‘দিনের বেলা গ্রামের নারী-পুরুষ সবাই মিলে পাহারা দিই। তিন পুলিশও থাকে এখানে। সন্ধ্যা হলেই নামে তাণ্ডব, পুলিশ যখনই সরে বা ডিউটি বদলের মাঝে একাধিক নৌকা লাগিয়ে বোমা মেশিনে শুরু হয় পার কাটা। এভাবে কাটতে থাকলে অদ্বৈতবাড়ী থেকে শাহ্‌ আরেফিন (রহ.) মাজারমুখী সড়ক নদীতে বিলীন হয়ে যাবে।’
তাহিরপুর সীমান্তে থাকা দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সবচেয়ে বড় হিন্দু ধর্মীয় উৎসবের 
স্থান অদ্বৈত মন্দিরের পাশে দাঁড়িয়ে শুক্রবার বিকেলে এসব কথা বলছিলেন বিশ্বম্ভরপুরের রামেন্দু কুমার দাস রানু। রানু জানান, রাজারগাঁওয়ের সবাই জানে স্বেচ্ছাসেবক লীগের জেলা সহসভাপতি জাঙ্গালহাটির বাসিন্দা বোরহান উদ্দিন ও ডালারপারের শাহানশাহ্‌র নির্দেশে শ্রমিকরা এখানকার পার কাটছে বহুদিন ধরে। স্থানীয়রা এ বিষয়ে কথা বললে রাতে এসে মারধর করে তাদের লোকজন।
পাশে দাঁড়ানো আরেক ব্যক্তি বলেন, বোরহান ও শাহানশাহ্‌কে গ্রেপ্তার করে শায়েস্তা না করলে এই পার কাটা থামবে না। গত সরকারের সময়ে তাদের সমালোচনা করার সাহসই কারও ছিল না। এখনও নেই। পার কেটে বালু বিক্রি করেই তারা কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছে।
গ্রামের সিরাজুল ইসলাম জানান, এসব নিয়ে কথা বললেই মারামারি হয়। পুলিশ কখন আসে আর কখন যায়, সবই তাদের জানা থাকে। পুলিশ না থাকলেই নৌকা লাগিয়ে মেশিন দিয়ে শুরু হয় পার কাটা। সড়কের পাশে এসে শুক্রবারও মেশিন লাগিয়েছিল তারা। এই সড়ক ভাঙলে মন্দিরও যাবে নদীতে। যাদুকাটায় শতকোটি টাকা ব্যয়ে শাহ্‌ আরেফিন-অদ্বৈত সেতুর কাজ চলছে। এভাবে বালু কাটতে থাকলে এই সেতুও পড়বে হুমকিতে।
গ্রামের বাসিন্দা ও অদ্বৈত মন্দির পরিচালনা কমিটির সহসভাপতি মধুসূদন রায় গেল দু-তিন দিনে নদীর পার কাটার ভয়াবহতা দেখিয়ে বলেন, প্রশাসন এসে দু’-একজনকে ধরে নিলেও, যারা পার কাটার গডফাদার, তাদের কাজ তারা ঠিকই চালায়।
দুই ঘণ্টা রাজারগাঁও এলাকায় অবস্থানকালে গ্রামের বয়োজ্যেষ্ঠরা বলেন, পার কাটার সঙ্গে জড়িত সবাই রাজারগাঁও জাঙ্গালহাটির বোরহান এবং ডালারপারের শাহানশাহ্‌র লোকজন। তারা মালেক, জামাল, রতন, কবির, বিল্লালসহ কিছু লোককে দিয়ে এসব করায়। বিল্লাল যুবলীগের স্থানীয় ওয়ার্ড কমিটির সভাপতি। পাঁচ আগস্টের আগে তাদের দাপট আরও বেশি ছিল।
স্থানীয় আরেক জনপ্রতিনিধি বলেন, লাউড়েরগড় আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশে ছোট একটি খাল ছিল, সেখান থেকে তারা বালু তুলতে তুলতে খালকে বড় নদীতে পরিণত করেছে। এখন লাউড়েরগড় আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ও পড়েছে হুমকির মুখে। গ্রামের কিছু তরুণ জানায়, বোরহান উদ্দিন স্বেচ্ছাসেবক লীগ করলেও তাঁর ভাই আব্দুল মালেক বিএনপির সঙ্গে জড়িত। নদীর পার কাটার সময় বোরহানের পাশাপাশি আব্দুল মালেকও সক্রিয় থাকে।
এ প্রসঙ্গে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা বোরহান উদ্দিন জানান, গত শুক্রবারও মসজিদে জুমার নামাজ আদায়ের পর এই পার কাটা নিয়ে সবাইকে সচেতন করেছেন। নিজে জড়িত থাকলে তিনি সেটা করতেন না। শাহানশাহ্‌ বলেন, তিনি বালুর ব্যবসা করলেও সেখানকার পার কাটেননি।
ইউএনও আবুল হাসেম বলেন, রাজারগাঁও, অদ্বৈতবাড়ি, লামাশ্রম, শাহ্‌ আরেফিন-অদ্বৈত সেতু এলাকায় যাদুকাটার পার কাটা ঠেকাতে কয়েকদিন অভিযান হয়েছে, কয়েকজনকে দণ্ড দেওয়া হয়েছে, তবু থামানো যাচ্ছে না সেখানকার পার কাটা। বোরহান উদ্দিনসহ কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে তিনি বলেন, এসব অপরাধীকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় না আনলে, পার কাটা ঠেকানো যাবে না। বিষয়টি পুলিশ সুপারকে জানাবেন তিনি।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ল টপ ট র জ রগ

এছাড়াও পড়ুন:

গণতান্ত্রিক শক্তির ঐক্যের ওপর নির্ভর করবে সংলাপের সাফল্য: আলী রীয়াজ 

গণতান্ত্রিক দলগুলোর ঐক্যের ওপর নির্ভর করবে সংলাপের সাফল্য। এ মন্তব্য করেছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। মঙ্গলবার জাতীয় সংসদের এলডি হলে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সঙ্গে সংলাপের সূচনা বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের বিষয়ে আলী রীয়াজ বলেন, অনেক বিষয়ে ঐকমত্য আছে। বিভিন্ন বিষয়ে ভিন্ন মত দেখতে পাই, সেগুলো আলোচনার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হব। গণতান্ত্রিক সমাজ অবশ্যই ভিন্ন ভিন্ন মতের সমাজ। আমরা সকলেই এক ভাষায় কথা বলব না। তবে আমাদের লক্ষ্য এক। সেই জায়গায় ঐক্যবদ্ধ আছি, থাকব। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক শক্তির ঐক্যের ওপর নির্ভর করবে আমরা কতটুকু সাফল্য অর্জন করতে পারব। 

সংলাপের অংশ নেওয়া সকলের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অভিন্ন উল্লেখ করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি বলেন, আমরা চাই, দেশের মানুষ চায়, যারা প্রাণ দিয়েছেন তাদের কাছে আমাদের অঙ্গীকার ও দায় হচ্ছে, যেন সুযোগকে হাতছাড়া না করি। আমরা প্রকৃতপক্ষে রাষ্ট্র বিনির্মাণে প্রক্রিয়া শুরু করতে পারি। 

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের লক্ষ্যের বিষয়ে আলী রীয়াজ বলেন, বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে যে গণতন্ত্রের সংগ্রাম, বিশেষ করে ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদী শাসন দেশের প্রাতিষ্ঠানিক সমস্ত রকম সম্ভাবনাকে প্রায় তিরোহিত করে দিয়েছিল। যার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক শক্তিগুলো লড়াই করেছে, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি অন্যতম অংশীদার থেকেছে। সেই প্রক্রিয়াকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া কমিশনের লক্ষ্য। 

আলী রীয়াজ বলেন, সকলে মিলে আমরা একটি জাতীয় সনদ তৈরি করতে চাই। এটা কেবল ঐকমত্য কমিশনের আকাঙ্খার বিষয় নয়, এটি কেবল সরকারের বিষয় নয়। আজকে আমরা যে কথা বলতে পারছি, স্বাধীনতার পর প্রথমবারের মতো প্রকৃতপক্ষে রাষ্ট্র বিনির্মাণে সকলে মিলে, সকলে একত্রে বসে কথা বলতে পারছি। পথ খুঁজবার চেষ্টা করছি। সেটা সম্ভব হয়েছে কমপক্ষে ১৪ শ’ মানুষের রক্তপাত ও প্রাণনাশের মধ্য দিয়ে। 

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় আরও উপস্থিত আছেন কমিশনের সদস্য সফর রাজ হোসেন, ড. বদিউল আলম মজুমদার, ড. ইফতেখারুজ্জামান।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দেশে ক্ষমতার পরিবর্তন হলেও শ্রমজীবী মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি: জাসদের শ্রমিক জোট
  • শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ৩০ হাজার করার দাবি টিইউসির
  • স্বেচ্ছাশ্রমে চট্টগ্রামে খাল খনন করছে বিএনপি
  • গণতান্ত্রিক শক্তির ঐক্যের ওপর নির্ভর করবে সংলাপের সাফল্য: আলী রীয়াজ