ফিলিস্তিনের গাজায় নির্বিচারে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। হামলার মুখে একাধিকবার বাধ্যতামূলকভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছে গাজাবাসী। খান ইউনুসসহ উপত্যকার বিভিন্ন স্থানে নতুন করে হামলায় আরও একবার বাস্তুচ্যুতির ঝুঁকিতে পড়েছেন তারা। এমনকি এলাকা ছাড়তে চাওয়া নারী-পুরুষ ও শিশুদের লক্ষ্য করে গুলিও চালানো হচ্ছে। এতে একাধিক প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। খবর আলজাজিরা ও রয়টার্সের। 

দক্ষিণ রাফায় ব্যবহার্য জিনিসপত্রসহ এলাকা ছাড়তে চাওয়া নারী, পুরুষ ও শিশুদের একটি দলের ওপর এলোপাতাড়ি গুলি চালিয়েছে ইসরায়েলি সেনারা। এতে কয়েকজন নিহত এবং বেশ কয়েকজন ফিলিস্তিনি আহত হন। পরিবার নিয়ে তাল আস-সুলতান ছেড়ে যাওয়া স্থানীয় সাংবাদিক মুস্তাফা গাবের বলেন, এটি আগুনের কবলে পড়ে বাস্তুচ্যুতি। ইসরায়েলি ট্যাঙ্ক ও ড্রোনের গুলির মুখে পালানো ছাড়া বাঁচার কোনো পথ নেই। আবার পালিয়ে যাওয়ার সময়ও হামলার মুখে পড়তে হচ্ছে। পরিস্থিতি খুবই কঠিন। 

এদিকে রোববার বিকেল পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় দখলদার দেশটির হামলায় অন্তত ৪১ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। উপত্যকার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এ নিয়ে গতকাল গাজায় নিহতের সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। নিহতদের একটি বড় অংশই নারী ও শিশু। অর্ধ লাখ এ সংখ্যার মধ্যে ১৭ হাজারই শিশু। এটি খুবই ভয়াবহ একটি মাইলফলক। কত স্বপ্ন, উচ্চাকাঙ্ক্ষা এবং সুন্দর জীবন প্রত্যাশা করা মানুষগুলো এখন আর নেই। যদিও নিহতের এ সংখ্যাটি কেবল গাজা উপত্যকার স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রকগুলোয় নিবন্ধিত ব্যক্তি। আরও অনেক লোক নিবন্ধিত না হয়ে সমাহিত হয়েছেন বা নিখোঁজ হয়েছেন। অনেক মানুষের মরদেহ ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়ে আছে বলেও ধারণা করা হয়। 

খান ইউনিসে ইসরায়েলি বিমান হামলায় হামাসের রাজনৈতিক নেতা সালাহ আল-বারদাউইল নিহত হয়েছেন বলে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠীটির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। রোববারের এ হামলায় হামাসের রাজনৈতিক দপ্তরের সদস্য বারদাউইলের সঙ্গে তাঁর স্ত্রীও নিহত হয়েছেন।

এক বিবৃতিতে হামাস বারদাউইলের হত্যাকাণ্ডের জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করেছে। বারদাউইল ও তাঁর স্ত্রী খান ইউনিসে তাদের আশ্রয়কেন্দ্রের তাঁবুতে নামাজ পড়ার সময় ইসরায়েলি একটি ক্ষেপণাস্ত্র সেখানে আঘাত হানে বলে বিবৃতিতে জানানো হয়েছে। বিবৃতিতে হামাস বলেছে, বারদাউইল, তাঁর স্ত্রীর ও শহীদদের রক্ত স্বাধীনতা ও মুক্তির লড়াইয়ে ইন্ধন জোগাতে থাকবে। অপরাধী শত্রুরা আমাদের ইচ্ছা ও সংকল্প ভাঙতে পারবে না। বারদাউইল ও তাঁর স্ত্রীর নিহত হওয়ার বিষয়ে ইসরায়েলি কর্মকর্তারা তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করেননি বলে জানায় রয়টার্স। 

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তির দাবি এবং অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা শিন বেতরপ্রধান রোনেন বারকে বরখাস্তের প্রতিবাদে ইসরায়েলজুড়ে বিক্ষোভ হয়েছে। শনিবার রাতে তেল আবিব, জেরুজালেমসহ বিভিন্ন শহরে ১ লাখের বেশি মানুষ সড়কে নেমে বিক্ষোভ করেন। 

বিক্ষোভে উপস্থিত ৬৩ বছর বয়সী মোশে হাহারোনি বলেন, ইসরায়েলের সবচেয়ে বিপজ্জনক শত্রুর নাম বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। প্রায় ২০ বছর ধরে তিনি ক্ষমতায় আছেন এবং এই ২০ বছরে একবারও দেশের কথা, দেশের নাগরিকদের কথা তিনি চিন্তা করেননি। 

সম্প্রতি শিন বেতেরপ্রধান হিসেবে রোনেন বারকে সরিয়ে দেওয়ার ঘোষণা দেন নেতানিয়াহু। এ পদক্ষেপের তীব্র সমালোচনা শুরু করেন বিরোধী রাজনীতিকরা। তাদের অভিযোগ, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর এই সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক এবং ক্ষমতা নিজের হাতে কুক্ষিগত করার জন্য তিনি ইসরায়েলের সব গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করা শুরু করেছেন। তবে শুক্রবার ইসরায়েলের সুপ্রিম কোর্ট রেনেন বারকে শিন বেতের শীর্ষ পদ থেকে বহিষ্কারে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা দেন। 

এদিকে যুক্তরাষ্ট্র ইয়েমেনে বিমান হামলা অব্যাহত রেখেছে। ইয়েমেনের সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র ইয়েমেনের হোদেইদা বিমানবন্দরে তিনটি এবং লোহিত সাগরের আস-সালিফ বন্দরে আরেকটি আক্রমণ চালিয়েছে। 


 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল হত য ইসর য় ল র র জন ত ক ত হয় ছ

এছাড়াও পড়ুন:

বিস্ফোরক মামলায় চিন্ময় দাসকে কারাফটকে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ

চট্টগ্রামে বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে করা মামলায় সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপত্র চিন্ময় দাসকে কারাফটকে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দিয়েছেন আদালত। পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আজ সোমবার দুপুরে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এস এম আলাউদ্দিন এ আদেশ দেন।

নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (প্রসিকিউশন) মফিজ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, কারাগারে থাকা চিন্ময় দাসকে কোতোয়ালি থানার বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় কারাফটকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। শুনানি শেষে আদালত তা মঞ্জুর করেছেন।

গত বছরের ২৬ নভেম্বর সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপত্র চিন্ময় দাসের জামিনকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের মধ্যে আইনজীবী সাইফুলকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ হত্যার ঘটনায় তাঁর বাবা জামাল উদ্দিন বাদী হয়ে ৩১ জনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা করেন। এ ছাড়া পুলিশের ওপর হামলা, কাজে বাধা এবং আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীদের ওপর হামলা ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় আরও পাঁচটি মামলা হয়। ৬টি মামলায় গ্রেপ্তার হন ৫১ জন। তাঁদের মধ্যে হত্যায় জড়িত অভিযোগে ২১ জন গ্রেপ্তার রয়েছেন।

আদালত সূত্র জানায়, সাইফুল হত্যার আসামিদের মধ্যে চন্দন দাস, রিপন দাস ও রাজীব ভট্টাচার্য আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এতে উল্লেখ করা হয়, আইনজীবীর ঘাড়ে বঁটি দিয়ে দুটি কোপ দেন রিপন দাস। আর কিরিচ দিয়ে কোপান চন্দন দাস। পরে রাস্তায় পড়ে থাকা সাদা শার্ট ও কালো প্যান্ট পরা এই আইনজীবীকে লাঠি, বাটাম, ইট, কিরিচ ও বঁটি দিয়ে তাঁরা ১৫ থেকে ২০ জন পিটিয়ে হত্যা করেন।

গত বছরের ৩১ অক্টোবর চট্টগ্রাম নগরের চান্দগাঁও মোহরা ওয়ার্ড বিএনপির তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ খান বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় চিন্ময় দাসসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে জাতীয় পতাকা অবমাননায় রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে মামলা করেন। পরে ফিরোজ খানকে বিএনপি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এ মামলায় চিন্ময় দাসকে ২৫ নভেম্বর ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ