চট্টগ্রামে বিএনপি নেতা নোমানের জানাজায় শোকার্ত মানুষের ঢল
Published: 28th, February 2025 GMT
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী আবদুল্লাহ আল নোমানের জানাজা আজ শুক্রবার জুমার নামাজের পর চট্টগ্রাম নগরের জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদ প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করেন। প্রিয় নেতাকে শেষবিদায় দিতে হাজির হন হাজারো নেতা-কর্মী।
জানাজায় অংশ নিতে সকাল থেকে দূরদূরান্তের মানুষ আসতে থাকেন জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদে। কারও হাতে ফুলের তোড়া, বুকে শোকের কালো ব্যাজ। মসজিদ কমপ্লেক্স ভরে যায় মুসল্লিতে। মাঠও কানায় কানায় ভরে যায় জুমার নামাজের আগে। জানাজা শেষে রাষ্ট্রীয়ভাবে গার্ড অব অনার দেওয়া হয় বীর মুক্তিযোদ্ধা বর্ষীয়ান এই রাজনীতিবিদকে।
গত মঙ্গলবার সকালে ঢাকায় বিএনপির এই ভাইস চেয়ারম্যানের মৃত্যু হয়। এরপর হেলিকপ্টারযোগে গতকাল বৃহস্পতিবার তাঁর মরদেহ ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে আনা হয়। এর আগে ঢাকায় ধানমন্ডি, জাতীয় সংসদ ভবনসহ কয়েকটি জায়গায় জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ আসরের নামাজের পর চট্টগ্রামের রাউজানের গহিরা হাইস্কুল মাঠে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে আবদুল্লাহ আল নোমানকে দাফন করার কথা রয়েছে।
জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদ মাঠে জানাজায় অংশ নেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র শাহাদাত হোসেন, কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, নগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহ, উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম আকবর খন্দকার, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ইদ্রিস মিয়া, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মাহমুদুল ইসলাম, জামায়াতে ইসলামী চট্টগ্রাম মহানগরের আমীর শাহজাহান চৌধুরী, আবদুল্লাহ আল নোমানের ছেলে সাঈদ আল নোমান প্রমুখ।
জানাজায় অংশ নিতে আসা বেশির ভাগ নেতা-কর্মীর চোখে ছিল পানি। জানাজায় অংশ নেওয়া নগর যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহেদ প্রথম আলোকে বলেন, শেষবারের মতো প্রিয় নেতাকে বিদায় জানাতে এসেছেন। মানুষের স্মৃতিতে অমর হয়ে থাকবেন আবদুল্লাহ আল নোমান।
জানাজার আগে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘নোমান ভাই পরিপূর্ণ রাজনীতিবিদ। তিনি সামাজিক আন্দোলন করেছেন। তিনি বিনয়ী ভদ্র মানুষ। মনেপ্রাণে রাজনীতিবিদ ছিলেন, নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ ছিল। নোমান ভাই গণমানুষের নেতা ছিলেন।’
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন মেয়র শাহাদাত হোসেন বলেন, আবদুল্লাহ আল নোমান গণমানুষের নেতা ছিলেন। চট্টলার জন্য তিনি অনেক কিছু গড়ে গেছেন। নগর জামায়াত ইসলামের আমির শাহজাহান চৌধুরী বলেন, ‘আমরা একসঙ্গে এরশাদবিরোধী আন্দোলন করেছিলাম। তিনি সাধারণ মানুষের রাজনীতি করেছেন।’
জানা গেছে, ১৯৪৫ সালে জন্ম নেওয়া আবদুল্লাহ আল নোমানের বড় ভাই আবদুল্লাহ আল হারুন ছিলেন চট্টগ্রামে ছাত্র ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। ষাটের দশকের শুরুতে হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে নোমান যোগ দেন ছাত্র ইউনিয়নে। মেননপন্থী ছাত্র ইউনিয়নের চট্টগ্রাম মহানগরের সাধারণ সম্পাদক, বৃহত্তর চট্টগ্রামের সভাপতি ও কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।
ছাত্রজীবন শেষ করে মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর হাত ধরে নোমান যোগ দেন শ্রমিক রাজনীতিতে। পূর্ববাংলা শ্রমিক ফেডারেশনের সহসভাপতি ছিলেন তিনি। ১৯৭০ সালে তাঁকে ন্যাপের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। যুদ্ধ শেষে আবারও ন্যাপের রাজনীতিতে সক্রিয় থাকেন। জিয়াউর রহমান বিএনপি গঠনের পর ১৯৮১ সালে যোগ দেন দলটিতে।
আবদুল্লাহ আল নোমান চট্টগ্রামের কোতোয়ালি আসন থেকে এ পর্যন্ত বিএনপির হয়ে তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। ১৯৯১, ১৯৯৬ (১৫ ফেব্রুয়ারি) ও ২০০১ সালে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এর মধ্যে ১৯৯১ সালে তাঁকে সরকারের মৎস্য ও পশুসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়। ২০০১ সালে বিএনপি সরকার গঠনের পর বিভিন্ন মেয়াদে তিনি খাদ্যমন্ত্রী, শ্রম ও কর্মসংস্থানমন্ত্রী এবং বন ও পরিবেশমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আবদ ল ল হ আল ন ম ন ব এনপ র কর ছ ন র জন ত মন ত র সদস য মসজ দ
এছাড়াও পড়ুন:
দুই সপ্তাহের মধ্যে তেহরানে সুপেয় পানি ফুরিয়ে যেতে পারে
তীব্র খরার কবলে পড়েছে ইরানের রাজধানী তেহরান। সেখানে বাসিন্দাদের সুপেয় পানির প্রধান উৎসটি দুই সপ্তাহের মধ্যে শুকিয়ে যাওয়ার ঝুঁকি দেখা দিয়েছে।
ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম আইআরএনএ গতকাল রোববার এ খবর জানিয়েছে।
তেহরানে পানি সরবরাহ কোম্পানির পরিচালক বেহজাদ পারসার বরাত দিয়ে আইআরএনএর খবরে বলা হয়, তেহরানে খাবার পানি সরবরাহের পাঁচটি উৎসের একটি আমির কবির বাঁধ। সেটিতে এখন মাত্র ১ কোটি ৪০ লাখ ঘনমিটার পানি আছে। এটি জলাধারটির মোট ধারণক্ষমতার মাত্র ৮ শতাংশ।
বেহজাদ পারসা সতর্ক করে দিয়ে বলেন, এই পরিমাণ পানি দিয়ে মাত্র দুই সপ্তাহ তেহরানের খাবার পানির চাহিদা মেটানো যাবে।
ইরানি সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, তেহরানে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৩০ লাখ ঘনমিটার পানির প্রয়োজন পড়ে।কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে তীব্র খরার মোকাবিলা করছে ইরান। গত মাসে স্থানীয় এক কর্মকর্তা বলেছিলেন, তেহরান প্রদেশে এবার বৃষ্টির যে মাত্রা, তেমনটা গত এক শতাব্দীতে খুব একটা দেখা যায়নি।
এক কোটির বেশি মানুষের নগর তেহরান তুষারাচ্ছন্ন আলবোর্জ পর্বতমালার দক্ষিণ ঢালে অবস্থিত। এই পর্বতমালার সর্বোচ্চ উচ্চতা ৫ হাজার ৬০০ মিটার (১৮ হাজার ৩৭০ ফুট) পর্যন্ত। এই পর্বতমালা থেকে উৎপন্ন নদীগুলো বহু জলাধারে পানির জোগান দেয়।
বেহজাদ পারসা বলেন, এক বছর আগেও আমির কবির বাঁধে ৮ কোটি ৬০ লাখ ঘনমিটার পানি ছিল। কিন্তু তেহরান অঞ্চলে বৃষ্টির পরিমাণ প্রায় শতভাগ হ্রাস পেয়েছে।
তেহরানে পানি সরবরাহ করা বাকি জলাধারগুলোর বিষয়ে কোনো তথ্য দেননি এই কর্মকর্তা।
ইরানি সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, তেহরানে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৩০ লাখ ঘনমিটার পানির প্রয়োজন পড়ে।
এক বছর আগেও আমির কবির বাঁধে ৮ কোটি ৬০ লাখ ঘনমিটার পানি ছিল। কিন্তু তেহরান অঞ্চলে বৃষ্টির পরিমাণ প্রায় শতভাগ হ্রাস পেয়েছে।বেহজাদ পারসা, তেহরানে পানি সরবরাহ কোম্পানির পরিচালকপানি সাশ্রয়ের পদক্ষেপ হিসেবে সাম্প্রতিক দিনগুলোতে তেহরানের বেশ কয়েকটি এলাকায় বারবার সরবরাহ বন্ধ রাখা হচ্ছে বলে জানা গেছে। আর চলতি গ্রীষ্মে ঘন ঘন পানি সরবরাহ বন্ধ রাখার ঘটনাও ঘটেছে।
জুলাই ও আগস্টে পানি ও বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য দুই দিন সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছিল। ইরানে সে সময় তাপপ্রবাহের মধ্যে প্রতিদিন একাধিকবার লোডশেডিং হয়েছে।
ওই দুই মাসে তেহরানে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস (১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট) ছাড়িয়ে গেছে, কোথাও কোথাও তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস (১২২ ডিগ্রি ফারেনহাইট) ছুঁয়ে গিয়েছিল।
জুলাই ও আগস্ট মাসে তেহরানে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস (১০৪ ফারেনহাইট) ছাড়িয়ে গেছে, কোথাও কোথাও তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস (১২২ ফারেনহাইট) ছুঁয়ে ছিল।ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ‘আজ যেভাবে আলোচনা হয়েছে, পানিসংকট পরিস্থিতি তার চেয়েও গুরুতর।’
ইরানজুড়ে পানিসংকট একটি বড় সমস্যা, বিশেষ করে দেশের দক্ষিণের শুষ্ক প্রদেশগুলোতে। ভূগর্ভস্থ সম্পদ ব্যবহারে অব্যবস্থাপনা ও সম্পদের অতিরিক্ত ব্যবহারকে পানি ঘাটতির জন্য দায়ী করা হয়। জলবায়ু পরিবর্তনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব পরিস্থিতি আরও খারাপ করতে ভূমিকা রাখছে।
আরও পড়ুনপ্রচণ্ড গরমে পানির ঘাটতি বেড়ে যাওয়ায় ইরানিদের কম পানি ব্যবহারের আহ্বান২০ জুলাই ২০২৫