তিন শিল্প এলাকায় সাত মাসে বন্ধ ৯৫ কারখানা
Published: 5th, March 2025 GMT
বিগত সাত মাসে গাজীপুর, সাভার, নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদীর ৯৫টি কারখানা স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়েছে। এর বাইরে কয়েকটি কারখানা অস্থায়ীভাবে বন্ধ হয়েছে। কারখানাগুলো বন্ধ হওয়ায় প্রায় ৬২ হাজার-কর্মচারী শ্রমিক কাজ হারিয়েছেন। অধিকাংশ শ্রমিক এখনো তাঁদের বকেয়া মজুরি এবং সার্ভিস বেনিফিট (চাকরির অবসায়নের পর প্রাপ্ত আর্থিক সুবিধা) বুঝে পাননি।
কারখানা বন্ধের কারণ মোটাদাগে তিনটি। প্রথমত, বেশির ভাগ মালিক আর্থিক সংকট ও ক্রয়াদেশ না থাকায় কারখানা বন্ধ করেছেন। দ্বিতীয়ত, আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত মালিকদের কয়েকটি কারখানায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছিল। সেগুলো বন্ধ হয়েছে। তৃতীয়ত, ক্ষমতাচ্যুত বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠ কিছু ব্যবসায়ী আত্মগোপনে থাকায় তাঁদের কারখানা রুগ্ণ হয়ে পড়েছে।
শিল্প পুলিশ জানায়, বন্ধ হওয়া কারখানার মধ্যে গাজীপুরে রয়েছে ৫৪টি, নারায়ণগঞ্জ-নরসিংদীতে ২৩টি ও সাভার-আশুলিয়ায় ১৮টি। এসব কারখানায় ৬১ হাজার ৮৮১ জন শ্রমিক-কর্মচারী কাজ করতেন। বেকার শ্রমিকেরা প্রায়ই কারখানা খুলে দেওয়া ও বকেয়া পাওনার দাবিতে রাস্তায় নেমে আন্দোলন করছেন। এতে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বাড়ছে।
জানতে চাইলে নিট পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম প্রথম আলোকে বলেন, হঠাৎ বন্ধ হয়ে যাওয়া কারখানার শ্রমিকদের বকেয়া বেতন-ভাতা জোগাড় করতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হচ্ছে। প্রায় সব কটির কারখানার শ্রমিকের ক্ষতিপূরণ বাকি আছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বেকার হওয়া শ্রমিকদের কেউ কেউ চাকরি পাচ্ছেন। কেউ কেউ গ্রামে চলে যাচ্ছেন। অনেকে বেকার থাকছেন।
বন্ধ কারখানার সংখ্যা বাড়ছেরাজধানীর পার্শ্ববর্তী নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী ও মুন্সিগঞ্জ জেলায় প্রায় ২ হাজার শিল্পপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। তার মধ্যে ২৩ প্রতিষ্ঠান স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়েছে। এসব শিল্পকারখানার প্রায় ৬ হাজার শ্রমিক-কর্মচারী চাকরি হারিয়েছেন।
শিল্প পুলিশ-৪-এর কর্মকর্তারা জানান, গত সাত মাসে গ্রিন বাংলা হোম টেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ, এশিয়ান ফ্যালকন গার্মেন্টস, জিএল ফ্যাশন, মাস্টার টেক্সটাইল, ওয়েস্ট বেস্ট অ্যাটায়ার্স, স্টার কাটিং অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংসহ ২১টি কারখানা বন্ধ হয়। সব কারখানাই ছোট ও মাঝারি। আর্থিক সংকট ও পর্যাপ্ত ক্রয়াদেশের অভাবে কারখানা বন্ধ হয়েছে।
এর বাইরে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর মালিকানাধীন গাজী গ্রুপের দুই কারখানার কয়েকটি ইউনিট বন্ধ রয়েছে। নারায়ণগঞ্জে অবস্থিত কারাখানা দুটিতে কাজ করতেন চার হাজার শ্রমিক-কর্মচারী। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এক দফা ও গোলাম দস্তগীর গাজীকে গ্রেপ্তারের পর আরেক দফায় দুষ্কৃতকারীদের লুটপাট ও অগ্নিসংযোগে কারখানা দুটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়।
গাজীপুরে ছোট-বড় মিলিয়ে মোট নিবন্ধিত কারখানা ২ হাজার ১৭৬টি। এর মধ্যে অর্ধেকের বেশি তৈরি পোশাক কারখানা, সংখ্যা ১ হাজার ১৫৪টি। গত আগস্টের পর জেলার ৫৪টি কারখানা বন্ধ হয়েছে। বন্ধ হওয়া কারখানার প্রায় সব কটিই তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতের।
গাজীপুরে বন্ধ হওয়া কারখানার মধ্যে উল্লেখযোগ্য টিএমএস অ্যাপারেলস, নায়াগ্রা টেক্সটাইল, মাহমুদ জিন্স, হার্ডি টু এক্সেল, পলিকন লিমিটেড, অ্যাপারেল প্লাস, মাহমুদ জিন্স অ্যাপারেলস, টিআরজেড ও দি ডেল্টা নিট।
মাহমুদ জিন্স অ্যাপারেলসের শ্রমিক শাহিন আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘কারখানাটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর বেকার হয়ে বসে আছি। নতুন চাকরি পাচ্ছি না। এখন মাঝে মাঝে অটোরিকশা চালাই।’
গাজীপুরে বন্ধ হওয়া ৫৪ কারখানার ৪৫ হাজার ৭৩২ শ্রমিক-কর্মচারী চাকরি হারিয়েছেন। এর মধ্যে বেক্সিমকোর ৩৩ হাজার ২৪৪ জন শ্রমিক রয়েছেন। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি গাজীপুরের সারাবো ও কাশিমপুরে বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের ১৪ কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হয়। সরকার ৯ মার্চ থেকে বেক্সিমকোর শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ শুরু করবে। পাওনার পরিমাণ ৫২৫ কোটি ৪৬ লাখ টাকা।
অন্যদিকে ঢাকার নিকটবর্তী সাভার, আশুলিয়া ও ধামরাইয়ে শিল্পকারখানা রয়েছে ১ হাজার ৮৬৩টি। এর মধ্যে তৈরি পোশাক কারখানা ৭৪৫টি। গত সাত মাসে স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়েছে ১৮টি তৈরি পোশাক কারখানা। এতে বেকার হয়েছেন ১০ হাজার ১২৭ জন শ্রমিক-কর্মচারী।
শিল্প পুলিশ-১-এর কর্মকর্তারা জানান, গত সাত মাসে সাভার, আশুলিয়া ও ধামরাই অঞ্চলের জেনারেশন নেক্সট ফ্যাশন, বেস্ট ওয়ান সোয়েটার, এমএস সোয়েটার, সাভার স্পোর্টসওয়্যার, বার্ডা গ্রুপ, র্যামস ফ্যাশন অ্যান্ড এমব্রয়ডারি, প্রিয়াঙ্কা ফ্যাশন, জাভান টেক্স নিটওয়্যার ইত্যাদি কারখানা বন্ধ হয়।
আশুলিয়ার ইয়ারপুর ইউনিয়নের ধনাইদ এলাকার জেনারেশন নেক্সট ফ্যাশন গত আগস্টে বন্ধ হয়। কারখানাটিতে কাজ করতেন সাড়ে চার হাজার শ্রমিক-কর্মচারী। গত বৃহস্পতিবার কারখানাটিতে গিয়ে দেখা যায়, তালাবদ্ধ ফটকে নোটিশ ঝুলছে। তাতে উল্লেখ করা হয়েছে, আগামী নভেম্বর পর্যন্ত সময়ে ছয় কিস্তিতে শ্রমিক-কর্মচারীদের সার্ভিস বেনিফিট দেওয়া হবে। ২০ মার্চ প্রথম কিস্তিতে সার্ভিস বেনিফিট বাবদ ৩ কোটি ২০ লাখ টাকা পরিশোধ করবে কারখানা কর্তৃপক্ষ।
শ্রমিকের ক্ষতিপূরণ কী হবেচাকরি হারানো শ্রমিকের ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করতে সরকারি পর্যায়ে উদ্যোগ দরকার বলে মনে করেন শ্রমিকনেতা বাবুল আক্তার। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, গত সাত মাসে বন্ধ হওয়া অধিকাংশ কারখানা শ্রমিকেরা ক্ষতিপূরণ পাননি। কিছু শ্রমিক যাঁরা ক্ষতিপূরর্ণ পেয়েছেন, সেটিও লামছাম (যৎসামান্য)। তিনি বলেন, সরকার উদ্যোগ নেওয়ার কারণে বেক্সিমকোর শ্রমিকেরা হয়তো ন্যায্য ক্ষতিপূরণ পাবেন। এমনভাবে অন্য কারখানার শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ নিশ্চিতে সরকারের উচ্চপর্যায়ে একটি ত্রিপক্ষীয় কমিটি করা দরকার।
[প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করছেন প্রথম আলোর সাভারের নিজস্ব প্রতিবেদক এবং প্রতিনিধি, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ]
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ গত স ত ম স প রথম আল সরক র র আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
শেখ মুজিবুর রহমান এ দেশের স্বাধীনতা চান নাই : টিপু
নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব এড. আবু আল ইউসুফ খান টিপু বলেছেন, ১৯৭১ সালে শেখ মুজিবুর রহমান এ দেশের স্বাধীনতা চান নাই। উনি চেয়েছিল পূর্ব পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে কিন্তু সেদিন বাংলাদেশের জনগণ ও শহীদ জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে সাড়ে সাত কোটি বাঙালি নিজেদের রক্ত দিয়ে যুদ্ধ করে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশকে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে ঠিকই স্বাধীনতা করেছিল।
বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) বিকেল ৪টায় সোনাকান্দা হেভেন কমিউনিটি সেন্টারে বন্দর ২০নং ওয়ার্ড বিএনপির প্রাথমিক সদস্য নবায়ন ও নতুন সদস্য ফরম বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তার বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর আমরা কি দেখলাম শেখ মুজিবুর স্বাধীনতার চেতনাকে লুন্ঠিত করলেন তার ছাত্রলীগ যুবলী বাহিনী দিয়ে ব্যাংক ডাকাতি শুরু করালেন। মা-বোনের ইজ্জত লুন্ঠিত শুরু করলেন। শুরু করলেন দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি।
যার ফলে দেশে দুর্ভিক্ষ চালু হলো। শেখ মুজিবর বলল আমি সাড়ে সাত কোটি কম্বল আনলাম চিৎকার করে বলেছে এই গাজি গোলাম মোস্তফা প্রশ্ন করলেন আমার কম্বল কোথায়। শেখ মুজিবুর রহমান সেদিন বলে ছিলেন বিশ্বের সবাই পেল স্বর্ণের খনি আর আমি পেলাম চোরের খনি।
তিনি আরও বলেন, আর অপরদিকে জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিলেন ১৯৭৫ সালে ৭ই নভেম্বর সিপাহী বিপ্লবের মাধ্যমে সকল জনতা মিলে তার কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করলেন। ক্ষমতা নিয়ে উনি কি করলেন সর্বপ্রথম সংসদে বিসমিল্লাহির রহমানের রাহিম সংযোজন করলেন।
বহুদলীয় রাজনীতি চালু করলেন। উনি সংবাদপত্রের স্বাধীনতা দিলেন বাক স্বাধীনতা তৈরি করলেন। যার ফলে সকল সংবাদ কর্মীরা স্বাধীন সংবাদপত্র পেয়ে আমাদের পক্ষে-বিপক্ষে সবকিছু লিখতে পারেন।
বন্দর ২০নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি জিল্লুর রহমানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেন প্রধানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এড. সাখাওয়াত হোসেন খান, প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব এড.আবু আল ইউসুফ খান টিপু, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, বন্দর থানা বিএনপির সভাপতি শাহেনশাহ আহমেদ, নারায়ণগঞ্জ সদর থানা বিএনপির সভাপতি মাসুদ রানা, বন্দর থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক রানা।
এছাড়াও অতিথি হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন, বন্দর থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি আমির হোসেন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলী আহম্মদ, ২০নং ওয়ার্ড বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি মাসুদুর রহমান, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ আলম, সাংগঠনিক সম্পাদক ইসারুল হক রাহাত, বন্দর থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব মোশারফ হোসেন মশুসহ বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ।