তুচ্ছ ঘটনায় ছাত্রদলকর্মী ও বহিরাগতদের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) কয়েকজন শিক্ষার্থীকে মারধর করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা।

বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতন আইইআর ভবন মাঠে এ মারধরের ঘটনা ঘটে। 

প্রক্টর বরাবর দেওয়া অভিযোগপত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের আজারুল ইসলাম বিপ্লব, অর্ণব সরকার, চারুকলার ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের অঙ্কিতা বশাক, কনক কুমার চাকমা, মো.

রাজিবুল হাসান রূপক, মো, নূর ইকবাল সানি, প্রকৃতি সাহা, জাকিয়া পারভিন ও অনন্যা আচার্য স্বাক্ষর করেন। 
অভিযোগপত্রে লোক প্রশাসন বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শাকিব ও আইন বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের কাপিলসহ মোট ৭-৮ জন মিলে এ হামলা চালায় বলে জানান ভুক্তভোগীরা।

আরো পড়ুন:

‘ওসিকে বলেন আসতে, আমি ইউনিয়ন ছাত্রদলের প্রেসিডেন্ট’

ছাত্রীকে ‘ধর্ষণচেষ্টার’ অভিযোগ: ছাত্রদল নেতাসহ ২ জনের বিরুদ্ধে মামলা

বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতন আইইআর ভবন মাঠে শাখা ছাত্রদলের উদ্যোগে ইফতার মাহফিল চলছিল। হামলার নেতৃত্ব দানকারী শাকিবের গলায় ছাত্রদলের ইফতার মাহফিলের সেচ্ছাসেবক কার্ড ঝুলানো ছিল। এছাড়া হামলার কয়েকটি ফুটেজেও সাকিবের গলায় ছাত্রদলের কার্ড ঝুলতে দেখা গেছে।

ভুক্তভোগীরা অভিযোগপত্রে বলেন, আমরা পুরাতন আইইআর ভবন প্রাঙ্গণে ইফতার করার জন্য যাচ্ছিলাম। বাস্কেটবল গ্রাউন্ডের পাশ দিয়ে রাস্তা পার হওয়ার সময় একটা বাইক প্রচণ্ড জোরে আসে। আমাদের কারণে তাদের বাইক স্লো করতে হয়েছে। এজন্য তারা আমাদের সাথে খারাপ ব্যবহার ও মারমুখি আচরণ করে।

এর একটু পর আমরা যখন ইফতার করতে বসি, তখন তারা বহিরাগতসহ কয়েকটা বাইক নিয়ে আসে। আমাদের সঙ্গে কোনো কথাবার্তা না বলেই অতর্কিত হামলা করে। এ সময় তারা মেয়েদের গায়েও হাত তুলেছে। কয়েকজন নিরাপত্তা কর্মী ও আনসার কর্মী আশেপাশে থাকলেও তারা এগিয়ে আসেনি। উল্টো হামলাকারীদের চলে যাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে। 

ভুক্তভোগীরা আরও বলেন, হামলাকারীরা চলে যাওয়ার সময় আমাদের ছবি ও ভিডিও নেয় এবং যাওয়ার সময় দেখে নেওয়ার হুমকি দেয়। এমতাবস্থায় আমরা ক্যাম্পাসে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। 

ঘটনার বিষয়ে শাখা ছাত্রদলের সভাপতি আলাউদ্দিন মহসিন বলেন, “আজ আমাদের অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক এসেছিলেন। প্রোগ্রাম শেষে আমি তাকে নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। বাইরে কী হয়েছে সে ব্যাপারে খবর নিতে পারিনি।”

তিনি বলেন, “৫ আগস্ট পরবর্তী আমাদের কেউ এখন পর্যন্ত মব জাস্টিসের মতো ঘটনায় যুক্ত হননি। এরপরেও আমরা এ বিষয়ে বিস্তারিত খোঁজখবর নেব। কারো বিরুদ্ধে যদি প্রমাণ পাই তাহলে অবশ্যই সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করব।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর সাইদ বিন কামাল চৌধুরী বলেন, “আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অভিযোগ গ্রহণ করেছি। এ নিয়ে আমরা প্রক্টরিয়াল বডিতে আলোচনা করব। অপরাধীদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”

ঢাকা/মিজান/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ছ ত রদল শ ক ষ বর ষ র ছ ত রদল র আম দ র ইফত র

এছাড়াও পড়ুন:

নগর উন্নয়নে সবুজকে কেন্দ্রে রাখতে হবে

বাসযোগ্য নগরী গড়ে তুলতে কমপক্ষে ৩০ শতাংশ সবুজ অঞ্চল রাখতে হয়। এ জন্য সব সংস্থার সমন্বয়ে স্বল্প–মধ্য–দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা দরকার। শুধু নগর নয়, টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিতে সারা দেশের জন্য প্রকৃতিভিত্তিক সমাধান (নেচার–বেজড সলিউশন) দরকার। জীবনযাপনে যেন প্রকৃতি ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেটাও একই সঙ্গে নিশ্চিত করতে হবে।

বুধবার ঢাকার ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে নগর উন্নয়নে প্রকৃতির সুরক্ষা নিশ্চিতে করণীয় বিষয়ক এক তথ্য সংকলন অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন নগরবিশেষজ্ঞরা। প্রকৃতি সংরক্ষণের আন্তর্জাতিক জোট (আইইউসিএন) বাংলাদেশ এবং গ্লোবাল সেন্টার অন অ্যাডাপটেশন (জিসিএ) যৌথভাবে সংকলনটি প্রণয়ন করেছে, যার অর্থায়ন করেছে যুক্তরাজ্য সরকার। এতে ২০টি বিস্তৃতভাবে প্রয়োগযোগ্য ‘নেচার–বেজড সলিউশন’ উদ্যোগ উপস্থাপন করা হয়েছে, যাতে শহর পরিকল্পনাকারী, নীতিনির্ধারক ও উন্নয়ন অংশীদারদের জন্য একটি কৌশলগত দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

প্রকৃতিভিত্তিক সমাধান বা নেচার–বেজ সলিউশন হচ্ছে প্রকৃতির কোনো ধরনের ক্ষতি না করে বা মাটি, বায়ু, পানিসহ প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য অটুট রেখে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা কমিশনের সচিব ইকবাল আবদুল্লাহ হারুন। তিনি বলেন, ‘এই সংকলন শুধু একটি নথি নয়, এটি আমাদের সবুজ ও নিরাপদ শহর গঠনের প্রতিশ্রুতিকে দৃঢ়ভাবে তুলে ধরে।’

প্রকৃতির কাছে আমাদের ক্ষমা চাওয়া উচিত মন্তব্য করে ইকবাল আবদুল্লাহ হারুন বলেন, ‘আমাদের জীবনযাপনে প্রকৃতি যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে।’

আলোচনায় অংশ নিয়ে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সাধারণ সম্পাদক এস এম মেহেদি আহসান বলেন, নগরকে বাসযোগ্য করতে হলে বৈশ্বিক মানদণ্ড অনুযায়ী ৩০ শতাংশ অঞ্চল সবুজ রাখতে হয়। বাংলাদেশের জাতীয় লক্ষ্য সেটাই হওয়া উচিত।
বিষয়টি বিবেচনা করতে সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানিয়ে এস এম মেহেদি আহসান বলেন, ‘আমাদের একটা বিল্ডিং কোড আছে। সেটা বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট সংস্থার দক্ষতার উন্নয়ন করার সুযোগ আছে। পরিকল্পনা কমিশনের তথ্যে ১ হাজার ৪০০ প্রকল্প আছে। সেগুলোকে যদি প্রকৃতিভিত্তিক সমাধানের সঙ্গে যুক্ত করা যায় তাহলে একটা পরিবর্তন আসবে।’ তবে এটার জন্য সব মন্ত্রণালয়ের সক্রিয় ভূমিকা নিশ্চিত করতে হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

ব্রিটিশ হাইকমিশনের ক্লাইমেট ও এনভায়রনমেন্ট উইংয়ের টিম লিডার নাথানিয়েল স্মিথ বলেন, বাংলাদেশে জলবায়ু অভিযোজন সব সময় তাঁদের অগ্রাধিকারের মধ্যে আছে। বাংলাদেশের প্রকৃতি, জীবন–জীবিকার সুরক্ষা দিতে ব্রিটিশ সরকার স্থানীয় সহযোগীদের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে।

জলবায়ু অভিযোজন খাতে অধিক বিনিয়োগ কীভাবে নিশ্চিত করা যায় সেটা নিয়ে ব্রিটিশ সরকার কাজ করছে জানিয়ে নাথানিয়েল স্মিথ বলেন, ‘আমরা সুন্দরবন, হাকালুকি হাওরের বাস্তুতন্ত্র রক্ষায় সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছি। জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় এগুলো রক্ষা করা জরুরি।’

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী মো. আবদুর রশিদ মিয়া বলেন, ‘আমাদের চলমান কিছু প্রকল্পে আমরা প্রকৃতিভিত্তিক সমাধানের চর্চা করি।’ তিনি বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে ক্লাইমেট মিটিগেটেড নলেজ হাব তৈরি করেছি। পাশাপাশি জার্মান সরকারের অর্থায়নে ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্ট লোকাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার প্রকল্প চলছে।’ বাংলাদেশ সরকারের ১৩২টি প্রকল্প ও উন্নয়ন সহযোগীদের অর্থায়নে ৩২টি প্রকল্পে প্রকৃতিভিত্তিক সমাধান অনুসরণ করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

অনুষ্ঠানের সূচনা বক্তব্য দেন আইইউসিএনের বাংলাদেশের অ্যাক্টিং কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ রাকিবুল আমিন এবং জিসিএর ইন্টেরিম কান্ট্রি ম্যানেজার এম ফয়সাল রহমান। মূল প্রবন্ধ পড়েন বুয়েটের সহকারী অধ্যাপক আলিয়া শাহেদ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ