জয়পুরহাটের কালাইয়ে সিসিটিভি ফুটেজ দেখে মোটরসাইকেল চোরকে ধরার পর থানা থেকে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে কালাই থানার ওসি জাহিদ হোসেনের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় রোববার বিকেলে মোটরসাইকেলের মালিক কালাই পৌরশহরের থুপসাড়া মহল্লার আব্দুল খালেকের ছেলে আবু ইউসুফ নিজেই সাংবাদিকদের অভিযোগ করেছেন। 

আবু ইউসুফ জানান, শনিবার রাতে চোরকে তার বাড়ি থেকে ধরে এনে থানা হাজতে সারারাত রেখে টাকা নিয়ে রোববার সকালে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

আটক মনোয়ার হোসেন উপজেলার পুনট ইউনিয়নের রাধানগর গ্রামের মৃত কাছেম উদ্দিনের ছেলে।

অভিযোগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ১১ মার্চ বিকেলে কালাই পৌরশহরের থুপসাড়া মহল্লার আবু ইউসুফ নিজ বাড়ির রাস্তার পাশে তার ব্যবহৃত পালসার মোটরসাইকেলটি রেখে ভিতরে প্রবেশ করেন। কিছুক্ষণ পর বাড়ির বারান্দা থেকে মোটরসাইকেলের পাশে দুইজন অপরিচিত ব্যক্তিকে দেখতে পান তিনি। সন্দেহ হলে বাড়ির পিছন গেট হয়ে বাইরে আসামাত্র মোটরসাইকেলটি ওই দুই ব্যক্তি নিয়ে যায়। তখন মোটরসাইকেলের মালিকও তাদের পিছনে ধাওয়া করে ধরার চেষ্টা করেন, কিন্তু ধরতে পারেননি। এরপর তিনি পার্শ্ববর্তী একটি অফিসের সিসিটিভি থেকে ভিডিও সংগ্রহ করেন এবং তার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে ওইদিনের ভিডিও ও চোরের ছবি পোস্ট করেন। সেই সঙ্গে কালাই থানায় সরবরাহ করেন।

ফেসবুক পোস্টের জেরে গত ২৯ মার্চ স্থানীয় লোকজন ওই ছবি শনাক্ত করেন এবং মোটরসাইকেল মালিককে জানান। এরপর ইউসুফ শনিবার সন্ধ্যায় থানায় গিয়ে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদ হোসেন এবং ইন্সপেক্টর তদন্ত এসএম কামাল হোসাইনকে চোর শনাক্তের বিষয়ে জানান। রাতেই পুলিশ অভিযান চালিয়ে চোরকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে।

চুরি যাওয়া মোটরসাইকেল মালিক আবু ইউসুফ বলেন, চোরকে শনাক্তের পর আটক করতে আমি নিজেই পুলিশকে সহযোগিতা করেছি। রাতে যখন চোর মনোয়ারকে আটক করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়, তখন আমি থানায় গিয়েছি। তখন ওসি আমাকে বলেন, ‘রাত অনেক হয়েছে, রোববার সকালে আসো, মামলা নিয়ে চোরকে জেল-হাজতে পাঠানো হবে।’ কিন্তু সকালে থানায় গিয়ে শুনি চোরকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। একজন অভিযুক্ত ব্যক্তিকে পুলিশ কেন ছেড়ে দিল? তাকে থানায় এনে যদি ছেড়ে দেওয়া হবে, তাহলে নিয়ে আসা হলো কেন? এ নিয়ে আমি হতাশ। 

আবু ইউসুফের বাবা আব্দুল খালেক বলেন, এত প্রমাণ দেওয়ার পরও ওসি কীভাবে একজন অভিযুক্ত ব্যক্তিকে থানায় এনে ছেড়ে দেয়। আবার বলেছেন, ‘ছেড়ে দিয়েছি তো কী হয়েছে, তদন্ত করছি, ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

স্থানীয় ইউপি সদস্য মিনহাজুল ইসলাম চৌধুরি টোপন বলেন, সিসিটিভি ভিডিওতে যে ছবি দেখা যাচ্ছে, সেই ব্যক্তি মনোয়ার, এতে কোনো ভুল নেই। ছবি দেখেই গত রাতে পুলিশ তাকে বাড়ি থেকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। সকালে শুনলাম রাতেই তাকে ছেড়ে দিয়েছে।

কালাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদ হোসেন জানান, অভিযোগকারীর দেওয়া ছবি সরবরাহের ভিত্তিতে একজন ব্যক্তিকে থানায় নিয়ে আসা হয়েছিল, পরে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। মোটরসাইকেল চুরির ঘটনায় তদন্ত চলমান।

মুঠোফোনে জয়পুরহাটের পুলিশ সুপার মুহম্মদ আবদুল ওয়াহাব জানান, এ ঘটনায় তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: তদন ত ইউস ফ

এছাড়াও পড়ুন:

প্রথম আলোর সাংবাদিককে বৈষম্যবিরোধী নেতার হুমকি, থানায় জিডি

প্রথম আলোর চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার নিজস্ব প্রতিবেদক আনোয়ার হোসেনকে ফেসবুকে হুমকি দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার মুখ্য সংগঠক মোত্তাসিন বিশ্বাস। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে এক ফেসবুক পোস্টে এ হুমকি দেন তিনি।

এ ঘটনায় গতকাল রাতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন আনোয়ার হোসেন।

ফেসবুক পোস্টে জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আনোয়ার হোসেনের দুটি ছবি লাল দাগ দিয়ে ক্রস চিহ্ন দেন মোত্তাসিন। ক্যাপশনে তিনি আনোয়ার হোসেনের উদ্দেশে লিখেছেন, ‘....সত্য লিখুন, না হলে আপনিও ছাড় পাবেন না। ইনকিলাব জিন্দাবাদ।’

মোত্তাসিন বিশ্বাসের পোস্টের পর মন্তব্যের ঘরে আনোয়ার হোসেনকে একাধিক আইডি থেকে মারধরের হুমকি দেওয়া হয়েছে। তবে আজ বুধবার বেলা ৩টা ১৬ মিনিটে মোত্তাসিনের আইডি থেকে পোস্টটি সরিয়ে নেওয়া হয়। ঘণ্টাখানেক পর পোস্টটি তাঁর ওয়ালে আবার দেখা যায়। এ হুমকির প্রতিবাদ জানিয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সাংবাদিকদের সংগঠনগুলোর সম্মিলিত প্ল্যাটফর্ম ‘চাঁপাইনবাবগঞ্জ সাংবাদিক সমাজ’।

ফেসবুক পোস্টের বিষয়ে জানতে চাইলে মোত্তাসিন বিশ্বাস আজ বেলা সাড়ে তিনটার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, ফেসবুক পোস্টে হলুদ কথাটা লেখা ঠিক হয়নি। এটি গত শনিবার চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শহরের শহীদ সাটু অডিটরিয়ামে জেলা পুলিশ আয়োজিত সুধী সমাবেশে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে বক্তব্য দেওয়ার সময় বাধা দিয়ে থামিয়ে দেন জামায়াতে ইসলামীর একজন নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য। এ নিয়ে প্রথম আলোয় ‘পুলিশের সুধীসমাবেশে বীর মুক্তিযোদ্ধার বক্তব্যে জামায়াত নেতার বাধা’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। এ খবরের বিষয়ে আপত্তি জানিয়েই এমন পোস্ট করেছেন বলে জানিয়েছেন মোত্তাসিন।

তাৎক্ষণিকভাবে লিখে ফেলেছিলেন, পরে মুছে দিয়েছেন। আনোয়ার হোসেনের করা কোন সংবাদটির বিষয়ে পোস্ট করেছেন, জানতে চাইলে তিনি মুক্তিযোদ্ধাকে বাধা দেওয়ার সংবাদটির কথা জানান।

মোত্তাসিন বিশ্বাস আরও বলেন, প্রথম আলোর চাঁপাইনবাবগঞ্জের নিজস্ব প্রতিবেদক আনোয়ার হোসেন চব্বিশের আন্দোলনে তাঁদের সঙ্গেই ছিলেন। কিন্তু সংবাদটি এভাবে কেন লিখেছেন, তা জানার জন্য তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু তিনি তাঁদের এড়িয়ে গেছেন। সে জন্যই তিনি ফেসবুকে লিখেছেন।

আনোয়ার হোসেন জিডিতে উল্লেখ করেছেন, স্ট্যাটাসে তাঁর দুটি ছবি ক্রস চিহ্ন দিয়ে ব্যবহার করা হয়েছে। ওই পোস্টে মোত্তাসিনের অনুসারীসহ আরও অনেকে খারাপ মন্তব্য করে তাঁকে হুমকি দিয়েছেন। জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হওয়ায় জিডি করার কথা জানান তিনি।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মতিউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল রাতে এ ঘটনায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন সাংবাদিক আনোয়ার হোসেন। এটি একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে তদন্ত করতে দিয়েছেন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার আহ্বায়ক আবদুর রাহিম বলেন, এই পোস্ট দেওয়ার পর রাতে তাঁরা এটি নিয়ে সভা করেছেন। সেখানে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, পোস্টটি ডিলিট করা হবে।

আরও পড়ুনপুলিশের সুধীসমাবেশে বীর মুক্তিযোদ্ধার বক্তব্যে জামায়াত নেতার বাধা২৭ এপ্রিল ২০২৫সাংবাদিক সমাজের নিন্দা-প্রতিবাদ

আনোয়ার হোসেনকে হুমকি দেওয়ার ঘটনায় জরুরি সভা করে ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সাংবাদিক সমাজ। বিষয়টি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের লিখিতভাবে অবহিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে গতকাল মঙ্গলবারের সভায়। অবহিত করার পরবর্তী তিন দিনের মধ্যে এ বিষয়ে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ না নিলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যাবতীয় সংবাদ বর্জন করা হবে বলেও সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

সভায় সভাপতিত্ব করেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ টেলিভিশন জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের (সিটিজেএ) সভাপতি রফিকুল আলম। উপস্থিত ছিলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রেসক্লাব, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রেসক্লাব, সিটি প্রেসক্লাব, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও সিটিজেএর নেতা ও সদস্যরা।

সভার পর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘পরিবর্তিত বাংলাদেশে একজন পেশাদার সাংবাদিককে নিয়ে আপত্তিজনক ও হুমকিস্বরূপ বক্তব্য কোনোভাবেই কাম্য নয়। যেসব অধিকারের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান হয়, তার মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে বাক্‌স্বাধীনতার অধিকার। একজন পেশাদার সাংবাদিককে নিয়ে ফেসবুকে এমন পোস্ট সেই আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এটা স্বাধীন সাংবাদিকতার ওপর হস্তক্ষেপ, যা আমাদের উদ্বিগ্ন ও উৎকণ্ঠিত করেছে।’ অবিলম্বে মোত্তাসিন বিশ্বাস তাঁর দেওয়া পোস্টটি প্রত্যাহার করে দুঃখ প্রকাশ না করলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সাংবাদিক সমাজ সম্মিলিতভাবে কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে বলে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে বিবৃতিতে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • একজন চা শ্রমিকের দিনে আয় ১৭৮ টাকা
  • বড় বন্দরে ভারী কাজ করেও চলে না সংসার 
  • নাটোরে ছুরিকাঘাতে প্রাণ গেল একজনের
  • ফরিদপুর জেলা এনসিপি’র কমিটি গঠনের দায়িত্বে মহিলা আ’লীগ সভাপতির মেয়ে
  • ফরিদপুর জেলা এনসিপি’র কমিটি গঠনের দায়িত্বে মহিলা আ’লীগ সভাপতি মেয়ে
  • ৫০ পেরোনো নারীর খাদ্যাভ্যাস যেমন হতে হবে
  • যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধ করতে কাজ করছে চীন
  • সেলফি’র ধাক্কায় গণস্বাস্থ্যের কর্মীর মৃত্যু, ৬ বাস আটক
  • পেহেলগামে হামলার পর প্রতিশোধের আশঙ্কায় দিন কাটছে ভারতীয় মুসলিমদের
  • প্রথম আলোর সাংবাদিককে বৈষম্যবিরোধী নেতার হুমকি, থানায় জিডি