অবিলম্বে জাতীয় নির্বাচনের ‘রোডম্যাপ’ (রূপরেখা) ঘোষণা করা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার। তিনি বলেছেন, অহেতুক কোনো বিলম্ব না করে জাতির আশা–আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার কার্যক্রম শেষ করতে যতটুকু সময়ের প্রয়োজন, সেই সময়ের মধ্যে সংস্কার সম্পূর্ণ করে অবিলম্বে নির্বাচনের তারিখ ও রোডম্যাপ ঘোষণা করা উচিত।

আজ রোববার ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক ইফতার মাহফিলে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন মিয়া গোলাম পরওয়ার। বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) যৌথভাবে এই ইফতার অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

অনুষ্ঠানে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘জুলাইয়ের ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে নতুন বাংলাদেশের যে স্বপ্ন আমরা দেখছি, সেই নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন প্রয়োজন। জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রের সঠিক উত্তরণ ও সাম্য, মানবিক মর্যাদা এবং সামাজিক ন্যয়বিচারের যে মূল লক্ষ্য, সেটা অর্জনের জন্য সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন প্রয়োজন।’

জাতীয় নির্বাচনের জন্য সব রাজনৈতিক দল একমত হয়েছে উল্লেখ করে জামায়াতের এই নেতা বলেন, অন্তত একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কারগুলো সম্পন্ন করে অবিলম্বে একটি নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করা উচিত। এ ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন ও সরকারকে নির্বাচনের বিষয়টি আরও স্পষ্ট করা প্রয়োজন।

মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচনের আগে মানবতাবিরোধী অপরাধে ১৫–১৬ বছরে জাতির প্রতি যারা অত্যাচার, নির্যাতন, নিপীড়ন ও গণহত্যা চালিয়েছে; নিষ্ঠুরতা ও বর্বরতা চালিয়েছে; তাদের বিচারের জন্য যে ট্রাইব্যুনাল হয়েছে; যে আইন হয়েছে; এটাকে আরও ত্বরান্বিত করে জাতির সামনে সেই বিচারও দৃশ্যমান হওয়া প্রয়োজন। যাতে জনগণ জানে, ফ্যাসিবাদী শক্তির হাত থেকে মুক্ত হওয়া গণতন্ত্রের এই অভিযাত্রা আর কেউ ঠেকাতে পারবে না।’

এই আস্থা অর্জনের জন্য ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে বিচারের যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, যারা প্রকৃত অপরাধী, যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগে মামলা হয়েছে, তাদের বিচার কার্যক্রম সম্পন্ন করা উচিত বলে মনে করে জামায়াত। দলটির সেক্রেটারি জেনারেলের ভাষ্য, এ ব্যাপারে সব রাজনৈতিক দলের মধ্যে একটা জাতীয় ঐক্য তৈরি হয়েছে।

প্রতিটি দলের ছোটখাটো কিছু মতপার্থক্য থাকতেই পারে, উল্লেখ করে মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘কিন্তু আমাদের স্বাধীনতা–উত্তর এই বাংলাদেশে শান্তি–কল্যাণের জন্য মৌলিক বিষয়গুলোতে যেন ঐক্যবদ্ধ হয়ে একটি জাতীয় ঐক্যের স্পিরিট (চেতনা) নিয়ে একটি অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচনে জাতিকে সংঘবদ্ধ রাখতে পারি, সবার কাছে সেই আহ্বান জানাচ্ছি।’

ইফতার অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ডিইউজের সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ আলমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শহিদুল ইসলাম, বিএফইউজের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহিন, সাংবাদিক নেতা কাদের গনি চৌধুরী প্রমুখ।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গ ল ম পরওয় র অন ষ ঠ ন র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

অন্তর্বর্তী সরকার জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করেছে: ফখরুল

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, “অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। আমরা যে বিশ্বাসযোগ্যতা আশা করেছিলাম, তারা তা রাখেনি। তাই, বর্তমান রাজনৈতিক সংকটের দায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের।”

শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) ৫৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। 

আরো পড়ুন:

ঐক্যের মাধ্যমে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করতে চাই: ফখরুল

জনগণ আর সেই পুরোনো রাজনীতির ফাঁদে পা দেবে না: ফখরুল

বিএনপির মহাসচিব বলেন, “নির্বাচনের আগে গণভোটের কোনো সুযোগ এখন আর নেই। নির্বাচনের দিনই গণভোট হবে। দুটি ব্যালট থাকবে— একটি গণভোটের জন্য, আরেকটি জাতীয় সংসদের জন্য। এই বিষয়ে কারো দ্বিমত থাকার কথা নয়।”

তিনি বলেন, “যেদিন ঐকমত্যের নথি জমা দেওয়া হলো, মনে আছে, সেদিন বৃষ্টি হচ্ছিল, ১৭ তারিখ। তার আগে আবার সবকিছু এলোমেলো হয়ে গিয়েছিল। আমরা আবার ঠিকঠাক করে সব রাজনৈতিক দল একমত হয়ে বৃষ্টির মধ্যে ছাতা ধরে সেখানে স্বাক্ষর করলাম। কিন্তু, যখন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে সেটা উপস্থাপন করা হলো, তখন দেখা গেল অনেক পার্থক্য। বিশেষ করে, আমরা যে নোট অব ডিসেন্টগুলো দিয়েছিলাম, সেগুলো উল্লেখ করা হয়নি। আমরা বলছি, ইটস অ্যা ব্রিজ অব ট্রাস্ট। অথচ, তারা সেই আস্থার সেতু ভেঙে দিয়েছে। জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে।”

মির্জা ফখরুল বলেন, “আপনারা যে কমিশন তৈরি করেছেন, সেই কমিশন প্রায় এক বছর আট-নয় মাস ধরে ঐকমত্যের নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছে। সংস্কার ও বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আমরা অনেক ক্ষেত্রে একমত হয়েছিলাম। কয়েকটি বিষয়ে মতভেদ থাকায় আমরা ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়েছিলাম। অর্থাৎ, আমাদের মধ্যে মতভেদ থাকলেও মূল বিষয়ে আমরা ঐকমত্যে পৌঁছেছিলাম, এটাই নিয়ম। যখন আমরা নির্বাচনে যাব, তখন ম্যানিফেস্টোতে এই বিষয়গুলো থাকবে। জনগণ যদি আমাদের ভোট দেয়, তাহলে আমরা সেসব বিষয় সামনে আনব, পার্লামেন্টে পাস করে দেশের পরিবর্তন ঘটাব। আর যদি ভোট না দেয়, তাহলে সেটি বাদ পড়বে।”

মির্জা ফখরুল বলেন, “আমরা একটা কথা খুব পরিষ্কার করে বলতে চাই, বিএনপি সংস্কারের দল। বিএনপির জন্মই হয়েছে সংস্কারের মধ্য দিয়ে। ১৯৭৯ সালে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন একদলীয় শাসনব্যবস্থা থেকে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য। তখন সব পত্রিকা বন্ধ ছিল, তিনি সেগুলো খুলে দিয়েছিলেন। মানুষের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।”

নির্বাচন ও গণভোট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমরা নির্বাচন করব, নির্বাচন করতে চাই। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণার সঙ্গে আমরা একমত। কিন্তু, আজকে সেই নির্বাচন বানচাল করার জন্য একটি মহল উঠে-পড়ে লেগেছে, তারা বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।”

জামায়াতে ইসলামীর উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “যারা এই নিয়ে রাস্তায় নেমে গোলমাল করছেন, তাদের অনুরোধ করব, জনগণকে আর বিভ্রান্ত করবেন না। একসময় আপনারা পাকিস্তানের পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন, মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিলেন। আজকে জনগণ যে নির্বাচন চায়, তার বিরোধিতা করবেন না। এই দেশের মানুষ দেশ বিক্রির রাজনীতি ক্ষমা করে না।”

তিনি আরো বলেন, “আমরা আমাদের মিত্রদের সঙ্গে নিয়ে সরকার গঠন করতে চাই। যাদের সঙ্গে আমরা দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে লড়েছি, একসঙ্গে কাজ করেছি, তাদের নিয়েই আমরা জাতীয় সরকার গঠন করতে চাই। এক্ষেত্রে আমাদের বক্তব্য খুবই স্পষ্ট—আসুন, সবাই মিলে নির্বাচনের সুযোগকে কাজে লাগাই। সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করে জনগণের পার্লামেন্ট, জনগণের সরকার গঠন করি।”

জেএসডি সিনিয়র সহ-সভাপতি তানিয়া রবের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন— সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম স্বপন, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান মঞ্জু, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, গণফোরামের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সুব্রত চৌধুরী প্রমুখ।

ঢাকা/রায়হান/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • উজানে বাঁধ ও জলবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে মারাত্মক সংকটে তিস্তা নদী
  • ভুল শুধরে জনগণের আস্থা ফেরানোর সুযোগ এই নির্বাচন: আইজিপি
  • ইরান পারমাণবিক স্থাপনাগুলো আরো শক্তিশালী করে পুনর্নির্মাণ করবে
  • সরকার ‘গোপন সমঝোতা’ করলে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ভঙ্গ হতে পারে: গোলাম পরওয়ার
  • জ্বালানি সুবিচার নিশ্চিতে সংগ্রাম, শপথ যুব সংসদের সদস্যদের
  • বন্দরে বিএনপি নেতা তাওলাদের উপর হামলাকারীদের গ্রেপ্তারে আল্টিমেটাম
  • হিন্দুদের ভাগ্যোন্নয়নে প্রয়োজন ইসলামি সরকার: গোলাম পরওয়ার
  • জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করে নভেম্বরে গণভোট, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন দিতে হবে
  • বিএনপি ও জামায়াত কে কোন ফ্যাক্টরে এগিয়ে
  • অন্তর্বর্তী সরকার জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করেছে: ফখরুল