কমছে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি, বাড়ছে মুদ্রাস্ফীতি
Published: 18th, March 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আগ্রাসী বাণিজ্য নীতির প্রভাব পড়ছে বিশ্ব অর্থনীতিতে। মাত্র দুই মাসের ট্রাম্প আমলের নীতিমালা বৈশ্বিক অর্থনীতি বিভক্ত করছে এবং সাম্প্রতিক সময়ের প্রবৃদ্ধির অগ্রগতি ও মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টাকে বাধাগ্রস্ত করছে বলে সতর্ক করেছে অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থা (ওইসিডি)।
বিশ্ব অর্থনীতির সাম্প্রতিক হালচাল নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে প্যারিসভিত্তিক এই সংস্থা চলতি ও আগামী বছরের বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়েছে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকোর অর্থনীতি এই পরিস্থিতির ফলে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
বিশ্বের শীর্ষ অর্থনীতির দেশগুলোর প্রতিনিধি এই সংস্থাটি চলতি বছরের বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস ৩ দশমিক ৩ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩ দশমিক ১ শতাংশ করেছে। যেখানে ২০২৪ সালে বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ছিল ৩ দশমিক ২ শতাংশ। ওইসিডির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বিশ্ব অর্থনীতি এখনও বড় ঝুঁকির মুখে। অর্থনৈতিক বিভাজন বাড়লে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির গতি কমবে ও মুদ্রাস্ফীতির চাপ বাড়বে।
সংস্থাটি আরও বলেছে, বিভিন্ন দেশ যদি তাদের বাণিজ্য সমস্যার সমাধান পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে না খোঁজে, তাহলে পাল্টাপাল্টি বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা আরও জটিল পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে। সংস্থাটি সতর্ক করে বলেছে, বাণিজ্য নীতির অতিরিক্ত কঠোরতা জীবনযাত্রার মানের ওপর গুরুতর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
ওইসিডি পূর্বাভাস দিয়েছে, ট্রাম্প যদি পরিকল্পনা অনুযায়ী কানাডা ও মেক্সিকো থেকে আমদানি করা প্রায় সব পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন, তবে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকোর অর্থনীতি ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হবে। একই সঙ্গে এসব দেশে মূল্যস্ফীতির চাপ বাড়বে বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরে গভীর মন্দায় পড়তে পারে মেক্সিকো, যাতে ২০২৫ সালে দেশটির মোট উৎপাদন ১ দশমিক ৩ শতাংশ সংকুচিত হবে এবং ২০২৬ সালে তা আরও ০ দশমিক ৬ শতাংশ কমবে। এ ছাড়া, কানাডার প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাসও প্রায় অর্ধেকে নেমে আসবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস ২০২৫ সালের জন্য ২ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২ দশমিক ২ শতাংশ করা হয়েছে এবং ২০২৬ সালের জন্য পূর্বাভাস ২ দশমিক ১ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ দশমিক ৬ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।
অন্যদিকে, চীনের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধিও কমার পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে, যেখানে ২০২৫ সালে তা ৪ দশমিক ৮ শতাংশ থেকে কমে ২০২৬ সালে ৪ দশমিক ৪ শতাংশে দাঁড়াতে পারে। এ ছাড়া যুক্তরাজ্যের মুদ্রাস্ফীতির পূর্বাভাস ২০২৫ সালে ২ দশমিক ৭ শতাংশ এবং ২০২৬ সালে ২ দশমিক ৩ শতাংশ থাকবে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
ওইসিডির প্রতিবেদন সম্পর্কে যুক্তরাজ্যের অর্থমন্ত্রী র্যা চেল রিভস বলেছেন, বিশ্বের বাণিজ্য ব্যবস্থায় অনিশ্চয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং এর প্রভাব বিশ্বব্যাপী অনুভূত হচ্ছে। খবর দ্য গার্ডিয়ান, বিবিসির।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: প রব দ ধ প রব দ ধ র প র ব ভ স ব শ ব ক প রব দ ধ র প রব দ ধ ২০২৫ স ল ২০২৬ স ল ২ দশম ক
এছাড়াও পড়ুন:
অনিরাপদ ওয়েবসাইটে ঢোকার আগে সতর্ক করবে গুগল ক্রোম
ইন্টারনেট ব্যবহারে নিরাপত্তা আরও জোরদার করতে বড় পদক্ষেপ নিচ্ছে গুগল। ২০২৬ সালের অক্টোবর থেকে প্রকাশিতব্য ক্রোম ব্রাউজারের ১৫৪তম সংস্করণে ডিফল্টভাবে সব ওয়েবসাইট নিরাপদ এইচটিটিপিএস (হাইপারটেক্সট ট্রান্সফার প্রোটোকল সিকিউর) সংযোগে লোড হবে। কোনো ওয়েবসাইট যদি এখনো অনিরাপদ এইচটিটিপি (হাইপারটেক্সট ট্রান্সফার প্রোটোকল) প্রোটোকলে চলে, তবে সেই সাইটে প্রবেশের আগে ব্যবহারকারীর অনুমতি চাইবে ক্রোম।
গুগল ২০২১ সালে ‘এইচটিটিপিএস ফার্স্ট মোড’ চালু করে। ওই সুবিধা চালু থাকলে ব্যবহারকারীরা চাইলে ব্রাউজারে ‘অলওয়েজ ইউজ সিকিউর কানেকশনস’ অপশনটি সক্রিয় করতে পারতেন। এতে ক্রোম প্রথমে নিরাপদ সংযোগে সাইটে প্রবেশের চেষ্টা করে। সংযোগ না পাওয়া গেলে সতর্কবার্তা দেখায়। এবার গুগল ফিচারটি ডিফল্টভাবে সক্রিয় করতে যাচ্ছে, যাতে ব্যবহারকারীরা অনিরাপদ সংযোগে কোনো ওয়েবসাইটে প্রবেশ না করেন এবং মাঝপথে কেউ ডেটা চুরি বা বিকৃত করতে না পারে।
গুগলের ক্রোম নিরাপত্তা দল এক বিবৃতিতে বলেছে, ২০২৬ সালের অক্টোবর মাসে ক্রোম ১৫৪ সংস্করণ প্রকাশের সময় থেকে ডিফল্টভাবে অলওয়েজ ইউজ সিকিউর কানেকশনস চালু করা হবে। এর ফলে কোনো ওয়েবসাইটে নিরাপদ সংযোগ না থাকলে প্রথমবার প্রবেশের আগে ক্রোম ব্যবহারকারীর অনুমতি চাইবে। গুগল আরও জানিয়েছে, অনিরাপদ সংযোগের সুযোগ নিয়ে আক্রমণকারীরা ব্রাউজারের ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করতে পারে এবং ব্যবহারকারীর অজান্তে ক্ষতিকর কনটেন্ট, ম্যালওয়্যার বা বিভ্রান্তিকর তথ্য পাঠাতে পারে। এতে তথ্য চুরি বা সামাজিক প্রকৌশলভিত্তিক আক্রমণের ঝুঁকি থাকে।
তবে ক্রোম একই ওয়েবসাইটে বারবার সতর্কবার্তা দেখাবে না। কোনো অনিরাপদ সাইট নিয়মিত ব্যবহার করলে সেই সাইটে আর সতর্কতা দেখানো হবে না। নতুন বা খুব কম দেখা ওয়েবসাইটে ঢোকার সময়ই কেবল সতর্কবার্তা দেখানো হবে। ব্যবহারকারীরা চাইলে শুধু পাবলিক ওয়েবসাইটের জন্য এই সতর্কতা চালু রাখতে পারবেন অথবা পাবলিক ও ব্যক্তিগত দুই ধরনের সাইটের জন্যই সেটিংটি সক্রিয় করতে পারবেন। যদিও ব্যক্তিগত বা অভ্যন্তরীণ নেটওয়ার্কে ব্যবহৃত ওয়েবসাইটগুলোর মধ্যেও কিছু ঝুঁকি থাকে, তবু সেগুলো সাধারণত পাবলিক সাইটের তুলনায় কম ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ, এসব সাইট সাধারণত গৃহস্থালি ওয়াই–ফাই বা কোনো প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ নেটওয়ার্কে সীমাবদ্ধ থাকে, যেখানে বাইরের আক্রমণের সম্ভাবনা তুলনামূলকভাবে কম।
গুগল জানিয়েছে, এই পরিবর্তনে ব্যবহারকারীদের ঘন ঘন সতর্কবার্তা দেখার আশঙ্কা নেই। বর্তমানে ইন্টারনেটে ৯৫ থেকে ৯৯ শতাংশ ওয়েবসাইট ইতিমধ্যে নিরাপদ এইচটিটিপিএস প্রোটোকল ব্যবহার করছে, যেখানে ২০১৫ সালে এই হার ছিল মাত্র ৩০ থেকে ৪৫ শতাংশ।
সব ব্যবহারকারীর জন্য সুবিধাটি চালুর আগে, ২০২৬ সালের এপ্রিল মাসে প্রকাশিতব্য ক্রোমের ১৪৭তম সংস্করণে ‘এনহান্সড সেফ ব্রাউজিং’ সুবিধা ব্যবহারকারী এক শ কোটি মানুষের জন্য প্রকাশ্য ওয়েবসাইটে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ‘অলওয়েজ ইউজ সিকিউর কানেকশনস’ চালু করা হবে। গুগল বলেছে, ‘আমরা আশা করছি, এই পরিবর্তন অধিকাংশ ব্যবহারকারীর জন্য নির্বিঘ্ন হবে। তবে কেউ চাইলে ব্রাউজারের সেটিং থেকে “অলওয়েজ ইউজ সিকিউর কানেকশনস” বন্ধ করতে পারবেন। ওয়েব ডেভেলপার বা তথ্যপ্রযুক্তি পেশাজীবীদের এখনই এই ফিচারটি সক্রিয় করে রাখা উচিত, যাতে আগেভাগেই অনিরাপদ ওয়েবসাইট শনাক্ত করা যায়।’
ইন্টারনেট নিরাপত্তা বাড়াতে গুগল আগেও বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। ২০২৩ সালের অক্টোবরে ক্রোমে ‘এইচটিটিপিএস আপগ্রেড’ নামের ফিচার যোগ করা হয়, যা ওয়েবপেজের অভ্যন্তরীণ এইচটিটিপি লিংক স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিরাপদ সংযোগে রূপান্তর করে।
সূত্র: ব্লিপিংকম্পিউটার ডটকম