আমাদের মিল্কিওয়ে ছায়াপথে (গ্যালাক্সি) থাকা বিভিন্ন নক্ষত্রকে লালচে দেখা যায়। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে নক্ষত্রের আলো টেলিস্কোপে প্রবেশ করার আগপর্যন্ত মহাকাশে থাকা ধুলাবালুর মেঘকে অতিক্রম করে থাকে। তাই নক্ষত্রটির রং আসলেই লাল কি না, তা নিয়ে বিভ্রান্তিতে পড়েন অনেকেই। এ সমস্যা সমাধানে মিল্কিওয়ে ছায়াপথে থাকা ধুলাবালুর ত্রিমাত্রিক মানচিত্র তৈরি করেছেন বিজ্ঞানীরা।

বিজ্ঞানীদের তথ্যমতে, মিল্কিওয়ে ছায়াপথে থাকা ধুলাবালুর মেঘের মধ্যে হাইড্রোজেন ও হিলিয়ামের চেয়ে ভারী উপাদানের বেশির ভাগই আটকে আছে। তাই ধুলাবালুর কণাগুলো দূর থেকে আসা সব তরঙ্গদৈর্ঘ্যের ওপর প্রভাব ফেলে থাকে। এসব ধুলাবালু ছোট তরঙ্গদৈর্ঘ্যের নীল আলোকে বেশি এবং বড় তরঙ্গদৈর্ঘ্যের লাল আলোকে কম শোষণ করে। ফলে নক্ষত্র পর্যবেক্ষণ করার সময় মাঝেমধ্যেই সমস্যায় পড়তে হয়। নতুন এই মানচিত্র মিল্কিওয়ে ছায়াপথে থাকা বিভিন্ন নক্ষত্র সঠিকভাবে পর্যবেক্ষণে সহায়তা করবে।

ত্রিমাত্রিক মানচিত্রটি তৈরি করেছেন বিজ্ঞানী জিয়ানইউ ঝ্যাং ও গ্রেগরি গ্রিন। ইউরোপীয় স্পেস এজেন্সির গাইয়া মিশনের সাড়ে ১০ বছরের সংগ্রহ করা তথ্য কাজে লাগিয়ে মানচিত্রটি তৈরি করেছেন তাঁরা। তাঁদের তথ্যমতে, মিল্কিওয়ে ও নিকটতম গ্যালাকটিক প্রতিবেশী ম্যাগেলানিক ক্লাউডে প্রায় ১০০ কোটি নক্ষত্র রয়েছে। নতুন এ মানচিত্রের মাধ্যমে আগের তুলনায় ভালোভাবে নক্ষত্রগুলোর অবস্থান, গতি ও অন্যান্য বস্তুর সঠিক তথ্য জানার সুযোগ পাওয়া যাবে।

বিজ্ঞানীদের তথ্যমতে, মিল্কিওয়ে ছায়াপথে থাকা ধুলাবালুর ত্রিমাত্রিক মানচিত্রটি একটি নিউরাল নেটওয়ার্কের সহায়তায় তৈরি করা হয়েছে। এ জন্য প্রথমে নিউরাল নেটওয়ার্কটিকে বিভিন্ন তথ্যের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এরপর নিউরাল নেটওয়ার্কটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে মিল্কিওয়েতে থাকা ধুলাবালুর মানচিত্রটি তৈরি করে।

সূত্র: ফিজিস ডট অর্গ

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ছ য় পথ কর ছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসা ভিনগ্রহের বস্তু নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ইলন মাস্ক

গত জুলাই মাসে শনাক্ত হওয়া রহস্যময় ‘৩আই/অ্যাটলাস’ নামের আন্তনাক্ষত্রিক বস্তুর পরিচয় নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে বিজ্ঞানীদের মধ্যে। আমাদের সৌরজগতের মধ্যে থাকা বস্তুটি এমন আচরণ করছে, যা বিজ্ঞানীরা আগে কখনো দেখেননি। কারও ধারণা এটি ধূমকেতু, আবার কারও মতে ভিনগ্রহ থেকে আসা মহাকাশযান। উৎস ও পরিচয় সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানাতে না পারলেও বস্তুটি পৃথিবীর জন্য কোনো হুমকি নয় বলে ধারণা করছে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। তবে যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের খ্যাতনামা জ্যোতির্বিজ্ঞানী অভি লোব অভিযোগ করেছেন, নাসা বস্তুটির বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য গোপন করছে। বিশাল আকারের অতিদ্রুতগামী মহাজাগতিক বস্তুটি অস্বাভাবিক রাসায়নিক উপাদান নিঃসরণ করছে, যা বিজ্ঞানের প্রচলিত ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করছে। অনেকের ধারণা, ৩আই/অ্যাটলাস কোনো কৃত্রিম উৎস থেকে তৈরি হতে পারে। এবার এই বিতর্কে নাম লিখিয়েছেন মহাকাশ সংস্থা স্পেসএক্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইলন মাস্ক।

জনপ্রিয় মার্কিন পডকাস্ট দ্য জো রোগান এক্সপেরিয়েন্সে ইলন মাস্ক ৩আই/অ্যাটলাস নামের আন্তনাক্ষত্রিক বস্তু সম্পর্কে নিজের ভাবনা প্রকাশ করেছেন। বস্তুটি কোনো ভিনগ্রহের মহাকাশযান হতে পারে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে ইলন মাস্ক বলেন, ‘আপনি যদি এটিকে সম্পূর্ণ নিকেল দিয়ে তৈরি করেন, তবে তা হবে একটি অত্যন্ত ভারী মহাকাশযান। এটি এমন একটি যান হতে পারে, যা একটি মহাদেশকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে পারে। তার চেয়েও খারাপ কিছু ঘটাতে পারে। যদি আমি ভিনগ্রহের কোনো প্রমাণ সম্পর্কে জানতে পারি, তাহলে কথা দিচ্ছি আপনার অনুষ্ঠানে আসব। আর এখানেই তা প্রকাশ করব।’

অভি লোবের দাবি, আন্তনাক্ষত্রিক বস্তুটি পৃথিবীর ওপর নজরদারি করতে পাঠানো ভিনগ্রহের কোনো মহাকাশযান হতে পারে। অস্বাভাবিক লেজযুক্ত বস্তুটি প্রতি সেকেন্ডে চার গ্রাম নিকেল নিঃসরণ করছে; যদিও সেখানে কোনো লোহার উপস্থিতি নেই। ধূমকেতুর ক্ষেত্রে এমন আচরণ আগে দেখা যায়নি।

জো রোগান তাঁর আলোচনায় ধূমকেতুর রহস্যময় বৈশিষ্ট্যের ওপর জোর দেন। ধূমকেতুর গ্যাসের মেঘে নিকেলের উপস্থিতি উল্লেখ করেন। এই ধাতু পৃথিবীতে প্রধানত শিল্পক্ষেত্রে ব্যবহৃত সংকর ধাতুতে পাওয়া যায়। অন্যদিকে ইলন মাস্ক নিকেলের উপস্থিতির একটি পার্থিব ব্যাখ্যা দেন। তিনি বলেন, অনেক ধূমকেতু ও গ্রহাণু প্রাথমিকভাবে নিকেল দিয়ে তৈরি। পৃথিবীতে যেখানে নিকেলখনি দেখা যায়, সেখানে আসলে অতীতে নিকেলসমৃদ্ধ কোনো গ্রহাণু বা ধূমকেতু আঘাত করেছিল।

সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া

সম্পর্কিত নিবন্ধ