সাভারে গুলি করে ট্রলার ছিনতাইয়ের অভিযোগ, নেপথ্যে খেয়া ঘাটের দখল
Published: 10th, April 2025 GMT
ঢাকার সাভারে একটি খেয়া ঘাটের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্বের জেরে একপক্ষের বিরুদ্ধে গুলি করে আরেক পক্ষের ট্রলার ছিনতাইয়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বুধবার (৯ এপ্রিল) বিকালে সাভারের পৌর এলাকা কাতলাপুর মহল্লার কর্ণপাড়া মিলন ঘাটে এই ট্রলার ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় ৫ জনের নাম উল্লেখ করাসহ অজ্ঞাত অজ্ঞাতনামা ১০/১২ জনকে অভিযুক্ত করে সাভার মডেল থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন স্থানীয় যুবদল নেতা মো.
লিখিত অভিযোগে যা বলা হয়েছে
লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, সাভারের কাতলাপুরের কর্ণপাড়া মিলনঘাটটি দীর্ঘদিন ধরে সাভার পৌরসভা ৬নং ওয়ার্ড যুবদলের সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম পরিচালনা করছেন।
সম্প্রতি মানিকগঞ্জ জেলার সিংগাইর থানার ফুডনগর মোল্লাপাড়ার অন্তর খান (২৬), মোর্শেদ খান (২৫), মোশাররফ খান (২৮), হৃদয় (২৫), রনি খানসহ (৪২) অজ্ঞাতনামা ১০-১২ জন ঘাট পরিচালনায় বাঁধা দিয়ে কামরুলের কাছে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে।
বুধবার বিকেল পৌনে ৬টার তারা পুনরায় আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে মিলনঘাটে এসে চাঁদা দাবি করলে কামরুল চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তারা কামরুলকে মারধর করেন। এক পর্যায়ে অন্তর খান পিস্তল সদৃশ আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলি ছোড়েন। পরে তারা কামরুলের দুটি ইঞ্জিন চালিত নৌকা (ট্রলার) ছিনিয়ে নিয়ে চলে যান।
যা বলছেন ভুক্তভোগী
ভুক্তভোগী কামরুল ইসলাম বলেন, ‘‘গত প্রায় সাত মাস দরে বৈধভাবে ঘাটটির ইজারা নিয়ে ঘাট পরিচালনা করছেন তিনি। সম্প্রতি নদীর বিপরীত পাড়ে অবস্থিত মানিকগঞ্জের সিংগাইর থানাধীন ফুডনগর এলাকার অন্তর খান নামে স্থানীয় এক যুবক তার কাছে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা না দেওয়ায় অভিযুক্ত অন্তরসহ ১৪/১৫ জন যুবক অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে তাদের ঘাটে হামলা চালিয়ে দুই জন মাঝিকে মারধর করে দুটি ট্রলার ছিনিয়ে নিয়ে যায়।’’
এসময় অভিযুক্তরা আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়ে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
কামরুল ইসলামের ছেলে হেদায়েত উল্লাহ বলেন, ‘‘হঠাৎ করে নৌকায় করে অস্ত্রসহ তারা খেয়া ঘাটে আসে। অন্তর তিন রাউন্ড গুলি করে। আমাকেসহ কয়েকজনকে মারধর করে দুইটা ইঞ্জিন চালিত নৌকা নিয়ে যায়।’’
এ বিষয়ে জানতে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও মুঠোফোন বন্ধ থাকায় অভিযুক্ত অন্তর খানের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। অভিযুক্ত অন্তর ছাত্রদলের রাজনীতির সাথে যুক্ত বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসন যা বলছে
পুলিশ ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, বর্তমানে কাতলাপুর এলাকার খেয়া ঘাটটি পরিচালনা করছেন সাভার পৌরসভা ৬নং ওয়ার্ড যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মো. কামরুল ইসলাম ও তার ছেলে হেদায়েত। ঘাটটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নদীর বিপরিত পাড়ের অন্তরসহ কয়েকজনের সাথে কামরুল ইসলামদের দ্বন্দ্ব রয়েছে। মূলত এই দ্বন্দ্বের জেরেই ট্রলার ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
সাভার পৌরসভার পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সায়েদুল ইসলাম বলেন, ‘‘সম্প্রতি ঘাটটির ইজারা কার্যক্রম পরিচালনা করা হলেও সেটি এখনো সম্পন্ন হয়নি। এখন পর্যন্ত কাউকে অফিসিয়ালি ইজারাদার ঘোষণা করা হয়নি। ইজারা কার্যক্রম চূড়ান্ত হওয়ার পর কে ইজারাদার হচ্ছেন সেটি বলা যাবে।’’
তিনি বলেন, ‘‘ইতোপূর্বে ঘাটটির ব্যাপারে সরকারি বিধি মেনে বৈধভাবে ইজারা না দেওয়ার কারণে এদফায় প্রথম দিকে এটিকে ইজারার তালিকা থেকেই বাদ রাখা হয়েছিল। পরবর্তীতে চাহিদা থাকায় সরকারি বিধি মেনে ইজারা দেওয়ার ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিলে এটির জন্য টেন্ডার আহ্বান করা হয় যদিও এখনও এই কার্যক্রম চূড়ান্ত হয়নি।’’
সাভার পৌরসভার প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আবুবকর সরকার বলেন, ‘‘মিলন ঘাটটি এখনো কাউকে ইজারা দেওয়া হয়নি। ইজারা দেওয়ার জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল। বেশ কিছু দরপত্র জমা পরেছে। ইজারা দেয়ার কার্যক্রম এখনো চলছে।’’
গুলির খবর জানে না পুলিশ
সাভার মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সাইদুর খান বলেছেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘‘ঘটনাস্থলে গিয়ে যেটি জানতে পারলাম হেদায়েত নামে সাভার পৌর ছাত্রদলের পদপ্রত্যাশী একজন ঘাটটি পরিচালনা করছে। অপরদিকে নদীর ওপর পাড়ের অন্তর নামে একজন আজ লোকজন নিয়ে এসে হেদায়েতের দুটি ট্রলার নিয়ে গেছে বলে জানতে পেরেছি। এসময় বাধা দেওয়ায় অভিযুক্ত অন্তর বাঁশ ছুড়ে মারে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। তবে গুলির কোন ঘটনা আমরা পাইনি। যতদূর বুঝলাম মূলত ঘাটটির নিয়ন্ত্রণ বা দখলকে কেন্দ্র করেই এই ঘটনা ঘটেছে।’’
সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জুয়েল মিয়া বলেন, ‘‘বিষয়টি আমরা তদন্ত করে দেখছি, তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’’
তিনি বলেন, ‘‘প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ঘটনাটি ঘটেছে। আশপাশের লোকজন গুলির শব্দ শোনেননি বলে জানিয়েছেন। এ ঘটনায় লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’’
ঢাকা/আরিফুল/এস
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স ভ র প রসভ য বদল
এছাড়াও পড়ুন:
পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসা ভিনগ্রহের বস্তু নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ইলন মাস্ক
গত জুলাই মাসে শনাক্ত হওয়া রহস্যময় ‘৩আই/অ্যাটলাস’ নামের আন্তনাক্ষত্রিক বস্তুর পরিচয় নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে বিজ্ঞানীদের মধ্যে। আমাদের সৌরজগতের মধ্যে থাকা বস্তুটি এমন আচরণ করছে, যা বিজ্ঞানীরা আগে কখনো দেখেননি। কারও ধারণা এটি ধূমকেতু, আবার কারও মতে ভিনগ্রহ থেকে আসা মহাকাশযান। উৎস ও পরিচয় সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানাতে না পারলেও বস্তুটি পৃথিবীর জন্য কোনো হুমকি নয় বলে ধারণা করছে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। তবে যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের খ্যাতনামা জ্যোতির্বিজ্ঞানী অভি লোব অভিযোগ করেছেন, নাসা বস্তুটির বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য গোপন করছে। বিশাল আকারের অতিদ্রুতগামী মহাজাগতিক বস্তুটি অস্বাভাবিক রাসায়নিক উপাদান নিঃসরণ করছে, যা বিজ্ঞানের প্রচলিত ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করছে। অনেকের ধারণা, ৩আই/অ্যাটলাস কোনো কৃত্রিম উৎস থেকে তৈরি হতে পারে। এবার এই বিতর্কে নাম লিখিয়েছেন মহাকাশ সংস্থা স্পেসএক্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইলন মাস্ক।
জনপ্রিয় মার্কিন পডকাস্ট দ্য জো রোগান এক্সপেরিয়েন্সে ইলন মাস্ক ৩আই/অ্যাটলাস নামের আন্তনাক্ষত্রিক বস্তু সম্পর্কে নিজের ভাবনা প্রকাশ করেছেন। বস্তুটি কোনো ভিনগ্রহের মহাকাশযান হতে পারে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে ইলন মাস্ক বলেন, ‘আপনি যদি এটিকে সম্পূর্ণ নিকেল দিয়ে তৈরি করেন, তবে তা হবে একটি অত্যন্ত ভারী মহাকাশযান। এটি এমন একটি যান হতে পারে, যা একটি মহাদেশকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে পারে। তার চেয়েও খারাপ কিছু ঘটাতে পারে। যদি আমি ভিনগ্রহের কোনো প্রমাণ সম্পর্কে জানতে পারি, তাহলে কথা দিচ্ছি আপনার অনুষ্ঠানে আসব। আর এখানেই তা প্রকাশ করব।’
অভি লোবের দাবি, আন্তনাক্ষত্রিক বস্তুটি পৃথিবীর ওপর নজরদারি করতে পাঠানো ভিনগ্রহের কোনো মহাকাশযান হতে পারে। অস্বাভাবিক লেজযুক্ত বস্তুটি প্রতি সেকেন্ডে চার গ্রাম নিকেল নিঃসরণ করছে; যদিও সেখানে কোনো লোহার উপস্থিতি নেই। ধূমকেতুর ক্ষেত্রে এমন আচরণ আগে দেখা যায়নি।
জো রোগান তাঁর আলোচনায় ধূমকেতুর রহস্যময় বৈশিষ্ট্যের ওপর জোর দেন। ধূমকেতুর গ্যাসের মেঘে নিকেলের উপস্থিতি উল্লেখ করেন। এই ধাতু পৃথিবীতে প্রধানত শিল্পক্ষেত্রে ব্যবহৃত সংকর ধাতুতে পাওয়া যায়। অন্যদিকে ইলন মাস্ক নিকেলের উপস্থিতির একটি পার্থিব ব্যাখ্যা দেন। তিনি বলেন, অনেক ধূমকেতু ও গ্রহাণু প্রাথমিকভাবে নিকেল দিয়ে তৈরি। পৃথিবীতে যেখানে নিকেলখনি দেখা যায়, সেখানে আসলে অতীতে নিকেলসমৃদ্ধ কোনো গ্রহাণু বা ধূমকেতু আঘাত করেছিল।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া