ঢাকার সাভারে একটি খেয়া ঘাটের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্বের জেরে একপক্ষের বিরুদ্ধে গুলি করে আরেক পক্ষের ট্রলার ছিনতাইয়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

বুধবার (৯ এপ্রিল) বিকালে সাভারের পৌর এলাকা কাতলাপুর মহল্লার কর্ণপাড়া মিলন ঘাটে এই ট্রলার ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনায় ৫ জনের নাম উল্লেখ করাসহ অজ্ঞাত অজ্ঞাতনামা ১০/১২ জনকে অভিযুক্ত করে সাভার মডেল থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন স্থানীয় যুবদল নেতা মো.

কামরুল ইসলাম। তিনি সাভার পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ড যুবদলের সাধারণ সম্পাদক।

লিখিত অভিযোগে যা বলা হয়েছে
লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, সাভারের কাতলাপুরের কর্ণপাড়া মিলনঘাটটি দীর্ঘদিন ধরে সাভার পৌরসভা ৬নং ওয়ার্ড যুবদলের সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম পরিচালনা করছেন।

সম্প্রতি মানিকগঞ্জ জেলার সিংগাইর থানার ফুডনগর মোল্লাপাড়ার অন্তর খান (২৬), মোর্শেদ খান (২৫), মোশাররফ খান (২৮), হৃদয় (২৫), রনি খানসহ (৪২) অজ্ঞাতনামা ১০-১২ জন ঘাট পরিচালনায় বাঁধা দিয়ে কামরুলের কাছে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। 

বুধবার বিকেল পৌনে ৬টার তারা পুনরায় আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে মিলনঘাটে এসে চাঁদা দাবি করলে কামরুল চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তারা কামরুলকে মারধর করেন। এক পর্যায়ে অন্তর খান পিস্তল সদৃশ আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলি ছোড়েন। পরে তারা কামরুলের দুটি ইঞ্জিন চালিত নৌকা (ট্রলার) ছিনিয়ে নিয়ে চলে যান।

যা বলছেন ভুক্তভোগী
ভুক্তভোগী কামরুল ইসলাম বলেন, ‘‘গত প্রায় সাত মাস দরে বৈধভাবে ঘাটটির ইজারা নিয়ে ঘাট পরিচালনা করছেন তিনি। সম্প্রতি নদীর বিপরীত পাড়ে অবস্থিত মানিকগঞ্জের সিংগাইর থানাধীন ফুডনগর এলাকার অন্তর খান নামে স্থানীয় এক যুবক তার কাছে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা না দেওয়ায় অভিযুক্ত অন্তরসহ ১৪/১৫ জন যুবক অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে তাদের ঘাটে হামলা চালিয়ে দুই জন মাঝিকে মারধর করে দুটি ট্রলার ছিনিয়ে নিয়ে যায়।’’

এসময় অভিযুক্তরা আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়ে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

কামরুল ইসলামের ছেলে হেদায়েত উল্লাহ বলেন, ‘‘হঠাৎ করে নৌকায় করে অস্ত্রসহ তারা খেয়া ঘাটে আসে। অন্তর তিন রাউন্ড গুলি করে। আমাকেসহ কয়েকজনকে মারধর করে দুইটা ইঞ্জিন চালিত নৌকা নিয়ে যায়।’’

এ বিষয়ে জানতে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও মুঠোফোন বন্ধ থাকায় অভিযুক্ত অন্তর খানের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। অভিযুক্ত অন্তর ছাত্রদলের রাজনীতির সাথে যুক্ত বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। 

কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসন যা বলছে
পুলিশ ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, বর্তমানে কাতলাপুর এলাকার খেয়া ঘাটটি পরিচালনা করছেন সাভার পৌরসভা ৬নং ওয়ার্ড যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মো. কামরুল ইসলাম ও তার ছেলে হেদায়েত। ঘাটটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নদীর বিপরিত পাড়ের অন্তরসহ কয়েকজনের সাথে কামরুল ইসলামদের দ্বন্দ্ব রয়েছে। মূলত এই দ্বন্দ্বের জেরেই ট্রলার ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটেছে।

সাভার পৌরসভার পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সায়েদুল ইসলাম বলেন, ‘‘সম্প্রতি ঘাটটির ইজারা কার্যক্রম পরিচালনা করা হলেও সেটি এখনো সম্পন্ন হয়নি। এখন পর্যন্ত কাউকে অফিসিয়ালি ইজারাদার ঘোষণা করা হয়নি। ইজারা কার্যক্রম চূড়ান্ত হওয়ার পর কে ইজারাদার হচ্ছেন সেটি বলা যাবে।’’

তিনি বলেন, ‘‘ইতোপূর্বে ঘাটটির ব্যাপারে সরকারি বিধি মেনে বৈধভাবে ইজারা না দেওয়ার কারণে এদফায় প্রথম দিকে এটিকে ইজারার তালিকা থেকেই বাদ রাখা হয়েছিল। পরবর্তীতে চাহিদা থাকায় সরকারি বিধি মেনে ইজারা দেওয়ার ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিলে এটির জন্য টেন্ডার আহ্বান করা হয় যদিও এখনও এই কার্যক্রম চূড়ান্ত হয়নি।’’

সাভার পৌরসভার প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আবুবকর সরকার বলেন, ‘‘মিলন ঘাটটি এখনো কাউকে ইজারা দেওয়া হয়নি। ইজারা দেওয়ার জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল। বেশ কিছু দরপত্র জমা পরেছে। ইজারা দেয়ার কার্যক্রম এখনো চলছে।’’

গুলির খবর জানে না পুলিশ
সাভার মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সাইদুর খান বলেছেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘‘ঘটনাস্থলে গিয়ে যেটি জানতে পারলাম হেদায়েত নামে সাভার পৌর ছাত্রদলের পদপ্রত্যাশী একজন ঘাটটি পরিচালনা করছে। অপরদিকে নদীর ওপর পাড়ের অন্তর নামে একজন আজ লোকজন নিয়ে এসে হেদায়েতের দুটি ট্রলার নিয়ে গেছে বলে জানতে পেরেছি। এসময় বাধা দেওয়ায় অভিযুক্ত অন্তর বাঁশ ছুড়ে মারে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। তবে গুলির কোন ঘটনা আমরা পাইনি। যতদূর বুঝলাম মূলত ঘাটটির নিয়ন্ত্রণ বা দখলকে কেন্দ্র করেই এই ঘটনা ঘটেছে।’’

সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জুয়েল মিয়া বলেন, ‘‘বিষয়টি আমরা তদন্ত করে দেখছি, তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’’

তিনি বলেন, ‘‘প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ঘটনাটি ঘটেছে। আশপাশের লোকজন গুলির শব্দ শোনেননি বলে জানিয়েছেন। এ ঘটনায় লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’’

ঢাকা/আরিফুল/এস

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স ভ র প রসভ য বদল

এছাড়াও পড়ুন:

বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন এসোসিয়েশনের বন্দর উপজেলা কমিটি গঠন

বাংলাদেশ বেসরকারি বিদ্যালয় বোর্ড ও বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন এসোসিয়েশন (দিদার-অদুদ), নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দর উপজেলা কমিটি গঠিত হয়েছে।

কমিটি গঠনের পর নারায়ণগঞ্জ জেলা ও বন্দর উপজেলার নেতৃবৃন্দ বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন এসোসিয়েশনের (দিদার-অদুদ) কেন্দ্রীয় মহাসচিব কোটা সংস্কার আন্দোলনের রূপকার ও দৈনিক ইনকিলাবের সিনিয়র সাব এডিটর মোহাম্মদ আবদুল অদুদের সাথে মতবিনিময় করেছেন।

বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন এসোসিয়েশন, নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির সভাপতি এ এইচ এম শামীম ও সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম রুবেলের নেতৃত্বে সম্প্রতি বন্দর উপজেলা সভাপতি ও কলরব মডেল একাডেমির প্রধান শিক্ষক হাসান কবির, সহ সভাপতি ও সালাহউদ্দিন কিন্ডারগার্টেন এন্ড হাইস্কুলের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক শারমীন ফারজানা, সহ-সভাপতি ও স্টাডি কিন্ডারগার্টেন এন্ড হাইস্কুলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বাবু ছারোয়ার এবং সাধারণ সম্পাদক ও সুলতানা মেমোরিয়াল কিন্ডারগার্টেনের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক  আইরিন সুলতানা এসময় মহাসচিবকে শুভেচ্ছা জানান। মহাসচিবও উত্তরীয় পরিয়ে তাদেরকে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।

নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির সভাপতি এ এইচ এম শামীমের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম রুবেলের সঞ্চালনায় এক আলোচনা সভায় মোহাম্মদ আবদুল অদুদ বলেন, অচিরেই আমাদের বোর্ড ও এসোসিয়েশনের অধীনে থাকা সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একই পাঠ্যবই হবে এবং একই সিলেবাসের আলোকে বৃত্তি ও স্কুলের একাডেমিক পরীক্ষাগুলো অনুষ্ঠিত হবে।

তিনি বলেন, বিগত স্বৈরাচারি সরকার কিন্ডারগার্টেনের সাথে বিমাতাসুলভ আচরণ করেছে। ফলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর কী পরিণতি হয়েছে, আপনারা দেখেছেন। আমরা এই সরকারকে বলব, আমাদের সাথে বসে নিবন্ধনের জন্য আরোপিত শর্তগুলো সহজ করে ৬৫ হাজার কিন্ডারগার্টেনকে নিবন্ধনের আওতায় এনে সরকারি কোষাগারে রাজস্ব বাড়ানোর উদ্যোগ নিন।

নইলে আরোপিত সকল শর্ত মেনে দেশের সিংহভাগ স্কুলই নিবন্ধন করতে পারবে না। তিনি বিদ্যমান অবস্থায় লেখাপড়ার মানোন্নয়নে প্রতিটি কিন্ডারগার্টেনকে ১ জন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকের বেতন বরাদ্দ দেয়ার দাবি করেন।

আলোচনা শেষে কমিটির তালিকা হস্তান্তর হয় এবং উত্তরীয় পরিয়ে শুভেচ্ছা বিনিময় হয় এবং অক্টোবরে মাসে অভিষেক ও এ মাসের মধ্যেই লেখাপড়ার মানোন্নয়নে শিক্ষক প্রশিক্ষণের আয়োজন করার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

এসময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন এসোসিয়েশন (দিদার-অদুদ), নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির সহ সভাপতি ও প্রাইম কিন্ডারগার্টেনের পরিচালক জনাব মো. সিদ্দিকুর রহমান, বন্দর উপজেলা কমিটির কোষাধ্যক্ষ ও হাজী আলী হোসেন আইডিয়াল কিন্ডারগার্টেন স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান শিক্ষক  মো. ইকবাল হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক ও আল-আরাফাহ ইসলামি কিন্ডারগার্টেনের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক (প্রধান শিক্ষক) মাহবুব আলম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও চাঁনপুর আইডিয়াল স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক আলমগীর হোসেন, নির্বাহী সদস্য ও কদম রসুল আইডিয়াল স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক রিনা আক্তার, নির্বাহী সদস্য ও তাকওয়া মডেল একাডেমির প্রধান শিক্ষক সানজিদা আক্তার, নির্বাহী সদস্য ও এডুকেয়ার কিন্ডারগার্টেনের প্রধান শিক্ষক আমেনা আক্তার প্রমুখ।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ