গত নভেম্বরে পেরুর বিপক্ষে জিতলেও প্যারাগুয়ের মাঠে হতাশা সঙ্গী হয়েছিল আর্জেন্টিনার। এবার উরুগুয়ের মাঠে জয়ের চ্যালেঞ্জ দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলের বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে পয়েন্ট টেবিলে শীর্ষে থাকা আর্জেন্টিনার।

শনিবার বাংলাদেশ সময় সকাল ৫.৩০ মিনিটে উরুগুয়ে-আর্জেন্টিনা মুখোমুখি হবে। ওই ম্যাচে আর্জেন্টিনা খেলবে তারকা স্ট্রাইকার লিওনেল মেসি ও লওতারো মার্টিনেজকে ছাড়া। দু’জনই দলে ডাক পেয়েছিলেন। কিন্তু ইনজুরির কারণে খেলতে পারবেন না তারা।

মেসি-মার্টিনেজ না থাকায় আর্জেন্টিনার আক্রমণ সামলানোর ভার পড়তে পারে হুলিয়ান আলভারেজের সঙ্গে অ্যাঞ্জেল কোরেইরা ও নিকোলাস গঞ্জালেসের কাঁধে। তবে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিতে চাইলে মিডফিল্ড দিয়ে মোকাবেলা করতে হবে আলবিসেলেস্তেদের। ওই ভূমিকায় বড় অবদান রাখতে হবে ম্যাক অ্যালিস্টার ও রদ্রিগো ডি পলের।

জোড়া ইনজুরিতে আক্রমণভাগ নিয়ে আর্জেন্টিনা শিবিরে কিছুটা অস্বস্তি থাকলেও মিডফিল্ড ও রক্ষণে বেশ গোছালো লিওনেল স্কালোনির দল। ম্যাক অ্যালিস্টার, ডি পল ও এনজো ফার্নান্দেজ মিডফিল্ড সামলানোর দায়িত্ব ভালো মতোই করছেন। রক্ষণে অভিজ্ঞ ওতামেন্ডির সঙ্গে থাকা ক্রিস্টিয়ান রোমেরো, নাহুয়েল মলিনা ও নিকোলাস ত্যাগলিয়াফিকো ছন্দে আছেন।

উরুগুয়ে দলও শক্তিশালী। রক্ষণে অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদে খেলা সান্তিয়াগো গিমিনেজ, বার্সায় খেলা রোনাল্ড আরাহো আছেন তাদের। মিডফিল্ডে রিয়াল মাদ্রিদে ফেদে ভালভার্দে ও টটেনহ্যামে খেলা রদ্রিগো বেনটাকুর আছেন। আক্রমণভাগে আছেন স্পোর্টিং সিপিতে খেলা ম্যাক্সিমিলিয়ানো আরাহো ও লিভারপুলে খেলা ডারউইন নুনিয়েজ।

আর্জেন্টিনার সম্ভাব্য শুরুর একাদশ: এমি মার্টিনেজ, নাহুয়েল মলিনা, ওতামেন্ডি, ক্রিস্টিয়ান রোমেরো, নিকোলাস ত্যাগফিয়াফিকো, ডি পল, ম্যাক অ্যালিস্টার, এনজো ফার্নান্দেজ, নিকোলাস গঞ্জালেস, অ্যাঞ্জেল কোরেইরা, হুলিয়ান আলভারেজ।

উরুগুয়ের সম্ভাব্য শুরুর একাদশ: রোচেট, রোনাল্ড আরাহো, সান্তিয়াগো গিমিনেজ, মার্সেলো সারাসি, রদ্রিগো বেনটাকুর, ফাকুন্দে পেলিস্তি, রদ্রিগো আগুইরে, ম্যাক্সিমিলিয়ানো আরাহো ও ডারউইন নুনিয়েজ।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আর জ ন ট ন ফ টবল ব শ বক প ব ছ ই আর জ ন ট ন র

এছাড়াও পড়ুন:

অধ্যাপক ইউনূসের সংস্কারের অঙ্গীকারের এক বছর পরেও কারাগারে সাংবাদিকেরা: সিপিজে

সাংবাদিক ফারজানা রুপা চলতি বছরের ৫ মার্চ ঢাকার একটি জনাকীর্ণ আদালতে আইনজীবী ছাড়াই দাঁড়িয়েছিলেন। বিচারক তাঁর বিরুদ্ধে আরেকটি হত্যা মামলা নথিভুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করছিলেন। ইতিমধ্যে অন্য মামলায় কারাগারে থাকা এই সাংবাদিক শান্তভাবে জামিনের আবেদন জানান। ফারজানা বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমার বিরুদ্ধে এক ডজন মামলা দেওয়া হয়েছে। আমি একজন সাংবাদিক। আমাকে ফাঁসানোর জন্য একটি মামলাই যথেষ্ট।’

বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টসের (সিপিজে) এক নিবন্ধে এসব কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, বেসরকারি একাত্তর টেলিভিশনের সাবেক প্রধান প্রতিবেদক ফারজানা রুপার বিরুদ্ধে ৯টি হত্যা মামলা রয়েছে। আর তাঁর স্বামী চ্যানেলটির সাবেক বার্তাপ্রধান শাকিল আহমেদের নামে রয়েছে আটটি হত্যা মামলা।

এক বছর আগে ছাত্রদের নেতৃত্বে কয়েক সপ্তাহের বিক্ষোভের পর পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই বিক্ষোভ চলাকালে দুজন সাংবাদিক নিহত হন। শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছাড়ার পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেন নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

অধ্যাপক ইউনূস গণমাধ্যম সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা সরকারের অধীন সাংবাদিকদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু ২০২৪ সালের নভেম্বরে ডেইলি স্টার পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ইউনূস বলেছিলেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে তাড়াহুড়ো করে হত্যার অভিযোগ আনা হচ্ছে। তিনি আরও বলেছিলেন, সরকার তখন থেকে এ ধরনের পদক্ষেপ বন্ধ করে দিয়েছে। মামলাগুলো পর্যালোচনা করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

কিন্তু প্রায় এক বছর পর এখনো সাংবাদিক ফারজানা রুপা, শাকিল আহমেদ, শ্যামল দত্ত ও মোজাম্মেল হক বাবু কারাগারে আছেন। হত্যায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগে পৃথক মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। বিগত সরকারের প্রতি সহানুভূতিশীল হিসেবে ব্যাপকভাবে পরিচিত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগের বারবার ব্যবহারকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সেন্সরশিপ বলেই মনে হচ্ছে।

এ ধরনের আইনি অভিযোগ ছাড়াও সিপিজে সাংবাদিকদের ওপর শারীরিক হামলা, রাজনৈতিক কর্মীদের কাছ থেকে হুমকি এবং নির্বাসনের ঘটনা নথিভুক্ত করেছে। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কমপক্ষে ২৫ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে তদন্ত করছে। এই অভিযোগ সাবেক শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

সিপিজের আঞ্চলিক পরিচালক বেহ লিহ ই বলেন, ‘চারজন সাংবাদিককে বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ ছাড়াই এক বছর ধরে কারাগারে আটকে রাখা অন্তর্বর্তী সরকারের সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষার ঘোষিত প্রতিশ্রুতিকে দুর্বল করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রকৃত সংস্কার মানে অতীত থেকে বেরিয়ে আসা, এর অপব্যবহারের পুনরাবৃত্তি নয়। যেহেতু আগামী মাসগুলোতে দেশে নির্বাচন হতে চলেছে, তাই সব রাজনৈতিক দলকে সাংবাদিকদের খবর প্রকাশের অধিকারকে অবশ্যই সম্মান জানাতে হবে।’

আইনি নথি ও প্রতিবেদন নিয়ে সিপিজের এক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এফআইআর নথিভুক্ত হওয়ার অনেক পর সাংবাদিকদের নাম প্রায়ই এতে যুক্ত করা হয়। মে মাসে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, গত বছরের বিক্ষোভের পর ১৪০ জনের বেশি সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।

শ্যামল দত্তের মেয়ে শশী সিপিজেকে বলেন, তাঁর বাবার বিরুদ্ধে এখন কতগুলো মামলা চলছে, পরিবার তার হিসাব রাখতে পারেনি। তাঁরা অন্তত ছয়টি হত্যা মামলার কথা জানেন, যেখানে শ্যামল দত্তের নাম আছে। মোজাম্মেল বাবুর পরিবার ১০টি মামলার কথা জানে। ফারজানা রুপা ও শাকিল আহমেদের পরিবার সিপিজেকে জানিয়েছে, তারা পাঁচটি মামলার এফআইআর পাননি, যেখানে একজন বা অন্য সাংবাদিকের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এর মানে হলো তাঁদের কেউই জামিনের আবেদন করতে পারছেন না।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম ও পুলিশের মুখপাত্র এনামুল হক সাগরকে ই–মেইল করে সিপিজে। তবে তাঁরা সাড়া দেননি বলে সিপিজের নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ