস্য যদি প্রতিদিন উঠে দাঁড়িয়ে সবকিছুর দোষ ভারতের ওপর চাপাতে থাকেন… আর কিছু কিছু বিষয়, আপনারা যদি খবরগুলো পড়েন, সম্পূর্ণ হাস্যকর।”

জয়শঙ্কর বলেন, ‘‘আমরা খুব স্পষ্ট বার্তা দিয়েছি— আপনারা আমাদের প্রতিবেশী, আমরা চাই পরিস্থিতি শান্ত হোক, আমরা চাই বাণিজ্য, যোগাযোগ এবং অন্যান্য বিষয় এগিয়ে যাক; কিন্তু যদি ক্রমাগত এমন বার্তা বা সংকেত দেওয়া হয়, যেটা ভারতের প্রতি শত্রুতামূলক, সেটা নিশ্চয় আমাদের ভালো লাগবে না।”

‘‘আমরা অবশ্যই আমাদের সব প্রতিবেশীর মঙ্গল চাই। বাংলাদেশের সাথে আমাদের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে; এটা বিশেষ এক সম্পর্ক, যা ১৯৭১ সাল থেকে চলে আসছে। কিন্তু গত বছর কিছু ঘটনা ঘটেছে, আপনারা সবাই জানেন। আমার মনে হয়, আমাদের জন্য বিষয়টা খুবই উদ্বেগজনক।”

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমি যদি প্রতিদিন সকালে উঠেই আপনাকে দোষারোপ করতে থাকি, তখন আপনি একা একা বলতে পারবেন না যে, ‘আমি আপনার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক চাই’। তাহলে এই সিদ্ধান্তটা তাদেরই নিতে হবে যে, তারা আমাদের সাথে কেমন সম্পর্ক চায়।’’

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হলে বাংলাদেশে মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে সেখানেই আছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তার দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের কয়েকজন গ্রেপ্তার হলেও অধিকাংশই এখনো আত্মগোপনে।

এর মধ্যেই ছাত্র-জনতার আন্দোলনের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ সরকারের চালানো দমন-পীড়নকে ‘গণহত্যা’ বিবেচনা করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুবনালে শেখ হাসিনাসহ অন্যদের বিচারের উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। একাধিক মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে পরোয়ানাও জারি করা হয়েছে।

এরপর প্রত্যর্পণ চুক্তির আওতায় তাকে দেশে ফেরত পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে গত ২৩ ডিসেম্বর ভারত সরকারকে ‘কূটনৈতিকপত্র’ পাঠায় অন্তর্বর্তী সরকার। তবে ভারত এখনো তার জবাব দেয়নি।

শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পর থেকেই বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্কে এক ধরনের টানাপোড়েন চলছে। বিচারের জন্য শেখ হাসিনাকে ফেরত চাওয়ার পাশাপাশি দিল্লিতে বসে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির প্রচেষ্টার অভিযোগ তার বিরুদ্ধে এনেছে ইউনূস সরকার।

অপরদিকে, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে এক্ষেত্রে পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছে ভারত সরকার। পাশাপাশি ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা ও অপতথ্য’ এবং ‘অতিরঞ্জিত প্রচারণার’ অভিযোগ বাংলাদেশ সরকার করেছে।

বিভিন্ন বিষয়ে পাল্টাপাল্টি বিবৃতি দেওয়ার পাশাপাশি সীমান্ত ইস্যু এবং শেখ হাসিনার বক্তব্য ঘিরে পাল্টাপাল্টি কূটনীতিক তলবের ঘটনাও ঘটেছে।

শুক্রবার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিংয়ে এক সাংবাদিক জানতে চান, “বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা বিভিন্ন ভারতবিরোধী বক্তব্য দিচ্ছেন, কোনো কোনো সময় সেগুলো বেশ হিংসাত্মক। এগুলো দ্বিপক্ষীয় আলোচনা বা দ্বিপক্ষীয় দরকষাকষিতে প্রভাব ফেলছে কি না।”

উত্তরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রাণধীর জয়সওয়াল বলেন, “হ্যাঁ, আমরা এ ধরনের বক্তব্যগুলো নজরে নিয়েছি, সেগুলো অবশ্যই ভালো কিছু নয়। কোনো সুনির্দিষ্ট বিষয়ে এর প্রভাব কী পড়বে, তা সংশ্লিষ্ট খাতের ব্যক্তিরা তুলে ধরবেন।”

ঢাকা/সুচরিতা/এনএইচ 

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর পরর ষ ট রমন ত র র পরর ষ ট র সরক র র র জন য আম দ র আপন র র ওপর

এছাড়াও পড়ুন:

ইরেশ যাকেরের বিরুদ্ধে মামলা অত্যন্ত উদ্বেগজনক: ফারুকী

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন রাজধানীর মিরপুরে মাহফুজ আলম শ্রাবণ হত্যার অভিযোগে অভিনেতা ইরেশ যাকেরসহ ৪০৮ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে।‎ গত ২০ এপ্রিল নিহতের ভাই মোস্তাফিজুর রহমান বাপ্পী ঢাকার চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলার আবেদন করেন।

ইরেশ যাকের বিরুদ্ধে মামলা হওয়ায় বিনোদন অঙ্গনের অনেক তারকারাই কথা বলছেন। এবার সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী সোমবার (২৮ এপ্রিল) সাংবাদিকদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন। এ সময় ইরেশ যাকেরের মামলার বিষয়টি উঠে আসে।

মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, এখন নিজে সরকারের অংশ; অ্যাক্টিভিসস্ট নই। যে কারণে কথা কম বলে কাজ বেশি করতে হবে। ইরেশ যাকেরকে ব্যক্তিগতভাবে চিনি। জানি, তিনি জুলাইয়ের আন্দোলনেও জড়িত ছিলেন। ফলে তার বিরুদ্ধে এই মামলা অত্যন্ত উদ্বেগজনক।

ইরেশ যাকেরের বিরুদ্ধে করা মামলার বিষয়ে তিনি বলেন, মামলা করেছেন একজন ব্যক্তি। এটি রাষ্ট্রপক্ষ কিংবা সরকারের দেওয়া মামলা না। এখন মামলা করার স্বাধীনতা পেয়েছি সবাই। কেউ কেউ এটার অপব্যবহার করছে। আমি বিশ্বাস করি পুলিশ এটির সঠিক তদন্ত করে, যেটি সত্য সেটির পক্ষে থাকবে আর যেটি মিথ্যা সেটি বাতিল করে দেবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ইরেশ জাকেরের বিরুদ্ধে মামলা খুবই বিরক্তিকর: ফারুকী
  • ইরেশ যাকেরের বিরুদ্ধে মামলা অত্যন্ত উদ্বেগজনক: ফারুকী