জার্মানিতে কীভাবে গঠিত হবে জোট সরকার
Published: 25th, February 2025 GMT
জার্মানির ২১তম জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে গত রোববার। এতে একক কোনো দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা বা সরকার গঠনের মতো ভোট পায়নি। এখন জার্মানিতে জোট বেঁধে সরকার গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। বিষয়টি জার্মানির রাজনীতিতে মোটেও নতুন নয়।
জার্মানির পার্লামেন্টের নির্বাচনে সর্বশেষ ফলাফল অনুযায়ী ৬৩০ আসনের মধ্য ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়ন পার্টি (সিডিইউ ও সিএসইউ) ২০৮ আসন, কট্টরবাদী অলটারনেটিভ ফর ডয়েচল্যান্ড (এএফডি) ১৫২ আসন, সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এসপিডি) ১২০টি আসন, পরিবেশবাদী গ্রিন পার্টি ৮৫টি আসন এবং বাম দল দ্য লিংকে পেয়েছে ৬৪ আসন।
ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়নের প্রধান ফ্রিডরিখ মের্ৎস কট্টরবাদী এএফডির সঙ্গে জোট করবেন না বলে আগেই জানিয়ে দিয়েছেন। তিনি সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি ও পরিবেশবাদী গ্রিন পার্টির সঙ্গে জোট বাঁধার সম্ভাবনার কথা বলেছেন। গতকাল দুপুরে তিনি চ্যান্সেলর ভবনে বর্তমান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজের সঙ্গে জোট গঠনের জন্য সাক্ষাৎ করেন।
জার্মানি মৌলিক শাসনতান্ত্রিক আইন অনুসারে, নতুন পার্লামেন্ট বা বুন্ডেস্ট্যাগকে নির্বাচনের ৩০ দিনের মধ্যে, অর্থাৎ আগামী ২৫ মার্চের মধ্যে তার প্রথম অধিবেশন আহ্বান করতে হবে। তবে জোট আলোচনা সাপেক্ষে আরও বেশি সময় নিতে পারে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো বুন্ডেস্ট্যাগ নিজে থেকে চ্যান্সেলর নির্বাচনের পদক্ষেপ নিতে পারবে না। মৌলিক আইন অনুসারে জার্মান প্রেসিডেন্টকে পার্লামেন্ট অধিবেশন শুরু করার সংকেত দিতে হবে।
এ ক্ষেত্রে নিয়ম অনুযায়ী, সব থেকে বেশি আসন পাওয়া দল ক্রিশ্চিয়ান গণতান্ত্রিক ইউনিয়নকে জোটসঙ্গী খুঁজে আগামী ২৫ মার্চের মধ্য সরকার গঠন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে দলগুলোকে আলোচনা সাপেক্ষে জোট সরকার রূপরেখা তৈরি করবে এবং এই রূপরেখা জোটের দলগুলোকে পৃথকভাবে বিশেষ সম্মেলনের মাধ্যমে দলীয় কর্মীদের সমর্থন পেতে হবে। সদ্য নির্বাচিত পার্লামেন্ট সদস্যদের ভোটে নতুন চ্যান্সেলর নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত বর্তমান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ তাঁর পদে বহাল থাকবেন।
যদি জোট আলোচনায় ব্যর্থ হয়, তবে তাৎক্ষণিকভাবে নতুন নির্বাচন হবে না। এমন পরিস্থিতিতে জার্মানির প্রেসিডেন্ট নতুন নির্বাচন বা চ্যান্সেলর নির্বাচনের জন্য কোনো তাগিদ দেবেন না। সে ক্ষেত্রে তিনি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করবেন। সর্বশেষ এই আলোচনা ব্যর্থ হলে নতুন নির্বাচন সম্ভব হবে।
জোট সরকার গঠন নিয়ে যেসব মূল বিষয় এ মুহূর্তে আলোচনায় সামনে আসবে, তা হলো অভিবাসননীতি, অর্থনৈতিক ও করনীতি, বৈদেশিক ও নিরাপত্তানীতি, সামাজিক নীতি ও পরিবহননীতি। এ বিষয়গুলো নিয়ে সম্ভাব্য জোটভুক্ত দলগুলোর মধ্য ভিন্নমত রয়েছে।
অভিবাসননীতিতে বড় ধরনের দ্বন্দ্বের আশঙ্কা করা হচ্ছে। ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়ন জার্মানির সীমান্তে রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীদের প্রত্যাখ্যান করতে চায়। সামাজিক গণতান্ত্রিক দলটি বিষয়টিকে ইউরোপীয় আইনের সঙ্গে বেমানান বলে মনে করছে। এ ছাড়া ইউনিয়ন দলটি সহায়ক সুরক্ষার অধিকারী ব্যক্তিদের জন্য পারিবারিক পুনর্মিলন স্থগিত করতে চায়।
জার্মানির অর্থনীতিকে চাঙা করতে হবে, তা নিয়ে দলগুলো একমত। বিগত দুই বছরের মন্দার পর এ বছর জার্মানিতে কেবল ন্যূনতম প্রবৃদ্ধির আশা করা হচ্ছে। জার্মানির কঠিন অর্থনৈতিক পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে ব্যবসায়িক সমিতি এবং ট্রেড ইউনিয়নগুলো দ্রুত সরকার গঠনের জন্য চাপ দিচ্ছে; কিন্তু করনীতিতে উভয় দলের মধে৵ বড় পার্থক্য রয়েছে।
বৈদেশিক ও নিরাপত্তানীতিতে ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়ন এবং সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটিকরা রাশিয়ান আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ইউক্রেনকে তার লড়াইয়ে সমর্থন অব্যাহত রাখতে সম্মত আছে। তবে অতিরিক্ত অর্থায়ন কীভাবে করা উচিত, তা বিতর্কিত রয়েছে। সম্প্রতিককালে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ইউরোপনীতি নিয়ে উভয় দলটির একই ধরনের মতামত রয়েছে। উভয় দলই ইউরোপীয় ঐক্যকে এগিয়ে নিতে প্রত্যাশী।
সামাজিক নীতির ক্ষেত্রেও জোট আলোচনা জটিল হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সামাজিক অবকাঠামোতে আরও বেশি রাষ্ট্রীয় অর্থ বিনিয়োগের শর্তে ঋণ স্থগিতাদেশ সংস্কারের জন্য মৌলিক আইন সংশোধনের সমাধানে আসতে হবে। মৌলিক আইনে অন্তর্ভুক্ত ঋণ–নিষেধাজ্ঞা সংস্কারের জন্য পার্লামেন্টে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রয়োজন। সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি যে নাগরিক ভাতা বহাল করেছিল, ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়ন তা আংশিক বাতিল করতে চায় বা একটি নতুন মৌলিক সুরক্ষা দিয়ে তা প্রতিস্থাপন করতে চায়।
পরিবহননীতিতে ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়ন স্থানীয় এবং আঞ্চলিক পরিবহনের জন্য দেশব্যাপী ডয়েচল্যান্ড বা জার্মান টিকিটের ভবিষ্যৎ উন্মুক্ত রাখার কথা বলেছে। মূল সমস্যা হলো এই ব্যবস্থা বহাল রাখার জন্য দরকার অর্থায়ন। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো জার্মানির রেলওয়ের অবকাঠামো ও কর্মীদের বেতনকাঠামো সংস্কার।
জার্মানির পার্লামেন্ট বা বুন্দেস্ট্যাগকে এবার জোট সরকারের জন্য গলার কাঁটা হবে কট্টরবাদী জার্মানির জন্য বিকল্প দলটির ১৫২ জন সংসদ সদস্য। তাঁরা পার্লামেন্টে প্রধান বিরোধী দল হিসেবে নানা সুযোগ গ্রহণ করবেন, তা আগেভাগেই বলা যায়।
মূলত উল্লিখিত পাঁচটি বিষয় নিয়েই নতুন জোট সরকার গঠনের আলোচনা সত্বর শুরু হবে। অতীত ইতিহাসে জোটবদ্ধ হয়ে সরকার গঠনের ক্ষেত্রে আলোচনা সাপেক্ষ ছাড় দেওয়ার নীতি নিয়েই জার্মানিতে শান্তিপূর্ণভাবে গণতান্ত্রিক সরকার চলছে, যা সারা বিশ্বের গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে বিরল।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সরক র গঠন র গণত ন ত র ক জ ট সরক র ন র জন য র র জন র জন ত ন করত ক আইন দলগ ল
এছাড়াও পড়ুন:
নিজস্ব তত্ত্বাবধানে নাগরিক সেবা চালাবেন ইশরাক
মেয়রের দায়িত্ব বুঝে না পেলেও নিজস্ব তত্ত্বাবধানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) নাগরিক সেবা চালু রাখার ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন। তবে শপথের দাবিতে নগর ভবন চত্বরে বিরতিহীন কর্মসূচি চলবে। কর্মসূচি চলাকালে নগর ভবনের প্রধান ফটকে তালা থাকবে। জরুরি নাগরিক সেবাসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাড়া অন্যরা কেউ ভবনে ঢুকতে পারবেন না।
ঈদুল আজহার বিরতির পর গতকাল রোববার ঢাকাবাসীর চলমান অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে ইশরাক হোসেন এসব কথা বলেন। তবে মেয়রের শপথ ছাড়া সংস্থার কার্যক্রম তদারকি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশ্লেষকরা।
ইশরাক বলেন, জন্মনিবন্ধন সনদসহ দৈনন্দিন জরুরি সেবা চালু থাকবে। অন্যান্য উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য কর্মকর্তারা অফিস করতে পারবেন না। নগর ভবনের প্রধান ফটকের তালা খোলা হবে না, এটা আন্দোলনের প্রতীক। জনগণের দৈনন্দিন সেবা আমাদের তত্ত্বাবধানে চালু থাকবে। তিনি বলেন, রাজনৈতিক কারণেই আমাকে শপথ পড়ানো হচ্ছে না। স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আদালতের রায়কে উপেক্ষা করে আইন অমান্য করেছেন।
এনসিপির সমালোচনা করে ইশরাক বলেন, এনসিপির একটি বিপথগামী ক্ষুদ্র অংশ নির্বাচন কমিশনের সামনে মব সৃষ্টি করে ভীতি দেখায়। পরে নির্বাচন কমিশন আর এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে চাইছে না। তারা নির্বাচন কমিশনকে বাইরে থেকে প্রভাবিত করছে। আদালত আর সংবিধানও মানতে চাইছে না। নাগরিক সেবা বন্ধ থাকায় মশার উৎপাত নিয়ে প্রশ্ন করা হলে ইশরাক বলেন, মশক নিয়ন্ত্রণকারী বিভাগ, স্বাস্থ্য ও কনজারভেন্সি বিভাগের সঙ্গে নগর ভবনে মঙ্গল ও বুধবার মিটিং করব।
নিজস্ব তত্ত্বাবধানে নাগরিক সেবা চালু রাখার বিষয়ে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সাবেক সভাপতি শেখ ফজলে রেজা সুমন বলেন, ইশরাক আদালতের রায় পেলেও অফিসিয়ালি দায়িত্ব পাননি। তাহলে তিনি কীভাবে সংস্থার কার্যক্রম তদারকি করবেন? এটা এক ধরনের মব জাস্টিসের মতো অবস্থা। বিষয়টি সরকারকেই বিএনপির সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কারণ এক মাস ধরে ডিএসসিসির মতো একটি সেবা সংস্থার কার্যক্রম বন্ধ থাকতে পারে না। এ জন্য জনগণের যে ভোগান্তি হচ্ছে, এর দায় কে নেবে?
গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট ফর পলিসি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের পরিচালক ও বিআইপির সভাপতি ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, বিএনপি একটি গণতান্ত্রিক দল। ইশরাকের শপথের বিষয়টি এখন আদালত ও নির্বাচন কমিশনের বিষয়। তবে তাঁর কারণে দেশের বিদ্যমান আইনকে অবজ্ঞা করে যদি রাজধানীর ৯০ শতাংশের নাগরিক সেবা বিঘ্নিত হয়, তাহলে এই দায় বিএনপির ওপরেই বর্তাবে।