Samakal:
2025-05-01@00:26:58 GMT

বড়ই বেদনার ঈদ তাদের

Published: 4th, April 2025 GMT

বড়ই বেদনার ঈদ তাদের

গত বছরও ঈদের সময় স্ত্রী ও শিশু সন্তানদের জন্য নতুন পোশাক, কসমেটিকস, খেলনা সামগ্রীসহ নানা কিছু নিয়ে ঢাকা থেকে বাড়িতে এসেছিলেন বরিশালের বানারীপাড়ার পূর্ব সলিয়াবাকপুর গ্রামের হাফেজ মো. জসিম উদ্দিন। ঈদের দিন স্ত্রী ও ছেলেমেয়েকে নিয়ে ঘুরতে যেতেন তিনি। এবারের ঈদে জসিম উদ্দিনের পরিবারে আনন্দের বদলে পরিবারে বিষাদ নেমে আসে। ঈদের দিন স্ত্রী ও দুই সন্তান বারবার জসিম উদ্দিনের কবরের কাছে গিয়ে চোখের জলে ভেসেছেন। 

একই অবস্থা ছিল জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অপর শহীদ বানারীপাড়া উপজেলার জম্বদ্বীপ গ্রামের রাকিবের পরিবারে। তাঁকে হারানোর শোকস্মৃতিতে ডুবে আছেন স্বজনরা। 
গত বছর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ২১ জুলাই সকালে রাকিব ফতুল্লার পোস্ট অফিস এলাকায় বাজার করতে বেরিয়ে আন্দোলনকারী ও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে গুলিবিদ্ধ হন। দুপুরে ফতুল্লার খানপুর হাসপাতালে গিয়ে ছেলের লাশ শনাক্ত করেন রাকিবের বাবা। এ ঘটনার তিন দিন আগে ১৮ জুলাই দুপুরে রাজধানীর উত্তরার ৫ নম্বর সেক্টরে কোটা আন্দোলনকারী ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষ চলাকালে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান হাফেজ মাওলানা জসিম উদ্দিন। তিনি সেখানে একটি গাড়ির ওয়ার্কশপে চাকরি করতেন। 

শহীদ জসিম উদ্দিনের মৃত্যুকালে তাঁর ছেলে সাইফের বয়স ছিল মাত্র দেড় বছর। ছোট্ট সাইফ এখনও বাবাকে খুঁজে ফেরে। জসিম উদ্দিনের স্ত্রী সুমি আক্তার দুই শিশুসন্তানকে নিয়ে কবরের পাশে দাঁড়িয়ে কান্না-বিলাপ করে বলেন, স্বামীকে হারিয়ে তাদের সব আনন্দ চিরকালের জন্য শেষ হয়ে গেছে। ঈদ তাদের কাছে এখন বড়ই বেদনার। বাবার জন্য ছেলে-মেয়ে দুটি হাহাকার করছে। ছোট্ট ছেলেটি বাবার জন্য কাঁদছে, আবার হাত দিয়ে মায়ের (তাঁর) চোখের জল মুছে দিচ্ছে। এবার আর ওদের জন্য নতুন পোশাক, খেলনা, খাবার নিয়ে বাবা আসেননি। তাঁকে ছাড়া খুব অসহায় হয়ে পড়েছেন তারা। 

শহীদ রাকিব (২১) প্রতিবছর বাবা-মা-ভাইসহ স্বজনদের সঙ্গে ঈদ আনন্দ উদযাপন করতেন। গত বছরও নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা বাজার জামে মসজিদে বাবা ও ভাইয়ের সঙ্গে ঈদ নামাজের জামাতে অংশগ্রহণ করেছিলেন তিনি। এবার রাকিবকে ছাড়া সেই মসজিদে ঈদের নামাজ পড়তে গিয়ে ছেলের কথা মনে পড়তেই কান্নায় ভেঙে পড়েন দিনমজুর বাবা মোশারেফ হোসেন। তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নেন সপরিবারে বানারীপাড়ায় গ্রামের বাড়িতে গিয়ে ছেলের কবর জিয়ারত করার। ঈদের দিন বিকেলে গ্রামের বাড়িতে এসে রাকিবের কবর জিয়ারত শেষে কান্নাকাটি-বিলাপ করছিলেন পরিবারের সদস্যরা। 

নিহত হওয়ার মাত্র চার মাস আগে রাকিবের সঙ্গে বিয়ে হয় বরগুনার আমতলীর জান্নাতের (১৮)। বিয়ের আগে প্রেমের সম্পর্ক ছিল তাদের। কিন্তু দু’হাতে আঁকা বিয়ের মেহেদির রঙ মুছে যাওয়ার আগেই সব স্বপ্ন-আশা যেন চুরমার হয়ে যায় জান্নাতের। 

রাকিবের মা রাশিদা বেগম বলেন, নানির কাছে বড় হওয়া অসহায় এতিম মেয়েটাকে (জান্নাত) ছেলের বউ করেছিলাম। চোখের সামনে বউটা বিধবা হয়ে যায়। রাকিবকে দাফনের কয়েক দিন পরে জান্নাত তার নানির সঙ্গে চলে যায়। এরপর তাদের সঙ্গে আর জান্নাতের যোগাযোগ নেই। 

রাকিব শহীদ হওয়ার পরে তাঁর পরিবার যে দান-অনুদান পেয়েছে তা দিয়ে তাদের গ্রামের বাড়ির পুকুর ভরাট করে ঘরের ভিত্তি নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়েছে। জীবিত অবস্থায় রাকিবের নিজ বাড়িতে ঘর নির্মাণের স্বপ্ন পূরণ না হলেও তাঁর জীবনের বিনিময়ে পাওয়া সহায়তার অর্থ দিয়ে সেই ‘স্বপ্নের ঘর’ নির্মাণ হচ্ছে। এ বিষয়টিও ছেলে হারানো বাবা-মায়ের কাছে নিদারুণ কষ্ট-যন্ত্রণার।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: বর শ ল পর ব র র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

মিরাজে দুর্দান্ত জয় বাংলাদেশের

এমন পারফরম্যান্সই তো চাওয়ার থাকে ভালো দলের কাছে। মেহেদী হাসান মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্য, সাদমান ইসলামের সেঞ্চুরি, তাইজুল ইসলামের ৯ উইকেট শিকারে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ইনিংস ও ১০৬ রানের বিশাল জয় এনে দেয় বাংলাদেশকে। প্রথম টেস্ট হারের পর যে সমালোচনা হয়েছিল, তার জবাবটা বোধ হয় দ্বিতীয় টেস্ট তিন দিনে জিতে দিয়ে দিলেন নাজমুল হোসেন শান্তরা। ‘বাউন্স ব্যাক’ করে সিরিজ ড্র ১-১-এ।

চট্টগ্রামের বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে বীরোচিত পারফরম্যান্স ছিল টাইগারদের। এটি সম্ভব হয়েছে পছন্দের উইকেটে খেলা হওয়ায়। স্পিন ভুবনে উইকেট উৎসব করেছেন তাইজুল, মিরাজ গাঁটছড়া বেঁধে। সিরিজ নির্ধারণী টেস্টে দুটি সেঞ্চুরি দারুণ অর্জন অধারাবাহিক ব্যাটিং লাইনআপের। এই টেস্টে ওপেনিং জুটি ভালো করেছে। লম্বা সময় পর টেস্ট খেলার সুযোগ পাওয়া এনামুল হক বিজয় ভালোই সঙ্গ দেন সাদমানকে। লোয়ার মিডলঅর্ডারে মিরাজের লড়াই ছিল দেখার মতো।

টেলএন্ডারদের নিয়ে রীতিমতো বাজিমাত করেছেন তিনি। শেষ ৩ উইকেটে তৃতীয় দিন ১৫৩ রান যোগ করেন। বাংলাদেশকে পৌঁছে দেন ৪৪৪ রানে। ২১৭ রানের লিড থাকায় ইনিংস ব্যবধানে জয়ের স্বপ্ন দেখায়। মিরাজের অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে সে স্বপ্ন পূরণ হয়। সাকিব আল হাসান ও সোহাগ গাজীর পর তৃতীয় বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট শিকার তাঁর। 

গত বছর দেশের মাটিতে টেস্টে ভালো করতে পারেনি বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার পর দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে। ২০২৫ সালের শুরুটাও ভালো ছিল না। সিলেটে জিম্বাবুয়ের কাছে হেরেছে। সিরিজ বাঁচাতে চট্টগ্রামে জিততেই হতো। লক্ষ্যে পৌঁছাতে কন্ডিশনেও পরিবর্তন আনা হয়। চট্টগ্রামের উইকেটে খেলা হয় দ্বিতীয় টেস্ট। যেখানে শাসন ছিল স্পিনারদের। পছন্দের উইকেট পাওয়ায় তিন স্পিনার নিয়ে খেলে বাংলাদেশ। তিনজনই দারুণ বোলিং করেন প্রথম থেকে।

দীর্ঘ বিরতির পর টেস্ট খেলার সুযোগ পাওয়া অফস্পিনার নাঈম হাসান চ্যালেঞ্জ নিয়ে বোলিং করে গেছেন। বেশি উইকেট না পেলেও এক প্রান্তে ব্যাটারদের চাপে ফেলেছেন। যার সুফল তাইজুল ও মিরাজ পেয়েছেন অন্য প্রান্তে। প্রথম দিন শেষ সেশনে ব্রেক থ্রু দেন তিনি। বাঁহাতি স্পিনার পরে পিক করে ৬ উইকেট শিকার করেন। জিম্বাবুয়ে ৯ উইকেটে ২২৭ রানে প্রথম দিন শেষ করে। পরের দিন এক বল খেলে ওই রানেই অলআউট হয়। বাংলাদেশ ব্যাটিং শুরু করে বড় লক্ষ্য নিয়ে। সাদমান ইসলাম ও এনামুল হক বিজয় ১১৮ রানের ওপেনিং জুটি করায় প্রতিপক্ষকে ছাড়িয়ে যাওয়া সহজ হয়। সাদমানের সেঞ্চুরি ও মুমিনুল হক, মুশফিকুর রহিম কিছু রান করায় ৭ উইকেটে ২৯১ রানে দ্বিতীয় দিন শেষ করে বাংলাদেশ।

সেদিন সংবাদ সম্মেলনে সাদমান আশা প্রকাশ করেন, মিরাজ ও তাইজুল জুটি করবেন। অষ্টম উইকেটে ৬৪ রানের জুটি দু’জনের। বেশি ভালো করেছেন পেসার তানজিম হাসান সাকিব। মিরাজের সঙ্গে ১৫৬ বলে ৯৬ রানের জুটি। অভিষেক টেস্টে সাকিবের ব্যাটিং দারুণ লেগেছে অধিনায়ক শান্তর কাছে। ৮০ বলে ৪১ রান করেন তিনি। সবচেয়ে বড় কথা, মাথায় বল লাগার পরও বিচলিত হননি তিনি। মিরাজ ছাড়া চট্টগ্রাম টেস্টের প্রাপ্তি হিসেবে ওপেনিং জুটির ভালো খেলা, সাদমানের সেঞ্চুরি, তাইজুলের ৫ উইকেট শিকার ও সাকিবের রান করাকে মনে করেন শান্ত। 

শেষের তিন উইকেটে তৃতীয় দিন প্রায় দুই সেশন ব্যাট করে বাংলাদেশ। তাইজুল, সাকিব ও হাসানকে নিয়ে ১৫৩ রান যোগ করে। মিরাজ ১০৪ রান করে ওয়েলিংটন মাসাকাদজাকে উইকেট দেন। নার্ভাস নাইটির ঘরে প্রবেশ করে কিছুটা ঝুঁকির মুখে ছিলেন মিরাজ। ৯৮ রানে পৌঁছানোর পর সেঞ্চুরি ছুঁতে দুই রান নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ফিল্ডারের কাছে বল চলে যাওয়ায় এক রানে থামতে হয়। তখন স্ট্রাইকে হাসান থাকায় দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছিল সবাই। ড্রেসিংরুমে খেলোয়াড় ও কোচিং স্টাফের সবাই দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন। কখন হাসান আউট হয়ে যায়, সে ভয় কাজ করছিল হয়তো। কিন্তু হাসান ছিলেন দৃঢ়চেতা। মাসাকাদজাকে ডিফেন্স করে স্বস্তি দেন।

মিরাজ স্ট্রাইকে এসে মেদেভেরের প্রথম দুই বলে ঝুঁকি নেননি। তৃতীয় বলে এক রান নিয়ে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টেস্ট সেঞ্চুরির স্বাদ নেন। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ ও দ্বিতীয় টেস্টের সেরা খেলোয়াড় মিরাজ। প্রথম ম্যাচের উভয় ইনিংসে ৫ উইকেট করে ছিল তাঁর। চট্টগ্রামে অতীতের সব পারফরম্যান্স ছাড়িয়ে গেছেন। সেঞ্চুরির সঙ্গে ৫ উইকেটপ্রাপ্তি, দুই হাজার রানের মাইলফলক পেয়েছেন। ২০২১ সালে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেছিলেন তিনি। ২১৭ রানে পিছিয়ে থাকা জিম্বাবুয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে অলআউট হয় ১১১ রানে। ফ্লাডলাইটের আলো জ্বেলে নির্ধারিত সময়ের বেশি খেলান আম্পায়াররা। প্রায় সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খেলা হয়। জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটাররা তাতে আপত্তি করেননি। তাইজুল ৩, নাঈম ১ ও মিরাজ ৫ উইকেট নিলে ম্যাচ শেষ হয়।  

সিলেটে প্রথম টেস্ট হারের পর চট্টগ্রামে প্রভাব বিস্তার করে খেলে ম্যাচ জেতার পরও খুশি নন অধিনায়ক শান্ত, ‘আমি টেস্ট সিরিজ ড্র করে খুশি না। কারণ, প্রথম টেস্টে আমরা একেবারেই ভালো খেলিনি। এই টেস্টে একপেশে খেলে জিতলেও সিরিজে আরও ভালো খেলা উচিত ছিল। সিরিজটি জিততে হতো।’ টাইগার দলপতি জানান, এই পারফরম্যান্স শ্রীলঙ্কা সফরে কাজে দেবে। দেশের মাটিতে স্পোর্টিং উইকেট বানিয়ে বিদেশে খেলার পরিবেশ তৈরি করছিল বিসিবি। ২০২৩ সালে নিউজিল্যান্ড সিরিজ থেকে স্পোর্টিং উইকেটে খেলা হচ্ছে। কিউইদের বিপক্ষে সিলেটে ঐতিহাসিক জয় পেলেও মিরপুর থেকে হারতে শুরু করে। দেশের মাটিতে টানা ছয় হারের পর জয়ের দেখা পেল বাংলাদেশ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ