শহীদদের স্মরণে জুলাই রেভ্যুলেশনারি এলায়েন্সের ইফতার ও আলোচনা
Published: 26th, March 2025 GMT
জুলাই বিপ্লবের শহীদদের স্মরণে ইফতার মাহফিল ও আলোচনা সভার আয়োজন করেছে জুলাই রেভ্যুলেশনারি এলায়েন্সে। মঙ্গলবার রাজধানীর মোহাম্মদপুরে সূচনা কমিউনিটি সেন্টারে এ ইফতার মাহফিল ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। জুলাই রেভ্যুলেশনারি এলায়েন্সের আহ্বায়ক সালেহ মাহমুদ রায়হানের সভাপতিত্বে মুখপাত্র ফানতাসির মাহমুদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন গণসংহতি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ড.
জোনায়েদ সাকী বলেন, ছোট ছোট আন্দোলনের ফলে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে একটা ঐক্য গড়ে উঠেছে বলেই আজকের এই অভ্যুত্থান সফল হয়েছে।
ড. মাহদী আমিন বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে গত ১৫ বছরে আওয়ামী দুঃশাসন বিচার করা হবে। হাসিনা সরকার যত মানুষকে জঙ্গি নাটক সাজিয়ে হত্যা করেছে তার বিচার হবে, শাপলা চত্বরে আলেমদের হত্যাকাণ্ডের বিচার হবে, সব ধরনের গুম-খুন-হত্যাসহ বিশেষত জুলাই গণঅভ্যুত্থানের হত্যাকাণ্ডের বিচার করা হবে।
ববি হাজ্জাজ বলেন, নির্বাচন একটি গণতান্ত্রিক প্রথা। দেশে একটি নির্বাচিত সরকার দরকার। সংস্কার বা পরিবর্তন যা করার নির্বাচিত সরকারই করতে পারবে।
ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, আমরা চাই বাংলাদেশে নতুন কোনো ফ্যাসিবাদ যেন জন্ম নিতে না পারে। যদি জন্মায়ও সেই শেকড় ছাত্র-জনতাকে সঙ্গে নিয়ে উপড়ে ফেলা হবে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভারতের আধিপত্যবাদ চলবে না। চব্বিশের তারুণ্যের চেতনার ভিত্তিতে নতুন বাংলাদেশ গঠন করা হবে।
জুলাই রেভ্যুলেশনারি এলায়েন্সের আহ্বায়ক সালেহ মাহমুদ রায়হান বলেন, শহীদ পরিবারগুলো এখনও নিগৃহীত। তারা যথাযথ সম্মানটা পাচ্ছে না। কয় মাস হয়েছে, এখনই যদি এ অবস্থা হয় আমরা কী ভেবে নেব? আহতদের পায়ের ঘা শুকায়নি অনেকের। বহু তরুণ চোখ হারিয়ে দিশেহারা। আমরা সবাইকে সতর্ক করে বলতে চাই, গণহত্যার বিচার হতেই হবে এই বাংলাদেশে। নাহলে আমরা রাজপথে নামতে বাধ্য হব।
সালেহ মাহমুদ রায়হান বলেন, আগামীতে যারা নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় আসবেন তারা কী করবেন সেটা তো আমরা জানি না। বড় দলের নেতাদের কাছ থেকে আমরা জুলাই গণহত্যার বিচার নিয়ে জোরালো বক্তব্য শুনতে পাই না। আমরা আশা করি- তারা এই বিষয়টি ভেবে দেখবেন।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, জাহেদ উর রহমান, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপির) যুগ্ম সদস্য সচিব আব্দুল্লাহ আল আমিন, গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম নেতা আলী আহসান জুনায়েদ, জাগপার সহ-সভাপতি রাশেদ প্রধান, ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক সিবগাতুল্লাহ সিবগা ও ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক আজিজুর রহমান আজাদ প্রমুখ।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
সুদানে কারা গণহত্যা চালাচ্ছে, আরব আমিরাতের ভূমিকা কী
২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে সুদান এক ভয়াবহ গৃহযুদ্ধের মধ্যে পড়ে। ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ নিতে দেশটির সামরিক বাহিনী এবং শক্তিশালী আধা সামরিক গোষ্ঠী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) মধ্যে শুরু হওয়া তীব্র লড়াই থেকে এই গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। এই যুদ্ধে পশ্চিম দারফুর অঞ্চলে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি হয় এবং সেখানে গণহত্যা সংঘটিত হওয়ার অভিযোগও ওঠে।
সম্প্রতি আরএসএফ এল-ফাশের শহরটি দখল করার পর এর বাসিন্দাদের নিয়ে বড় ধরনের উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। এই সংঘাতে এখন পর্যন্ত সারা দেশে দেড় লাখের বেশি মানুষ মারা গেছেন এবং প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন। জাতিসংঘ এটিকে বিশ্বের বৃহত্তম মানবিক সংকট বলে অভিহিত করেছে।
পাল্টাপাল্টি অভ্যুত্থান ও সংঘাতের শুরু১৯৮৯ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা দীর্ঘদিনের প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশিরকে ২০১৯ সালে ক্ষমতাচ্যুত করার পর থেকেই দফায় দফায় যে উত্তেজনা চলছিল, তার সর্বশেষ পরিস্থিতি হচ্ছে বর্তমান গৃহযুদ্ধ।
বশিরের প্রায় তিন দশকের শাসনের অবসানের দাবিতে বিশাল জনবিক্ষোভ হয়েছিল। তারই প্রেক্ষিতে তাঁকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয় সেনাবাহিনী। কিন্তু দেশটির মানুষ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন চালিয়ে যায়। যার পরিপ্রেক্ষিতে একটি যৌথ সামরিক-বেসামরিক সরকার গঠিত হয়। কিন্তু ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে আরও একটি সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকারটিকে উৎখাত করা হয়। এই অভ্যুত্থানের কেন্দ্রে ছিলেন সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান ও দেশটির কার্যত প্রেসিডেন্ট জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান এবং তাঁর ডেপুটি ও আরএসএফ নেতা জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো।
এই দুই জেনারেল দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ ও বেসামরিক শাসনে ফিরে যাওয়া নিয়ে প্রস্তাবিত পদক্ষেপে একমত হতে পারেননি। তাঁদের মধ্যে মূল বিরোধের বিষয় ছিল প্রায় এক লাখ সদস্যের আরএসএফ-কে সেনাবাহিনীর সঙ্গে একীভূত করার পরিকল্পনা এবং নতুন এই যৌথ বাহিনীর নেতৃত্ব নিয়ে। ধারণা করা হয়, দুজন জেনারেলই তাঁদের ক্ষমতা, সম্পদ ও প্রভাব ধরে রাখতে চেয়েছিলেন।
আরএসএফ সদস্যদের দেশের বিভিন্ন স্থানে মোতায়েন করা হলে সেনাবাহিনী বিষয়টিকে নিজেদের জন্য হুমকি হিসেবে দেখে। এ নিয়ে ২০২৩ সালের ১৫ এপ্রিল দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি শুরু হয়। সেই লড়াই দ্রুত তীব্র আকার ধারণ করে এবং আরএসএফ খার্তুমের বেশির ভাগ অংশ দখল করে নেয়। যদিও প্রায় দুই বছর পর সেনাবাহিনী খার্তুমের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পায়।
জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান (বামে) এবং আরএসএফ নেতা জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো (ডানে)