ঈদের পর চট্টগ্রামের বাজারে দাম কমল যেসব পণ্যের
Published: 13th, April 2025 GMT
ঈদের পর এখনো পুরোপুরি জমে ওঠেনি চট্টগ্রামের পাইকারি বাজার। খুচরায় বেচাকেনা তুলনামূলক কম বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এর মধ্যে বাজারে চিকন চালের দাম কিছুটা বাড়তি। অন্যদিকে কমেছে ডাল, পেঁয়াজ, আদা ও রসুনের দাম। নতুন করে দর নির্ধারণ না হওয়ায় খোলা সয়াবিন তেলের দাম বাজারে বাড়তির দিকে রয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
চট্টগ্রামে ভোগ্যপণ্যের বৃহৎ বাজার নগরের খাতুনগঞ্জ। এ বাজারে গত মার্চ মাসের তুলনায় বর্তমানে প্রতি মণে ১০০ থেকে ২০০ টাকা বেড়েছে খোলা সয়াবিনের দাম। সেই হিসাবে লিটারপ্রতি দাম বেড়েছে পাঁচ টাকার কাছাকাছি। অন্যদিকে বাজারে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৭৫ থেকে ১৭৮ টাকা ও ৫ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেল ৮৪৫ থেকে ৮৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ চিত্র আজ রোববারের।
ব্যবসায়ীরা জানান, পবিত্র রমজান মাসে মানুষকে সুরক্ষা দিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) পক্ষ থেকে আমদানি পর্যায়ে ভোজ্যতেল আমদানিতে শুল্ক-কর অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল। সদ্য সমাপ্ত মার্চ মাসে এ অব্যাহতির মেয়াদ শেষ হয়েছে। সরকার ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে বৈঠক হলেও এখনো নতুন দরের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি। তাই বাজারে সয়াবিনের দাম কিছুটা বাড়তি। যদি এ সুবিধা বাড়ানো হয়, তাহলে দাম কমে যাবে।
জানা গেছে, প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ১৮ টাকা এবং খোলা সয়াবিন ও পাম তেলের দাম ১৩ টাকা করে বাড়াতে চাইছেন ব্যবসায়ীরা। এ নিয়ে ভোজ্যতেল পরিশোধন কারখানাগুলোর সমিতি ঈদের আগের শেষ কর্মদিবসে ট্যারিফ কমিশনে চিঠি দেয়। বাণিজ্য উপদেষ্টার সঙ্গে এ নিয়ে অন্তত দুই দফা বৈঠক হলেও কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি সরকার।
বাড়তি চার চালের দাম
বাজারে বিক্রি হওয়া নাজিরশাইল, জিরাশাইল, কাটারি ও মিনিকেট চালের দাম বাড়তি বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এর মধ্যে নাজিরশাইল ও জিরাশাল প্রতি কেজি ৯০ টাকার আশপাশে বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে কাটারি ও মিনিকেটও ৮৫ টাকার আশপাশে।
মিলমালিকেরা ধান মজুত করে দাম বাড়িয়েছেন বলে জানিয়েছেন পাহাড়তলী বাজারের ব্যবসায়ী নিজাম উদ্দিন। তিনি বলেন, মোটা চালের দাম বাজারে কম আছে। স্বর্ণা, গুটি স্বর্ণাসহ অন্যান্য চাল কেজিপ্রতি ৪৭ থেকে ৫২ টাকার মধ্যে। ধান মজুতের কারণে চার ধরনের চালের দাম বেড়েছে।
অন্যদিকে নগরের পাইকারি বাজারগুলোতে মসুর ও মটর ডালের দাম কমেছে। এ সপ্তাহে প্রতি কেজি মসুর ডাল ৯৩ টাকা ও মটর ডাল ৫১ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। ঈদের আগে প্রতি কেজি মসুর ডাল বিক্রি হয়েছে ৯৭ টাকা ও মটর ডাল বিক্রি হয়েছে ৫৫ টাকা দরে।
খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ী মহিউদ্দিন বলেন, মসুর ও মটরের দাম কমেছে। বাজার কিছুদিন হলো খুলেছে। তবে এখনো সেভাবে বিক্রি নেই। বাজারে অধিকাংশ পণ্যের দাম কমতির দিকে। শুধু তেলের দাম কিছুটা বাড়তি।
পেঁয়াজ-রসুনের দামে স্বস্তি
ডালের পাশাপাশি পাইকারি বাজারে পেঁয়াজ, আদা ও রসুনের দামও কমেছে। বাজারে বর্তমানে দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ বেশি। ভারতীয় কিছু পেঁয়াজও খাতুনগঞ্জে বিক্রি হচ্ছে বলে জানা গেছে। এর মধ্যে ভারতীয় পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৫৫ টাকা ও দেশি পেঁয়াজ ২৮ থেকে ৪৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। তবে খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম ৫৫ থেকে ৬০ টাকার মধ্যে।
পেঁয়াজের পাশাপাশি বাজারে রসুন ও আদার দামও কমেছে। দেশি রসুন ও আদার পাশাপাশি বাজারে আমদানি করা রসুন ও আদার দামও কমেছে। প্রতি কেজি রসুন বিক্রি হয়েছে ১৭৫ থেকে ১৮০ টাকা দরে। অন্যদিকে প্রতি কেজি আদা ৯০ থেকে ১২০ টাকার মধ্যে বিক্রি হয়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে গরমের কারণে বিক্রি কম।
খাতুনগঞ্জের পাইকারি বিক্রেতা আহসান খালেদ বলেন, পেঁয়াজ, আদা ও রসুনের দাম কমতির দিকে আছে এখন। তবে বাজার চাঙা নেই। খুচরা বেচাকেনা চলছে। এক সপ্তাহের মধ্যে বাজার চাঙা হয়ে যাবে বলে আশা করা যায়।
বাজারে বর্তমানে অবস্থা নিয়ে খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো.
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ছ ন ব যবস য় র রস ন র দ ম খ ত নগঞ জ র দ ম কম ও মটর
এছাড়াও পড়ুন:
মিরাজে দুর্দান্ত জয় বাংলাদেশের
এমন পারফরম্যান্সই তো চাওয়ার থাকে ভালো দলের কাছে। মেহেদী হাসান মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্য, সাদমান ইসলামের সেঞ্চুরি, তাইজুল ইসলামের ৯ উইকেট শিকারে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ইনিংস ও ১০৬ রানের বিশাল জয় এনে দেয় বাংলাদেশকে। প্রথম টেস্ট হারের পর যে সমালোচনা হয়েছিল, তার জবাবটা বোধ হয় দ্বিতীয় টেস্ট তিন দিনে জিতে দিয়ে দিলেন নাজমুল হোসেন শান্তরা। ‘বাউন্স ব্যাক’ করে সিরিজ ড্র ১-১-এ।
চট্টগ্রামের বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে বীরোচিত পারফরম্যান্স ছিল টাইগারদের। এটি সম্ভব হয়েছে পছন্দের উইকেটে খেলা হওয়ায়। স্পিন ভুবনে উইকেট উৎসব করেছেন তাইজুল, মিরাজ গাঁটছড়া বেঁধে। সিরিজ নির্ধারণী টেস্টে দুটি সেঞ্চুরি দারুণ অর্জন অধারাবাহিক ব্যাটিং লাইনআপের। এই টেস্টে ওপেনিং জুটি ভালো করেছে। লম্বা সময় পর টেস্ট খেলার সুযোগ পাওয়া এনামুল হক বিজয় ভালোই সঙ্গ দেন সাদমানকে। লোয়ার মিডলঅর্ডারে মিরাজের লড়াই ছিল দেখার মতো।
টেলএন্ডারদের নিয়ে রীতিমতো বাজিমাত করেছেন তিনি। শেষ ৩ উইকেটে তৃতীয় দিন ১৫৩ রান যোগ করেন। বাংলাদেশকে পৌঁছে দেন ৪৪৪ রানে। ২১৭ রানের লিড থাকায় ইনিংস ব্যবধানে জয়ের স্বপ্ন দেখায়। মিরাজের অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে সে স্বপ্ন পূরণ হয়। সাকিব আল হাসান ও সোহাগ গাজীর পর তৃতীয় বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট শিকার তাঁর।
গত বছর দেশের মাটিতে টেস্টে ভালো করতে পারেনি বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার পর দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে। ২০২৫ সালের শুরুটাও ভালো ছিল না। সিলেটে জিম্বাবুয়ের কাছে হেরেছে। সিরিজ বাঁচাতে চট্টগ্রামে জিততেই হতো। লক্ষ্যে পৌঁছাতে কন্ডিশনেও পরিবর্তন আনা হয়। চট্টগ্রামের উইকেটে খেলা হয় দ্বিতীয় টেস্ট। যেখানে শাসন ছিল স্পিনারদের। পছন্দের উইকেট পাওয়ায় তিন স্পিনার নিয়ে খেলে বাংলাদেশ। তিনজনই দারুণ বোলিং করেন প্রথম থেকে।
দীর্ঘ বিরতির পর টেস্ট খেলার সুযোগ পাওয়া অফস্পিনার নাঈম হাসান চ্যালেঞ্জ নিয়ে বোলিং করে গেছেন। বেশি উইকেট না পেলেও এক প্রান্তে ব্যাটারদের চাপে ফেলেছেন। যার সুফল তাইজুল ও মিরাজ পেয়েছেন অন্য প্রান্তে। প্রথম দিন শেষ সেশনে ব্রেক থ্রু দেন তিনি। বাঁহাতি স্পিনার পরে পিক করে ৬ উইকেট শিকার করেন। জিম্বাবুয়ে ৯ উইকেটে ২২৭ রানে প্রথম দিন শেষ করে। পরের দিন এক বল খেলে ওই রানেই অলআউট হয়। বাংলাদেশ ব্যাটিং শুরু করে বড় লক্ষ্য নিয়ে। সাদমান ইসলাম ও এনামুল হক বিজয় ১১৮ রানের ওপেনিং জুটি করায় প্রতিপক্ষকে ছাড়িয়ে যাওয়া সহজ হয়। সাদমানের সেঞ্চুরি ও মুমিনুল হক, মুশফিকুর রহিম কিছু রান করায় ৭ উইকেটে ২৯১ রানে দ্বিতীয় দিন শেষ করে বাংলাদেশ।
সেদিন সংবাদ সম্মেলনে সাদমান আশা প্রকাশ করেন, মিরাজ ও তাইজুল জুটি করবেন। অষ্টম উইকেটে ৬৪ রানের জুটি দু’জনের। বেশি ভালো করেছেন পেসার তানজিম হাসান সাকিব। মিরাজের সঙ্গে ১৫৬ বলে ৯৬ রানের জুটি। অভিষেক টেস্টে সাকিবের ব্যাটিং দারুণ লেগেছে অধিনায়ক শান্তর কাছে। ৮০ বলে ৪১ রান করেন তিনি। সবচেয়ে বড় কথা, মাথায় বল লাগার পরও বিচলিত হননি তিনি। মিরাজ ছাড়া চট্টগ্রাম টেস্টের প্রাপ্তি হিসেবে ওপেনিং জুটির ভালো খেলা, সাদমানের সেঞ্চুরি, তাইজুলের ৫ উইকেট শিকার ও সাকিবের রান করাকে মনে করেন শান্ত।
শেষের তিন উইকেটে তৃতীয় দিন প্রায় দুই সেশন ব্যাট করে বাংলাদেশ। তাইজুল, সাকিব ও হাসানকে নিয়ে ১৫৩ রান যোগ করে। মিরাজ ১০৪ রান করে ওয়েলিংটন মাসাকাদজাকে উইকেট দেন। নার্ভাস নাইটির ঘরে প্রবেশ করে কিছুটা ঝুঁকির মুখে ছিলেন মিরাজ। ৯৮ রানে পৌঁছানোর পর সেঞ্চুরি ছুঁতে দুই রান নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ফিল্ডারের কাছে বল চলে যাওয়ায় এক রানে থামতে হয়। তখন স্ট্রাইকে হাসান থাকায় দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছিল সবাই। ড্রেসিংরুমে খেলোয়াড় ও কোচিং স্টাফের সবাই দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন। কখন হাসান আউট হয়ে যায়, সে ভয় কাজ করছিল হয়তো। কিন্তু হাসান ছিলেন দৃঢ়চেতা। মাসাকাদজাকে ডিফেন্স করে স্বস্তি দেন।
মিরাজ স্ট্রাইকে এসে মেদেভেরের প্রথম দুই বলে ঝুঁকি নেননি। তৃতীয় বলে এক রান নিয়ে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টেস্ট সেঞ্চুরির স্বাদ নেন। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ ও দ্বিতীয় টেস্টের সেরা খেলোয়াড় মিরাজ। প্রথম ম্যাচের উভয় ইনিংসে ৫ উইকেট করে ছিল তাঁর। চট্টগ্রামে অতীতের সব পারফরম্যান্স ছাড়িয়ে গেছেন। সেঞ্চুরির সঙ্গে ৫ উইকেটপ্রাপ্তি, দুই হাজার রানের মাইলফলক পেয়েছেন। ২০২১ সালে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেছিলেন তিনি। ২১৭ রানে পিছিয়ে থাকা জিম্বাবুয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে অলআউট হয় ১১১ রানে। ফ্লাডলাইটের আলো জ্বেলে নির্ধারিত সময়ের বেশি খেলান আম্পায়াররা। প্রায় সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খেলা হয়। জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটাররা তাতে আপত্তি করেননি। তাইজুল ৩, নাঈম ১ ও মিরাজ ৫ উইকেট নিলে ম্যাচ শেষ হয়।
সিলেটে প্রথম টেস্ট হারের পর চট্টগ্রামে প্রভাব বিস্তার করে খেলে ম্যাচ জেতার পরও খুশি নন অধিনায়ক শান্ত, ‘আমি টেস্ট সিরিজ ড্র করে খুশি না। কারণ, প্রথম টেস্টে আমরা একেবারেই ভালো খেলিনি। এই টেস্টে একপেশে খেলে জিতলেও সিরিজে আরও ভালো খেলা উচিত ছিল। সিরিজটি জিততে হতো।’ টাইগার দলপতি জানান, এই পারফরম্যান্স শ্রীলঙ্কা সফরে কাজে দেবে। দেশের মাটিতে স্পোর্টিং উইকেট বানিয়ে বিদেশে খেলার পরিবেশ তৈরি করছিল বিসিবি। ২০২৩ সালে নিউজিল্যান্ড সিরিজ থেকে স্পোর্টিং উইকেটে খেলা হচ্ছে। কিউইদের বিপক্ষে সিলেটে ঐতিহাসিক জয় পেলেও মিরপুর থেকে হারতে শুরু করে। দেশের মাটিতে টানা ছয় হারের পর জয়ের দেখা পেল বাংলাদেশ।