শতবর্ষে প্রথমবার মা–বাবা হলো দুই কচ্ছপ
Published: 7th, April 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রের ফিলাডেলফিয়া চিড়িয়াখানায় প্রায় ১০০ বছর বয়সী অত্যন্ত বিপন্ন প্রজাতির এক জোড়া দৈত্যাকার কচ্ছপ প্রথমবারের মতো মা–বাবা হয়েছে। চিড়িয়াখানাটির ১৫০ বছরের বেশি সময়ের ইতিহাসে এমন ঘটনা ‘প্রথম’ ঘটল। এ ছাড়া মা কচ্ছপটি তার প্রজাতির মধ্যে সবচেয়ে বেশি বয়সে প্রথমবারের মতো মা হলো।
মমিকে ১৯৩২ সালে ওই চিড়িয়াখানায় আনা হয়েছিল। অবশ্য আবরাজ্জো সে তুলনায় নতুন। তাকে আনা হয়েছে ২০২০ সালে। এর আগে আবরাজ্জো সাউথ ক্যারোলাইনার রিভারব্যাংক জু অ্যান্ড গার্ডেনে ছিল।
চিড়িয়াখানাটি চলতি সপ্তাহে জানিয়েছে, পশ্চিম সান্তা ক্রুজ গ্যালাপাগোস প্রজাতির আবরাজ্জো ও মমি নামের কচ্ছপ জোড়া চারটি বাচ্চা জন্ম দেওয়ায় তারা ‘অত্যন্ত আনন্দিত’।
পশ্চিম সান্তা ক্রুজ গ্যালাপাগোস কচ্ছপগুলো বন্য অঞ্চলে অত্যন্ত বিপন্ন। মার্কিন চিড়িয়াখানাগুলোয় এদের সংখ্যা ৫০টির কম।
আবরাজ্জো ও মমির প্রথম ডিম ফুটেছিল গত ২৭ ফেব্রুয়ারি। এরপর দ্রুতই অন্য ডিমগুলোও ফুটে বাচ্চা বের হয়। আগামী সপ্তাহগুলোতে আরও যেসব ডিম ফুটতে পারে, সেগুলো পর্যবেক্ষণ করছে চিড়িয়াখানার প্রাণী পরিচর্যা দল।
চিড়িয়াখানার সিইও কো-ইলি মোগারম্যান এক বিবৃতিতে বলেন, ‘ফিলাডেলফিয়া চিড়িয়াখানার ইতিহাসে এটি গুরুত্বপূর্ণ একটি মাইলফক। এই কচ্ছপের বাচ্চা দেওয়ার বিষয়টি এই শহর, এই অঞ্চল এবং সারা পৃথিবীর মানুষকে জানিয়ে আমরা আনন্দিত।’
নবজাতক কচ্ছপগুলোর একেকটির ওজন ৭০ থেকে ৮০ গ্রামের মধ্যে। চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ফিলাডেলফিয়া চিড়িয়াখানার সরীসৃপ এবং উভচর হাউসের ভেতরে কচ্ছপগুলোকে লোকচক্ষুর অন্তরালে রাখা হয়েছে। তারা যথাযথভাবে খাচ্ছে এবং বেড়ে উঠছে।
চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ ২৩ এপ্রিল কচ্ছপের বাচ্চাগুলোকে জনসমক্ষে আনার পরিকল্পনা করছে। মমিকে এ চিড়িয়াখানায় আনার ৯৩তম বার্ষিকী ওই দিন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আবর জ জ
এছাড়াও পড়ুন:
বক্সিং রিংয়ে চ্যাম্পিয়ন জিনাতই, বোনকে উৎসাহ দিতে গ্যালারিতে আফঈদা
কদিন ধরে দেশের ক্রীড়াঙ্গনের আড্ডায় ঘুরেফিরে একটাই নাম জিনাত ফেরদৌস। যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী এই বক্সার প্রথমবারের মতো পা রেখেছেন জাতীয় বক্সিং রিংয়ে। আর প্রথমবারই নিজের জাত চেনালেন।
আজ বিকেলে পল্টনের মোহাম্মদ আলী বক্সিং স্টেডিয়ামে ৫২ কেজি ওজন শ্রেণির ফাইনালে নেমে প্রতিপক্ষ আফরা খন্দকারকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়নের মুকুট মাথায় তুলেছেন জিনাত। প্রতিযোগিতার আগেই যাঁর আগমন ঘিরে কৌতূহল ছিল তুঙ্গে, সেই জিনাত রিংয়ে নামতেই যেন বুঝিয়ে দিলেন, অন্যদের চেয়ে কেন তিনি এগিয়ে।
তিন রাউন্ডের লড়াইয়ে শুরু থেকেই জিনাত ছিলেন আক্রমণাত্মক। পাঞ্চে ছিল গতি, রক্ষণে ছিল আত্মবিশ্বাস। অন্যদিকে আফরা খন্দকার চেষ্টা করেছেন রক্ষণ সামলে লড়াইয়ে টিকে থাকতে। খান কয়েক মোক্ষম ঘুষিতে কিছুটা নড়বড়ে হলেও শেষ পর্যন্ত দমে যাননি আফরা।
বরং জিনাতের ঘন ঘন আক্রমণের ফাঁক গলে এক-আধটু পাল্টা আঘাত করতেও পেরেছেন। তবে এই পর্যায়ের এক প্রতিপক্ষের বিপক্ষে ম্যাচটা শেষ পর্যন্ত হয়ে পড়ে তাঁর জন্য অনেকটাই চাপের। তবু আফরা লড়ে গেছেন। আর জিনাতের আত্মবিশ্বাসী উপস্থিতি এ লড়াইকে করে তুলেছিল দেখার মতো।
গ্যালারিতে বসে খেলা দেখছিলেন জাতীয় নারী ফুটবল দলের অধিনায়ক ও আফরার বড় বোন আফঈদা খন্দকার। উৎসাহ দিচ্ছিলেন ছোট বোনকে। পাশে ছিলেন মা–বাবাও। তবে পরিবারের ষোলো আনা সমর্থনও জিনাতকে হারানোর জন্য যথেষ্ঠ হয়নি।
ম্যাচ শেষে আফরা বললেন, ‘তিনি একজন ভালো খেলোয়াড়। তাঁর বিপক্ষে খেলা আমার জন্য এক নতুন অভিজ্ঞতা। বিশেষ করে তাঁর আক্রমণাত্মক স্কিলটা দুর্দান্ত। ম্যাচ শেষে তিনি আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন, গুড ফাইট।’
বিজয়ী জিনাত পরে কথা বলেন সাংবাদিকদের সঙ্গে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বললেন, ‘আমি সবাইকে বলতে চাই, বাংলাদেশের ছেলে-মেয়েরা খেলতে চায়। তারা যদি সুযোগ-সুবিধা পায়, অনেক ভালো করবে। ওদের স্কিল আছে।’
সেমিফাইনালে আছিয়া না ফাইনালে আফরা—কোন লড়াইটা বেশি কঠিন ছিল? জিনাতের জবাব, ‘আমি আমার খেলাটা খেলেছি এবং জিতেছি। দুজনই আলাদা ধাঁচের প্রতিপক্ষ।’
জিনাত বাংলাদেশের হয়ে আন্তর্জাতিক পদক জয়ের আকাঙ্ক্ষার কথা আজও বলেছেন। আগামী এশিয়ান গেমসে সুযোগ পেলে পদক জিতবেন কি না, প্রশ্নের ছোট্ট উত্তর, ‘ইনশা আল্লাহ।’
আফরা-জিনাত ফাইনাল ম্যাচটা যেন ছিল দুই প্রতিদ্বন্দ্বী বক্সারের লড়াই নয়, এর বাইরেও চলছিল আরেক নাটক। ফাইনালের কয়েক ঘণ্টা আগেই বক্সিং রিংয়ে এক ব্যতিক্রমী দৃশ্য। আনসারের বক্সার জাহিদুল হক রেফারির রায় নিয়ে ক্ষোভ জানাতে রিংয়ে বসে পড়েন প্রতিবাদ হিসেবে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বক্সার জনি ভদ্রর ঘুষিতে কপালে চোট পান জাহিদুল। চিকিৎসাও নেন। একপর্যায়ে রিংয়ের মাঝখানে বসেই অভিনব প্রতিবাদ জানান।
এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ আনসার দল বাংলাদেশ বক্সিং ফেডারেশনের সভাপতির কাছে অভিযোগ করে এবং তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিযোগিতা থেকে নিজেদের প্রত্যাহারের হুমকি দেয়। একপর্যায়ে আনসারের প্রতিনিধিরা রিং ছেড়ে চলে যান। মুহূর্তেই ঘনীভূত হয়ে ওঠে অনিশ্চয়তা, আফরা-জিনাত ফাইনালটি আদৌ হবে তো? কারণ, আফরা বাংলাদেশ আনসারের প্রতিযোগী। শেষ পর্যন্ত অবশ্য আনসার ফিরে আসে এবং প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়।
এ বিষয়ে বক্সিং ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আবদুস কুদ্দুস প্রথম আলোকে বলেন, ‘ফাইটে হারলে যা হয়। হারলেই বলে অন্যায় হয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত রিংয়ে ফিরে এসেছে, খেলেছে, এটা ভালো।’
ম্যাচ শুরুর ঠিক আগে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের একটি প্রতিনিধিদল গ্যালারিতে এসে জিনাতকে শুভেচ্ছা জানায়, তাঁকে উপহারও দেয় তারা। গ্যালারিতে বাড়তি উত্তেজনা আর গুরুত্ব যোগ করে ফাইনাল ম্যাচকে ঘিরে। আর দেশের সংবাদমাধ্যমের ব্যাপক উপস্থিতি তো ছিলই ম্যাচটা ঘিরে।