কালকিনিতে ‘ইয়াবাসহ আটক’ ২ যুবককে হাতকড়াসহ ছিনিয়ে নিল জনতা, ৪ পুলিশ আহত
Published: 11th, April 2025 GMT
মাদারীপুরের কালকিনিতে ইয়াবাসহ আটক দুই যুবককে হাতকড়া পরা অবস্থায় পুলিশের কাছ থেকে স্থানীয় জনতা ছিনিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ সময় অতর্কিতে হামলায় আহত হয়েছেন পুলিশের চার সদস্য।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে কালকিনি পৌরসভার মাছবাজার এলাকায় এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ ৩০ জনকে আটক করেছেন।
এর আগে গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে কালকিনির বড়ব্রিজ এলাকা থেকে দুই যুবককে ইয়াবাসহ পুলিশ আটক করে বলে জানিয়েছেন কালকিনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কে এম সোহেল রানা। তাঁরা হলেন পৌর এলাকার ঠ্যাঙ্গামারা গ্রামের রাশেদুল খান (৩৫) ও আল আমিন সরদার (৩০)। রাশেদুল খান কালকিনি উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি বদিউজ্জামান বাকামিনের ছোট ভাই বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। আজ শুক্রবার সকাল ১০টা পর্যন্ত পলাতক আসামিদের কোনো সন্ধান পায়নি পুলিশ।
অন্যদিকে হামলায় আহত পুলিশ সদস্যরা হলেন কালকিনি থানার এসআই আবুল বাশার, এএসএই সোহেল রানা এবং পুলিশ কনস্টেবল কাজী স্বপন ও আতিকুল ইসলাম।
পুলিশ, প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সন্ধ্যায় বড়ব্রিজ এলাকায় মাদকবিরোধী অভিযান চালায় পুলিশ। এ সময় ৫টি ইয়াবাসহ আল আমিন ও রাশেদুলকে আটক করা হয়। তাঁদের হাতকড়া পরিয়ে মাছবাজারের কাছাকাছি পৌঁছালে পুলিশের ওপর হামলা চালান আটক ব্যক্তিদের স্বজন ও স্থানীয় লোকজন। এ সময় পুলিশের ওই চার সদস্যকে পিটিয়ে আহত করেন হামলাকারীরা। পরে হাতকড়া পরা অবস্থায় দুই আসামিকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়। খবর পেয়ে কালকিনি থানার অতিরিক্ত পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে কালকিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। পরে ওই আসামিসহ হামলাকারীদের ধরতে যৌথ অভিযানে নামে সেনাবাহিনী, কালকিনি থানা ও জেলা পুলিশ।
রাকিব হাসান নামের এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, আটক রাশেদুল কালকিনি উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি বদিউজ্জামান বাকামিনের ছোট ভাই। ঘটনাস্থলটি তাঁদের বাড়ির কাছাকাছি এবং পুরো মাছবাজারে তাঁরা এখনো প্রভাব বিস্তার করেন। রাশেদুলের আটকের খবরে সেখানে তাঁর স্বজনেরা লোকজন জড়ো করে মব তৈরির চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে পুলিশকে ‘ভুয়া, ভুয়া’ বলে তাদের ওপর হামলা চালিয়ে আসামিদের ছিনিয়ে নেওয়া হয়।
কালকিনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কে এম সোহেল রানা বলেন, ‘আমরা সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে স্থানীয় ৩০ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছি। যাঁরা এই হামলার ঘটনায় জড়িত, তাঁদের গ্রেপ্তার দেখানো হবে। আর পলাতক ওই দুই আসামিকে ধরতে যৌথ বাহিনীর অভিযান চলছে। এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন।’
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ চলবে: হামাস
স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়ার প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হামাস। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া এক ঘোষণাপত্রের অস্ত্র ত্যাগের আহ্বানের জবাবে সংগঠনটি এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
বৃহস্পতিবার হামাসের সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দখলদারির অবসান এবং জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সম্পূর্ণ সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ থামবে না তারা।
মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া ঘোষণায় বলা হয়েছিল, ‘গাজায় যুদ্ধ বন্ধে হামাসকে (এই উপত্যকায়) তার শাসনের অবশ্যই অবসান ঘটাতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ ও সমর্থনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। সার্বভৌম ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের সঙ্গে এটি সংগতিপূর্ণ।’
সৌদি আরব, কাতার, ফ্রান্স ও মিসরসহ ১৭টি দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লিগ ঘোষণাপত্রটি সমর্থন করেছে। এটি ‘দ্য নিউইয়র্ক’ ঘোষণাপত্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
বৃহস্পতিবার আলাদা এক বিবৃতিতে প্রতি শুক্রবার, শনিবার ও রোববার বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও তাদের মিত্র দেশগুলোর দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ করার আহ্বান জানিয়েছে হামাস। ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে তারা।
অনাহারে মৃত্যু ১৫৪গাজায় কর্মরত চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, উপত্যকাটিতে অনাহারে আরও দুই শিশু এবং এক তরুণ মারা গেছে। এ নিয়ে সেখানে অনাহারে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫৪ জনে। তাদের মধ্যে শিশু ৮৯টি।
গাজায় প্রায় ২১ লাখ মানুষের বসবাস। উপত্যকাটিতে গত মার্চ থেকে নতুন করে অবরোধ শুরু করে ইসরায়েল। ফলে সেখানে ত্রাণবাহী কোনো ট্রাক প্রবেশ করতে পারছিল না। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সম্প্রতি কিছুদিন ধরে গাজায় সীমিত পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশ করতে দিচ্ছে ইসরায়েল। এই ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য।
ত্রাণ নিতে প্রাণহানি ১৩৭৩জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, গাজায় গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ আনতে গিয়ে মোট ১ হাজার ৩৭৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৮৫৯ জন মারা গেছেন বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে। গত মে মাসের শেষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাটি ইসরায়েলি সেনাদের সহায়তায় গাজার কয়েকটি স্থানে ত্রাণ দিচ্ছে।
বাকি ৫১৪ জন মারা গেছেন ত্রাণবাহী ট্রাকের আশপাশে। তাঁরা ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। অধিকাংশই ইসরায়েলের সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকালে গাজায় অন্তত আরও ৪২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ত্রাণ আনতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন। এই নিয়ে প্রায় ২২ মাসের সংঘাতে গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের হামলা নিহত হয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার ৩৩২ জন।
গাজায় স্টিভ উইটকফশুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ গাজা সফর করেছেন। তিনি উপত্যকাটির রাফা এলাকায় জিএইচএফের একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রও ঘুরে দেখেন। এ সময় ইসরায়েলে নিয়োজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হুকাবি তাঁর সঙ্গে ছিলেন। তাঁরা পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাজায় ছিলেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে উইটকফ নিজেই এই কথা জানিয়েছেন। আগের দিন তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। উইটকফ বলেছেন, ‘মাঠের পরিস্থিতি বুঝতে ও তথ্য সংগ্রহ করতে আমরা গাজায় গিয়েছিলাম। গাজার মানবিক পরিস্থিতির একটি স্পষ্ট ধারণা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে পৌঁছে দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য, যাতে করে গাজাবাসীর জন্য খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছাতে পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করা যায়।’
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক বিশেষ দূত ও আবাসন খাতের সাবেক আইনজীবী উইটকফের আন্তর্জাতিক নীতি ও মানবিক সহায়তা-সংক্রান্ত কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তা সত্ত্বেও তিনি মধ্যপ্রাচ্যের সংকট সমাধানের চেষ্টার পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধেও কূটনীতি চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন।