বিদেশি ঋণ-অনুদানের প্রতিশ্রুতি কমেছে ৬৭%
Published: 24th, March 2025 GMT
বিদেশি ঋণ-অনুদানের প্রতিশ্রুতি বেশ খানিকটা কমে গেছে। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত প্রথম আট মাসে বিদেশি ঋণ অনুদানের প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে ২৩৫ কোটি ডলারের মতো। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে ৭২০ কোটি ডলারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল উন্নয়ন সহযোগীরা। অর্থাৎ চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় বিদেশি ঋণ-অনুদানের প্রতিশ্রুতি কমেছে ৬৭ শতাংশের বেশি।
গতকাল সোমবার বিদেশি ঋণ ও অনুদান বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) প্রকাশিত হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে। প্রতিবেদনের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে বিদেশি ঋণের প্রতিশ্রুতি আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় তিন ভাগের এক ভাগে নেমে এসেছে। এটি ৬৭৪ কোটি ডলার থেকে কমে হয়েছে প্রায় ২০৪ কোটি ডলার। কমেছে অনুদানের প্রতিশ্রুতিও। চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে ৩১ কোটি ৪৪ লাখ ডলারের অনুদানের প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল ৪৬ কোটি ডলারের বেশি।
গতকাল পরিকল্পনা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড.
ইআরডির তথ্যমতে, গত জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে মোট বিদেশি ঋণ-অনুদান ছাড় হয়েছে ৪১৩ কোটি ৪৪ লাখ ডলারের। গত অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল ৪৯৯ কোটি ৭৫ লাখ ডলার। এ হিসাবে উন্নয়ন সহযোগীদের অর্থ ছাড় কমেছে ১৭ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের আট মাসে ৩৮৫ কোটি ৬৬ লাখ ডলারের বিদেশি ঋণ ছাড় হয়েছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৪৭৭ কোটি ৬৫ লাখ ডলার। অবশ্য অনুদান ছাড়ের পরিমাণ বেড়েছে। অনুদান এসেছে ২৭ কোটি ৭৮ লাখ ডলারের। গত অর্থবছরের একই সময়ে আসে ২২ কোটি ডলার।
চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে বিদেশি ঋণের সুদাসল বাবদ ২৬৩ কোটি ৬৪ লাখ ডলার পরিশোধ করা হয়েছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল ২০৩ কোটি ডলার। অর্থাৎ বিদেশি সুদাসল পরিশোধে সরকারের ব্যয় বেড়েছে প্রায় ৩০ শতাংশ। গত জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে মূল ঋণ পরিশোধ বাবদ ব্যয় হয়েছে ১৬৯ কোটি ২৪ লাখ ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে পরিশোধ করা হয় ১২২ কোটি ৪০ লাখ ডলার। এই অর্থবছরের আট মাসে বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধ করা হয়েছে ৯৪ কোটি ৪০ লাখ ডলারের। গত অর্থবছরের একই সময়ে এটি ছিল ৮০ কোটি ৫৯ লাখ ডলার।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব দ শ ঋণ প রথম আট ম স পর শ ধ
এছাড়াও পড়ুন:
গ্যাস অপচয়ে বছরে ক্ষতি ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি: পেট্রোবাংলা
কারিগরি ক্ষতির (সিস্টেম লস) নামে গ্যাস অপচয় বাড়ছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে গ্যাস বিতরণ লাইনে অপচয় হয়েছে গড়ে ৬ দশমিক ২৮ শতাংশ গ্যাস। এতে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ৩ হাজার ৭৯০ কোটি টাকা। আর গত অর্থবছরের (২০২৪-২৫) মার্চ পর্যন্ত অপচয় হয়েছে ৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ। এতে আর্থিক ক্ষতি ৩ হাজার ২৮৬ কোটি টাকা। এর বাইরে সঞ্চালন লাইনে অপচয় হয়েছে ২ শতাংশ।
‘দেশের জ্বালানিনিরাপত্তা: চ্যালেঞ্জ ও করণীয়; গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক এক সেমিনারে এসব তথ্য উপস্থাপন করেছে বাংলাদেশ তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা)। এতে বলা হয়, ২ শতাংশ অপচয় গ্রহণযোগ্য, তাই ওইটুকু সমন্বয় করেই আর্থিক ক্ষতির হিসাব করা হয়েছে। গ্যাসের অপচয় রোধে নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে ছয়টি গ্যাস বিতরণ সংস্থা।
পেট্রোবাংলা বলছে, গ্যাস অপচয়ের জন্য দায়ী হচ্ছে পুরোনো, জরাজীর্ণ পাইপলাইন; গ্যাস সরবরাহ লাইনের গ্যাসস্টেশন রাইজারে লিকেজ (ছিদ্র); তৃতীয় পক্ষের উন্নয়নকাজে পাইপলাইন ছিদ্র হওয়া এবং আবাসিক খাতে প্রচুর অবৈধ সংযোগ। তবে এসব অপচয় রোধে বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানায় পেট্রোবাংলা। এর মধ্যে রয়েছে গ্যাস সরবরাহব্যবস্থায় মিটারিং/ মনিটরিং ব্যবস্থাপনা কার্যকর করা; লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে কারিগরি ক্ষতি নিয়ন্ত্রণে রাখা; অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও উচ্ছেদ কার্যক্রম জোরদার করা এবং আবাসিক গ্রাহকদের প্রিপেইড মিটারের আওতায় আনা।
দেশের গ্যাস খাতের চিত্র তুলে ধরে সেমিনারে মূল নিবন্ধ উপস্থাপন করেন বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক ইজাজ হোসেন। তিনি বলেন, দেশে গ্যাসের উৎপাদন কমতে কমতে ১৫ বছর আগের জায়গায় চলে গেছে। গ্যাস অনুসন্ধান জোরদারের কোনো বিকল্প নেই। গ্যাস চুরি ও অপচয় কমাতে হবে। সঞ্চালন ও বিতরণ মিলে কারিগরি ক্ষতি প্রায় ১০ শতাংশ, যা অনেক বেশি। সঞ্চালন লাইনে কারিগরি ক্ষতি কোনোভাবেই ২ শতাংশ হওয়ার কথা নয়। এটা ভালো করে দেখা উচিত।
শিল্পে নতুন সংযোগে গ্যাসের সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে
পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান মো. রেজানুর রহমান বলেন, সঞ্চালন লাইনে কারিগরি ক্ষতির বিষয়টি গভীরভাবে দেখা হচ্ছে। অবৈধ সংযোগ বন্ধে পেট্রোবাংলা তৎপর আছে, খোঁজ পেলেই বিচ্ছিন্ন করা হবে। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শিল্পে নতুন সংযোগের ক্ষেত্রে গ্যাসের সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে, যেহেতু তারা বেশি দাম দেবে। তাই অগ্রাধিকার বিবেচনা করে তিনটি তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। প্রথম ধাপের তালিকায় থাকছে, যেসব কারখানায় এখনই সংযোগ দেওয়া যাবে। এগুলো পরিদর্শন প্রায় শেষের দিকে, আগামী সপ্তাহে শেষ হয়ে যাবে।
সাংবাদিকদের অন্য এক প্রশ্নের জবাবে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান বলেন, আমদানি করা তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) রূপান্তর করে পাইপলাইনে সরবরাহ করতে নতুন টার্মিনাল নির্মাণে অগ্রাধিকার পাচ্ছে স্থলভাগের টার্মিনাল। মহেশখালীর মাতারবাড়ী এলাকায় এটি করা হবে। এটি হলে কম দামের সময় বাড়তি এলএনজি কিনে মজুত করা যাবে। তবে এগুলো রাতারাতি করা যায় না, পাঁচ বছর সময় লাগতে পারে।
জাতীয় গ্রিডে নতুন করে দিনে ৭৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস যুক্ত হয়েছে
তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে উৎপাদন অংশীদারত্ব চুক্তি (পিএসসি) নিয়ে একটি নিবন্ধ উপস্থাপন করেন পেট্রোবাংলার পরিচালক (পিএসসি) মো. শোয়েব। তিনি বলেন, স্থলভাগে গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য তৈরি পিএসসির খসড়া জ্বালানি বিভাগে পাঠানো হয়েছে।
গ্যাস উৎপাদন ও সরবরাহ নিয়ে একটি নিবন্ধ উপস্থাপন করেন পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ৫০টি কূপ সংস্কার, উন্নয়ন ও খননের প্রকল্পে ইতিমধ্যে ১৮টির কাজ শেষ হয়েছে। জাতীয় গ্রিডে নতুন করে দিনে ৭৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস যুক্ত হয়েছে। ৪টি কূপের কাজ চলমান। এ ছাড়া পেট্রোবাংলার বিভিন্ন প্রকল্পের কার্যক্রম তুলে ধরেন সংস্থাটির পরিচালক (পরিকল্পনা) মো. আবদুল মান্নান পাটওয়ারী।
সবচেয়ে বেশি বকেয়া বিদ্যুৎ খাতে
পেট্রোবাংলার আর্থিক দিক তুলে ধরেন সংস্থাটির পরিচালক (অর্থ) এ কে এম মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, গত অর্থবছরে পেট্রোবাংলার রাজস্ব আয় ৫৪ হাজার ১১৭ কোটি টাকা, এর মধ্যে অর্ধেক বকেয়া। গত মে পর্যন্ত গ্যাস বিল বকেয়া ২৭ হাজার ১৯৯ কোটি টাকা। এটি ধীরে ধীরে কমে আসছে। ১৩–১৫ হাজার কোটিতে বকেয়া নেমে এলে সন্তোষজনক। সবচেয়ে বেশি বকেয়া বিদ্যুৎ খাতে ১৬ হাজার ৫২৩ কোটি টাকা। এরপর সার কারখানায় বকেয়া আছে ৯৬৪ কোটি টাকা। তবে বিদেশি কোনো কোম্পানির কাছে বিল বকেয়া নেই পেট্রোবাংলার। সব বিল শোধ করা হয়ে গেছে।
গত অর্থবছরে প্রতি ইউনিটে লোকসান হয়েছে ৪ টাকা
পেট্রোবাংলা বলছে, এলএনজি আমদানি শুরুর পর থেকে লোকসান শুরু হয় সংস্থাটির। প্রতিবছর সরকারের কাছ থেকে ভর্তুকি নিচ্ছে পেট্রোবাংলা। ২০১৮-১৯ সালে এলএনজি আমদানি শুরু হয়, ওই বছর ভর্তুকি ছিল ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এরপর এলএনজি আমদানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভর্তুকিও বাড়তে থাকে। গত অর্থবছরে তারা ভর্তুকি নিয়েছে ৮ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। এ পর্যন্ত পেট্রোবাংলা মোট ভর্তুকি নিয়েছে ৩৬ হাজার ৭১২ কোটি টাকা। পেট্রোবাংলার হিসাবে গত অর্থবছরে প্রতি ইউনিট গ্যাস সরবরাহে পেট্রোবাংলার খরচ হয়েছে ২৭ টাকা ৫৩ পয়সা। তারা বিক্রি করেছে ২২ টাকা ৯৩ পয়সায়। এর মানে প্রতি ইউনিটে লোকসান হয়েছে ৪ টাকা ৬০ পয়সা।