রমজানে দানের গুরুত্ব এত বেশি যে, অনেক আলেমের মতে, রমজানের উপাদান তিনটি—এক. দিনে রোজা রাখা, দুই. রাতে ইবাদত করা, যাকে ‘কিয়ামুল লাইল’ বলে, এবং তিন. দান ও সেবামূলকজ কাজ করা।
আজকাল আমরা রমজানে জনকল্যাণমূলক কাজ এড়িয়ে কেবল ব্যক্তিগত ইবাদতে মগ্ন থাকি এবং দান-সদকা থেকে হাত গুটিয়ে রাখি। এর মাধ্যমে প্রকারান্তরে রমজানের এই তৃতীয় উপাদানকে অবহেলা করা হয়। অথচ নবীজির (সা.
হাদিসের ব্যাখ্যায় ইবনে মুনাইয়ির (রহ.) বলেন, ‘দরিদ্র, অভাবগ্রস্ত ও ধনী—সকলের কাছেই পৌঁছে যেত রাসুলের দানের কল্যাণ। মুক্ত শীতল বায়ুর পর যেমন বৃষ্টির ঝাপটা আসে, রাসুলের (সা.) দান হতো তার চেয়েও ব্যাপক। অন্যান্য মাসের তুলনায় রমজানে তার দানের আধিক্যের কারণ হলো কোরআন পাঠ তার আত্মার প্রাচুর্য বাড়িয়ে তুলত।’ (ফাতহুল বারি, ৪/১৩৯ ও ১/৪১)
আরও পড়ুনমহানবী (সা.) এবং এক ইহুদি ছেলের গল্প০৫ মার্চ ২০২৫ইবনে উসাইমিন বলেন, ‘রাসুলের (সা.) দানশীলতা ছিল সর্বব্যাপী। তিনি মানুষের হেদায়েতের জন্য যেমন আল্লাহর সম্পদ ব্যয় করতেন এবং মানুষের সর্বাত্মক প্রয়োজন পূরণ করতে উদ্যত হতেন, তেমনি অজ্ঞ উম্মাহকে শিক্ষাদান করার জন্য সমভাবে ব্যয় করতেন খোদা প্রদত্ত জ্ঞান।’ (মাজমুউ ফাতাওয়া, ২০/২৬২)
তা ছাড়া রাসুল (সা.)এ-মাসের সদকাকে অন্য সকল সদকার তুলনায় মর্যাদা দিয়েছেন। আনাস (রা.) বলেন, ‘রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞেস করা হলো কোন সদকা উত্তম। তিনি বলেন, ‘রমজানের সদকা।’ (তিরমিজি, হাদিস: ৬৬৩)
অন্য হাদিসে রমজানকে ‘সহমর্মিতার মাস’ বলা হয়েছে। বলা হয়েছে অপর ব্যক্তিকে ইফতার করানোর বিশেষ সাওয়াবের কথা, ‘যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে, তাকে তার রোজার সমান সওয়াব দেওয়া হবে এবং রোজাদারের সাওয়াবেও কোনো হ্রাস পাবে না।’ (সহিহ ইবনে খুজাইমা, হাদিস: ১,৭৭৮; বাইহাকি, শুয়াবুল ইমান, হাদিস: ৩,৩৩১)
রমজানে দানের ফজিলত অনেক বেশি। তাই অন্য ১১ মাসের তুলনায় এ মাসে অধিক দান-সাদকা করা উচিত। রাসুল (সা.) তার উম্মতদের বাস্তব শিক্ষা প্রদানের লক্ষ্যে রমজান মাসে বদান্যতার হাত বেশি প্রসারিত করতেন। তা ছাড়া রমজানে প্রতিটি আমলের ফজিলত ৭০ গুণ বেশি হয়। আর ৭০টি নফল একটি ফরজের সমান হয়। আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) থেকে বর্ণিত, রমজান মাসে অন্যান্য মাসের তুলনায় রাসুল (সা.) অনেক বেশি দান করতেন। (নাসায়ি, হাদিস: ৩,০৩০)
ইমাম শাফেয়ি (রহ.) বলেন, রাসুল(সা.) কে অনুসরণ করে লোকজন এ মাসে অধিক হারে দান করবে, এটা খুবই পছন্দনীয় বিষয়। কারণ, অধিকাংশ মানুষ এ সময় নামাজ ও রোজা পালনে ব্যস্ত থাকার ফলে উপার্জনে ঘাটতি দেখা দেয়, তাই এ দান সামগ্রিকভাবে কল্যাণ বয়ে আনে। (বাইহাকি, মারেফাতুন সুনানি ওয়াল আসার (৭/৩০৭)
আরও পড়ুনমহানবী (সা.)-কে ভালোবাসার ৭টি নিদর্শন০৬ মার্চ ২০২৫উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
রাজশাহীতে জুলাই শহীদদের স্মরণে মিনি ম্যারাথন
রাজশাহীতে জুলাই শহীদদের স্মরণে মিনি ম্যারাথন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ শুক্রবার সকাল ছয়টার দিকে নগরের বিনোদপুর এলাকা থেকে এ দৌড় প্রতিযোগিতা শুরু হয়। আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) রাজশাহী মহানগর শাখা এ ম্যারাথনের আয়োজন করে।
ম্যারাথনে অংশ নিতে প্রতিযোগীরা আজ ভোর সাড়ে পাঁচটার পর থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়–সংলগ্ন বিনোদপুর বাজারে জমায়েত হতে থাকেন। সকাল ছয়টার পর শুরু হয় পাঁচ কিলোমিটারের ম্যারাথন প্রতিযোগিতা।
অংশগ্রহণকারীরা বিনোদপুর থেকে শুরু হয়ে নগরের তালাইমারী মোড় হয়ে আবার বিনোদপুর হয়ে চৌদ্দপায় ফায়ার সার্ভিস মোড় হয়ে আবার বিনোদপুরে ফিরে আসেন।পরে সেখানে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। প্রথম পুরস্কার ১০ হাজার টাকা, দ্বিতীয় পুরস্কার ৮ হাজার টাকা, তৃতীয় পুরস্কার হিসেবে ৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া অংশগ্রহণকারী তিন নারীসহ আরও ১০ জনকে পুরস্কৃত করা হয়।
ম্যারাথন উপলক্ষে আগে থেকেই মেডিকেল টিমসহ একটি অ্যাম্বুলেন্স ছিল। এ ছাড়া সবার জন্য টি-শার্ট, গ্লুকোজ পানিসহ বিশেষ খাবার পরিবেশন করা হয়। ম্যারাথনে অংশ নেওয়াদের বেশির ভাগই ছিল তরুণ। তাঁদের মধ্যে বেশি বয়সী নারীরাও অংশ নেন।
প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া ৫৮ বছর বয়সী পিয়ারুল ইসলাম বলেন, এ উদ্যোগ খুবই ভালো হয়েছে। অসুস্থমুক্ত জীবন গড়তে হলে দৌড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। শারীরিক বিভিন্ন অ্যাকটিভিটিসের মধ্যে থাকলে সুস্থ জীবন গড়া যায়। এ বয়সে তাঁর কোনো ওষুধ লাগে না। তাঁরও অনেক সিনিয়র আছেন, কারও বয়স ৭৫, তাঁদেরও ওষুধ লাগে না। তাই এ ধরনের প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে হবে। সবাইকে উদ্ধুব্ধ করতে হবে। যাতে নিজেদের শরীরকে সব সময় উপযুক্ত রাখে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান বলেন, অনেক দিন পর তিনি দৌড়াবেন। সাধারণত দৌড়ানো হয় না। আজকের পর থেকে তিনি প্রতিদিন সকালে উঠে দৌড়াবেন।
স্থানীয় বাসিন্দা নাঈম হাসান বলেন, জুলাই গণ–অভ্যুত্থান শুধু সরকারের পতন নয়। এর মাধ্যমে এ দেশের মানুষ একটি নতুন নিশ্বাস নেওয়ার সুযোগ পেয়েছে। সেই নতুন নিশ্বাস নিয়ে ম্যারাথনে তিনি অংশ নিয়েছেন।
ম্যারাথন প্রতিযোগিতায় ১৩ জনকে পুরস্কৃত করা হয়েছে। আজ শুক্রবার সকালে রাজশাহী নগরের বিনোদপুর এলাকায়