ইউরোপীয় ফুটবলে শেষের লড়াই দারুণ জমে উঠেছে। লা লিগায় রিয়াল মাদ্রিদ ও আতলেতিকো মাদ্রিদকে সরিয়ে শীর্ষ স্থানের লাগাম নিজেদের দখলে নিয়েছে বার্সেলোনা। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে ১৩ পয়েন্ট এগিয়ে শীর্ষে থাকা লিভারপুলের শিরোপা জয় সময়ের ব্যাপার মাত্র।

বড় কোনো অঘটন না ঘটলে হয়তো আগামী কয়েক ম্যাচের মধ্যে শিরোপা নিশ্চিত করবে লিভারপুল। লিভারপুলের মতো শিরোপার স্বপ্ন দেখছে বুন্দেসলিগার জায়ান্ট বায়ার্ন মিউনিখও। তারাও ছুটছে অপ্রতিরোধ্য গতিতে। তবে এখনো হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চলছে সিরি ‘আ’তে। ইন্টার মিলান, নাপোলি ও আতালান্তার যেকোনো দল শেষ পর্যন্ত জিততে পারে শিরোপা।

এগিয়ে গেল বার্সা

কদিন আগেও ৭ পয়েন্টে পিছিয়ে লা লিগার পয়েন্ট তালিকার ৩ নম্বরে ছিল বার্সেলোনা। কিন্তু মৌসুমের শেষ ভাগে এসে পুরোপুরি বদলে গেছে চিত্র। পয়েন্ট হারিয়ে শীর্ষে থাকা রিয়াল নেমে গেছে তিনে, আর বার্সেলোনা উঠে এসেছে শীর্ষে। ২৬ ম্যাচ শেষে বার্সেলোনার পয়েন্ট এখন ৫৭। সর্বশেষ গতকাল রাতে রিয়াল সোসিয়েদাদকে ৪-০ গোলে হারিয়েছে বার্সা।

আরও পড়ুনরিয়াল–আতলেতিকোকে পেছনে ফেলে সবার ওপরে বার্সা১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

তাদের চেয়ে ১ পয়েন্ট পিছিয়ে দুইয়ে আছে আতলেতিকো। ২৬ ম্যাচে তাদের পয়েন্ট ৫৬। নিজেদের সর্বশেষ ম্যাচে আতলেতিকো ১-০ গোলে হারিয়েছে অ্যাথলেটিক বিলবাওকে। এই তালিকায় তিনে থাকা রিয়াল সর্বশেষ ম্যাচে বড় ধাক্কা খেয়েছে। রিয়াল বেতিসের মাঠে হেরে গেছে ২-১ গোলে। লা লিগায় এখনো ১২ রাউন্ডের খেলা বাকি। এ সময়ের মধ্যে দৃশ্যপট আর বদলায় কি না, সেটাই দেখার অপেক্ষা।

তাহলে কি লিভারপুলই চ্যাম্পিয়ন

অবিশ্বাস্য কিছু ঘটলেই কেবল এ মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগে শিরোপা হাতছাড়া হতে পারে লিভারপুলের। বর্তমানে ২৮ ম্যাচ শেষে লিভারপুল এগিয়ে আছে ১৩ পয়েন্টের বিশাল ব্যবধানে। ৫৪ পয়েন্ট নিয়ে ২ নম্বরে থাকা আর্সেনাল অবশ্য এক ম্যাচ কম খেলেছে। কিন্তু এতটা পিছিয়ে থাকা আর্সেনালের পক্ষে সামনের ম্যাচগুলো দিয়ে টপকে যাওয়া বেশ কঠিনই।

আরও পড়ুনলিভারপুল কবে চ্যাম্পিয়ন হবে২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

এর মধ্যে সর্বশেষ দুই ম্যাচের একটি হার এবং অন্যটিতে ড্র করে আত্মবিশ্বাসও হারিয়ে ফেলেছে গানাররা। ফলে শেষ পর্যন্ত হয়তো এবারও রানার্সআপ হয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হবে মিকেল আরতেতার দলকে। প্রিমিয়ার লিগে তিন, চার ও পাঁচে আছে যথাক্রমে নটিংহাম, ম্যানচেস্টার সিটি ও চেলসি। যারা মূলত শীর্ষে চারে থেকে আগামী মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগে জায়গা নিশ্চিত করার জন্য লড়ছে।

ইন্টারের ঘাড়ে নাপোলির নিশ্বাস

এই সপ্তাহে ইতালিয়ান লিগ সিরি ‘আ’তে মুখোমুখি হয়েছিল পয়েন্ট তালিকার শীর্ষ দুই দল ইন্টার মিলান ও নাপোলি। কিন্তু ম্যাচটা ১-১ গোলে ড্র হওয়ায় সুবিধা নিতে পারেনি কোনো দল। ২৭ ম্যাচে ৫৮ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষ স্থান ধরে রেখেছে ইন্টার। সমান ম্যাচে ১ পয়েন্ট কম অর্থাৎ ৫৭ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে আছে নাপোলি। সিরি ‘আ’তে শিরোপা লড়াইয়ে আছে আতালান্তাও। তাদের পয়েন্ট ২৭ ম্যাচে ৫৫। সামনের দিনগুলোয় এই লিগের লড়াইয়ের চিত্রেও আসতে পারে ব্যাপক পরিবর্তন।

শিরোপা পুনরুদ্ধারের পথে বায়ার্ন

জার্মান বুন্দেসলিগায় আর ১০ রাউন্ড বাকি। কোনো নাটকীয়তা না ঘটলে এই লিগে শিরোপা পুনরুদ্ধার করতে যাচ্ছে বায়ার্ন মিউনিখ। ২৪ ম্যাচ শেষে শীর্ষে থাকা দলটির পয়েন্ট ৬১। সমান ম্যাচে বর্তমান চ্যাম্পিয়নস লেভারকুসেনের পয়েন্ট ৫৩। অর্থাৎ লেভারকুসেন পিছিয়ে আছে ৮ পয়েন্টে।

আরও পড়ুন৭ ম্যাচে ৩ গোল, ৩ অ্যাসিস্ট ও ৪ ম্যাচসেরা, নেইমার বললেন, স্বপ্নটা ভাঙাবেন না ২ ঘণ্টা আগে

সর্বশেষ ম্যাচে স্টুটগার্টকে ৩-১ গোলে হারিয়েছে বায়ার্ন। আর নিজেদের ম্যাচে আইনট্রাখট ফ্রাঙ্কফুর্টকে ৪-১ গোলে হারায় লেভারকুসেন। এখন শেষ অধ্যায়ে বড় কোনো নাটকীয়তার অপেক্ষাতেই হয়তো থাকবে জাবি আলোনসোর দল।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আতল ত ক ইন ট র

এছাড়াও পড়ুন:

পশ্চিমবঙ্গের চার শ্রমিককে বিদেশি বলে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানোর চেষ্টা ভারতের

আসাম রাজ্যের পর গোটা ভারত থেকেই বাংলাদেশি বলে ভারতীয় নাগরিকদের বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানো (পুশইন) হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। শুধু তা–ই নয়, প্রমাণের অভাবে আবার তাঁদের অনেককে ফিরিয়েও আনতে হচ্ছে বলে পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত অঞ্চল থেকে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে পশ্চিমবঙ্গেরই সংবাদমাধ্যম।

দক্ষিণ ও মধ্য বাংলার দুই জেলা বর্ধমান ও মুর্শিদাবাদের চার পরিযায়ী শ্রমিক মহারাষ্ট্রে কাজ করতে গিয়েছিলেন। বাংলাদেশি বলে চিহ্নিত করে মহারাষ্ট্র পুলিশ তাঁদের ভারতের সীমান্ত নিরাপত্তারক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) হাতে তুলে দেয়। এরপর বিএসএফ তাঁদের বাংলাদেশে ঠেলে দেয়। এ চারজনই আবার মুসলমান।

মুম্বাইয়ে কাজ করতে যাওয়া মুর্শিদাবাদ ও বর্ধমানের এই চার পরিযায়ী শ্রমিককে মহারাষ্ট্র পুলিশ বাংলাদেশি তকমা লাগিয়ে বিএসএফের হাতে তুলে দেয়। কোনো রকম যাচাই না করেই তাঁদের বাংলাদেশে ঠেলে দেয় বিএসএফ। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও রাজ্য পুলিশের উদ্যোগে গতকাল রোববার বিকেলে তাঁদের উদ্ধার করা হয়। বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিবি) কাছ থেকে ওই তিন নাগরিককে ফেরত নিয়ে বিএসএফ তাঁদের কোচবিহার জেলার পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে বলে জানা গেছে।

চারজনের মধ্যে তিনজনই মুর্শিদাবাদ জেলার বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দা। তাঁরা হলেন হরিহরপাড়ার তরতিপুর গ্রামের বাসিন্দা নাজিমুদ্দিন মণ্ডল, ভগবানগোলার মহিষাস্থলি গ্রামপঞ্চায়েতের হোসেনপুর গ্রামের বাসিন্দা মেহবুব শেখ ও বেলডাঙার কাজিশাহার বাসিন্দা মিনারুল শেখ। অন্যজন পূর্ব বর্ধমানের মন্তেশ্বর থানার কুলুট গ্রামের বাসিন্দা মোস্তাফা কামাল। তাঁরা প্রত্যেকেই পরিযায়ী শ্রমিক। মহারাষ্ট্রের মুম্বইয়ে তাঁরা রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। হেফাজতে নেওয়ার পাঁচ দিন পর তাঁদের উদ্ধার করা হলো বলে জানানো হয়েছে।

পশ্চিমবঙ্গের সংবাদপত্র ‘পুবের কলম’ আজ সোমবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, তাঁদের কাছে বৈধ নথিপত্র থাকা সত্ত্বেও তাঁদের বাংলাদেশি বলে চিহ্নিত করে দুই প্রকৃত বাংলাদেশি নাগরিকের সঙ্গে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ।

পশ্চিমবঙ্গের সংবাদপত্র ‘পুবের কলম’ আজ সোমবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, তাঁদের কাছে বৈধ নথিপত্র থাকা সত্ত্বেও তাঁদের বাংলাদেশি বলে চিহ্নিত করে দুই প্রকৃত বাংলাদেশি নাগরিকের সঙ্গে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। দুই দিন ধরে তাঁরা কোচবিহার জেলার মেখলিগঞ্জ থেকে কিছুটা দূরে জিরো পয়েন্টে ছিলেন।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সহায়তায় মুঠোফোন থেকে ভিডিও বার্তায় ওই চার শ্রমিক তাঁদের দুর্দশার কথা জানান। তারপরেই তাঁদের ফেরানোর তৎপরতা শুরু করেন পশ্চিমবঙ্গ পরিযায়ী শ্রমিক কল্যাণ পরিষদের চেয়ারম্যান তথা রাজ্যসভার সংসদ সদস্য সামিরুল ইসলামসহ অন্য জনপ্রতিনিধিরা। পুলিশও বিষয়টি বিএসএএফকে জানায়।

হরিহরপাড়ার বাসিন্দা শামীম রহমান গণমাধ্যমে বলেন, ‘স্থানীয় তৃণমূলের রাজনৈতিক নেতাদের বিষয়টি জানানো হয়। তারপর তাঁদের ফেরানোর তৎপরতা শুরু হয়। তাঁরা উদ্ধার হয়ে ঘরে ফিরছেন ভেবে ভালো লাগছে।’

সূত্রের খবর, বাংলাদেশি সন্দেহে চারজনকে আটক করে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের হাতে তুলে না দিয়ে ১০ জুন বিএসএফের হাতে তুলে দেয় মহারাষ্ট্র পুলিশ। তাঁদের মুম্বাই থেকে আগরতলা ও পরে কোচবিহারের মেখলিগঞ্জে পাঠানো হয়। ওই শ্রমিকদের টাকা, মুঠোফোনও কেড়ে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

হরিহরপাড়ার তরতিপুর গ্রামের বাসিন্দা নাজিমুদ্দিন দুই বছর ধরে মুম্বাইয়ে রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। গতকাল সকালে তাঁর স্ত্রী পিংকি বিবি হরিহরপাড়ার বিধায়ক নিয়ামত শেখের সঙ্গে দেখা করেন। বিধায়কের মাধ্যমে বৈধ নথি সংসদ সদস্য সামিরুল ইসলাম ও প্রশাসনের কর্তাদের কাছে পাঠানো হয়। তারপরই তাঁদের ঘরে ফেরানোর তৎপরতা শুরু হয়।

হরিহরপাড়ার বিধায়ক নিয়ামত শেখ বলেন, নাজিমুদ্দিন এ দেশেরই নাগরিক। তাঁর বৈধ নথি ও নাগরিকত্বের পরিচয়পত্র রয়েছে।

বিধায়ক নিয়ামত শেখ আরও বলেন, ‘তাঁর মতো আরও তিনজনকে বাংলাদেশি তকমা লাগিয়ে বাংলাদেশে ঠেলে দেয় কেন্দ্রের বিএসএফ। গতকাল বিকেলে তাঁরা বিএসএফের হেফাজতে আসেন। আশা করছি, খুব তাড়াতাড়ি তাঁরা ঘরে ফিরবেন।’

এ বিষয়ে মুর্শিদাবাদ পুলিশের তরফে গতকাল জানানো হয়, আটক ব্যক্তিদের কাগজপত্র রোববার বিএসএফের হাতে তুলে দেয় রাজ্য পুলিশ। এরপরে বিএসএফ যাবতীয় কাগজপত্র রাজ্য পুলিশের সঙ্গে যৌথভাবে যাচাইয়ের পরে তা বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিবি) হাতে তুলে দেয়।

এরপর বিএসএফ সবাইকে ফেরানোর ব্যবস্থা করে এবং কোচবিহার পুলিশের হাতে তুলে দেয়। মুর্শিদাবাদ ও বর্তমানের জেলা পুলিশের একটি দল ওই পরিযায়ী শ্রমিকদের ফিরিয়ে আনতে ইতিমধ্যে কোচবিহারের উদ্দেশে রওনা দিয়েছে। আজ সোমবার তাঁদের নিজে নিজে জেলায় ফেরানো হবে বলে জানা গেছে।

চারজনের মধ্যে তিনজনই মুর্শিদাবাদ জেলার বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দা। তাঁরা হলেন হরিহরপাড়ার তরতিপুর গ্রামের বাসিন্দা নাজিমুদ্দিন মণ্ডল, ভগবানগোলার মহিষাস্থলি গ্রামপঞ্চায়েতের হোসেনপুর গ্রামের বাসিন্দা মেহবুব শেখ ও বেলডাঙার কাজিশাহার বাসিন্দা মিনারুল শেখ। অন্যজন পূর্ব বর্ধমানের মন্তেশ্বর থানার কুলুট গ্রামের বাসিন্দা মোস্তাফা কামাল।

বাঙালি বলে হেনস্তা পশ্চিমবঙ্গে

তবে শুধু দরিদ্র পরিযায়ী শ্রমিকই নন, পশ্চিমবঙ্গে উচ্চ ও মধ্যবিত্ত অনেকেই সম্প্রতি অভিযোগ করেছেন, তাঁদের অন্যভাবে হেনস্থা করা হচ্ছে।

দিল্লির এক অধ্যাপিকা গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, গত কয়েক মাসে চারবার দক্ষিণ কলকাতার প্রধান পাসপোর্ট অফিসে গিয়েও তিনি তাঁর ২০০৭ সালের পুরোনো পাসপোর্ট নবায়ন করতে পারেননি।

এই অধ্যাপিকা বলেন, ‘আমাকে পুলিশের তরফে বলা হয়েছে, এখানে প্রচুর বাংলাদেশি ঢুকেছেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। সে কারণে আমাদের যাঁদের প্রায় ২০ বছর ধরে বৈধ ভারতীয় পাসপোর্ট রয়েছে, তাঁদেরও সহজে পাসপোর্ট নবায়ন করা হচ্ছে না।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ